ইতিহাস ও সহিহ হাদিসের কাঠগড়ায় ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়াঃ

ইয়াজিদের প্রশংসায় ডঃ জাকির নায়েক বলেছে (রহিমুল্লাহ)। তারা কোন ইমামগন কে যদি মানত বা শুনত তবে ইয়াজিদকে হয় লানত দিত নয়ত তার ব্যাপারে চুপ থাকত কিন্তু তারা সেটা না করে ইয়াজিদকে ভাল প্রচার করতে চেয়েছে। মিথ্যাবাদী দের উপর আল্লাহর লানত।তাদের ব্যাপারে হাদিসটি মিলে যায়ঃ মদীনা মুনাওওয়ারাহ থেকে একটি দল দামেশকে ইয়াযিদ বিন মুয়াবিয়ার সাথে সাক্ষাতের জন্য … Read More

মুহাররম ও আশুরা শরীফ বা ১০ই মহরম শরীফ এত মর্যাদার কেনো?

আমরা আজ এমন একটিমাস সম্পর্কে আলোচনা করব যেই মাসটির ১০ তারিখের সহিত পৃথিবী সৃষ্টি থেকে শুরুকরে কেয়ামত পর্যন্ত এই দিনটিতে বিভিন্ন ঘটনা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘটিয়েছেন বিভিন্ন নবী রাসূলগণ ও তাদেরউম্মতের মধ্যে যা পৃথিবী ধবংস পর্যন্ত সাক্ষী হয়ে থাকবেএই দিনটি প্রত্যেক মুসলিমদের কাছে যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা বলার উপেক্ষা রাখেনা কিন্তু কিছু কতিপয়নামধারী মুসলিম এই দিনটি আসলে তারাবলে এটা শিয়াদের দিন কা কার্যক্রম আফসোস তাদের প্রতিযারা এখনো শিয়াসূন্নীদের পার্থক্য বুঝেনা তাই তাদের জন্যআজকের এই দিনটির এত মর্যাদা কেন তা তুলে ধরলামকোরান হাদীসে বর্ণিত বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে… মুহাররম ও আশুরার অর্থ- আরবী বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহাররম মাস। মহররাম শব্দের অর্থ অলঙ্ঘনীয় পবিত্র। মহাররম মাসেরদশম তারিখ আশুরানামে সু-পরিচিত। আরবী আশারা শব্দথেকে আশুরার উৎপত্তি। আশারা মানে দশ, আর আশারাকেই বিশেষ সম্মান সহকারে ‘আশুরা’ বলা হয় বলে ধারণা করা হয়। পৃথিবীর সৃষ্টির শুরু থেকেই১০ই মহাররম তথা আশুরার একটি বিশেষভুমিকা পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। এ মাসেরয়েছে অনেক বিজয়আর গৌরবমাখা ঐতিহ্যের স্মৃতি। মুহাররম ও আশুরা শরীফবা ১০ই মহরমশরীফ এত মর্যাদার কেনো? ——————————————————– অন্যান্য দিনের চেয়ে পবিত্র আশুরা শরীফ বা ১০ই মহরম শরীফউনাদের গুরুত্ব ও মাহাত্ম এতবেশী মর্যাদাশালী কারণ এই পবিত্র দিনের সাথে জড়িয়েরয়েছে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সকল গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস | ১০ই মহরম শরীফের এই দিনে মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন আসমান , জমিন , লৌহ , কলম সৃষ্ঠি করেছেন | ১০ই মহরম শরীফের এই দিনে কিয়ামত সংঘটিত হবে | ১০ই মহরম শরীফের এই দিনে আমাদের আদি পিতা আদম আলাইহিস সালাম উনার দোয়াকবুল হয়েছিল আমাদের নূর নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উসিলায়। ১০ই মহরম শরীফের এই দিনে হজরত নূহ আলাইহিস সালাম উনারকিস্তিকে মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন মহা প্লাবনের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন | ১০ই মহরম শরীফের এই দিনে হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে মহানআল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন নমরুদের অগ্নিকুন্ড থেকে রক্ষা করেছিলেন | ১০ই মহরম শরীফের এই দিনে ইব্রাহিম আলাইহিস সালামখলিলুল্লাহ উপাধী লাভ করেছিলেন | ১০ই মহরম শরীফের এই দিনে হজরত আইয়ুবআলাইহিস সালাম উনাকেমহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন কঠিনঅসুখ থেকে শিফাদান করেছিলেন | ১০ই মহরম শরীফের এই দিনে মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন হজরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনাকে মাছেরপেটে বিপদে ফেলেছিলেন এবং এই দিনেইউনাকে বিপদ থেকেরক্ষা করেছিলেন | ১০ই মহরম শরীফের এই দিনে মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামকে কঠিন বিপদহতে মুক্ত করেছিলেন | ১০ই মহরম শরীফের এই দিনে মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন ৪০ বছর পর হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম ও উনারপিতা হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের পুনর্মিলন করেছিলেন | ১০ই মহরম শরীফের এই দিনে মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন জালেম ফেরাউনকে নীল নদে ডুবিয়ে মেরেছিলেন এবং মুসা আলাইহিস সালাম ও উনারসঙ্গী সাথীদেরকে নীল নদ পার করেছিলেন | ১০ই মহরম শরীফের এই দিনে মহান আল্লাহ পাক আব্বুল আলামিন হজরত ইদ্রিস আলাইহিস সালাম উনাকে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছিলেন এবং চিরস্থায়ীভাবে জান্নাতে প্রবেশ করান | ১০ই মহরম শরীফের এই দিনে হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম দুনিয়াতে আগমন করেন এবং এই দিনেই উনাকেজীবিত অবস্থায় আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়। আবার ১০ই মহরমশরীফের এই দিনেইতিনি আমাদের প্রিয়নবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আখেরী উম্মতহয়ে পুনরায় দুনিয়াতে আগমন করবেন | … Read More

মহররম বা আশুরার রোযা ২টি কেন

সম্মানীত প্রিয় পাঠকগণ আগামী কাল থেকে শুরুহচ্ছে মুসলিম উম্মার পবিত্র আশুরা বা মহরমের রোযা রাখারদিন আমরা অনেকেরোযা রাখার সঠিকদিন বা কয়টিরোযা রাখতে হবে তা জানিনা তাই আমি অধম আপনাদের সামনে সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে এই গুলিপর্যালোচনা করব…… দ্বীন ইসলামে কিছু পর্ববা দিবস আছে। যেগুলো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নির্ধারণ করেছেন ইবাদত-বন্দেগী বা নেক আমল করারজন্য। এমনি একটাবিশেষ দিবসের নাম আশুরা। হিজরী সনেরপ্রথম মাস মুহাররমের দশ তারিখ। মুসলিম উম্মাহর দ্বারে কড়ানাড়ে প্রতি বছর এই দিনটি। এ মাস আমাদের স্বরণকরিয়ে দেয় আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর হিজরতও তার দাওয়াতী জিন্দেগী শুরু ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কথা। এ মাসে রয়েছে এমন একটি দিন, দীর্ঘ সংগ্রাম শেষেযে দিনে নবী মুসা আ. এর বিজয় হয়েছিল। পতন হয়েছিল তখনকার সবচেয়ে শক্তিশালী জালেম সম্রাট ফেরআউন ও তার সম্রাজ্যের এবং ইতিহাসের সবচেয়ে হৃদয় বিদারক হত্যা কান্ড হয়েছিলো ইয়াযিদ বাহীনির হাতেআমাদের প্রানপ্রিয় নবী (দ:)ওনার ২ নাতীন ইমাম হাসানও ইমাম হুসাইন (রা:)সহ অসংথ্য মুসলিমদের শাহাদাত দিবসউক্ত দিনটিই হল আশুরা বা মুহাররম মাসের দশ তারিখ।এ দিনটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে খুবইপ্রিয়। তাই তিনিএ দিনে সওম পালনের সওয়াব প্রদান করে থাকেন বহুগুণে। যেমন হাদীসে এসেছে عنأبي هريرة رضى الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أفضل الصيام بعد رمضان شهر الله المحرم، وأفضل الصلاة بعد الفريضة صلاة الليل. رواه مسلم “আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত তিনিবলেনঃ রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রমজানের পর সর্বোত্তম সওম হল আল্লাহর প্রিয় মুহাররম মাসেরসওম। এবং ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতেরসালাত” বর্ণনায় : মুসলিম আশুরার বৈশিষ্টের মধ্যে রয়েছে এ দিনে আল্লাহ তায়ালা তার নবী মুছা আ. ও তার অনুসারী ঈমানদারদের ফেরআউনের জুলুম থেকেনাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরআউনকে তার বাহিনীসহ সমুদ্রে ডুবিয়ে মেরেছেন। সাহাবী ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় আগমন করলেনতিনি আশুরার দিনেইহুদীদের সওম পালনকরতে দেখলেন। যেমনহাদীসে এসেছে عنابن عباس رضى الله عنهما: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قدم المدينة فوجد اليهود صياما يوم عاشوراء، فقال لهم رسول الله صلى الله عليه وسلم : ما هذا اليوم الذي تصومونه؟ قالوا هذا يوم عظيم أنجى الله فيه موسى وقومه، وغرق فرعون وقومه فصامه موسى شكرا فنحن نصومه. فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : فنحن أحق وأولى بموسى منكم. فصامه رسول الله صلى الله عليه وسلم وأمر بصيامه. رواه البخاري و مسلم “ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনিবলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় এসে দেখলেন যে, ইহুদীরা আশুরার দিনেসওম পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন “এটা কোন দিন যে তোমরাসওম পালন করছ? তারা বললঃ এটা এমন এক মহানদিবস যেদিন আল্লাহ মুছা আ. ও তার সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরআউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। মুছা আ. শুকরিয়া হিসেবে এ দিনে সওম পালনকরেছেন। এ কারণেআমরাও সওম পালনকরে থাকি। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “তোমাদের চেয়ে আমরা মুছাআ. এর অধিকতর ঘনিষ্ট ও নিকটবর্তী।” অতঃপর রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওম পালন করলেন ও অন্যদেরকে সওম পালনের নির্দেশ দিলেন। (বর্ণনায়ঃ বুখারী ও মুসলিম) রসূলে কারীম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহুদীদের কথা বিশ্বাস করে সওম পালন করেছেন এমন নয়। সম্ভবত আল্লাহ তায়ালা অহীরমাধ্যমে ইহুদীদের এ বক্তব্যের সত্যতা জানিয়েছিলেন অথবাতিনি বিশ্বস্ত সূত্রে এর সত্যতা উপলদ্ধি করেছিলেন। এ দিনে সওম পালনের ফজীলত সম্পর্কে হাদীসে আরো এসেছে عنأبي قتادة رضى الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم: سئل عن صيام يوم عاشوراء، فقال يكفر السنة الماضية. رواه مسلم والترمذي আবু কাতাদাহ রা. থেকেবর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে আশুরার সওম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল, তিনিবললেনঃ ” বিগত এক বছরেরগুনাহের কাফফারা হিসেবে গৃহীত হয়।” বর্ণনায় : মুসলিম, তিরমিজী অন্য বর্ণনায় এসেছে عنأبي قتادة رضى الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : . . . … Read More

ইমাম হুসাইন (রা:)শেষ উপদেশ ও যুদ্ধে গমন

হযরতইমাম হুসাইন (রাঃ) তাঁবুর অভ্যন্তরে প্রবেশকরলেন।তখন তাঁর চৌদ্দবছর বয়স্ক ছেলেহযরত ইমাম যাইনুলআবিদীন (রাঃ), যিনিমারাত্মক রোগ ওজ্বরে ভুগছিলেন, হেলিয়ে দুলিয়ে কোনমতে আব্বাজানের সামনেএসে আরজ করলেন, আব্বাজান! আমাকেও বিদায়দিন, আমিও শাহাদাত বরণকরতে চাই। তিনিনিজের অসুস্থ ছেলেকেসান্ত্বনা দিলেন এবংবুকে জড়িয়ে ধরেবললেন, যাইনুলআবিদীন! তোমাকেও যদিবিদায় দিই, তাহলেইমাম হুসাইন (রাঃ) এর ‘সিলসিলা’ কারথেকে জারি হবে? বাবা শোন! তোমারথেকেই আমার বংশের‘সিলসিলা’ জারি হবে।আমি দুআ করছি, আল্লাহ পাক তোমাকেজীবিত রাখুন এবংতোমার থেকে আমারবংশধরের ‘সিলসিলা’ জারিরাখুন। তিনি উনাকে বাতিনীখিলাফত ও ইমামতপ্রদান করলেন। উনাকেবুকের সঙ্গে জড়িয়ে বাতিনীনিয়ামত প্রদান করলেনএবং কিছু ওছীয়তকরার পর ফরমালেন, প্রিয়বৎস! আমিচলে যাওয়ার পরমদীনা শরীফ-এপৌঁছার যদি সৌভাগ্য হয়, তাহলে সবার আগেতোমার নানাজান ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম উনাররওযা শরীফ-এগিয়ে সর্বপ্রথম আমারসালাম বলিও এবংকারবালায় তোমার দেখাসমস্ত ঘটনা উনাকেশুনিও। ছেলেকেওসীয়ত করার পরইমাম হুসাইন (রাঃ) তাঁর প্রস্তুতি শুরুকরলেন, নবী করিম(সঃ) এর পাগড়ীমুবারক মাথার উপররাখলেন, সৈয়দুশ শুহাদাহযরত হামযা (রাঃ) এর ঢাল পিঠেরউপর রাখলেন ।বড় ভাই হযরতইমাম হাসান (রাঃ) এর কোমর বন্ধনীনিজ কোমরে বাঁধলেন এবংআব্বাজান শেরে খোদাহযরত আলী মুর্তূজা (রাঃ) এর তলোয়ার ‘জুলফিকার’ হাতেনিলেন । অতঃপরকারবালার দুলহা, কারবালার সুলতানশাহীন শাহে কারবালা হযরতইমাম হুসাইন (রাঃ) ময়দানের দিকে যাত্রাদিলেন । হযরতইমাম হুসাইন (রাঃ) তলোয়ার হাতে নিয়েবের হওয়ার মুহুর্তে সেইপর্দানশীন মজলুম মহিলাদের দিকেএক নজর তাকালেন, তখনসবাই তাঁকে (রাঃ) সবর ও ধৈর্যেঅটল দেখালেন, কারোচোখে পানি নেই, সবাই অধিক শোকেপাথর হয়ে রইলেন। কিন্তু উনাদেরঅন্তর হু হুকরে কাঁদছিল ।যাদের ভরা ঘরআজ খালি হয়েগিয়েছে । সর্বশেষ যেআশ্রয়টা ছিল, তিনি(রাঃ)ও এখনতাদেরকে বিদায়ী সালামদিয়ে রওয়ানা হচ্ছেন। হযরত ইমামহুসাইন (রাঃ) একএক জনকে সম্বোধন করেবললেন, ‘শহরবানু’ আমারআখেরী সালাম গ্রহণকরো, ‘রোবাব ! হুসাইন (রাঃ) এর চেহারা দেখেনাও, সম্ভবতঃ এচেহারা দেখার নসীবআর নাও হতেপারে । জয়নাব! তোমার ভাই যাচ্ছে, জয়নাব! তুমি খয়বারযুদ্ধ বিজয়ীর কন্যা, তুমি ধৈর্যশীলা ফাতিমাতুয যুহরা(রাঃ) এর কন্যা, তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ সবরকারী (সঃ) এর আওলাদ ।দেখ, এমন কোনকাজ করিও না, যদ্বারা আল্লাহ ওতাঁর রাসূল (সঃ) নারাজ হন ।যে কোন অবস্থায় ধৈর্যহারা হইওনা। জয়নাব! আরএকটি কথা শোন, আমার প্রিয় কন্যাসখিনাকে কাঁদতে দিওনা। সে আমারসব চেয়ে আদরেরমেয়ে । ওকেআদর করিও এবংসদা বুকে জড়িয়ে রাখিও। আমি যাচ্ছি, তোমাদেরকে আল্লাহর কাছেসোপার্দ করলাম । তিনি(রাঃ) এ কথাগুলো বলছিলেন, আরএদিকে তাঁর মাসুমকন্যা এসে জড়িয়ে ধরলো। হযরত রোবাব(রাঃ) এসে হযরতহুসাইন (রাঃ) এরকাঁধে মুখ রেখেফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতেলাগলেন এবং বলতেলাগলেন, আমাদেরকে ফেলেআপনি কোথায় যাচ্ছেন, এদুর্দিনে আমাদেরকে এঅবস্থায় ফেলে কোথায়যাচ্ছেন ? জালিমদের হাতেআমাদের সোপর্দ করেকোথায় যাচ্ছেন ? আমাদের পরিণামকি হবে! এপশুরা আমাদের সাথেকি যে আচরণকরবে! তিনি (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তাআলাতোমাদের সাথে আছেন। তোমরা আল্লাহর নবী(সঃ) এর আওলাদ, আহলে বায়তের অন্তর্ভুক্ত ।আল্লাহ তাআলা তোমাদের ইজ্জতসম্মানের হেফাজতকারী । হযরতইমাম হুসাইন (রাঃ) সবাইকে ধৈর্য ধারণেরজন্য তাগিদ দিলেন। কিন্তু নিজেঅধৈর্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছেগিয়েছিলেন । তবুওএকান্ত কষ্টে আত্মসংবরণ করে হযরতইমাম হুসাইন (রাঃ) ঘর থেকে বেরহয়ে নিজের ঘোড়ারকাছে আসলেন এবংযে মাত্র ঘোড়ায় আরোহনকরতে যাচ্ছিলেন, সেমূহুর্তে হযরত সৈয়দাজয়নাব (রাঃ) মাথায়পর্দা দিয়ে বেরহয়ে আসলেন এবংবললেন, ভাইজান! যে মায়ের তুমিদুধ পান করেছ, আমিও সে মায়েরদুধ পান করেছি, আমিও হযরত আলীমর্তুজা (রাঃ) এরকন্যা । ভাইজান! তুমি সবাইকে ঘোড়ায় আরোহনকরিয়ে ময়দানে পাঠিয়েছ, কিন্তুতোমাকে আরোহণ করারমত এখন আরকেউ নেই ।তাই এ মজলুমবোন তোমাকে ঘোড়ায় আরোহনকরাবে । আমিতোমার ঘোড়ার লাগামধরলাম, তুমি আরোহণকর । হযরতহুসাইন (রাঃ) ঘোড়ায় আরোহণকরে ময়দানের দিকেযাত্রা শুরু করলেন। হযরত ফাতেমাতুয যুহরা(রাঃ) এর নয়নমণি ইয়াজিদী বাহিনীর সামরাসামনি হতে চলেছি। নবী করিম(সঃ) এর দৌহিত্র পরিবারের সবারশাহাদাত বরণ করারপর নিজে শাহাদাত বরণকরতে চলছেন । তথ্যসূত্র

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে খাবারের আয়োজন

সম্মানীত পাঠকগণআমরা ইসলামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের খাবার দাবারের আয়োজন করে থাকি এই আশুরা উপলক্ষে আমরা সাধারণ মুসলিমগণ তাদের বাড়িতে … Read More

কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসাইন (রা:)

কূফাথেকে দুই মঞ্জিলদূরত্বে কারবালার প্রান্তরে যখনতারা পৌঁছলেন, তখনহুর বিন ইয়াযীদ রিয়াহী একহাজার সৈন্য নিয়েহযরত ইমাম হুসাইন(রাঃ)এর সাথেমোলাকাত করলেন এবংবললেন- জনাব ইমামেআ’লা (রাঃ)! আমি আপনাকে গ্রেফতার করারজন্য এসেছি। তিনি(রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, কেন ? সে বললো, ‘তা আমি জানিনা, তবে কূফারগভর্নর ইবনে যিয়াদের নির্দেশ দিয়েছে আপনাকেযেখানে পাওয়া যায়, গ্রেফতার করে তারকাছে যেন পৌঁছেদেয়া হয়। তিনি(রাঃ) ফরমালেন, আমারকি অপরাধ ? সে বললো, আপনি ইয়াযীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন, ইয়াযীদের বিরুদ্ধে এখানেজনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টিকরেছেন এবং জনগণেরবাইয়াত করিয়েছেন। তিনি(রাঃ) বললেন, ‘আমিকোন জন অসন্তোষ সৃষ্টিকরিনি এবং ক্ষমতাদখলেরও কোন ইচ্ছাআমার নেই। কূফাবাসী আমারকাছে চিঠি লিখেছে, যার ফলে শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকেবিচার করে আমিএখানে আসতে বাধ্যহয়েছি । তবেযদি কূফাবাসী বেঈমানী করেএবং অবস্থার যদিপরিবর্তন হয়, তাহলেআমি ফিরে যেতেরাজি আছি। যখনহযরত ইমাম হুসাইন(রাঃ) হুরের সঙ্গেআলোচনা করলেন এবংহুরকে সমস্ত বিষয়অবহিত করলেন, তখনসে খুবই দুঃখিতহলো।হুর বললো, এইমুহূর্তে যদি আমিআপনাকে চলে যেতেদেই, আমার সঙ্গী-সাথীদের মধ্যেকেউ হয়তো ইবনেযিয়াদের কাছে গিয়েআমার বিরুদ্ধে অভিযোগকরবে এবং ইবনেযিয়াদ আমার উপরযুলুম করবে ।সে বলবে, ‘তুমিজেনে শুনে দুশমনকে ছেড়েদিয়েছ, আপোষে যাওয়ার সুযোগকরে দিয়েছ।’ ফলেআমার উপর মুছীবতের পাহাড়নাযিল হবে। তাইআপনি একটা কাজকরতে পারেন- এভাবেআমার সঙ্গে সারাদিন কথাবার্তা চালিয়ে যেতেথাকেন, যখন রাতহবে, আমার সৈন্যরা শুয়েপড়বে এবং চারিদিকে অন্ধকার নেমেআসবে, তখন আপনিআপনার আপনজনদের নিয়েএখান থেকে চলেযাবেন।সকালে আপনাকে খোঁজকরব না, আপনারপিছু নেব না। সোজাইবনে যিয়াদের কাছেগিয়ে বলব, উনিরাতের অন্ধকারে আমাদেরঅজান্তে চলে গেছেনএবং উনি কোন্‌ দিকে গেছেনকোন খোঁজ পাইনি। এরপরযা হওয়ার আছে, তাই হবে। হযরতইমাম হুসাইন (রাঃ) বললেন, ‘ঠিক আছে’। যখনরাত হলো, চারিদিকে অন্ধকার ঘণীভূতহলো এবং সৈন্যরা প্রায়ঘুমিয়ে পড়লো, তখনহযরত ইমাম হুসাইন(রাঃ) নিজের সঙ্গীসাথীদেরকে যাত্রা করারনির্দেশ দিলেন ।সবাই বের হয়েগেলেন। সারারাত একাফেলা পথ চলতেথাকল, সারারাত হযরতইমাম হুসাইন (রাঃ)এর কাফেলাপথ চললো, কিন্তুভোরে তারা তাদেরকে ঐজায়গায়তেই দেখতে পেলেন, যেখান থেকে যাত্রাশুরু করেছিলেন। এইঅবস্থা দেখে সবাইআশ্চর্য হয়ে গেল, এটা কিভাবে হলো ! আমরা সারারাত পথচললাম, কিন্তু সকালেআবার একই জায়গায়। একেমন কথা! হুরতাঁদেরকে দেখে জিজ্ঞাসা করলো, আপনারা কি যাননি ? ইমাম হুসাইন (রাঃ) বললেন, আমরা ঠিকইচলে গিয়েছিলাম, কিন্তুযাওয়ার পরওতো যেতেপারলাম না, দিকহারা হয়ে আবারএকই জায়গায় ফিরেআসলাম। হুর বললো, ঠিক আছে, চিন্তার কিছুনেই। আজ আমরাপুনরায় দিনভর আলোচনাকরতে থাকব এবংআমার সৈন্যদেরকে বলব, আমাদের মধ্যে এখনওকোন ফায়সালা হয়নি, আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। আজরাতেই আপনি চলেযাবেন।হযরত ইমাম হুসাইন(রাঃ) দ্বিতীয় রাত্রিতেও সঙ্গীদেরকে নিয়েবের হলেন। সারারাত তিনিও উনার সফরসঙ্গীগণ পথচললেন। ভোর যখনহলো, তখন পুনরায় উনারাউনাদেরকে সেই একইজায়গায় পেলেন, যেখানথেকে উনারা বেরহয়েছিলেন। উপর্যুপরি তিনরাত এ রকমহলো। সারারাত তারাপথ চলতেন, কিন্তুভোর হতেই তাঁদেরকে ঐজায়গায় পেতেন, যেখানথেকে উনারা বেরহতেন। চতুর্থদিন জনৈক পথিকতাঁদের পার্শ্ব দিয়েযাচ্ছিল, তিনি (রাঃ) ওকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ভাই, যে জায়গায় আমরাদাঁড়িয়ে আছি, এইজায়গাটার নাম কি? লোকটি বললো, জনাব! এই জায়গাটার নাম‘কারবালা’। কারবালা শব্দটিশুনার সাথে সাথেইহযরত ইমাম হুসাইন(রাঃ) আঁতকে উঠলেনএবং বললেন, ‘আমারনানাজান (ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) ঠিকইবলেছেন, ‘হুসাইন কারবালার ময়দানে শহীদহবে।’ এটাতো আমারশাহাদাতের স্থান। আমিএখান থেকে কিভাবেচলে যেতে পারি ? পরপর তিন রাত্রিপ্রস্থান করার পরপুনরায় একই জায়গায় প্রত্যাবর্তন একথাই প্রমাণিত করেযে, এটা আমারশাহাদাতের স্থান। এখানথেকে আমি কিছুতেই বেরহতে পারব না। তিনিতাঁর প্রিয়জনদের বললেন, ‘সওয়ারী থেকে অবতরণকরে তাবু খাটাও। নির্দেশ মততাঁর (রাঃ) সঙ্গীসাথীরা সওয়ারী থেকেঅবতরণ করে তাবুখাটাতে শুরু করলেন।কিন্তু যেখানেই তাবুরখুঁটি পুঁততে গেলেন, সেখান থেকেই টাটকারক্ত বের হতেলাগলো। এই দৃশ্যদেখে সবাই হতভম্বহয়ে গেলেন। হযরতসৈয়দা যয়নাব (রাঃ) যখন দেখলেন যে, মাটিতে যেখানেই খুঁটিপুঁততে চাইলেন, সেখানথেকে রক্ত বেরহয়ে আসছে, তখনহযরত হুসাইন (রাঃ)কে বললেন, প্রিয় ভাইজান! চলো, আমরা এখান থেকেসরে যাই। এইরক্তাক্ত ভূমি দেখেআমার খুব ভয়করছে, আমার খুবইখারাপ লাগছে। এইরক্ত ভূমিতে অবস্থান করোনা। চলো, আমরাএখান থেকে অন্যত্র চলেযাই। হযরত ইমামহুসাইন (রাঃ) বললেন, ওগোআমার প্রাণ-প্রিয়বোন ! এখান থেকেআমি বের হতেপারব না। এটাআমার ‘শাহাদাত গাহ’ । এখানেই আমাকেশাহাদাত বরণ করতেহবে। এখানেই আমাদেররক্তের নদী প্রবাহিত হবে। এটা সেইভূমি, যেটা আহলেমুস্তাফা (ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এররক্তে রঞ্জিত হবে।এটাই সেই জায়গা, যেখানে ফাতিমাতুয যাহরা(রাঃ)-এর বাগানের বেহেশতী ফুলটুকরো টুকরো হয়েপতিত হবে এবংতাঁদের রক্তে এইভূমি লালে লালহয়ে যাবে। তাইসবাই অবতরণ করো, ছবর, ধৈর্য এবংসাহসের সাথে তাবুতেঅবস্থান করো। আমরাএখান থেকে কখনওযেতে পারব না।এখানেই আমাদেরকে ধৈর্যও সাহসিকতার পরাকাষ্টা দেখাতেহবে এবং এখানেইশাহাদাত বরণ করতেহবে। মোটকথাহলো মদীনাবাসী মদিনাথেকে মক্কায় গিয়েছিলেন এবংমক্কা থেকে বেরহয়ে কারবালায় এসেগেছেন । তকদিরতাঁদেরকে কারবালায় নিয়েএসেছে । কেননাকিয়ামত পর্যন্ত সবাইযেন তাঁদেরকে কারাবালাবাসী বলেঅভিহিত করেন ।যা হোক, তাবু খাটিয়ে তারাকারবালায় অবস্থান নিলেন। তাঁরাঅবস্থান নেয়ার পরথেকে ইবনে যিয়াদও ইয়াযীদের পক্ষথেকে সৈন্যবাহিনী একদলেরপর একদল আসতেলাগল। যেই দলইআসে, সবাই ইয়াযীদের পক্ষথেকে হযরত ইমামহুসাইন (রাঃ)এরকাছে এ নির্দেশটাই নিয়েআসল- ‘হযরত ইমামহুসাইন (রাঃ) কেগিয়ে বলো, তিনিযেন ইয়াযীদের কাছেবাইয়াত গ্রহণ করেন।যদি তিনি বাইয়াত গ্রহণকরতে রাজী হন, তখন তাঁকে কিছুবলোনা, তাঁকে ধরেআমার কাছে নিয়েএসো। আর যদিবাইয়াত গ্রহণ করতেঅস্বীকার করেন, তখনতাঁর সাথে যুদ্ধকরো এবং তাঁরমস্তক কর্তন করেআমার কাছে পাঠিয়ে দাও।’ এভাবে সৈন্য বাহিনীর যেইদলটিই আসতে লাগল, তারা একই হুকুমনিয়ে আসল। হযরতইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামবললেন, ‘এটাতো হতেইপারে না যে, আমি ইয়াযীদের হাতেবাইয়াত গ্রহণ করি। আফসোসের বিষয়, আমাকে আহ্বান করাহয়েছে আমার হাতেবাইয়াত গ্রহণ করারজন্য। আর এখনআমাকে বাধ্য করাহচ্ছে ইয়াযীদের হাতেবাইয়াত হওয়ার জন্য! এই বায়াত নাকরার জন্যইতো আমিমদীনা ছেড়ে মক্কাচলে গিয়েছিলাম। তাহলেকি আমি এখনমক্কা থেকে এখানেএসেছি ইয়াযীদের হাতেবাইয়াত হওয়ার জন্য? এটা কিছুতেই হতেপারে না। আমিইয়াযীদের হাতে কখনোবাইয়াত গ্রহণ করবনা।’ ওরা বলল, আপনি যদি ইয়াযীদের হাতেবাইয়াত গ্রহণ করতেরাজী না হন, তাহলে যুদ্ধের জন্যপ্রস্তুত হোন ।তিনি (রাঃ) বললেন, আমিতো যুদ্ধের জন্যওআসিনি। যুদ্ধের কোনইচ্ছাও পোষণ করিনা। ওরা বলল, এরকমতো কিছুতেই হতেপারে না। হয়তোবাইয়াত গ্রহণ করতেহবে নতুবা যুদ্ধকরতে হবে। হযরতইমাম হুসাইন (রাঃ) যখন দেখলেন, এদেরউদ্দেশ্য খুবই খারাপ, তখন তিনি তাদেরসামনে তিনটি শর্তপেশ করলেন। তিনিবললেন, ‘শোন! কূফাবাসী আমারকাছে চিঠি লিখেছেএবং চিঠিতে এমনকথা লিখা ছিল, যার জন্য শরীয়তমতে আমি এখানেআসতে বাধ্য হয়েছি। এখন যখনতারা বেঈমানী করেছে, আমি তোমাদের সামনেতিনটা শর্ত পেশকরছি; তোমাদের যেটাইচ্ছা সেটা গ্রহণকরো এবং সেইঅনুসারে কার্য সম্পাদন করো- ১। হয়তোআমাকে মক্কায় চলেযেতে দাও। সেখানেগিয়ে হেরেম শরীফেঅবস্থান করে ইবাদত-বন্দেগীতে নিয়োজিত থেকেবাকী জীবনটা অতিবাহিত করব ২। যদিমক্কায় যেতে নাদাও, তাহলে অন্যকোন দেশে যাওয়ার সুযোগদাও, যেখানে কাফিরবা মুশরিকরা বসবাসকরে। ঐখানে আমিআমার সমস্ত জীবনদ্বীনের তবলীগে ব্যয়করবো এবং ওদেরকেমুসলমান বানানোর প্রচেষ্টা চালাতেথাকবো আর … Read More

ইমাম হুসাইন (রা:)শাহাদাত

নিজেদের মারাত্মক পরিণতির কথাউপলব্ধি করে আমরবিন সা’আদনির্দেশ দিল, সবাইমিলে চারিদিক থেকেহযরত ইমাম হুসাইন(রাঃ)কে লক্ষ্যকরে তীর নিক্ষেপ করো। নির্দেশমত ইয়াযীদী বাহিনীনবী (সঃ) এরদৌহিত্রকে চারিদিক থেকেঘিরে বৃষ্টির মততীর নিক্ষেপ করতেলাগলো।ফলে চারিদিক থেকেতীর এসে হযরতইমাম হুসাইন (রাঃ)কে আঘাতহানতে লাগলো। কোনটাঘোড়ার গায়েও লাগছিল, কোনটা তাঁর নিজেরগায়ে পড়ছিল। এভাবেযখন তীরের আঘাতেতার পবিত্র শরীরঝাঁঝরা হয়ে ফিনকিদিয়ে সারা শরীরথেকে রক্ত বেরহতে লাগলো, তখনতিনি (রাঃ) বারবার মুখে হাতদিয়ে বললেন, বদবখতের দল! তোমরাতো তোমাদের নবীপাক (ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এরলেহাজও করলে না। তোমরানিজের নবী (ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এরবংশধরকে হত্যা করেছ। এভাবে যখনতিনি আর একবারমুখের উপর হাতদিলেন, তাঁর চোখেরসামনে আর একদৃশ্য ভেসে উঠল। তিনিদেখতে পেলেন, স্বয়ংহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম হাতেএকটি বোতল নিয়েদাঁড়িয়ে আছেন। হযরতআলী মর্তুজা (রাঃ) ও হযরত ফাতিমাতুয্ যাহরা(রাঃ)ও পার্শ্বে আছেনআর বলছেন, হুসাইন! আমাদের দিকে তাকাও, আমরা তোমাকে নিতেএসেছি। হযরতইমাম হুসাইন (রাঃ)এর কাপড়রক্তে ভিজে যাচ্ছিল আরহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম সেইরক্ত বোতলে ভরেনিচ্ছিলেন এবং বলছিলেন, হেআল্লাহ পাক! হুসাইনকে পরমধৈর্য ধারণের ক্ষমতাদান করুন। আল্লাহ্‌ ! আল্লাহ্‌ ! নবী পাকছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৌহিত্র নিজেররক্তে রঞ্জিত হয়েগেলেন। শরীর থেকেরক্ত বের হয়েগিয়ে একেবারে রক্তশূন্য হয়েগেলেন এবং আঘাতেআঘাতে জর্জরিত হয়েঘোড়া থেকে পড়েগেলেন। যে মুহূর্তে হযরতইমাম হুসাইন (রাঃ) ঘোড়া থেকে পড়েগেলেন, আল্লাহ পাকেরআরশ দুলিয়ে উঠলো, ফাতিমাতুয্ যাহরা (রাঃ) এর আত্মা ছটফটকরতে লাগলো, হযরতআলী (রাঃ)এররূহ মুবারক থেকে‘আহ’ শব্দ বেরহলো। সেই হুসাইন(রাঃ) পতিত হলেন, যাকে প্রিয় নবীছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কাঁধেনিতেন। ঘোড়া থেকেপড়ে যাওয়ার পরকমবখত্‌ সীমার, হাওলাবিন ইয়াযীদ, সেনানবিন আনাস প্রমুখবড় বড় জালিমএগিয়ে আসলো এবংহযরত ইমাম হুসাইন(রাঃ)এর শরীরেরউপর চেপে বসলো।সীমার বুকের উপরবসলো। হযরত ইমামহুসাইন (রাঃ) বুকেরউপর সীমারকে দেখেবললেন, আমার নানাজান ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম ঠিকইবলেছেন, একহিংস্র কুকুর আমারআহলে বাইতের রক্তেরউপর মুখ দিচ্ছে’, আমার নানাজান (ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)এরকথা মুবারক ষোলআনা সত্য, তুমিইআমার হত্যাকারী। আজজুমার দিন। এসময় লোকেরা আল্লাহপাকের দরবারে সিজদারত। আমারমস্তকটা তখনই আমারশরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করো, যখন আমিও সিজদারত থাকি। আহ ! দেখুন, হযরত ইমামহুসাইন (রাঃ) জীবনসায়াহ্নের সেই মুহূর্তেও পানিপান করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেননি, নিজেরছেলেমেয়েকে দেখার জন্যআরজু করেননি, সেইসময়ও কোন আকাঙ্খা বাআরজু থাকলে এটাইছিল যে, আমারমাথা নত হলেযেন আল্লাহ পাকেরসমীপেই নত হয়।সে সময়ও তিনি(রাঃ) বাতিলের সামনেমাথা নত করেননি । সেসময়ও তিনি (রাঃ) সিজদা করে বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছেন, নামাযপড়ে দেখিয়েছেন, দুনিয়াবাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, হুসাইন (রাঃ) আঘাতেজর্জরিত হয়ে মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়েও নামাযত্যাগ করেন নি। তিনি (রাঃ) দুনিয়াবাসীকেএটাই যেন বলতেচেয়েছিলেন, আমাকে যদিভালবাসেন, আমার জিন্দেগী থেকেশিক্ষা গ্রহণ করুন। হযরত ইমামহুসাইন (রাঃ) সিজদায় মাথারাখলেন এবং سبحان ربى الاعلى ‘সুবহানা রব্বিইয়াল আ’লা’ তাসবীহপাঠ করে বললেন, মাওলা! যদি হযরত ইমামহুসাইন (রাঃ)এরকুরবানী আপনার দরবারেগৃহীত হয়, তা’হলে এরছওয়াব (নানাজান ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এরউম্মতের উপর বখশিশকরে দাও । হযরতইমাম হুসাইন (রাঃ)এর মস্তকমুবারক যখন শরীরথেকে বিচ্ছিন্ন করেফেলল, তখন তাঁরঘোড়া স্বীয় কপালকেতাঁর (রাঃ) রক্তেরঞ্জিত করল এবংদৌড়ে চলে যেতেলাগল, তখন সীমারলোকদেরকে বলল, ঘোড়াটিকে ধরো, কিন্তু যতজন লোকঘোড়াটি ধরতে এগিয়েগেল, সে সবাইকেআক্রমণ করল এবংদাঁত আর পাদিয়ে জখম করেওদেরকে শেষ করেদিল। সতের জনলোককে এভাবে খতমকরল। শেষ পর্যন্ত সীমারবলল, ছেড়ে দাও, দেখি কি করে? ঘোড়া ছুটে গিয়েতাঁবুর কাছে গেলএবং কান্না ওচিৎকার করতেলাগলো। তথ্যসূত্র