সাহাবা যুগে তাকলিদ (মাজহাব) :
সাহাবা যুগে তাকলিদ (মাজহাব) :*****************মাজহাব/ তাকলিদ করার অর্থ হল ধর্মীয় অজানা বিষয়ে বিজ্ঞ লোকের কথা মানা। এ অর্থে সাহাবা যুগেও এর প্রচলন ছিল। কিন্তু যেহেতু আমাদের ৪ ইমামের আগমন সাহাবা যুগের পর তাই সাহাবারা আমাদের ইমাম দের অনুসরণ করেছেন কিনা ? এমন প্রশ্ন হাস্যকর । হ্যাঁ , প্রশ্ন হতে পারে এর প্রচলন তাদের যুগে ছিল কিনা? এর উত্তরে আমরা বলব , জি ভাই ছিল । যেমনঃ ১ ম প্রমানঃহযরত আস ওয়াদ বিন ইয়াযিদ বর্ণনা করেন, মু”আজ ইবনে জাবাল গভর্নর হিসেবে ইয়ামানে আগমন করলে আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করি, জনৈক ব্যক্তি ১ কন্যা ও ১ বোন রেখে মারা গেছে। এখন তাদের মাঝে সম্পদ বণ্টনের পদ্ধতি কি হবে? তদুত্তরে তিনি প্রত্যেকের অংশ অর্ধেক বলে সমাধান দেন। বুখারি শরিফ – ৮/৩৫১, হাঃ ৬৭৩৪ পর্যালোচনাঃক* মুয়াজ( রা ) একজন নির্ধারিত ব্যক্তি মাত্র। ইয়ামান বাসী তার অনুসরণ করা ওয়াজিব ছিল। অন্যথায় তাকে প্রেরণ অনর্থক ও অহেতুক গণ্য হবে। জা নবীর সা, শানের খেলাফ।খ, মুয়াজের ইয়ামান গমন রাসুলের যুগেই ছিল। এর মাধ্যমে নির্ধারিত ব্যক্তির অনুসরণ রাসুলের যুগেই শুরু হল। কেননা , রাসুলের জীবিত থাকাকালীন যাবতীয় বিষয়ে মুয়াজের অভিমত দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য ছিল।গ, প্রশ্ন ও উত্তর কোথাও দলিল উত্থাপন করা হয়নি। বরং তার প্রতি সুধারনার ভিত্তিতে তার কথা মানতে বাধ্য ছিলেন। এটাই তাক্লিদে সাখছি। ২য় প্রমানঃজনৈকা সাহাবী রাসুল (সা) এর কাছে আরয করেন, ইয়া রসুলাল্লাহ!আমার স্বামী জিহাদে গেছেন।তিনি থাকাবস্তায় আমি তার নামায ও অন্যান্য আমল অনুসরণ করতাম। তার আসা পর্যন্ত আমাকে এমন আমল বলে দেন, যা তার সমপর্যায়ে হবে।সুত্রঃ মুসনাদে আহমাদঃ৩/৪৩৯, তাব্রানি ২০/১৯৬,হাঃ৪৪১, মুস্তাদ্রা কে হাকিম২/৭৩ হাঃ ২৩৯৭। পর্যালোচনাঃদেখুন, হাদিসে মহিলা নামায সহ যাবতীয় আমলে তার স্বামী তথা ১ ব্যক্তির অনুসরণ করার কথা বলছেন, অথচ রাসুল কিছুই বল্লেন্না। এতে তাকলিদে জায়েজ হওয়ার ইংগিত পাওয়া যায়। তৃতীয় প্রমানঃরাসুলুল্লাহ সা, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রাঃ , ব্যপারে বলেন,আমি তোমাদের জন্য তাই পছন্দ করি ইবনে মাসুদ যা পছন্দ করে।সুত্রঃ রে ইরশাদ মুসতাদরাক – ৩/৩১৯ হাঃ৫৩৯৪ । ইমাম জাহাবি ও হাকিম হাদিস টি কে সহিহ বলেছেন। দেখুন, হাদিসে ইবনে মাসুদের পছন্দই রাসুলের পছন্দ বলে মত ব্যক্ত করা প্রমান বহন করে তার কথা অনুযায়ী অন্যরা আমল করলেও তা রাসুলের নিকট গৃহীত হবে। এর মাধ্যমে ও তাকলিদে শাখসি প্রমাণিত হয়। উল্লেখ্য, হানাফি মাযহাবের মাসআলা – মাসাইল বেশীর ভাগ ইবনে মাসুদের রাঃ বর্ণনা ও আমলের ভিত্তিতে ই হয়েছে। ৪র্থ প্রমানঃমদিনাবাসীর তাকলিদ।একদল মদিনাবাসি হযরাত ইবনে আব্বাস কে মাসআলা জিজ্ঞেস করল যে, ফরয তাওয়াপের পর বিদায়ী তাওয়াপের আগে যদি কোন মহিলার ঋতুস্রাব শুরু হয় তাহলে কি করবে? উত্তরে তিনি বললেন, বিদায়ী তাওয়াফ না করে মক্কা শরীফ ত্যাগ করতে পারবে । মদিনাবাসি যাইদ বিন সাবিতের অনুসরণ করতেন। তাই তারা বলল, আমরা যাইদ কে উপেক্ষা করে আপনার কথা মানতে পারিনা। যেহেতু আপনার ফাতওয়া যাইদের বিপরীতে । সুত্রঃবুখারি-২/৫৪১ ( ১৭৫৮-১৭৫৯)দেখুন, এখানে মদিনা বাসী যাইদ(রা) এর অনুসরণ করতেন যা তাকলিদে শাখসি ছিল। তাই তারা ইবনে আব্বাসের কথা সরাসরি না মেনে বলল ,আমরা আগে জাইদ কে জিজ্ঞাসা করি, তারপর। অথচ এ মাসআলায় ইবনে আব্বাস সঠিক ছিলেন। পরে ইবনে আব্বাস তাদেরকে বুঝিয়ে বললেন, তাহলে তোমরা মদিনায় গিয়ে উম্মে সুলাইম কে জিজ্ঞাসা করে নিবে।সুত্রঃ আবু দাউদ-তায়ালাসি প্রঃ২২৯ পরবর্তীতে তারা তাই করল। যাইদ বিন সাবিত ও বিষয়টি তাহকিক করে ইবনে আব্বাসের কথা মেনে নেন। দেখুন, কি অপূর্ব অনুসরণ। সাধারনরা এমনিতেই মেনে নিল । আর যিনি বিজ্ঞ , তিনি তাহকিক করার পর মেনে নিলেন। সুতরাং সাহাবারা কারো অনুসরণ করেননি এমনটা বলা ঠিক হবেনা। তাছাডা নবী সাঃ পৃথিবী থেকে বিদায়ের পর সাহাবায়ে কেরামের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৪৪০০০ তনমধ্যে ১৪৯ জন ছিলেন মুজতাহিদ ছাহাবী ,আর বাকীরা ছিল সাধারন তবকার সাহাবী অথাত তাদের মধ্যে ঐ রকম এজতেহাদ করার ক্ষমতা ছিলনা ,আবার মুজতাহিদ ছাহাবীদেরমধ্যে ৭ জন ছিলেন ১ম তবক্বা ২০ জন ছিলেন ২য় তবক্বার ও ১২২ জন ছিলেন ৩য় তবক্বার , গডে এ ১৪৯জন মূলত এ মুজতাহিদ ছাহাবীদের তাকলীদ করে ছিলেন প্রায় লক্ষাধীক ছাহাবায়ে কেরামসুতরাং ছাহাবীদের যুগেই মুলত তাকলীদের সূচনাকোরান হাদিসের অনেক জায়গায় ইমাম গণ কে মানার কথা বলছে ,তাই আমরা ঐ ইমাম গণ কে মান্য করি যারা আমাদেরে আল্লাহ রাসুলের দিকে ধাবিত করবে – যেমন আল্লাহ বলেন -১) হে মুমিনগণ!# তোমরা অনুস্মরণ কর, আল্লাহ্ পাক এর, তাঁর রাসুল পাক (সাঃ) এর এবং তোমাদের মধ্যে যারা ধর্মীয় নেতা ।(সুরাঃ নিসা, আয়াতঃ ৫৯) । আর আমরা এমন ইমাম গনকে অনুসরণ করি “যিনারা সবসেষ্ট যুগে এসেশেন ” তাবেনইয়ের যুগ “ # হযরত রাসূলে করীম (স.)বলেন,যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করলো সে আল্লাহর আনুগত্য করলো/যে ব্যক্তি আমাকে অমান্য করলো সে আল্লাহকে-ই অমান্য করলো/আর যে ব্যক্তি নেতার আনুগত্য করলো আমার-ই আনুগত্য করলো/যে ব্যক্তি নেতার আদেশ অমান্য করলো প্রকৃত পক্ষে সে আমার-ই আদেশ অমান্য করলো (বুখারী-মুসলিম)# হযরত মাও.শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেছ দেহলবী রহ.তার প্রনীত হুজ্জাতুহুল বালেগা কিতাবে লিখেছেন যে, আমল ও আকিদায় যারা কুরআন ও সুন্নাহ তথা সাহাবা ও তাবেয়ীনদের অনুসারী তারাই হল নাজী বা বেহেস্তী দল।পক্ষান্তরে যারা ছলফে ছালেহীনদের বিরোধিতা করে তারাই হবে ভ্রান্ত দলের অন্তরভুক্ত। ।# ইমাম আবু হানিফা (র:) ,উনার সম্পর্কে নবীজি ভবির্ষত বাণী করেন ,এইভাবে –ইমাম মুসলিম (রহ:) হযরত আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন। সরওয়ারে কায়েনাত হুজুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,لو كان الدين عند الثريا لناله رجل من فارس او قال من ابناء فارس حتى يتناوله–যদি দ্বীন সপ্তর্ষিমণ্ডলস্থ সুরাইয়া সেতারার কাছে গচ্ছিত থাকে তখনও পারস্যবাসীর এক ব্যাক্তি তা অর্জন করে নেবে।( মুসলিম শরীফ : আস সহীহ, কিতাবু ফাযায়িলিস সাহাবা, باب فضل فارس ).