নামাযে মনোযোগি হওয়ার উপায় কি? অমনোযোগিদের নামায হবে কিনা?

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

প্রশ্ন: নামায অবস্থায় আমার মনোযোগ একাগ্রতা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে দুনিয়াবী/পার্থিব কাজের দিকে বা অন্যমনস্কতা চলে আসে। এতে নামায হবে কিনা? এবং নামাযে মনোযোগি হওয়ার উপায় কি? জানিয়ে ধন্য করবেন।

উত্তর: নামাযের মধ্যে আল্লাহ্ ও তাঁর প্রিয় রসূলের খেয়াল আসা, স্বাভাবিকভাবে আল্লাহ্-রসূলের প্রতি মনোযোগী হওয়া নামায কবূল হওয়ার আলামত। এটাকে হাদীস শরীফের বর্ণনায় হুজুরি ক্বলব বলা হয়েছে । কারণ, আল্লাহ্ ও রসূলের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এবং তাঁর নির্দেশ মানার জন্য নামায আদায় করা হয়। তদুপরি প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার খেয়াল নামাযের মধ্যে উদয় হয় এজন্য যে, প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-صلوا كما رايتمونى اصلى (الحديث) অর্থাৎ- তোমরা যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছ সেভাবে নামায পড়ো। সুতরাং প্রিয় রসুলের তরীক্বাহ বা পদ্ধতি অনুযায়ী নামায পড়তে গেলে প্রিয় রসুলের প্রদর্শিত নিয়ম-পন্থা ইত্যাদি নামাযের মধ্যে স্মরণ আসাটা স্বাভাবিক। বিশেষ করে তাশাহুদের মধ্যে প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে স্মরণ করেই সালাম দিতে হয়। তাই যদিও নামায একমাত্র আল্লাহর জন্য আদায় করা হয়, তারপরও তাতে প্রিয় রসূলের স্মরণ আসা নামায় কবুল হওয়ার আলামত। যেহেতু প্রিয় রসূলের স্মরণ আল্লাহ্ই স্মরণের নামান্তর। যেমন আল-কোরআনে উল্লেখ্য আছে-من يطع الرسول فقد اطاع الله অর্থাৎ যে রসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্য করবে বস্তুত: সে আল্লাহরই আনুগত্য করে। [সূরা- নিসা, আয়াত- ৮০] 

এ ছাড়া পার্থিব সম্পর্কের ব্যক্তি বা বস্তুর কথা নামাযের মধ্যে স্মরণ হওয়া অথবা নামাযে বাজে খেয়াল আসা এবং বিভিন্ন দিকে মনোযোগ চলে যাওয়া শয়তানী কুমন্ত্রণা ছাড়া কিছুই নয়। তাই নামাযের মধ্যে এ প্রকার পার্থিব বা দুনিয়াবী আজে-বাজে খেয়াল স্মরণ হওয়া থেকে মনযোগকে আল্লাহ্ ও রসূলের দিকে মনোনিবেশ করার জন্য নামাযের আরকান-আহকাম, ওয়াজিব, সুন্নাত-মুস্তাহাব ইত্যাদি পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে আদায় হচ্ছে কিনা- সেদিকে দৃষ্টি রাখবে। এতে নামাযের মধ্যে অন্য দিকে মনোযোগ যাবে না। তবে এ প্রকার পার্থিব বস্তর দিকে খেয়াল বা মনোযোগ দিলে নামায ফাসেদ হবে না- কিন্তু ফজীলত, বরকত ও অধিক সাওয়াব থেকে অবশ্যই মাহরূম হবে। নামাযের মধ্যে ‘খুশু-খুজু’ রক্ষা করা এবং আল্লাহর দিকে নিজের অন্তর ও দৃষ্টিকে নিবদ্ধ রেখে একাগ্রচিত্তে মনোযোগী হওয়াই নামাযের প্রাণ বা মূল। এ বিষয়ে বেশী বেশী নামাযের আগে ইস্তেগফার ও দরূদ শরীফ পড়ার পরামর্শ রইল। আল্লাহর যেসব বান্দা এভাবে একাগ্রচিত্তে নামায আদায়ের জন্য সচেষ্ট থাকেন তাঁদের সফলতা অবশ্যম্ভাবী। পবিত্র কোরআন মজীদে ইরশাদ হচ্ছে- قد افلح المومنون الذين هم فى صلوتهم خاشعون  – অর্থাৎ- নিশ্চয় সফলকাম হয়েছেন ওইসব মুমিন যারা নিজেদের নামাযে বিনয় ও নম্র। 

[সূরা মু’মিন: আয়াত- ১-২]  

আল্লাহ্ তা’আলা বিনয়, নম্র ও একাগ্রচিত্তে নামায আদায় করার সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন। 

(আহকামুল ক্বোরআন কৃত: ইমাম আবুব বকর জাসসাস (রহ.), ১ম খন্ড ইত্যাদি)

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment