খুতবাতু গাদীরে খুম (৩)

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

খুতবাতু গাদীরে খুম (৩)

(خطبة غدير خم)

মূল: মাহাজ্জাহ-ডট-কম

অনুবাদক: নাঈম আল-জা’ফরী

(মিথ্যাকে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। তদ্রুপ সত্যকে লুকিয়ে রাখা যায় কিন্তু বিলুপ্ত করা যায় না।)

১. হাদিসের প্রসঙ্গ

মক্কা ও মদীনার মাঝামাঝি অবস্থিত গাদীরে খুম্ম নামক স্থানে নবী করিম (সাঃ) এই উক্তিটি করেছেন বলে সবার সম্মতি আছে। এটি ভ্রমণকারীদের জন্য জল এবং ছায়া প্রদানের জন্য একটি বিশ্রাম স্থান হিসাবে প্রসিদ্ব ছিল। বিদায় হজ্জের পর মদীনায় প্রত্যাবর্তনের সময় নবী (সাঃ) এখানে বিশ্রাম ও নামাযের জন্য থামলেন। এই ঘটনাটি শিয়া এবং আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত উভয়ের দ্বারাই সত্য হিসাবে গৃহীত।

এর অর্থ হলো এই যে, যেহেতু আরব উপদ্বীপের অন্যান্য অঞ্চলের লোকেরা কেউ তায়েফে, কেউ ইয়েমেনে, অন্যরা নজদ ইত্যাদি দিকে তাদের নিজস্ব পথ ধরে চলে গেছেন, সেহেতু শুধুমাত্র যাহারা মদীনায় বসবাস করতেন, নবী করিম (সাঃ) সে সকল সাহাবাহীদের সাথে ছিলেন। বিদায়ী হজ্জের সময় ১০০,০০০ এরও বেশি হাজী উপস্থিত ছিলেন, সেখানে নবী (সাঃ) যে কোন ঘোষণা দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি কেবলমাত্র মদীনায় বসবাসকারী সাহাবীগণকে সাথে নিয়ে গাদির খুম্মে এসে, কেন একটি নির্দিষ্ট বিবৃতি দিতে বেছে নিয়েছিলেন।

গাদির খুম্ম মক্কা ও মদীনার মাঝখানে, আল-জুহফাহ নামক শহরের কাছে অবস্থিত এবং এখানে মরুভূমির মাঝখানে একটি জলাধার ছিল। গাদির খুম্ম মক্কা নগরী থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই সরল সত্যটিই বানোয়াট যুক্তির পুরো ভিত্তিকে ভেঙে ফেলার জন্য যথেষ্ট।

এখান থেকে আমাদের ইঙ্গিত দেয় যে নবী (সাঃ) যা বলেছেন তা মদীনাবাসীদের সাথে সম্পর্কিত এবং সমগ্র মুসলিম ওম্মার জন্য এটি উদ্বেগের বিষয় নয়। আর কেন তিনি (সাঃ) মদীনার অধিবাসীদের কাছে একান্তে ঘোষণা করার জন্য অপেক্ষা করলেন? আমরা এর পরই জানতে পাবো যে এটি একটি ঘরোয়া সমস্যা ছিল এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে প্রভাবিত করেনা।

কোন প্রক্ষাপটে রাসুল (সাঃ) একথা বলে ছিলেন?

নবী করীম (সাঃ) এর কাছে কিছু লোক আলী ইবনে আবি তালিব (কাররামাল্লাহু তা’আলা ওয়াজহাহু)-এর সমালোচনা করছিলেন, তিনি (সাঃ) তাদের জবাব দিচ্ছিলেন। এর পেছনের প্রেক্ষাপট ছিল এই যে, বিদায়ী হজ্বের কয়েক মাস আগে মহানবী (সাঃ) এক অভিযানে ৩০০ জন লোকের নেত্রত্ব দেওয়ার জন্য আলী (কাররামাল্লাহু তা’আলা ওয়াজহাহু) কে ইয়েমেনে প্রেরণ করেছিলেন। আলী (কাররামাল্লাহু তা’আলা ওয়াজহাহু)-এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ইয়েমেনে অত্যন্ত সফল অভিযান পরিচালনা করেন এবং তাঁরা প্রচুর যুদ্ধ সম্পদ দখল করেছিল। তার সাথে ছিলো নজরান এলাকার মানুষদের কাছ থেকে সংগৃহীত বর্ম। এই যুদ্ধের ধন-সম্পদ নিয়েই একদিকে আলী (কাররামাল্লাহু তা’আলা ওয়াজহাহু) এবং অন্যদিকে তাঁর সৈন্যদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়।

ইবনে ইসহাকের সিরাতে যেমনটি বর্ণিত হয়েছে:

যখন আলী (কাররামাল্লাহু তা’আলা ওয়াজহাহু) তাড়াহুড়া করে ইয়েমেন থেকে মক্কায় (ফিরে) রসূল (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাত করতে আসেন, তখন আসার সময় তিনি তাঁর সৈন্যবাহিনীর দায়িত্বে তাঁর একজন সঙ্গীকে রেখে আসেন যিনি সেই অভিযানে তাঁর সাথে ছিলেন এবং তিনিই বাহিনীতে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তিকে আলী (কঃ) এর কাছে রক্ষিত গনিতের কাপড় (বর্ম গুলো) পড়ার অনুমোতি দেন।

আলী (কঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) হতে বিদায় নিয়ে নিজ সৈন্যদলের কাছে ফিরে এসে, তিনি (আলী) তাদের সাথে দেখা করতে গেলে, তাদের পোশাক (বর্ম গুলো) পড়া অবস্থায় দেখতে পান। যখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন এখানে কি ঘটেছে, লোকটি (তার প্রতিনীধি) বলেন যে তিনি পুরুষদের পোশাক (বর্ম গুলো) পরার অনুমতি দিয়েছেন যাতে তারা লোকেদের সাথে মিশলে তাদের সুন্দর দেখায়। তিনি (আলী) তাকে রসূল (সাঃ) এর কাছে যাওয়ার আগে কাপড় (বর্ম গুলো) গুলো খুলে নিতে বললেন এবং তাঁহারা তা খুলে গনীমতের মধ্যে ফিরিয়ে দিলেন। সৈন্যবাহিনী তাদের এই আচরণে বিরক্তি প্রকাশ করেছিল… যখন লোকেরা আলী (কাররামাল্লাহু তা’আলা ওয়াজহাহু) এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো, তখন রসূল (সাঃ) তাদের সম্বোধন করতে উঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং তিনি (বর্ণনাকারী) তাঁকে (নবী সাঃ) কে বলতে শুনেছিলেন, “আলীকে দোষারোপ করবেন না, কেননা সে আল্লাহর বিষয়ের প্রতি অতিশয় বিবেকবান, বা আল্লাহর পথে দোষারোপ করা হবে।” (সিরাহ ইবনে ইসহাক, পৃষ্ঠা ৬৫০)

অন্য বর্ণনায়ঃ

তাঁর নিযুক্ত সহ-অধিনায়ককে তিনি বলেন, “লজ্জা তোমার প্রতি! প্রিয়নবী (সাঃ)’র কাছে বর্ম হস্তান্তরের আগে এগুলো সৈন্যদেরকে দেয়ার পেছনে তোমার কারণ কী? আমি তো তোমায় এর অনুমতি দেইনি!”

সহ-অধিনায়ক উত্তর দেন, “তারা আমাকে অনুরোধ জানায় এগুলো দ্বারা তাদেরকে সুশোভিত হতে দিতে, যাতে তারা (হজ্জ্বের জন্যে) পবিত্র হতে পারে; এরপর তারা এগুলো আমাকে ফেরত দেবে বলেছিলো।”

আলী (ক:) তাঁদের কাছ থেকে সব বর্ম খুলে নেন এবং বস্তায় ভরেন। এতে তাঁরা তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হন। তাঁরা যখন মক্কায় আগমন করেন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে তাঁদের অভিযোগের সংখ্যা অগণিত হয়ে দাঁড়ায়। প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আদেশ করেন মানুষের কাছে এ আহ্বান জানাতে: “আলী ইবনে আবী তালিবের বিরুদ্ধে তোমাদের জিহ্বাকে সংযত করো! সে মহান আল্লাহর খাতিরে অত্যন্ত কঠোর; সে এমন নয়, যে ধর্মের ক্ষেত্রে ধোকা দেয়…।”

প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) হজ্জ্বব্রত পালনশেষে পশু ক্বুরবানীতে হযরতে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)’কে নিজের সাথে শরীকদার করেন। অতঃপর মদীনা অভিমুখে রওয়ানা হন। হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) ও হাজ্বী বৃন্দ তাঁর সাথে যাত্রা করেন। তিনি গাদীরে খুম নামের একটি স্থানে উপনীত হন…। [শায়খ মুফীদ প্রণীত ’কিতা’ব আল-ইরশা’দ’, ১১৬-১২০ পৃষ্ঠা]

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment