সর্ব-হযরত আবূ বকর (রা.) ও উমর (রা.)-এর গুণ ও জ্ঞানগত শ্রেষ্ঠত্ব-(চূড়ান্ত পর্ব

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

একটি অনলাইন সাইটের ভাষ্যের সারসংক্ষেপ

অনুবাদ: এডমিন

وروى الترمذي (3682) عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: (إِنَّ اللَّهَ جَعَلَ الْحَقَّ عَلَى لِسَانِ عُمَرَ وَقَلْبِهِ ).

অর্থ: ইমাম আত্ তিরমিযী (৩৬৮২) হযরত ইবনু উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “আল্লাহ উমরের জিহ্বায় এবং তাঁর অন্তরে সত্য স্থাপন করেছেন।” [হাদীসের মান – সহীহ]

মোদ্দা কথা হলো, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আকীদা-বিশ্বাস, যার ওপর তাঁরা (সুন্নী আলেম-উলামা) সর্বসম্মতিক্রমে একমত, তা হলো নবী পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পর এই উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম হলেন হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু), তারপর হযরত উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। আল্লাহতায়ালা তাঁদের উভয়ের প্রতি সন্তুষ্ট হোন।

ইবনে তাইমিয়া বলেন:

لم يقل أحد من علماء المسلمين المعتبرين: إن عليا أعلم وأفقه من أبي بكر وعمر بل ولا من أبي بكر وحده، ومدعي الإجماع على ذلك من أجهل الناس وأكذبهم، بل ذكر غير واحد من العلماء إجماع العلماء على أن أبا بكر الصديق أعلم من علي، منهم الإمام منصور بن عبد الجبار السمعاني المروذي، أحد أئمة السنة من أصحاب الشافعي ذكر في كتابه: “تقويم الأدلة على الإمام” إجماع علماء السنة على أن أبا بكر أعلم من علي، وما علمت أحدا من الأئمة المشهورين ينازع في ذلك، وكيف وأبو بكر الصديق كان بحضرة النبي صلى الله عليه وسلم يفتي ويأمر وينهي ويقضي ويخطب كما كان يفعل ذلك إذا خرج هو وأبو بكر يدعو الناس إلى الإسلام ولما هاجرا جميعا ويوم حنين وغير ذلك من المشاهد والنبي صلى الله عليه وسلم ساكت يقره على ذلك ويرضى بما يقول ولم تكن هذه المرتبة لغيره. وكان النبي صلى الله عليه وسلم في مشاورته لأهل العلم والفقه والرأي من أصحابه: يقدم في الشورى أبا بكر وعمر فهما اللذان يتقدمان في الكلام والعلم بحضرة الرسول عليه السلام على سائر أصحابه، مثل قصة مشاورته في أسرى بدر، فأول من تكلم في ذلك أبو بكر وعمر، وكذلك غير ذلك…. وفي صحيح مسلم أن أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم كانوا معه في سفر فقال: (إن يطع القوم أبا بكر وعمر يرشدوا)، وقد ثبت عن ابن عباس: أنه كان يفتي من كتاب الله، فإن لم يجد فبما سنه رسول الله صلى الله عليه وسلم، فإن لم يجد أفتى بقول أبي بكر وعمر، ولم يكن يفعل ذلك بعثمان وعلي، وابن عباس حبر الأمة وأعلم الصحابة وأفقههم في زمانه، وهو يفتي بقول أبي بكر وعمر مقدما لقولهما على قول غيرهما من الصحابة. وقد ثبت عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال: ” اللهم فقهه في الدين وعلمه التأويل. مجموع الفتاوى 4 / 398.

অর্থ: “সম্মানিত মুসলিম উলামা/পণ্ডিতদের মধ্যে কেউই বলেননি যে, হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) সর্ব-হযরত আবূ বকর ও উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর চেয়ে বেশি জ্ঞানী ছিলেন বা ইসলাম সম্পর্কে বেশি বুঝতেন; এমনকি হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর একার চেয়েও বেশি বুঝতেন। যারা দাবি করে যে এই ভ্রান্ত ধারণার ওপর (উলামাবৃন্দের) ঐকমত্য আছে তারাই সবচেয়ে অজ্ঞ এবং সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী। বরং একাধিক আলেম বলেছেন যে পণ্ডিতদের ঐক্যমত রয়েছে এ মর্মে যে হযরত আবূ বকর আস-সিদ্দীক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)-এর চেয়ে বেশি জ্ঞানী ছিলেন; যেমন – ইমাম মনসূর ইবনে আবদুল জাব্বার আল-সাম’আনী আল-মারওয়াযী (রহ.) যিনি ইমাম আশ-শাফাঈ (রহ.)-এর শিষ্যদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় সুন্নী আলেম ছিলেন, তিনি তাঁর ‘তাক্বউয়ীমুল-আদিল্লাহ ‘আলাল-ইমাম’ শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে সুন্নী পণ্ডিতদের মধ্যে ঐকমত্য ছিল এ মর্মে যে হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)-এর চেয়ে বেশি জ্ঞানী ছিলেন। আমি বিখ্যাত ইমামদের মধ্যে এমন কাউকে চিনি না যিনি এই বিষয়ে মতভেদ করেছেন। এর অন্যথা কেমন করে হতে পারে যখন হযরত আবূ বকর আস্ সিদ্দীক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) শরঈ হুকুম-আহকাম ও নিষেধাজ্ঞা জারি করতেন, ফায়সালা দিতেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপস্থিতিতে খুতবা দিতেন, যেমনটি তিনি করতেন যখনই প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) মানুষদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিতে বের হতেন এবং যখন তাঁরা একসাথে হিজরত করেছিলেন এবং এর পাশাপাশি হুনাইনের যুদ্ধের দিনে এবং অন্যান্য উপলক্ষে; যখন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নীরব থাকতেন এবং এ সব অনুমোদন করতেন। হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর মতো অন্য কেউই এই ধরনের মর্যাদা লাভ করেননি। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন তাঁর সাহাবা (রা.)-দের মধ্যে জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করতেন, তখন তিনি প্রথমে সর্ব-হযরত আবূ বকর ও উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর সাথে পরামর্শ করতেন, কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপস্থিতিতে তাঁর বাকি সাহাবা (রা.)-দের সামনে তাঁরাই প্রথমে ইসলামী বিষয়াদি সম্পর্কে কথা বলতেন। উদাহরণস্বরূপ, যখন প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদর জ্বিহাদের বন্দীদের সম্পর্কে সাহাবা (রা.)-বৃন্দের সাথে পরামর্শ করেছিলেন, তখন প্রথম যাঁরা এই বিষয়ে কথা বলেছিলেন তাঁরা হলেন সর্ব-হযরত আবূ বকর ও উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা), এবং এটা অন্যান্য উপলক্ষেও ঘটেছে… সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, একবার নবী পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাহাবা (রা.)-বৃন্দ তাঁর সাথে সফরে ছিলেন এবং তিনি বলেন: ‘লোকেরা যদি আবূ বকর ও উমরের আনুগত্য করে তবে তারা সৎপথে পরিচালিত হবে।’ আর হযরত ইবনু আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি আল্লাহর কিতাবের উপর ভিত্তি করে ফতোয়া দিতেন এবং (তাতে সমর্থনসূচক) কিছু না পেলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সুন্নাতের দিকে তাকাতেন; এরপরও যদি তিনি (তাতে) কিছু না পেতেন তবে তিনি সর্ব-হযরত আবূ বকর এবং উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর ফতোয়াগুলি থেকে ফায়সালা নিতেন; এরপরও যদি তিনি (তাতে) কিছু না পেতেন তবে তিনি সর্ব-হযরত উসমান এবং আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর ফতোয়াগুলি থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন – আর হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন হাবর আল-উম্মাহ (উম্মাহর পণ্ডিত) এবং তিনি তাঁর সময়ে সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর মাঝে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী আলেম; আর তিনি সর্ব-হযরত আবূ বকর ও উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর সাথে পরামর্শ করতেন এবং সাহাবা (রা.)-দের মধ্যে অন্য কারো কথার উপর তাঁদের পরামর্শকে অগ্রাধিকার দিতেন। অধিকন্তু এটা প্রমাণিত যে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর জন্য দোয়া করেছিলেন এবং বলেছিলেন, “হে আল্লাহ, তাকে ইসলামী দ্বীন বোঝার এবং (কুরআনের) সঠিক তাফসীর/ব্যাখ্যা শিক্ষা দিন।” [মজমূআ আল-ফাতাওয়া, ৪/৩৯৮]

আরো দেখুন –

(ক) আল-ফাসল ফীল-মিলাল ওয়ান্ নিহাল, ৪/২১২;

(খ) বাল্ দ্বলালাহ, ২৫২ পৃষ্ঠা;

(গ) আশ্ শী’আতুল ইমা’মিয়্যাতুন্ ইসনা আশারিয়্যাহ।

*সমাপ্ত*

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment