শবে বরাতের আমল ও ফজিলত

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান বা শবে বরাত ও এ রাতের আমল

ইসলামী ১২টি চন্দ্রমাসের মধ্যে শা’বান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ন মাস। আর এ মাসের ১৫তম রজনীকে হাদিসের ভাষায় লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান বলা হয়, যা আমাদের দেশে শবে বরাত নামে অধিক প্রসিদ্ধ। এই শা’বান মাস ও শবে বরাতের অসংখ্য ফযিলত হাদিস শরীফে পাওয়া যায়।

# শা’বান মাসে রাসুল ﷺ বেশি ইবাদাত করতেন কেন ?  

১. হযরত ওসামা বিন জায়েদ (রাদি.)  শাবান মাসে অধিক হারে রোজা রাখার কারন জানতে চাইলে নবীজি ﷺ বলেন, রজব ও শা’বান হল রমদ্বানের মধ্যবর্তী মাস। এমাসে মানুষরা অলস থাকে। অথচ এ মাসে বান্দার আমল সমূহ উঠানো হয়। আর আমি পছন্দ করি, যখন আমার আমল উঠানো হবে তখন আমি রোজাদার অবস্থায় থাকি। 

(বায়হাকী- ফাযায়েলুল আওকাত, হাদিস নংঃ ২১)

২. মা আয়েশা সিদ্দীকা (রাদি.) বলেন- আমি রাসুল ﷺ কে রমদ্বান  ব্যতিত অন্য কোন পুরো মাসে রোজা রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে কোনও মাসে বেশি রোজা রাখতে দেখিনি। 

(সহিহ বোখারী, হাদিস নংঃ ১৮৪৪)

৩. মা আয়েশা সিদ্দীকা (রাদি.) শা’বান মাসে অধিক হারে রোজা রাখার কারন জানতে চাইলে  রাসুল ﷺ এরশাদ করেন, এমাসে কারা মৃত্যু বরণ করবে তাদের তালিকা আযরাঈল (আ.)কে প্রদান করা হয়।তাই আমি চাই যে, আমার নামটি লিপিবদ্ধ করা হোক রোজাদার অবস্থায়। (মুসনাদে আবু ই’য়ালা, হাদিস নংঃ ৪৯১১)

# ১৫ই শা’বান রজনী (শবে বরাত)’র ফজিলত কি? 

১. মা আয়েশা সিদ্দীকা (রাদি.) বলেন- আমি এক রাত্রিতে রাসুল ﷺ কে ঘরে পাইনি। ঘর থেকে বেরিয়ে জান্নাতুল বাকীতে পাই। রাসুল ﷺ বললেন, আজ ১৪শাবানের দিবাগত রাত। এরাত্রিতে আল্লাহ (তার শান ও সিফাত অনুযায়ী) প্রথম আসমানে আসেন এবং বনু কলব গোত্রের ছাগলের সমূদয় পশমের চেয়েও অধিক সংখ্যক ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন।

(তিরমিজি কৃত আল-জামেঈ সহিহ, ৩/১১৬ মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ৬/২৩৮) 

২. মুয়াজ বিন জাবাল (রাদি.) থেকে বর্নিত, রাসুল ﷺ এরশাদ করেন, শাবানের ১৫তম রাত্রিতে আল্লাহ স্বীয় সৃষ্টির প্রতি রহমতের দৃষ্টি দান করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতিত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (তাবরানী কৃত মুজামুল আওছাত, হাদিস নংঃ ৬৭৭৬, সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নংঃ ৫৬৬৫)

একই ধরনের আরও অসংখ্য হাদিস কিছু ভিন্ন ভিন্ন শব্দে বর্নিত হয়েছে।

# এ রাতে রাসুল ﷺ কি আমল করতেন ?

১. রাতে ইবাদাত বন্দেগীতে ও দিনে রোজাঃ

হযরত আলী (রাদি.) বর্ননা করেন, রাসুল ﷺ এরশাদ করেছেন, শা’বান মাসের ১৫ তারিখ উপনীত হলে তোমরা ইবাদতের মাধ্যমে রাত উদযাপন কর এবং দিনে রোজা রাখ। কেননা এ রাতে সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর আল্লাহ প্রথম আসমানে (তার শান ও সিফাত অনুযায়ী) এসে ডাকতে থাকেন, কে আছ ক্ষমা প্রার্থনা কারী? আমি তাকে ক্ষমা করব। কে আছ রিজিক প্রার্থী? আমি তাকে রিজিক প্রদান করব। কে আছ বিপদ গ্রস্থ? আমি তার বিপদ মুক্ত করব। এভাবে ফজর পর্যন্ত আহবান করতে থাকেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ ১/৪৪৪, বায়হাকী কৃত শুয়ায়বুল ইমান ৫/৩৫৪)

২ঃ দীর্ঘ ক্বিরাত ও সিজদার মাধ্যমে নামাজ আদায়ঃ

মা আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) বলেন, একবার রাসুল ﷺ দীর্ঘ সিজদায় অতিবাহিত করলে আমি ভীত হয়ে গেলাম তিনি ইন্তেকাল করলেন কিনা! আমি তখন উঠে উনার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। উনার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। নামাজ শেষ করে তিনি ইরশাদ করলেন, এটা হল অর্ধ শাবানের রাত । আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই। (বায়হাকী,শুয়াইবুল ঈমান ৩/৩৬৬)

# আমরা কিভাবে এ রাতকে কাজে লাগাতে পারি ? 

১. নামাজ

ফরজ নামাজের পাশাপাশি কয়েকটি নফল নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যেতে পারে।

ক. (বাদ মাগরিব) সালাতুল আওয়াবিন। 

খ. সালাতুস তাসবিহ। 

গ. ক্বিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুত। 

এছাড়াও দুই রাকাত করে যতবেশি সম্ভব নফল নামাজ আদায় করা।

২. কোরআন তিলাওয়াত

ক. বাদ মাগরিব সুরা ইয়াসিন

খ. বাদ এশা সুরা মুলক

গ. বাদ ফজর সুরা ওয়াক্বিয়াহ 

এছাড়াও পবিত্র কোরআনের যেকোন জায়গা থেকে যত বেশি সম্ভব তিলাওয়াত করা। 

৩. দোয়া, যিকির, তওবা, ইস্তিগফার, দুরুদ ও সালাম।

হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন- যখন বান্দা নফল ইবাদাত করে তখন বান্দা আল্লাহর খুব প্রিয় হয়ে যায়।এমনকি তখন আল্লাহ বান্দাকে ভালোবাসে।(বোখারী)। আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার এক অফুরান সুযোগ এনে দেয় এই লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান তথা শবে বরাত। তাই আসুন এ রাতকে কাজে লাগাই। এবং প্রতিটি রাতেই এমন নফল ইবাদাত বন্দেগী করার অভ্যাস গড়ে তুলি।

৪. হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রাসূল (সাঃ) কে মধ্য শাবানের রাতে (শবেবরাতের রাতে) ১৪ রাকাত নামায পড়তে দেখেছি, নামাযের পর
 সূরা ফাতিহা ১৪ বার,
সূরা ফালাক ১৪ বার
সূরা নাস ১৪ বার
আয়তুল কুরসী ১ বার
লাক্বাদ যা আকুম রাসূলুম মিন আনপুছিক্বুম ১ বার,
পড়ার পর দোয়া করলেন।
আর রাসূল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি অনুরুপ করবে তার আমলনামায় ২০ টি কবুল হজ্জ ও ২০ বছর নফল রোজার সাওয়াব লিখে দেওয়া হবে।
আর যে পরের দিন রোযা রাখবে তাকে পূর্বের এক বছর ও আগামী এক বছর রোযা রাখার সাওয়াব দেওয়া হবে।
👉 বায়হাকী শরীফ,শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং৩৫৫৯,
তাফসীরে দূররে মানসুর,৫খন্ড,পৃ-৭৪২

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment