মাযহাব এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

মাযহাব এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
মুহিব্বুল্লাহ সিদ্দিকী
উপস্থাপনাঃ
আল্লাহ তা’আলার জন্য সকল প্রশংসা যিনি বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করো এবং তোমাদের নির্দেশদাতাদের” (আল- কোরআন ৪: ৫৯ )। দুরুদ, সালাত ও সালাম সেই নবীর চরণে যিনি এরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উম্মতকে কোন প্রকার ভ্রষ্টতায় ‘ইজমা’ বা ঐক্যবদ্ধ করবেন না(তিরমিজী, পৃষ্ঠা: ৪/৪০৫, মুস্তাদরাকে হাকেম, পৃষ্ঠা: ১/১১৬)। মুজতাহিদকে মান্য করাই মাযহাব। ইসলামের সূচনাকাল থেকে চলে আসা মাযহাব; বর্তমানে কেউ কেউ মানতে চান না। নিন্মে মাযহাব এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে তথ্য ও দলীল ভিত্তিক একটি গঠন মূলক রচনা উপস্থাপনের প্রয়াস চালানো হল।
মাযহাব, তাকলীদ ও মুকাল্লিদ এর শাব্দিক অর্থঃ
‘মাযহাব’ (مَذْهَبٌ) শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো পথ, মত , উৎস । পরিভাষায় মাযহাব হলো ইসলামী শরীয়তের ব্যাপারে দালায়েল (প্রমাণ) এর ভিত্তিতে মুজতাহিদ (مُجْتَهِدٌ/গবেষক) কর্তৃক প্রদত্ত সুষম ব্যাখ্যা। তাকলীদ (تَقْلِيْدٌ) হলো মুজতাহিদ কর্তৃক প্রদত্ত ব্যাখ্যা অনুসরণ। যিনি মাযহাব অনুসরণ করেন, তিনি মুকাল্লিদ (مُقَلِّدٌ) অর্থাৎ অনুসারী (আল-মু’জামুল ওয়াফী, পৃষ্ঠা: ৭৫৩, তাফসীরে আহমদী, মিসবাহুল লুগাত, পৃষ্ঠা: ২৬২)
কোরআনের আলোকে মাযহাবঃ
মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন,
فَسْئَلُوْا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لاَ تَعْلَمُوْنَÑ
অর্থঃ “তোমরা না জানলে জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস কর”(আল-কোরআন ১৬: ৪৩)। এ আয়াত থেকে বুঝা গেল, শরীয়তের বিধি-বিধান সম্পর্কে যারা আবগত নয়; তাদের উপর মাযহাব মানা ওয়াজিব (তাফসীরে আহমদী)।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ-
অর্থঃ “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করো এবং তোমাদের নির্দেশদাতাদের” (আল- কোরআন ৪:৫৯)। আলেম-ওলামা, ইমাম-মুজতাহিদ, ফকিহগণকে মান্য করা অপরিহার্য (তাফসীরে নুরুল ইরফান)।
فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنْذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ-
অর্থঃ “সুতরাং কেন এমন হলো না যে, তাদের প্রত্যেক দল হতে একটি দল বের হতো; যারা ধর্মের জ্ঞান অর্জন করত এবং ফিরে এসে সম্পদায়কে সতর্ক করতো, এ আশায় যে তারা সতর্ক হবে” (আল-কোরআন ৯:১২২)। এ আয়াত থেকেও বুঝা গেল যে, যারা দ্বীনের বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করবে, তাদেরকে মান্য করা সম্পদায়ের উপর দায়িত্ব।
لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَاÑ
অর্থঃ “আল্লাহ কোন আত্মার উপর বোঝা অর্পণ করেন না; কিন্তু তার সাধ্য পরিমাণ”(আল-কোরআন ২:২৮৬)। আল্লাহ সকলের উপর ইজতিহদের মত কষ্টের কাজ আরোপ করবেন না। যাদের ইজতিহাদ করার সামর্থ্য নেই তারা তাকলীদ করবে।

يَوْمَ نَدْعُو كُلَّ أُنَاسٍ بِإِمَامِهِمْÑ
অর্থঃ “যে দিন আল্লাহ প্রত্যেক মানব দলকে তাদের তার ইমামের সাথে ডাকবো”(আল-কোরআন ১৭:৭১)। এ আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে, ইমাম হচ্ছেন দ্বীনি পেশোয়া। সুতরাং কেয়ামতের দিন বলা হবে, হে হানাফী, হে শাফেয়ী… এর অনুসারীরা (তাফসীরে রুহুল বয়ান)।
হাদিসের আলোকে মাযহাবঃ
ইয়ামানের শাসনকর্তা হিসাবে হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হল। নবীজী বললেন, হে মুয়াজ! যখন তোমার কাছে বিচারের ভার ন্যস্ত হবে, তখন তুমি কিভাবে ফায়সালা করবে? মুয়াজ উত্তরে বললেন, আল্লাহর কোরআর দ্বারা। নবীজী বললেন, কোরআনে না পেলে কি দ্বারা ফায়সালা করবে? মুয়াজ বললেন, রাসূলুল্লাহর সুন্নাহ দ্বারা। নবীজী আবার বললেন, সুন্নাহ দ্বারা না পারলে। মুয়াজ উত্তর দিলেন, আমি ইজতেহাদ বা গবেষণা করার চেষ্টা করব (নুরুল ইরফান, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৫৯৪, সুনানে তিরমিজী, হাদিস নং ১৩২৭, সুনানে দারেমী, হাদিস নং ১৬৮, মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২২০৬১)।
হযরত হুযায়ফা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলে, রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেন, জানি না আর কত দিন আমি তোমাদের মাঝে বেচে থাকবো, তোমরা আমার পরে হযরত আবু বকর, ও হযরত ওমর এ দু’জনকে অনুসরণ করবে। তাকলীদ বা অনুসরণের কথা উল্লেখ্য হাদিসে পাওয়া যায় ( তিরমিজী, ইবনে মাজাহ)।
সাহাবায়ে কিরামের মাযহাবঃ
ইসলামী শরীআতের মূল উৎস হলো চারটিঃ (১) কুরআন, (২) হাদীস, (৩) ইজমা ও (৪) কিয়াস। সাহাবায়ে কিরাম ইজমার উপর আমল করার চেষ্টা করতেন।
হাদিস শরীফে এসেছে,
قَالَ عُثْمَانُ سَمِعْتُه مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ضَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ فَسَئَلْتُ عَنْ ذلِكَ عَلِيًّا وَ الزُّبَيْرَ وَ طَلْحَةَ وَ اُبَىَّ بْنَ كَعَبٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمْ فَاَمَرُوْهُ بِذلِكَ-
অর্থঃ হযরত উছমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি তা শুনেছি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে; অতপর আমি সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কে, হযরত যুবায়ের (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কে, হযরত তলহা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কে এবং হযরত উবায় ইবনে (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কে। তারা সকলেই একই নির্দেশ দিলেন (বোখারী শরীফ, খন্ড: ১, পৃষ্ঠা: ১১৪, ইবনে মাজাহ)।

সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে ইখতিলাফ থাকলে মুজতাহিদ তাহকীকের মাধ্যমে একটাকে প্রাধান্য দিতে পারেন।
মাযহাব মানার প্রথম কথা ও শেষ কথাঃ
“যেহেতু আমরা কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ হতে ইজতিহাদ (اِجْتِهَادٌ) বা গবেষণা করে মাসআলা বের (اِسْتِنْبَاطٌ) করতে পারি না, তাই মাযহাব অনুসরণ করি। সুতরাং এটাই আমাদের মাযহাব অনুসরণের প্রথম কথা ও শেষ কথা”।
যারা কোন মযহাব মানেন না বলে দাবী করেন তাদের মাযহাব হলো ‘নাফসে আম্মারা মাযহাবঃ
যারা আহলে হাদীস দাবী করেন তারা হয়তো সকলেই ‘মুজতাহিদ’ (যা অসম্ভব) অথবা ‘বোখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর মাযহাব’ বা ‘ইবনে তাইমিয়া মাযহাব’ অথবা ‘মহল্লার ইমামের মাযহাব’ (যার ইজতিহাদের যোগ্যতা আদৌ নেই) নতুবা ‘নিজের মাযহাব’ তথা নফসে আম্মারা ( نَفْس اَمَّارَة) এর মাযহাব’ অনুসরণ করেন। কেননা ‘ মুকাল্লিদ’ বা ‘মুজতাহিদ’ হওয়া ছাড়া তৃতীয় কোন পথ নেই। কারণ সকল মানুষ যেমন ‘মেডিসিন বিশেষজ্ঞ’ হওয়া সম্ভবপর নয়; তেমনি সকল মানুষ ‘মুজতাহিদ’ হওয়াও অসম্ভব ব্যাপার।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
اَفَرَاَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلـهَه هَوَاهُ-
অর্থঃ “তোমরা কি তাকে দেখেছো? যে তার নাফসকে তার মাবুদ হিসেবে গ্রহণ করেছে”(আল-কোরআন ২৫:৪৩)।
জগৎ বিখ্যাত আলেমগণের দৃষ্টিতে মাযহাবঃ
আল্লামা ইমাম ইবনে হাজার মক্কী বলেন, আমাদের যুগের বিশেষজ্ঞদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবু হানীফা, শাফেয়ী, মালেক, আহমদ বিন হাম্বল- এ চার ইমাম ব্যতিত অন্য কারও তাকলীদ জায়েয হবে না(ফাত্হুম মুবীন, পৃষ্ঠা: ১৯৬)।
হযরত শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ মোহাদ্দেছ দেহলভী বলেন, আমি হারামাইন শরীফাইনে অবস্থান কালে ৩টি জিনিস নবীজী থেকে এলহামের মাধ্যমে জানতে পারলাম। এর মধ্যে ২য় টি হলো আমি যেন মুসলমানদের ওসীহত করে যাই যে, তোমরা ৪ মাযহাবের মধ্য থেকে যেকোন একটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। কেউ এর থেকে খালি হয়ো না(ফুয়ুজুল হারামাঈন, পৃষ্ঠা: ৬৫)।
আল্লামা ইমাম তহাবী বলেন, ৫ম টি হলো শয়তানী (৪ মাযহাব ব্যতিত) ( তহাবী শরীফ)।
বুখারী শরীফ তথা হাদীসের কিতাব মানলেও মাযহাব মানা হয়ঃ
ইমাম বোখারী, ইমাম মুসলিমও ইমাম তিরমিযীসহ বড় বড় মুহাদ্দিসগণ মুজতাহিদ ছিলেন। তাই তাদের কাউকে মানলেও মাযহাব মান্য করা হয়। মাযহাব সংখ্যাও অনেক কিন্তু; সব মাযহাব ব্যাপকভাবে অনুসৃত হয়নি, যার কারণে চারটি মাযহাবই প্রসিদ্ধি লাভ করেছে, (১) হানাফী, (২) মালিকী, (৩) শাফিয়ী, (৪) হাম্বলী।
যার উপর মাযহার মান্য করা ওয়াজিবঃ

শরীয়তের বিধি-বিধান বর্তায় এমন দিক থেকে মুসলমান ২ প্রকার। (ক) মুজতাহিদ, (খ) গাইরে মুজতাহিদ। মুজতাহিদ বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যিনি, কোরআন-হাদিসের ইশারা বুঝতে পারেন, নাসেখ-মানসুখ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত, যিনি নাহু-সরফ সহ আরবি কাওয়ায়েদে দক্ষ।
গাইরে মুজতাহিদ যিনি উপরোক্ত বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান রাখেন না। সকল গাইরে মুজতাহিদের উপর মাযহাব মান্য করা ওয়াজিব। আর মুজতাহিদ মাযহাব মান্য নিষিদ্ধ (তাফসীরাতে আহমাদীয়া)।

হানাফী মাযহাবের ফযীলত বা শ্রেষ্ঠত্বঃ
হানাফী মাযহাবের শ্রেষ্ঠত্ব প্রথমত এই ৪ ইমামের মধ্যে একমাত্র ইমাম আবু হানীফা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হলেন তাবেয়ী (تَابِعِى), আর বাকী ৩ জন ইমাম হলেন তাবে-তাবেয়ী (تَبْع تَابِعِى)। দ্বিতীয়ত বর্তমান পৃথিবীর ৮০% মুসলমানই হানাফী মাযহাব অনুসারী।
একটি প্রশ্নের উত্তরঃ
অনেকে বলেন, হাদীস মানার ব্যাপারে ইমাম আযম আবু হানীফা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন-
اِذاَ صَحَّ الْحَدِيْثُ فَهُوَ مَذْهَبِىْ-
অর্থঃ কোন হাদীস সহীহ প্রমাণ হলে তাই আমার মাযহাব(উসুলে ফিকহ)। সুতরাং বলা যায় যে, তিনি তার মাযহাব অনুসরণ করতে বলেননি বরং সহীহ হাদীস অনুসরণ করতে বলেছেন। তাই যারা মাযহাব না মেনে হাদীস অনুসরণ করে তারাই সঠিক পথে আছে (?)
উত্তরে আমরা বলবো- একই বিষয়ে যদি একাধিক (বিপরিতমুখী) সহীহ হাদীস থাকে অথবা কোন হাদীস যদি (শাব্দিকভাবে কুরআনের বিপরিত হয়) তবে আমরা কোনটি আমল করবো?
যেমনঃ অজু বিষয়ে কোরআনের আয়াত-
فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ-
অর্থঃ সুতরাং তোমরা ধৌত কর তোমাদের চেহারা সমূহ ও হস্তদ্বয় কনুই পর্যন্ত আর তোমরা মাথাগুলো মাসহ করবে এবং তোমাদের পাগুলো উভয় টাখনু পর্যন্ত (আল কোরআন ৫:৬)।

এ প্রসঙ্গে বোখারী শরীফে বলা হয়েছে, পা মাসাহ করার কথা (প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা ৯৬, পরিচ্ছেদ ৯৬)। কিন্তু সেই বোখারী শরীফেই আবার বলা হয়েছে পা ধোয়ার কথা, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অজুতে দুবার করে ধুয়েছেন (বুখারী শরীফ, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা ১০৫, পরিচ্ছেদ ১১৮, হাদীছ ১৬০)।
আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, অজুতে তিনবার করে ধোয়া; তারপর উভয় পা গিরা পর্যন্ত তিনবার ধুয়ে নিলেন (বুখারী শরীফ, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা ১০৬, পরিচ্ছেদ ১১৯, হাদীছ ১৬১) ।
মোদ্দা কথা হলো: সহীহ হাদিসেও একই রকম কাজের দুই বা তিন রকম পর্যন্ত করার পদ্ধতির বর্ণনা পাওয়া যায়। সেজন্য মুজতাহিদ কর্তৃক ফায়সালা মেনে আমল করতে হবে।
যারা মাযহা মানেন না তারা সালাফী না খালাফী?
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার শতাব্দী হলো শ্রেষ্ঠ যুগ, অতপর এর সাথের শতাব্দী, তারপর তার সাথের শতাব্দী।
আমরা আরো জানি খায়রুন বা শ্রেষ্ঠ যুগ আমাদের জন্য অনুকরণীয়। এই তিন শতাব্দীর লোকদেরকে একত্রে সালাফ বা সালফে সালেহীন বলা হয় এবং এর পরবর্তীগণকে খালাফ (পরবর্তী) নামে অভিহিত করা হয়। সালাফের মধ্যে ৪ মাযহাবের ইমামগণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। যারা সালাফ বা সালফে সালেহীনদের অনুসারী তাদের সালাফী বলা হয়।
তথাকথিত আহলে হাদীসগণ নিজেদেরকে সালাফী দাবী করেন; কিন্তু তারা সালাফ বা সালফে সালেহীন তথা ৪ ইমামকে মানেন না, বরং তারা মানেন ইবনে তাইমিয়া, ইবনে কাইয়িম ও নাছীরুদ্দিন আলবানী কে, এদের কেউই সালাফ নন, এরা হলেন খালাফ (পরবর্তী যুগের)। সুতরাং এদের অনুসারী হলে সালাফী হওয়া যাবে না; এদের প্রকৃত নাম হওয়া উচিৎ “খালাফী”। প্রকৃত পক্ষে যারা ৪ মাযহাবের ইমামগণ তথা সালফে সালেহীনদের অনুসারী তারাই প্রকৃত সালাফী নামে আখ্যায়িত হওয়ার যোগ্য।
উপসংহারঃ
আল্লাহ তা’আলা প্রিয় নবীজীকে স্বয়ং শিক্ষা দিয়েছেন। সকল মাযহাবের ইমানগণ প্রিয় নবীজীর যোগ্য উত্তরসূরি। একথা দিবালোকের ন্যায় উজ্জল যে, ‘দুনিয়াব কাজে তাকলীদ যত প্রয়োজন, এর চেয়ে বেশি দরকার দীনের ক্ষেত্রে ‘(স্মারক- ২০১৫, পৃষ্ঠা: ৫৯, কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া কামিল মাদরাসা, ঢাকা)।
সঠিক ও সুন্দর ভাবে আল্লাহর আইন মান্য করতে হলে মাযহাব মান্য করা অবশ্যক। আল্লাহর পক্ষ থেকে মাযহাব আমরা যারা খালাফ (পরবর্তী যুগের) তাদের জন্য রহমত।
লেখক: ইসলামী গবেষক ও গ্রন্থ প্রণেতা।
ই-মেইল: mohibdhaka11@gmail.com

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment