খুতবাতু গাদীরে খুম (২)

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

খুতবাতু গাদীরে খুম (২)

(خطبة غدير خم)

মূল: মাহাজ্জাহ-ডট-কম

অনুবাদক: নাঈম আল-জা’ফরী

দ্বিতীয়ত ১১তম হিজরীর ১৮ই জিলহাজ্ব তারিখ হযরত আলী (কঃ) এর শানে রাসূল (সাঃ) এর ফজিলপূর্ণ হাদিসটি হলো,

اللَّهُمَّ مَنْ كُنْتُ مَوْلَاهُ فَعَلِيٌّ مَوْلَاهُ

“আমি যার মাওলা এই আলী তার মাওলা,” এটি একটি সহীহ হাদীস এবং নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে বর্ণিত। (তিরমিযী হা/৩৭১৩; মিশকাত হা/৬০৮২)

এই প্রক্ষাপটে বারা’ ইবনু ’আযিব ও যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে সংযোন সহ সম্পূর্ণ হাদীসের ব‍র্ণনাটি হলো-

«أَلَسْتُمْ تَعْلَمُونَ أَنِّي أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ؟»

(তোমরা কি জাননা যে, আমি মুসলমানদের নিকট তাদের প্রাণ অপেক্ষাও অধিক নিকটে?)

(অন্য এক বর্ণনানুসারে, হুযূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু’র হাত উপরের দিকে তুলে ধরে এই কথাটি তিন বার বলেছিলেন।)

قَالُوا: بَلَى

তদুত্তরে, সবাই বললেন- “হা, নিশ্চয় আপনি সমস্ত মুসলমানের নিকট তাদের প্রাণ অপেক্ষাও নিকটে ও প্রিয়।”

অতঃপর এরশাদ ফরমালেন, “আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিষ রেখে যাচ্ছি তন্মধ্যে একটা অপরটা অপেক্ষা মহান।” সে দুটি হচ্ছে-

১) কোরআন করীম।

وَقَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُ إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ، كِتَابُ اللهِ

আমি তোমাদের মাঝে এমন এক জিনিস রেখে যাচ্ছি যা শক্ত করে ধরে রাখলে তোমরা কখনোও পথহারা হবে না এবং তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব (কুরআন)। [ (ক) ইবনে হিব্বান : আস সহীহ, ৪/৩১২। (খ) ইবনে আবী শায়বা : আল মুসনাদ, ৬/১৩৩, হাদীস নং ৩০০৭৭। (গ) আহমদ : আল মুসনাদ, ১৮/১১৪, হাদীস নং ১১৫৬১ ] এবং

২) আমার আহলে বায়ত (পরিবার-পরিজন)।

وَأَهْلُ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي، أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي

আর আমার আহলে বায়তের বিষয়ে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আহলে বায়তের ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। এটি তিনবার উল্লেখ করেছেন।

আমার পর ঐ দু’টি সম্পর্কে এ মর্মে সতর্ক থাকবে যে, সে দু’টির সাথে কিরূপ আচরণ করছো? সেদুটির প্রতি তোমাদের কর্তব্য কিভাবে পালন করছো? আমি চলে যাবার পর এ দু’টির একটা অপরটা থেকে পৃথক হবেনা। শেষ পর্যন্ত তোমরা ‘হাওয-ই-কাওসার’-এর কিনারায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করবে।”

অতঃপর এরশাদ ফরমালেন, “আল্লাহ্ তা’আলা আমার মাওলা (مولي) আর আমি হলাম সমস্ত মুসলমানের মাওলা (مولي)।

اللَّهُمَّ مَنْ كُنْتُ مَوْلَاهُ فَعَلِيٌّ مَوْلَاهُ

(হে আল্লাহ! আমি যার মাওলা’ আলীও তার ‘মাওলা’।)।

اللَّهُمَّ وَالِ مَنْ وَالَاهُ

(হে আল্লাহ্! তুমিও তাকেই ভালবাসো, যে আলীকে ভালবাসে।)

وَعَادِ مَنْ عَادَاهُ

(এবং তাকে শত্রু হিসেবে গণ্য করো, যে তার সাথে শত্রুতা পোষণ করে ।)

অন্য বর্ণনায় এটাও এরশাদ হয়েছে-

وَانْصُرْ مَنْ نَصَرَهُ، وَاخْذُلْ مَنْ خَذَلَهُ

[হে আল্লাহ্! “আর যে ব্যক্তি আলীকে সাহায্য করে তাকে তুমি সাহায্য কর, আর যে আলীকে অপদস্থ করে, তুমি তাকে অপদস্থ কর।”] আর যেদিকে আলী মনোনিবেশ করে, সত্যকেও সেদিকে নিশ্চিত করো।”

এই ভাষণটি ইতিহাসে খুম তথা কূয়ার নিকটে ভাষণ বা খুতবাতু গাদীরে খুম (خطبة غدير خم) নামে পরিচিত পায়।

যদিও, বাস্তবতা বিবর্জিত এবং সম্পূর্ণ মিথ্যা এই বর্ণনাটি শিয়াদের বাদ দেওয়া একটি খন্ডিত ‍অংশ। এই হাদীসের সহীহ সংস্করণে অনেক বানোয়াট ও কল্পিত কাহিনী সংযুক্ত করা হয়েছে। সনদ য’ঈফ হওয়ার কারণ হলো সনদে ‘আলী ইবনু যায়দ য’ঈফ ছিলেন।

আবু দাউদ সাজিস্তানী ও আবু হাতিম রাযী প্রমূখ এই বর্ণনার বিশুদ্ধতা সম্পর্কে আপত্তি করলেও ইবনে হাজর মক্কী লিখেছেন যে, ষোলজন সাহাবী এই ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমদ (রাহমাতুল্লাহি আলায়হি)-এর এক বর্ণনায়, ত্রিশজন সাহাবীর কথা উল্লেখ রয়েছে।

মূলতঃ হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজ্বহাহুর ফযীলতের পক্ষে এ ঘটনাটাকে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য এ বর্ণনাটা বিভিন্ন ‘সনদ’ (সূত্র) দ্বারা বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে কিছু কিছু হচ্ছে ‘সহীহ’ (বিশুদ্ধ) আর কিছু কিছু ‘হাসান’ (গ্রহণযোগ্য) পর্যায়ের। এ কারণে এ বর্ণনা নিঃসন্দেহে সহীহ। তবে এর হাদীসখানা (من كنت مولاه فعلى مولاه) অর্থাৎঃ আমি যার মাওলা, আলীও তার মাওলা) খবর-ই-ওয়াহিদ’-(خبرواحد) এর ঊর্ধ্বে নয়। যেহেতু এ হাদীসের বিশুদ্ধতা নিয়ে হাদীসের কোন কোন ইমাম আপত্তিও উত্থাপন করেছেন, তা সত্বেও, ভিন্ন সনদ সূত্রে তা বর্ণিত হয়েছে বিধায় সেটা বিশুদ্ধ হলেও মুতাওয়াতির’পর্যায়ের হতে পারেনা। যদিও শিয়ারা এ হাদীসকে ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ের বলে প্রচার করে থকে। বস্তুতঃ তাদের এ প্রচারণা ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। সর্বোপরি, এ প্রচারণা হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এর অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে এটাও প্রনিধানযোগ্য যে, ইমাম বোখারী রহিঃ ঐ ঘটনাটি বর্ণনাই করেননি। ইমাম মুসলিম অবশ্য তা বর্ণনা করেছেন; কিন্তু হুযুরের খোতবা বা ভাষণের যেই বচনগুলো তাতে এরশাদ হয়েছে (من كنت مولاه فعلى مولاه) সেগুলো দ্বারা শিয়াদের ঐ উদ্দেশ্য হাসিল হয়না, যা তারা করতে চায়; বরং তা দ্বারা হযরত আলী (কাররামাল্লাহু তা’আলা ওয়াজহাহু) এর ফযীলতই প্রকাশ পায় মাত্র।

মিথ্যাকে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। তদ্রুপ সত্যকে লুকিয়ে রাখা যায় কিন্তু বিলুপ্ত করা যায় না।

এইগুলিই হল মূল সমস্যা যা নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:

১. কোন প্রেক্ষাপটে নবী (সাঃ) এ কথা বলেছেন?

২. মাওলা মানে কি?

৩. আলী (কাররামাল্লাহু তা’আলা ওয়াজহাহু) এবং বাকি সাহাবাহ (রাঃ) গণ কীভাবে এটি বুঝে ছিলেন?

৪. দুর্বল বর্ণনা ও মিথ্যা সংযোজন।

৫. কথিত

অভিনন্দন মিছিল।

৬. অবতীর্ণ কোরানের আয়াত সমূহ।​​

চলবে

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment