খতমে নবুয়ত

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ وَالصَّلٰوۃُ وَالسَّلَامُ عَلٰی سَیِّدِ الْمُرْسَلِیْنَ
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
আল্লাহ পাক রব্বুল আ’লামীন কোরআনে পাকে ইরশাদ করেনঃ
مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا
তরজমাঃ “মুহাম্মদ তোমাদের পুরুষদের মধ্যে কারো পিতা নন, হ্যাঁ আল্লাহর রসুল এবং সমস্থ নবীদের মধ্যে সর্বশেষ।আর আল্লাহ সবকিছু জানেন। [সূরা আহযাবঃ আয়াত নং-৪০]
শানে নযূলঃ
মুহাম্মদ ﷺ তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নই।এই আয়াত অবতীর্ণ হবার পর “যায়েদ ইবনে মুহাম্মদ ” বলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।যদিও রসুলুল্লাহ ﷺতাহাকে পোষ্যপুত্র করেছিলেন।বস্তুত রসুলুল্লাহ ﷺ এর কোন ঔরসজাতপুত্র যৌবনে পদার্পণ করে নি।হযরত খাদিজা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা এর গর্ভে তাঁহার তিন পুত্র কাসেম,তায়্যিব ও তাহের (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) জন্ম গ্রহণ করেন;কিন্তু সকলেই শৈশবকালে ওফাত লাভ করেন।হযরত মাবিয়া কিবতিয়্যাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) এর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন ইব্রাহীম(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)। তাঁহার ওফাতও শৈশবকালেই ঘটে।হযরত খাদীজা(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) এর গর্ভে রসুলুল্লাহ ﷺ এর চার কন্যা জন্মগ্রহণ করেন।হযরত যয়নব,উম্মে কূলসুম,হযরত ফাতেমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)।রসুলুল্লাহ ﷺ জীবদ্দশায়ই তাঁর তিন কন্যা ওফাত বরণ করেন এবং হযরত ফাতেমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) তাঁহার ইন্তেকালের ছয়মাস পর ওফাত লাভ করেন।
★রেফারেন্সঃ তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ ৯ম খন্ডঃ ১১১-১১২ পৃঃ, কৃতঃ হাফিজ আবুদ ফিদা ইমামুদ্দীন ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত।
আয়াতে কারমার তাফসীরঃ
খাতামান নাবিয়্যিন অর্থ বা মুরাদ হচ্ছে হাবীবে খোদা ﷺহলেন, সর্বশেষ নবী কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবী আসবেন না,আসতে পারে না।
১)উক্ত আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যায় ইমামুল মুফাসসিরীন আল্লামা আবু জাফর তাবারী(রহঃ) তাঁর “তাফসীর ইবনে জারীর তাবারী” গ্রন্থে উল্লেখ করেন-
“হযরত কাতাদা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, বরং তিনি আল্লাহর রসূল এবং তিনি খাতামুন নাবিয়্যিন (অর্থাৎ সর্বশেষ নবী)।
★রেফারেন্সঃতাফসীরে ইবনে জারীর তাবারী, কৃতঃ ইমাম আবু জাফর তাবারী (ওফাত ৩০৩ হিজরী): ৬ষ্ঠ খন্ডঃ ১৮৩ পৃঃ,আর রিসালাহ কর্তৃক লেবানন থেকে প্রকাশিত।
২) ইমামুল মুফাসসিরীন সাহাবী ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,
“মুহাম্মদ ﷺতোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন।অর্থাৎ, যায়েদের (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) পিতা নন, তিনি বরং আল্লাহর রসূল এবং শেষ নবী, তাঁরই মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাঁর পূর্ব থেকে আগমনকারী নবীদের আগমন সমাপ্ত করেছেন।সুতারাং তাঁর পর অন্য কোন নবী আগমন করবেন না।আল্লাহ তা’আলা সকল বিষয়ে, তোমাদের কথা ও কর্ম সব বিষয়ে অবগত।“
★রেফারেন্সঃ তাফসীরে ইবনে আব্বাস,কৃতঃ ফিরোযাবাদী, ৩য় খন্ডঃ ৬৮ পৃঃ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত।
৩)অনুরুপ আল্লামা ইমাম জালাল উদ্দীন সৈয়ুতী(রহঃ) যিনি হিজরী ৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ছিলেন,তাঁর তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে দুররে মনসুর” নামক কিতাবে উল্লেখ করেন, আবদ ইবনে হুমাইদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর সূত্রে বর্ণনা করেন- “হযরত হাসান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে খাতামুন নাবিয়্যিন এর ব্যাখ্যায় বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা নবীদের সিলসিলা মুহাম্মদ ﷺএর মাধ্যমে সমাপ্ত করেছেন,তিনি সমস্থ নবী ও রাসূলগণের শেষে অর্থাৎ তিনি সর্বশেষ নবী এবং সর্বশেষ রাসূল।
★রেফারেন্সঃ তাফসীরে দুররে মনসুর,কৃতঃ ইমাম জালাল উদ্দীন সৈয়ুতী(রহঃ), ৬ষ্ঠ খন্ডঃ৬১৭ পৃঃ।
৪) আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম তাবারী (রহঃ)(ওফাত-৩০৩হিজরী) আরও বলেন,
“তিনি আল্লাহর রসূল এবং খাতামুন নাবিয়্যিন বা সর্বশেষ নবী যিনি নবুয়তের ক্রমধারার পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন এবং এর উপর মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন।সুতারাং রাসুল ﷺএর পর কিয়ামত পর্যন্ত এ ধারা আর কারো জন্য খোলা হবে না।“
★রেফারেন্সঃতাফসীরে ইবনে জারীর তাবারীঃ ৬ষ্ঠ খন্ড ১৮৩ পৃঃ, আর রিসালাহ কর্তৃক লেবানন থেকে প্রকাশিত।
৫)এভাবে সুবিখ্যাত “তাফসীরে খাজিন” নামক কিতাবে রয়েছে-
“খাতিমুন নাবিয়্যিন এর অর্থ হল,আল্লাহ তা’আলা রাসূল পাক ﷺএর মাধ্যমে নবুয়তের ধারা শেষ করে দিয়েছেন।“
★রেফারেন্সঃ”তাফসীরে খাজিন” কৃতঃইমাম খাজিন(ওফাত ৭৪১ হিজরী), ৫ম খন্ডঃ ২১৮ পৃঃ
৬)তদ্রুপ আল্লামা মূল্লা জিউন (রহঃ) কর্তৃক প্রণীত তাঁর তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,
“খাতামুন নাবিয়্যিন এর অর্থ রসূলে পাক ﷺএর পরে কোন নবীর আবির্ভাব হবে না।যদিও ঈসা(আলাইহিস সালাম) হুজুর ﷺএর পরে এ ধরাতে অবতরণ করবেন,নবী হিসেবে নন বরং তাঁর খলিফা হিসেবে অবতরণ করবেন এবং মুহাম্মদী শরীয়ত মোতাবেক আমল করবেন।ইতিপূর্বে যদিও তিনি নবী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
★রেফারেন্সঃতাফসীরাতে আহমদীয়া কৃতঃ মোল্লা জিউন (রহঃ):৬২৩ পৃঃ।
৭) আল্লামা কাযী সানাউল্লাহ পানিপথী রহঃ তাঁর বিখ্যাত তাফসীর “তাফসীরে মাযহারী” কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا এখানে “খাতাম” অর্থ সমাপ্ত।আর “খাতিম” অর্থ সমাপ্তকারী।‘খাতামান নাবিয়্যিন’ অর্থ সর্বশেষ নবী।হযরত ইবনে আব্বাস(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন,আলোচ্য বাক্যের মমার্থ হচ্ছে নবুয়তের প্রবাহমানতা যদি আমি(আল্লাহ) মুহাম্মদ ﷺপর্যন্ত সম্প্ত না করতাম, তবে তাকে (রসুলে পাক) করতাম কোন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের পিতা,যে নবী হতো তাঁর ওফাতের পর।আতার বর্ণনায় এসেছে, হযরত ইবনে আব্বাস(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন,আল্লাহ পাক যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন,মুহাম্মদ ﷺই শেষ নবী, সেহেতু তিনি তাঁর(রসুলে পাকের) কোন পুত্রকে প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় পৌঁছাননি।ইবনে মাজাহ এর বর্ণনায় এসেছে,হযরত ইবনে আব্বাস(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, রসুলে পাক ﷺতাঁর পুত্র হযরত ইব্রাহীম(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) সম্পর্কে বলেছেন,সে বেঁচে থাকলে নবী হতো।
★রেফারেন্সঃতাফসীরে মাযহারীঃ৯ম খন্ডঃ৫১০ পৃঃ, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া,ভূঁইগড়,নারায়ণগঞ্জ, বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত।
আল্লামা কাযী সানাউল্লাহ পানিপথী রহঃ তাঁর তাফসীরে মাযহারীতে একটি প্রশ্ন করেছেন এবং উত্তরও দিয়েছেন।
তিনি লিখেন, একটি প্রশ্নঃরসুলে পাক ﷺসর্বশেষ নবী।কিন্তু একথাও তো ঠিক যে,হযরত ঈসা(আঃ) পুনরাবির্ভূত হবেন।তাহলে রসুলে পাক ﷺআর সর্বশেষ নবী থাকলেন কী করে?
জবাবঃ হযরত ঈসা(আঃ) এর পুনরাবির্ভাব ঘটবে ঠিকই।কিন্তু তা নবী হিসেবে নয়,বরং শেষ রাসুল মোহাম্মদ মোস্তাফা আহমদ মোজতবা ﷺএর উম্মত হিসেবে এবং তিনি জীবন-যাপন করবেন রাসূল ﷺএর শরীয়ত অনুসারে।সুতারাং রাসূল ﷺএর সর্বশেষ নবী হওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অন্তরায় নন।
এরপর বলা হয়েছে, وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। একথার অর্থ সকল কিছুই আল্লাহর জ্ঞান আয়ত্ত বলেই তিনি ভালোভাবে জানেন কাকে করতে হবে শেষ নবী।কার মাধ্যমে সমাপ্ত করতে হবে নবুয়তের ধারা।
★রেফারেন্সঃতাফসীরে মাযহারীঃ৯ম খন্ডঃ৫১১পৃঃ, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া,ভূঁইগড়,নারায়ণগঞ্জ, বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত।
৮)হাফিজ আবুদ ফিদা ইমামুদ্দীন ইবনে কাসীর রহঃ তার তাফসীর “তাফসীরে ইবনে কাসীর” কিতাবে লিখেন,
“আলোচ্য আয়াত দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে,হযরত মুহাম্মদ ﷺএর পরে আর কোন নবীর আবির্ভাব ঘটবে না।আর যখন কোন নবীর আগমন ঘটবে না,সে ক্ষেত্রে কোন রাসূলেরও আগমন ঘটবে না, তা বলাই বাহুল্য।কারণ রিসালতের মাকাম নবুয়তের মাকাম অপেক্ষা খাস।কারণ সকল রাসূল নবী হয়ে থাকেন,কিন্তু সকল নবী রাসূল হয় না।
★রেফারেন্সঃতাফসীরে ইবনে কাসীরঃ ৯ম খন্ডঃ ১১২ পৃঃ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত।
৯) সদররুল আফাযিল আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী(রহঃ) তাঁর স্বীয় তাফসীর “তাফসীরে খাযাইনুল ইরফান” কিতাবে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন, مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ
“সুতারাং হযরত যায়েদেরও তিনি বাস্তবে পিতা নন।তাহলে তাঁর বিবাহকৃত স্ত্রী তাঁর ﷺ জন্য হালাল হতো না।কাসেম,তৈয়ব,তাহের,ইব্রাহীম হুজুর পাক ﷺএর সন্তান ছিলেন; কিন্তু তাঁরা ঐ বয়স পর্যন্ত পৌঁছেন নি যে,তাঁদেরকে ‘পুরুষ’ বলা যেতো! তাঁরা শিশু অবস্থায়ই ওফাত পান।
وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ
এবং সমস্থ রসুল হিতাকাঙ্খী ও স্নেহশীল।তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং আনুগত্য করা অপরিহার্য হবার কারণে আপন উম্মতের পিতা হিসেবে আখ্যায়িত হন;বরং তাঁদের প্রতি কর্তব্য প্রকৃত পিতার প্রতি কর্তব্য অপেক্ষা বহুগুণ বেশী।কিন্তু এতদসত্ত্বেও উম্মত প্রকৃত সন্তান হয়ে যায় না এবং প্রকৃত সন্তানদের বিধান-উত্তারাধিকার ইত্যাদি তার জন্য প্রযোজ্য হয় না।
وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ
অর্থাৎ সর্বশেষ নবী।অর্থাৎ নবুয়তের ধারা তাঁর উপরই সমাপ্ত হয়েছে।তাঁর নবুয়তের পর কেউ নবুয়ত পেতে পারে না।এমনকি, যখন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম অবতরণ করবেন,তখন যদিও তিনি নবুয়ত পূর্বে পেয়েছিলেন, কিন্তু অবতরণের পর তিনি শরীয়তে মুহাম্মদী ﷺঅনসারে কাজ করবেন এবং এ শরীয়ত অনুযায়ী নির্দেশ দেবেন ও তাঁরই ক্বিবলা অর্থাৎ কা’বা মু’আযযমার দিকে মুখ করে নামাজ পড়বেন।হুজুর ﷺসর্বশেষ নবী হওয়া নিশ্চিত ও অকাট্য।ক্বোরআনের আয়াতও এ প্রসঙ্গে এরশাদ হয়েছে আর ‘সিহাহ সিত্তাহ’ এর বহু সংখ্যক হাদিস,যেগুলো ‘মুতাওয়াতির’-এর পর্যায়ে পৌঁছে, যা দ্বারা প্রমাণিত যে,হুজুর ﷺশেষ নবী।তাঁর পরে কেউ নবী হবে না।যে কেউ হুজুর ﷺএর নবুয়তের পর অন্য কারো পক্ষে নবুওত পাওয়া সম্ভব বলে জানে,সে ‘খতমে নবুওত ‘ কে অস্বীকার করে এবং কাফির ও ইসলাম বহির্ভূত।

★রেফারেন্সঃখাযাইনুল ইরফানঃ ৭৬৪ পৃঃ(এক খন্ডে) বাংলায় প্রকাশিত “গুলশান-ই-হাবীব ইসলামী কমপ্লেক্স,চট্রগ্রাম থেকে।
১০) বিশ্ববিখ্যাত মুফাস্সির এ কোরআন হাকীমুল উম্মত আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী(রহঃ) তাঁর স্বীয় তাফসীর “তাফসীরে নুরুল ইরফান” কিতাবে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,
“এ আয়াতে কাফিরদের ওই আপত্তির জবাব বা খন্ডন করা হয়েছে, যাতে তারা বলেছিলো,”হুজুর ﷺআপন পুত্র যায়দের স্ত্রীকে বিবাহ করে বসেছেন।“কেননা, আরববাসীগণ পালিতপুত্রকেও নিজ পুত্র বলে বসতো।আর তার স্ত্রীকে বিয়ে করাও হারাম বলে বিশ্বাস করতো।
مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ
এ থেকে বুঝা গেলো যে, না বালেগ শিশুকে রিজাল বলা যেতে পারে না।কেননা, হুজুরের ﷺ কয়েকজন সাহেবজাদাও ছিলেন, যাঁরা শৈশবেই ওফাত পেয়ছেন।হুজুর ﷺতাঁদের পিতা, কিন্তু তাঁরা রিজাল নন।একথাও বুঝা গেলো যে,রাসুল ﷺহলেন সমস্থ উম্মতের ‘পিতা’ ভাই নন।এ কারণে,’রেসালত’-এর কথা ‘পিতা’ শব্দের সাথে উল্লেখ করেছেন।অর্থাৎ তিনি সমস্থ উম্মতের রুহানী পিতা।কেননা لَكِن শব্দটি পূর্বেকার(নেতিবাচক)-কে ভঙ্গ করা এবং পরবর্তী বিষয়কে বহাল ও প্রতিষ্ঠা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।সুতারাং অর্থ এই দাঁড়ালো –‘তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন,কিন্তু হ্যাঁ,আল্লাহর রসূল অর্থাৎ তোমাদের আত্মিক পিতা।আর ‘পিতা’ও এমনই যে,এখন কেউই তিনি ব্যতীত এমন পিতা হতে পারবে না।কেননা,তিনি সর্বশেষ রসূল।
وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمً
সুতারাং তাঁর সমস্থ বিধান জ্ঞান ও প্রজ্ঞাপূর্ণই।পালিত পুত্রের স্ত্রী হারাম হওয়া তোমাদের অভিমত।আর সে হালাল হওয়া মহান রবের হুকুম বা বিধান।সুতারাং নিশ্চয় মহান রবের হুকুমই সঠিক।
অনুরুপভাবে, আল্লাহ তা’আলা হুজুর ﷺকে সর্বশেষ নবী বানানোর ভিত্তি তাঁর(আল্লাহ) জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উপরই প্রতিষ্ঠিত।
এ আয়াত থেকে বুঝা গেলো যে,হযুর ﷺএর পর কোন নবী হতে পারে না।সুতারাং এখন যে কেউ কোন নবীর আগমন কিংবা তা সম্ভব বলে বিশ্বাস করে,সে মুরতাদ্দ।যেমনঃ لا إلها إلا اللهথেকে বুঝা গেলো যে,আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য থাকতে পারে না,তেমনিভাবে, لا ناباي بعدي আমার পরে কোন নবী নেই থেকে বুঝা গেল যে,হুজুর ﷺ এর পর কোন নবী হতে পারে না।এ দু’টি এক পর্যায়ের অস্ভব বিষয়।অনুরুজপভাবে হুযুর ﷺএর যুগে কোন নবী ছিল না,না হতে পারতো।কেননা, “খাতামুন্নাবিয়ীন” হলেন তিনিই, যিনি সমস্থ নবীর পরে আসেন।“
★রেফারেন্সঃতাফসীরে নুরুল ইরফানঃ২য় খন্ডঃ ১১৩০ পৃঃ, ইমাম আহমদ রেযা রিসার্চ একাডেমী চট্রগ্রাম থেকে প্রকাশিত।
হাদিসের আলোকে খতমে নবুওত
আমরা এ পর্যায়ে হাদিসের আলোকে খতমে নবুওত বা নবুয়তের সমাপ্তি নিয়ে আলোচনা করব।
দলীল নং-০১
হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,রসূল ﷺআলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন,”মূসার(আলাইহিস সালাম) পক্ষ থেকে হারুণ(আলাইহিস সালাম)যে (দায়িত্ব,মর্যাদা) স্থানে ছিলেন আমার পক্ষ থেকে তুমি হলে সে স্থানে।তবে (পার্থক্য এই যে)আমার পরে কোন নবী নেই।“
রেফারেন্সঃ ★সহীহ বোখারীঃ ২/৬৩৩
★সহীহ মুসলিমঃ২/২৭৮
★সুনানে তিরমিযীঃ২/২১৩
দলীল নং-০২
যুবায়ের বিন মুতয়িম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,আল্লাহর রসূল ﷺবলেছেন,”আমার অনেক নাম ররয়েছে।আমি মুহাম্মদ,আমি আহমদ,আমি মাহী,অর্থাৎ আমার কারণে কুফুরী মিঠিয়ে দেন,আমি হাশের,আমার কদমের উপর লোকদের হাশর হবে এবং আমি হলাম আকেব।আর আকেব হলো-যার পরে কোনো নবী নাই।
রেফারেন্সঃ ★সহীহ বোখারীঃ১/৫০০
★সহীহ মুসলিমঃ২/২৬১
★সুনানে তিরমিযীঃ২/১১১
★এছাড়া এই হদিসখানা ইমাম আহমদ,ইমাম মালেক,আবু দাউদ,তায়লাসী,বায়হাকী,আবু নঈম বর্ণনা করেছেন।
দলীল নং-০৩
হযরত ছাওবান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,রাসূল ﷺবলেছেন,”আমার উম্মতের মধ্য থেকে ত্রিশজন এমন মিথ্যাবাদী আত্মপ্রকাশ করবে।তাদের প্রত্যেকে নবী বলে দাবী করবে।অথচ আমি খাতামুন্নাবিয়্যীন(শেষ নবী),আমার পরে কোন নবী নেই।“
রেফারেন্সঃ★সুনানে তিরমিযীঃ২/৪৫
★মুসনাদে আহমদঃ৬/৩৭৩
★মিশকাত শরীফঃ৪৬৪-৪৬৫ পৃঃ
★ খতমে নবুওত কৃতঃআলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খান ফাজেলে ব্রেরলবী(রহঃ), ৮৪ পৃঃ (বাংলা),জাগরণ প্রকাশনী চট্রগ্রাম।
দলীল নং-০৪
ইমাম আহমদ, বোখারী,মুসলিম এবং তিরমিযী হযরত জাবের ববিন আবদুল্লাহ থেকে আর আহমদ এবং শায়খায়ন হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে,আহমদ ও মুসলিম হযরত আবু সাঈদ খোদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে,আহমদ ও তিরমিযী ওবাই বিন কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেন।হুযুর ﷺএরশাদ করেন,”আমি এবং সমগ্র নবীদের দৃষ্টান্ত এমন যে যেমন একটি সুন্দর অট্টালিকা তৈরী করা হলো।আর তাতে একটি ইটের জায়গা খালি থাকে।প্রত্যক্ষদর্শীরা এর চারপাশে ঘুরাফেরা করছে এবং এর নির্মাণ শৈলী ও সৌন্দর্যের প্রশংসা করতে থাকে।কিন্তু ঐ একটি ইটের জায়গা খালি থাকায় দেখতে দৃষ্টিকটু দেখায়।আমার দ্বারা এ অট্টালিকা পূর্ণ করা হয়েছে।আমার দ্বারা রাসূলগণের সমাপ্তি হয়েছে।আমি সকল নবীদের খাতেম অর্থাৎ সর্বশেষ নবী।“
রেফারেন্সঃ★সহীহ বোখারীঃ১/৫০১
★সহীহ মুসলিমঃ২/২৪৮
★খতমে নবুওত কৃতঃআলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খান ফাজেলে ব্রেরলবী(রহঃ), ৭৬পৃঃ (বাংলা),জাগরণ প্রকাশনী চট্রগ্রাম।
দলীল নংঃ ০৫
ইমাম আহমদ(রহঃ) বলেন,আফফান(রহঃ)……..হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,তিনি বলেন,রসুলুল্লাহﷺ এরশাদ করেনঃ”রিসালত ও নবুয়ত শেষ হয়েছে,অতএব আমার পরে কোন রাসূলেরও আগমন ঘটবে না আর কোন নবী আসবেন না।রাবী বলেন,এই কথা শুনে সাহাবীগণ ব্যথিত হলেন,তখন তিনি ﷺবললেন মুবাশশিরাত পরেও অবশিষ্ট থাকবে।সাহাবকেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা জিজ্ঞেস করলেন,’মুবাশশিরাত’ কি? তিনি ﷺবললেন,মুসলমানদের সত্য স্বপ্ন,ইহা নবুয়তের একটি অংশ”।
রেফারেন্সঃ ★তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ৯ম খন্ডঃ১১২-১১৩ পৃঃ,ইঃফাঃ থেকে প্রকাশিত
দলীল নং-০৬
ইমাম আহমদ(রহঃ) বলেন,ইউনূস ইবনে মুহাম্মদ(রহঃ)…….আবু তুফাইল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,রসুলুল্লাহ ﷺএরশাদ করেছেন,”আমার পরে মুবাশশিরাত ব্যতীত কোন নবুয়তের কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।জিজ্ঞেস করা হল,মুবাশশিরাত কি ইয়া রাসুলুল্লাহ!তিনি ﷺবললেন,উত্তম স্বপ্ন বা তিনি ﷺবললেন,নেক স্বপ্ন।
রেফারেন্সঃ★তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ৯ম খন্ডঃ১১৪ পৃঃ,ইঃফাঃ থেকে প্রকাশিত।
দলীল নং-০৭
ইমাম মুসলিম(রহঃ)বলেন,ইহইয়া ইবনে আইয়ু্,কুতায়বাহ ও আলী ইবনে হুজর…….হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,তিনি বলেন,রসুলুল্লাহ ﷺএরশাদ করেছেন,
“সকল নবীদের উপর আমাকে ছয়টি কারণে বিশেষত্ব প্রদান করা হয়েছে।আমাকে পরিপূর্ণ কথা প্রদান করা হয়েছে।বিরুদ্ধবাদীদের অন্তরে আমার ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে।আমার জন্য গণীমত হালাল করা হয়েছে।আমার জন্য জমিনকে পবিত্র এবং নামাজের স্থান স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।আমি সমগ্র জাহানে আল্লাহ ব্যতীত সবার রাসূল হয়েছি আর আমার মাধ্যমেই নবী আসা বন্ধ হয়েছে।
রেফারেন্সঃ★তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ৯ম খন্ডঃ১১৪-১১৫ পৃঃ,ইঃফাঃ থেকে প্রকাশিত।
★ খতমে নবুওত কৃতঃআলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খান ফাজেলে ব্রেরলবী(রহঃ), ৭৪ পৃঃ (বাংলা),জাগরণ প্রকাশনী চট্রগ্রাম।
ইমাম তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ ইসমাইল ইবনে জাফর(রহঃ) সূত্রে ইহা বর্ণনা করেছেন।ইমাম তিরমিযী বলেন,হাদিসটি হাসান, সহীহ।(ইবনে কাসীরঃ৯ম খন্ডঃ১১৫পৃঃ,ইঃফাঃ)
দলীল নং-০৮
ইমাম আহমদ(রহঃ) বলেন,আব্দুর রহমান ইবনে মাহদী……হযরত ইবরাজ ইবনে সারিয়াহ রাদ্বিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত,তিনি বলেন,একবার রসুলুল্লাহ ﷺআমাকে বললেনঃ”আল্লাহর কাছে আমি তখন থেকে সর্বশেষ নবী হিসেবে বিবেচিত যখন আদম(আলাইহিস সালাম) মাটির সাথে মিশ্রিত ছিলেন।
রেফারেন্সঃ★তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ৯ম খন্ডঃ১১৫ পৃঃ,ইঃফাঃ থেকে প্রকাশিত।
দলীল নংঃ ০৯
ইমাম আহমদ ‘মুসনাদ’,ইমাম মুসলিম ‘সহীহ’ এবং তাবরানী ‘মুজামে কবীরে, হযরত আবু মূসা আশয়ারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেন,রসূলুল্লাহﷺ বলেন,
“আমি মুহাম্মদ,আহমদ এবং সব নবীদের পর আগমনকারী,মাখলুকসমূহকে হাশর প্রদানকারী এবং রহমতের নবী।“
রেফারেন্সঃ ★খতমে নবুওত কৃতঃআলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খান ফাজেলে ব্রেরলবী(রহঃ), ৫৩ পৃঃ (বাংলা),জাগরণ প্রকাশনী চট্রগ্রাম।
দলীল নংঃ ১০
আহমদ,তিরমিযী,হাকেম বিশুদ্ধ সনদে,রুয়ানী,তাবরানী এবং আবু ইয়ালা হযরত ওকবা বিন আমের এবং তাবরাণী, ইবনে আসাকির আর খতীব ‘কিতাব রুয়াতে মালেকে’ হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর থেকে,তাবারাণী হযরত আসমা বিন মালেক এবং হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণনা করেন,
রসুলুল্লাহ ﷺএরশাদ করেন,”আমার পরে যদি কেউ নবী হতো তাহলে ওমর ফারুকই নবী হতো।
রেফারেন্সঃ ★ খতমে নবুওত কৃতঃআলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খান ফাজেলে ব্রেরলবী(রহঃ), ৮১ পৃঃ (বাংলা),জাগরণ প্রকাশনী চট্রগ্রাম।
#আল্লামা ইবনে কাসীর তার “তাফসীরে ইবনে কাসীর” এর মধ্যে مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا এই আয়াতের ব্যখ্যার শেষে বলেন,হযরত মুহাম্মদ ﷺকে আল্লাহর বান্দাগণের প্রতি প্রেরণ করা এবং সাথে সাথে তাকে সর্বশেষ নবী হিসেবে প্রেরণ করে ইহা তাহাদের (বান্দাদের) জন্য আল্লাহর বিরাট অনুগ্রহ।আল্লাহ তা’আলা তাঁর নাযিলকৃত আল কিতাবের মাধ্যমে এবং রসুলুল্লাহ ﷺএর মুতাওয়াতির হাদিসের মাধ্যমে এই সংবাদ দিয়েছেন যে,হযরত মুহাম্মদ ﷺএর পরে আর কোন নবী নাই।এটা দ্বারা তাদের বুঝা উচিৎ যে,তাঁর পরে যে কেউ নবুয়তের দাবী করবে সে একজন মিথ্যাবাদী,প্রতারক ও ধোকাবাজ।সে যদি নানা প্রকার তিলসমতির প্রকাশ ঘটায় তবুও গোমরাহী ব্যতীত অন্য কোন নামে তা অভিহিত হবে না।যেমন পূর্বে ইয়েমেন এর আসওয়াদ আনাসী ও ইয়ামাহ এবং মূসায়লামাহ এর হাতে এইরুপ তিলসমতির প্রকাশ ঘটেছিল।কিন্তু তা যে সম্পূর্ণ গোমরাহী ছিল,জ্ঞানীজনের বুঝতে বাকী ছিল না।আর যারা নবুয়তের দাবীদার ছিল তারাও জ্ঞানীজনের নিকট মিথ্যাবাদী ও গোমরাহী ছিল এতে কোন সন্দেহ নেই।কিয়ামত পর্যন্ত যারাই এরুপ দাবী করবে তারাও মিথ্যাবাদী ও গোমরাহ।এমনকি খাতেমুল কাযযাবীন ও সর্বশেষ মিথ্যাবাদী ও মহা প্রতারক মসীহ দজ্জাল এর প্রকাশ ঘটবে।তবে এই সকল প্রতারক ও মিথ্যাবাদীদের কিছু আলামত এমন হবে, যার মাধ্যমে কোন আলেম ও মু’মিনের বুঝতে বাকী থাকবে না যে,তারা মিথ্যাবাদী।তারা না সৎকাজের নির্দেশ করবে আর না অসৎ কাজ থেকে বাঁধা দিবে।যদি কখনও এমন হয় তবে তা হবে আকস্মিক,না হয় কোন বিশেষ উদ্দ্যশ্যকে সামনে রেখে।বস্তুত তারা তাদের কথাবার্তা ও কর্মকান্ডে চরম প্রতারণা ও মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করবে।যেমনঃ ইরশাদ হয়েছেঃ
“শয়তান যে কার নিকটবর্তী হয়,আমি কি তা তোমাদের জানাব?সে প্রত্যেক মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট অবতীর্ণ হয়।“
কিন্তু আম্বিয়াকেরামের অবস্থা এটার সম্পূর্ণ বিপরীত।তাঁরা স্বীয় কার্যকলাপে নেকী,সততা,হিদায়েত,ইস্তিকামাত ও আদল-ইনসাফের সর্বশেষ স্থরে আসীন হয়ে থাকেন।সৎকাজে আদেশ করতেন ও অসৎ কাজ থেকে তাঁরা বিরত রাখতেন এবং সাথে সাথে তাদের পক্ষ থেকে নানা প্রকার মুজিযা ও অলৌকিক ঘটনাও সংঘটিত হত।এবং তাঁরা সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণও পেশ করতেন।চিরকাল তাদের প্রতি বর্ষিত হোক আল্লাহর রহমত সাথী হয়ে থাকুক অশেষ শান্তি।
রেফারেন্সঃতাফসীরে ইবনে কাসীরঃ৯ম খন্ডঃ ১১৬-১১৭ পৃঃ, ইঃফাঃ থেকে প্রকাশিত।
#ইমাম ইবনে হাজর মক্কী শাফেয়ী ‘খয়রাতুল হিসান ফী মানাকিবে আল-ইমামিল আজম আবী হানিফা আননুমান’ গ্রন্থে বলেন-
“ইমাম আযম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর যুগে একজন নবুওত দাবীদার বললো,আমাকে সুযোগ দিন যেন আমি কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি।
ইমাম হুম্মাম বলেন, যে ব্যক্তি তার থেকে নিদর্শন চাইবে,সেও কাফের হয়ে যাবে।কেননা,সে ঐ নিদর্শন চাওয়ার কারণে সৈয়দে আলম ﷺ (অকাট্য বাণী দ্বীনেন অপরিহার্য বিষয়েই) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে।হুজর ﷺ বলেছেন,আমার পরে কোনো নবী নাই।”
রেফারেন্সঃ★খতমে নবুওত কৃতঃআলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খান ফাজেলে ব্রেরলবী(রহঃ), ১৪০ পৃঃ (বাংলা),জাগরণ প্রকাশনী চট্রগ্রাম।
উপরোক্ত তাফসীরগ্রন্থ, হাদিসসমূহ ও ইমাম গণের ফতওয়া দ্বারা বুঝা গেল-
১) রসূলে পাক ﷺ শেষ নবী।
২)রসূলে পাক ﷺ এর পর আর কোন নবী আসবেন না।
৩)রসূলে পাক ﷺ আকেব যার পরে কোন নবী নেই।
৪)রসূলে পাক ﷺ এর পরে যারা নবুয়ত দাবী করবে তারা মিথ্যাবাদী,গোমরাহ ও কাফের।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment