ইসলাম কি ছোঁয়াচে রোগের অস্তিত্ব অস্বীকার করে?-৫ম পর্ব

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

ইসলাম কি ছোঁয়াচে রোগের অস্তিত্ব অস্বীকার করে?-৫ম পর্ব

❏ ১২. আজকে আরও কতিপয় হাদিস আপনাদের সামনে তুলে ধরবো যে হাদিসগুলো দেখিয়ে ইসলাম বিরোধীরা বলতে চায় যে এগুলোতে ছোঁয়াচে রোগ সম্পর্কে ‘ভুল’(!) তথ্য আছে।ভুল তথ্য থাকা তো অনেক দূরের কথা।অথচ: সেই হাদিস গুলোতেই প্রাচীন আরবদের এই সমস্ত কুসংস্কারের গোড়াপত্তন করা হয়েছে।এমনকি কুলক্ষণ বিশ্বাস করার মত জিনিসকে ইসলামে শিরক বলে অভিহীত করা হয়েছে।যেগুলো দেখলে আপনারা নিজেরাই বুজতে পারবেন কেন আল্লাহর রাসূল ﷺ হাদিসে বলেছেন সংক্রামক রোগ বলতে কিছুই নেই!!!

❏ (ক.) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) হুযূর পাক ﷺ উঁনার থেকে বর্ণনা করেন। হুযূর পাক ﷺ ইরশাদ করেন:

الطيا رة شرك قاله ثلاثا

অর্থ: “কোনো কিছুকে অশুভ বা কুলক্ষণ মনে করা কুফরী।” তিঁনি এই বাক্য মুবারক তিনবার উল্লেখ করেছেন।

****দলিল****

*১. তিরমিযী শরীফ: ১৬১৪

*২. মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল: ১/৩৮

*৩. শরহুস সুন্নাহ: ৬/২৭৪

*৪. মিশকাত শরীফ: ৩৯২

*৫. শরহুত ত্বীবী: ৮/৩২

*৬. সুনানে আবু দাউদ: ৩৯১০

🌹বিঃ দ্রঃ তিনবার বলে নবীজি ﷺ কুলক্ষণ মানা যে স্পষ্ট শিরক,তার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন।তবে আলেমদের মতে কুলক্ষণে বিশ্বাস করা ছোট শিরক এর অন্তর্ভুক্ত।এই শিরক ‘শিরকে আসগার’ বা ছোট শিরক হিসেবে গন্য হবে।

❏ (খ.) কাজেই কোনো কিছুকে অশুভ বা কুলক্ষণে মনে করা যাবে না। তবে ভালো লক্ষণ আছে। ভালো বলা যাবে।যেমন: হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে।

عن حضرت ابي هريرة رضي الله عنه قال سمعت رسول صلي الله عليه و سلم يقول لا طيرة وخيرها الفال قالوا وما الفال قال الكلمة الصالحة يسمعها احدكم

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি শুনেছি যে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ”কোন বিষয়কে অশুভ কুলক্ষণে মনে করো না,তবে শুভ লক্ষন আছে। ছাহাবায়ে কিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগন আরজ করলেন, শুভ লক্ষন কি ? তখন তিঁনি বললেন,উত্তম কথা,যা তোমাদের মধ্যে হতে কেউ শুনতে পায় !”

*****দলিল*****

*১. বুখারী শরীফ

*২. মুসলিম শরীফ–কিতাবুস সালাম- ৩৩ নং অনুচ্ছেদ- হাদীস: ৫৬০৪

*৩. মিশকাত শরীফ: ৩৯৩

*৪. শরহুস সুন্নাহ: ৬/২৭২

*৫. শরহুত ত্বীবী: ৮/৩১৩

❏ (গ.) কুলক্ষণ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

فَإِذَا جَاءَتْهُمُ الْحَسَنَةُ قَالُوْا لَنَا هَـذِهِ وَإِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَطَّيَّرُوْا بِمُوْسَى وَمَن مَّعَهُ-

‘যখন তাদের (ফের‘আউন ও তার প্রজাদের) কোন কল্যাণ দেখা দিত তখন তারা বলত, এটা আমাদের জন্য হয়েছে। আর যদি কোন অকল্যাণ হ’ত, তারা তখন মূসা ও তাঁর সাথীদের অলুক্ষণে বলে গণ্য করত’।

[সূরা আ‘রাফ,আয়াত নং ১৩১]

❏ (ঘ.) আরবের মুশরিকরা যাত্রা ইত্যাদি কাজের প্রথমে পাখি উড়িয়ে দিয়ে তার মাধ্যমে শুভাশুভ নির্ণয় করত। পাখি উড়ে ডাইনে গেলে শুভ মনে করে সে কাজে তারা নেমে পড়ত। আর পাখি উড়ে বামে গেলে তাকে অশুভ মনে করে সে কাজ থেকে বিরত থাকত।এভাবে শুভাশুভ নির্ণয়ের বিধান প্রসঙ্গে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন

اَلطِّيَرَةُ شِرْكٌ”

অর্থ “কুলক্ষণে বিশ্বাস করা শিরক”

*****দলিল******

*১. আবুদাঊদ

*২. তিরমিযী

*৩. মিশকাত,হাদিস নং ৪৫৮৪

*৪. মুসলিম,হাদিস নং ২৯৮৫

🌺যেমন:কিছু কুসংস্কার তথা কুলক্ষন আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখি যা কখনোই একজন মুসলমানের মাঝে শোভা পাওয়া উচিত নয়।

*১.বিশ্বজুড়ে আজ ১৩ সংখ্যাকে ‘অলুক্ষণে তের’ বা Unluckey thirteen বলা হয়।

*২. অনেকে কানা-খোঁড়া,পাগল ইত্যাদি প্রতিবন্ধীদের কাজের শুরুতে দেখলে মাথায় হাত দিয়ে বসে।

*৩. দোকান খুলতে গিয়ে পথে এমনিতর কোন কানা-খোঁড়াকে দেখতে পেলে তার আর দোকান খোলা হয় না।অশুভ মনে করে সে ফিরে আসে।

*৪.অনেকে সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি কোন বন্ধ্যা ব্যক্তিকে দেখতে পায় কিংবা খালি কলস দেখতে পায় তবে সারাদিন অমঙ্গলে অতিবাহিত হবে এমন ধারনা করা।

*৫. শনিবার এবং মঙ্গলবার ইন্তেকাল করাকে কুলক্ষন মনে করা এবং জাহান্নামী হওয়ার আলামত মনে করা।রাস্তা চলার সময় কোন প্রানী যদি ডান দিক থেকে রাস্তা অতিক্রম করে বাম দিকে যায় তাহলে যাত্রা শুভ, আর যদি বিপরীত থেকে যায় তাহলে যাত্রা কুলক্ষনে বা অমঙ্গল হবে।

*৬. কুকুর ও বিড়াল কান্না করলে। *৭.দুপুরবেলায় কাক ডাকলে।

*৮. রাতে অথবা দিনে পেঁচা ডাকলে কোন দুর্ঘটনা ঘটবে বা বা কেউ মারা যাবে ইত্যাদি।

❏ (ঙ.) হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে

عن حضرت ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله قلي عليه و سلم لا عدوي ولا هامت ولا نوء ولا صفر

অর্থ : হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ননা করেন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, ” সংক্রামক বলতে কিছু নেই। তারকার ( উদয় বা অস্ত যাওয়ার) কারনে বৃষ্টি হওয়া ভিত্তিহীন এবং ছফর মাসে অশুভ বলতে কিছু নেই !”

****দলিল****

*১. মুসলিম শরীফ-কিতাবুস সালাম,৩২ নং অনুচ্ছেদ,হাদীস ৫৫৯৯।

*২. মিশকাত শরীফ ৩৯১

*৩. শরহুস সুন্নহ ৬/২৭১

❏ (চ.) হাদিস শরীফে বর্নিত আছে

عن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم لا عدوي ولا طيرة

অর্থ : হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্নিত, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,”ছোঁয়াচে এবং অশুভ বলে কিছু নেই !”

[মুসলিম শরীফ,কিতাবুস সালাম -৩৩নং পরিচ্ছেদ-হাদিস ৫৬০৭]

❏ (জ.) অথচ এব্যপারে রাসূল ﷺ কঠোর হুশিয়ারী বানী উচ্ছারন করেছেন।ইমরান বিন হুছাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত,রাসূল ﷺ বলেছেন:

لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَطَيَّرَ، أَوْ تُطُيِّرَ لَهُ أَوْ تَكَهَّنَ، أَوْ تُكُهِّنَ لَهُ أَوْ سَحَرَ، أَوْ سُحِرَ لَهُ-

‘যে ব্যক্তি নিজে কুলক্ষণে বিশ্বাস করে ও যার কারণে অন্যের মাঝে কুলক্ষণের প্রতি বিশ্বাসের প্রবণতা সৃষ্টি হয় এবং যে ব্যক্তি ভাগ্য গণনা করে ও যার জন্য ভাগ্য গণনা করা হয় [বর্ণনাকারী মনে করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ সম্পর্কেও বলেছিলেন] এবং যে জাদু করে ও যার কারণে জাদু করা হয় সেই ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়’।

[তাবারাণী, সিলসিলা সহীহাহ হাদিস:২১৯৫]

🕋 সমাধান কী 🕋

❏ (ঞ.) তবে এসমস্ত বিষয়গুলো অনেক সময় মনের অজান্তে মনে উঁকি দেয় আবার মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে।এখন আসলে কি করবো? তার সমাধানও খুব সুন্দরভাবে হাদিস শরীফে দেওয়া হয়েছে।তবে সুলক্ষণ-কুলক্ষণের ধারণা মনে জন্ম নেয়া স্বভাবগত ব্যাপার, যা সময়ে বাড়ে ও কমে। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল বা নির্ভর করা।

যেমন: ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেছেন:

وَمَا مِنَّا إِلاَّ (أَيْ إِلاَّ وَيَقَعُ فِيْ نَفْسِهِ شَيْءٌ مِّنْ ذَلِكَ) وَلَكِنَّ اللهَ يُذْهِبُهُ بِالتَّوَكُّلِ-

‘আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, মনে কুলক্ষণ সংক্রান্ত কিছুই উঁকি দেয় না। কিন্তু তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর নির্ভরতা) দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তা দূর করে দেন’।

******দলিল******

*১. সুনানে আবুদাঊদ, হা: ৩৯১০

*২. মিশকাত, হা: ৪৫৮৪

❏ (ট.) আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘কিছুকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করা শির্ক। কিছুকে কুপয়া মনে করা শির্ক, কিছুকে কুলক্ষণ মনে করা শির্ক।কিন্তু আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার মনে কুধারণা জন্মে না। তবে আল্লাহ (তাঁরই উপর) তাওয়াক্কুল (ভরসার) ফলে তা (আমাদের হৃদয় থেকে) দূর করে দেন।’’

[মুসনাদ আহমাদ ১/৩৮৯, ৪৪০, আবু দাউদ ৩৯১২, তিরমিজী, ইবন মাজাহ, ইবন হিব্বান, হাকিম প্রমুখ, সিলসিলাহ সহীহাহ ৪৩০]

❏ (ঠ.) কেউ কোন বিষয়ে কুলক্ষণে নিপতিত হ’লে তাকে এজন্য কাফফারা দিতে হবে।কাফফারা এখানে কোন অর্থ কিংবা ইবাদত নয়; বরং পাপ বিমোচক একটি দো‘আ, যা আব্দুল্লাহ বিন আমর বর্ণিত হাদিসে এসেছে।

**তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ ﷺ একদা বললেন, কুলক্ষণ যে ব্যক্তিকে কোন কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে,নিশ্চয়ই সে শিরক করে। সাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! উহার কাফফারা কি হবে? তিঁনি বললেন,ঐ ব্যক্তি বলবে:

اَللَّهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُكَ وَلاَ طَيْرَ إِلاَّ طَيْرُكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ-

(আল্লা-হুম্মা লা খায়রা ইল্লা খায়রুকা ওয়ালা ত্বায়রা ইল্লা ত্বায়রুকা ওয়ালা ইলা-হা গায়রুকা) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আঁপনার কল্যাণ ছাড়া কোন কল্যাণ নেই। আঁপনার সৃষ্ট কুলক্ষণ ছাড়া কোন কুলক্ষণ নেই। আর আঁপনি ছাড়া কোন (হক) মা‘বূদও নেই’।

[আহমাদ হা/৭০৪৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৬৫]

❏ (ড.) হাদিস শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে।কারো নিকট কোন কিছু অশুভ মনে হলে সে আল্লাহ্ র উপর ভরসা করবে এবং উত্তম কথা বলবে।রাসুল (ﷺ) বলেন,শুভ-অশুভ বলে কিছু নেই। তবে শুভ আলামতই আঁমার নিকট পছন্দনীয় আর তা হল উত্তম বাক্য।

[বুখারি শরীফ -৫৭৭]

🌺প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা আল্লাহর হাবীবের প্রতিটি কথা চিরসত্য।তিঁনি যা বলেছেন আল্লাহর তরফ থেকেই বলেছেন।আর ইসলাম হল একটি বিজ্ঞান সম্মত ধর্ম ও দ্বীনি ব্যবস্হ।এতে জাররা পরিমান সন্দেহের অবকাশ নেই।তাই যত বিপদই আসুক না কেন আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন ও আল্লাহর রাসুলের পরিপূর্ণ ঈমান রাখুন।আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে ইসলামকে জানা ও বুজার তাওফিক দান করুন।আমিন

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment