ইয়াজিদ সম্পর্কে আহলে সুন্নাতের সিদ্ধান্ত

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

এয়াযীদ সম্পর্কে আহলুস্ সুন্নাহ’র সিদ্ধান্ত

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

[আমার পীর ও মুরশেদ আউলিয়াকুল শিরোমণি সৈয়দ মওলানা এ, জেড, এম, সেহাবউদ্দীন খালেদ সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি’র পুণ্যস্মৃতিতে উৎসর্গিত]

আরবী ও অনলাইন সেট-আপ: মুহাম্মদ রুবাইয়াত বিন মূসা

এয়াযীদ সম্পর্কে আহলুস্ সুন্নাহ’র সিদ্ধান্ত

(আল্লাহতা’লা যেন তার যা প্রাপ্য তা তাকে দেন এবং তার বাবা হযরত আমীরে মোয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি সন্তুষ্ট হন)

বর্তমানে এটি পরিলক্ষিত হচ্ছে যে কিছু মানুষ আহলে বায়ত (মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের পরিবার সদস্য ও আত্মীয়-পরিজন)-এর প্রতি নিজেদের প্রত্যক্ষ, এমন কি পরোক্ষ ঘৃণার বহিঃপ্রকাশস্বরূপ এয়াযীদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ধামাচাপা দিতে সচেষ্ট এবং এরই ধারাবাহিকতায় তারা তাকে এক মহান ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিত্রিত করছে। আল্লাহর অনুগ্রহে আমরা এই লেখায় ইসলামের এই বিশ্বাসঘাতক (এয়াযীদ) কীভাবে ইমাম হুসাইন  রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করেছিল এবং কীভাবে সে মদীনা মোনাওয়ারাকে লণ্ডভণ্ড করে লুঠতরাজ চালিয়েছিল সে সম্পর্কে আলোকপাত করবো।

প্রথমতঃ আমরা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি সহীহ হাদীস পেশ করবো, যা মনোরম মদীনা মোনাওয়ারা নগরীকে যে সব লোক ’লণ্ডভণ্ড’ করে তাদের সম্পর্কে বর্ণনা দেয়।

ইমাম  আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত সা’য়েব ইবনে খালেদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস, যিনি এরশাদ ফরমান:

الْمَدِينَةُ حَرَمٌ مَا بَيْنَ عَيْرٍ إِلَى ثَوْرٍ ، فَمَنْ أَحْدَثَ فِيهَا حَدَثًا ، أَوْ آوَى مُحْدِثًا ، فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ.

–     

   “যে কেউ অন্যায়ের প্রসার এবং মদীনাবাসীদের হয়রানি বা ভীত-সন্ত্রস্ত করে, তার প্রতি আল্লাহর লা’নত (অভিসম্পাত), ফেরেশতাকুলের এবং গোটা মানব জাতির (মো’মেন বান্দাদের) লা’নত-ও।” [১.]

   কুরআন মজীদে ঘোষিত হয়েছে:

إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُهِينًا.

–    “নিশ্চয় যারা কষ্ট দেয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে, তাদের প্রতি আল্লাহর লা’নত (অভিসম্পাত) দুনিয়া ও আখেরাতে এবং আল্লাহ তাদের জন্যে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।” [২.]

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তাঁর দৌহিত্রকে নৃশংসভাবে শহীদ করা এবং তিনি যে স্থানকে হাররাম (পবিত্র) বলে ঘোষণা করেছেন ওকে তছনছ করার চেয়ে বেশি কষ্টদায়ক আর কী-ই বা হতে পারে?

১/ – এয়াযীদের নানা ঘৃণ্য অপরাধ

ইবনে কাসীর ৬৩ হিজরীর (কারবালার) ঘটনা সম্পর্কে নিজ ‘তারিখ’ গ্রন্থে লিখেন:

 فَقَالَ ابْنُ الزُّبَيْرِ لِأَصْحَابِهِ: يَا هَؤُلَاءِ، قُتِلَ أَصْحَابُكُمْ، فَإِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ. وَقَدْ أَخْطَأَ يَزِيدُ خَطَأً فَاحِشًا فِي قَوْلِهِ لِمُسْلِمِ بْنِ عُقْبَةَ أَنْ يُبِيحَ الْمَدِينَةَ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ، وَهَذَا خَطَأٌ كَبِيرٌ، فَإِنَّهُ وَقَعَ فِي هَذِهِ الثَّلَاثَةِ أَيَّامٍ مِنَ الْمَفَاسِدِ الْعَظِيمَةِ فِي الْمَدِينَةِ النَّبَوِيَّةِ مَا لَا يُحَدُّ وَلَا يُوَصَفُ، مِمَّا لَا يَعْلَمُهُ إِلَّا اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ. وَقَدْ أَرَادَ بِإِرْسَالِ مُسْلِمِ بْنِ عُقْبَةَ تَوْطِيدَ سُلْطَانِهِ وَمُلْكِهِ، وَدَوَامَ أَيَّامِهِ، فَعَاقَبَهُ اللَّهُ بِنَقِيضِ قَصْدِهِ، فَقَصَمَهُ اللَّهُ قَاصِمُ الْجَبَابِرَةِ، وَأَخَذَهُ أَخْذَ عَزِيزٍ مُقْتَدِرٍ. وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظالمة إن أخذه أليم شديد.

–     ইবনে যুবাইর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ওহে মানুষেরা! তোমাদের আসহাবদেরকে হত্যা করা হয়েছে – ইন্না লিল্লাহে ইন্না ইলাইহে রাজেউন। – এয়াযীদ একটি ঘৃণিত ভুল কাজ করেছে মদীনা মোনাওয়ারাকে তিন দিনের জন্যে ‘মোবাহ’ হিসেবে কার্যকর করার লক্ষ্যে মুসলিম ইবনে উকবাকে আদেশ দিয়ে। এটি ছিল তার সবচেয়ে বড় ও মারাত্মক ভুল। অনেক সাহাবা-এ-কেরাম ও তাঁদের সন্তানদের হত্যা করা হয়। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদের মাধ্যমে এয়াযীদ আমাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৌহিত্র ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর সাথীদের শহীদ করে; আর ওই তিন দিনে মদীনা মোনাওয়ারায় এমন সব গর্হিত অপরাধ সংঘটিত হয় যা আল্লাহ ছাড়া কেউই জানেন না। এয়াযীদ তার শাসনকে মুসলিম ইবনে উকবাহের প্রেরণের মাধ্যমে সংহত করতে চেয়েছিল, কিন্তু আল্লাহতা’লা তার ইচ্ছাকে পুরো হতে দেন নি এবং তাকে শাস্তি দিয়েছিলেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তাকে মেরে ফেলেন যেমনিভাবে তিনি আগ্রাসী শহরগুলোকে (অর্থাৎ, ওই শহরগুলোর আক্রমণকারীদেরকে) নিজ কব্জায় নিয়েছিলেন; আর নিঃসন্দেহে আল্লাহর কব্জা কঠোর ও বেদনাদায়ক।” [৩.]

২/ – ইবনে যিয়াদও এয়াযীদের আচরণে বিরূপ

এয়াযীদের অপরাধ এতো গর্হিত ছিল যে এমন কি তার অনুগত উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ যাকে মুসলিম ইবনে আকীল ও পরবর্তী পর্যায়ে ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর হত্যার জন্যে পাঠানো হয়েছিল, এবং যাকে পত্র মারফত এয়াযীদ বলেছিল মক্কায় গিয়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর ওপর আবরোধ দিতে, সেও তা করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছিল:

وَقَدْ كَانَ يزيد كتب إلى عبد الله بن زياد أن يسير إلى الزُّبَيْرِ فَيُحَاصِرَهُ بِمَكَّةَ، فَأَبَى عَلَيْهِ وَقَالَ: وَاللَّهِ لَا أَجْمَعُهُمَا لِلْفَاسِقِ أَبَدًا، أَقْتُلُ ابْنَ بِنْتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَغْزُو الْبَيْتَ الْحَرَامَ؟ وَقَدْ كَانَتْ أُمُّهُ مَرْجَانَةُ قَالَتْ لَهُ حِينَ قَتَلَ الْحُسَيْنَ: وَيْحَكَ مَاذَا صَنَعْتَ وماذا ركبت؟ وعنفته تعنيفا شديدا. قَالُوا: وَقَدْ بَلَغَ يَزِيدَ أَنَّ ابْنَ الزُّبَيْرِ يقول في خطبته: يزيد القرود، شارب الخمور، تارك الصلوات، منعكف على القينات.

–      ‘আল্লাহর শপথ! আমি কোনো ফাসেক (পাপী এয়াযীদ)-এর খাতিরে দুটো (অপ)-কর্মতে জড়াবো না। আমি ইতোমধ্যেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেয়ের (ঘরের) নাতিকে হত্যা করেছি; আর এখন (সে নির্দেশ দিচ্ছে) বায়তুল হাররামের সাথে যুদ্ধ করতে।’ তবে এয়াযীদ যখন ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করে, তখন তার মা মারজানা তাকে বলেন, ‘তুমি মরো গে! তুমি এই জঘন্য অপরাধ কীভাবে করতে পারলে?’ তিনি তাকে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় ভর্ৎসনা করেন। এয়াযীদকে জানানো হয় যে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁর বিভিন্ন ভাষণে এয়াযীদ সম্পর্কে বলতেন, সে একজন জালিয়াত, মদ্যপ, নামায তরককারী ও গায়িকা (ভ্রষ্টা) নারীদের সাহচর্যে অবস্থানকারী ব্যক্তি।[৪.]

ইবনে কাসীর আরও বর্ণনা করেন:

ثُمَّ أَبَاحَ مُسْلِمُ بْنُ عُقْبَةَ، الَّذِي يَقُولُ فِيهِ السَّلف مسرف بن عقبة – قبحه الله من شيخ سوء ما أجهله – المدينة ثلاث أَيَّامٍ كَمَا أَمَرَهُ يَزِيدُ، لَا جَزَاهُ اللَّهُ خَيْرًا، وَقَتَلَ خَلْقًا مِنْ أَشْرَافِهَا وَقُرَّائِهَا وَانْتَهَبَ أَمْوَالًا كَثِيرَةً مِنْهَا، وَوَقَعَ شرُّ عَظِيمٌ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ عَلَى مَا ذَكَرَهُ غَيْرُ وَاحِدٍ. فَكَانَ مِمَّنْ قُتِلَ بَيْنَ يَدَيْهِ صَبْرًا مَعْقِلُ بْنُ سنان، وَقَدْ كَانَ صَدِيقَهُ قَبْلَ ذَلِكَ ، وَلَكِنْ أَسْمَعَهُ فِي يَزِيدَ كَلَامًا غَلِيظًا فَنَقَمَ عَلَيْهِ بِسَبَبِهِ.

–      মুসলিম ইবনে উকবা, যার অপর পরিচিতি আস্ সাইফ মুসরাফ বিন উকবা নামে (আল্লাহ এই বদ ও মূর্খ লোকের কল্যাণ না করুন, আমীন), সে এয়াযীদের আদেশে মদীনা মোনাওয়ারার আক্রমণকে ‘বৈধতা’ দিয়েছিল তিন দিনের জন্যে। আল্লাহতা’লা এয়াযীদকে ‘জাযা’ ও ’খায়র’ মন্ঞ্জুর না করুন, আমীন। সে বহু ন্যায়বান মানুষের হত্যা সংঘটন করে এবং মদীনার বিপুল মালামাল লুঠপাট করে। একাধিক বর্ণনায় এসেছে যে সে ওখানে প্রচুর ক্ষতি সাধন করে এবং অনেক ফাসাদের জন্ম দেয়। এও উল্লেখিত হয়েছে যে (সাহাবী) হযরত মুয়াফল ইবনে সানান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইবনে উকবার সামনে বেঁধে রাখা হয় এবং তারপর শহীদ করা হয়। এই সময় সে বলে, ‘তুমি এয়াযীদের বন্ধু ছিলে, কিন্তু পরে তুমি তার বিরুদ্ধে কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছ; তাই এয়াযীদ তোমার প্রতি বিরূপ ভাবাপন্ন হয়েছে।[৫.]

৩/ – নেতৃস্থানীয় তাবেঈ সাঈদ ইবনে মুসাইয়েব রহমতুল্লাহি আলাইহির প্রতি এয়াযীদের বৈরিতা

قَالَ الْمَدَائِنِيُّ: وَجِيءَ إِلَى مُسْلِمٍ بِسَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ فَقَالَ لَهُ: بَايِعْ! فَقَالَ: أُبَايِعُ عَلَى سِيرَةِ أَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ: فَأَمَرَ بِضَرْبِ عُنُقِهِ، فَشَهِدَ رَجُلٌ أَنَّهُ مَجْنُونٌ فَخَلَّى سبيله.

–      আল-মুদাইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়েব রহমতুল্লাহি আলাইহিকে নিয়ে আসা হয় মুসলিম বিন উকবার সামনে। সে তাঁকে তার কাছে বায়াত (আনুগত্য) গ্রহণ করতে বলে। তিনি এর জবাবে বলেন, “আমি (শুধু) সাইয়্যেদুনা হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও সাইয়্যেদুনা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সীরাতের (আদর্শের) প্রতি বায়াত নিতে পারি।” এমতাবস্থায় ইবনে উকবা তাঁকে হত্যার নির্দেশ দেয়। কিন্তু কেউ একজন (তাঁকে বাঁচাবার জন্যে) বলেন যে এই ব্যক্তি (হযরত সাঈদ) পাগল। এতে তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয়।[৬.]

৪/ – শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি 

ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর রচিত ‘আল-এমতা’ বিল আরবাঈন’ শীর্ষক বইয়ের পুরো শিরোনামই দিয়েছেন ‘এয়াযীদের প্রতি লা’নত’। ওতে তিনি লিখেন,

وَأما الْمحبَّة فِيهِ وَالرَّفْع من شَأْنه فَلَا تقع إِلَّا من مُبْتَدع فَاسد الِاعْتِقَاد فَإِنَّهُ كَانَ فِيهِ من الصِّفَات مَا يَقْتَضِي سلب الْإِيمَان عَمَّن يُحِبهُ لِأَن الْحبّ فِي الله والبغض فِي الله من الْإِيمَان وَالله الْمُسْتَعَان.

–       “এয়াযীদকে ভক্তি ও তার প্রশংসা ‘বেদআতী-গোমরাহ’ ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই করে না, যে ব্যক্তির বিশ্বাস একেবারেই শূন্য। কেননা, এয়াযীদের এমন সব বৈশিষ্ট্য ছিল যার ভক্ত-অনুরক্ত হলে কুফর তথা অবিশ্বাসের যোগ্য হতে হয়। এটা এই কারণে যে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালোবাসা এবং তাঁরই ওয়াস্তে ঘৃণা করা ঈমানেরই লক্ষণ।” [৭.]

ইমাম সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি অন্যত্র লিখেন,

وقال يحيى بن عبد الملك بن أبي غنية أحد الثقات ثنا نوفل بن أبي عقرب ثقة قال كنت عند عمر بن عبد العزيز فذكر رجل يزيد بن معاوية فقال أمير المؤمنين يزيد فقال عمر تقول أمير المؤمنين يزيد وأمر به فضرب عشرين سوط.

–      “এয়াহইয়া ইবনে আব্দিল মুলক্ বিন আবি গানিয়্যা যিনি ’সিকা (নির্ভরযোগ্য) বর্ণনাকারীদের একজন’, তিনি ‘সিকা’ বর্ণনাকারী নওফল বিন আবি আকরাব থেকে শুনেছেন: একবার খলীফা উমর ইবনে আবদিল আযীয (২য় উমর)-এর দরবারে মানুষেরা এয়াযীদ ইবনে মু’আবিয়া সম্পর্কে আলাপ করছিলেন। ওই সময় এক লোক এয়াযীদকে ‘আমীরুল মো’মেনীন’ (ঈমানদারদের শাসক) খেতাবে সম্বোধন করে। এটি শুনে খলীফা ২য় উমর (রাগান্বিত হয়ে) তাকে বলেন, “তুমি এয়াযীদকে আমীরুল মো’মেনীন ডেকেছ?” অতঃপর তিনি ওই লোককে ২০টি দোররা মারার হুকুম দেন।[৮.]

৫/ – ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি ’তারিখুল খুলাফা’ গ্রন্থে যা বলেন

فأبوا إلا قتله، فقتل وجيء برأسه في طست حتى وضع بين يدي ابن زياد، لعن الله قاتله وابن زياد معه ويزيد أيضًا.

–       ‘‘আপনি (ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু) শাহাদাত বরণ করেন এবং আপনার কর্তিত শির ইবনে যিয়াদের সামনে একটি থালায় করে আনা হয়। আপনাকে যে ব্যক্তি হত্যা করেছে তার ওপর আল্লাহর লা’নত (অভিসম্পাত); আরও লা’নত ইবনে যিয়াদ ও এয়াযীদের ওপর।” [৯. দলিলচিত্র-http://www.ahlus-sunna.com/index.php?option=com_content&view=article&id=46&Itemid=29&limitstart=31]

ইমাম সৈয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরও লিখেন:

قال نوفل بن أبي الفرات: كنت عند عمر بن عبد العزيز، فذكر رجل يزيد، فقال: قال أمير المؤمنين يزيد بن معاوية، فقال: تقول أمير المؤمنين؟ وأمر به، فضرب عشرين سوطًا. وفي سنة ثلاث وستين بلغه أن أهل المدينة خرجوا عليه وخلعوه، فأرسل إليهم جيشًا كثيفًا وأمرهم بقتالهم، ثم المسير إلى مكة لقتال ابن الزبير، فجاءوا وكانت وقعة الحرة على باب طيبة، وما أدراك ما وقعة الحرة؟ ذكرها الحسن مرة فقال: والله ما كاد ينجو منهم أحد، قتل فيها خلق من الصحابة -رضي الله عنهم- ومن غيرهم، ونهبت المدينة، وافتض فيها ألف عذراء، فإنا لله وإنا إليه راجعون قال صلى الله عليه وسلم: “من أخاف أهل المدينة أخافه الله، وعليه لعنة الله والملائكة والناس أجمعين”. رواه مسلم

 وكان سبب خلع أهل المدينة له أن يزيد أسرف في المعاصي.

وأخرج الواقدي من طرق: أن عبد الله بن حنظلة الغسيل قال: والله ما خرجنا على يزيد  حتى خفنا أن نرمى بالحجارة من السماء إنه رجل ينكح أمهات الأولاد، والبنات، والأخوات، ويشرب الخمر، ويدع الصلاة.

قال الذهبي: ولما فعل يزيد بأهل المدينة ما فعل، مع شربه الخمر وإتيانه المنكرات، اشتد عليه الناس، وخرج عليه غير واحد، ولم يبارك الله في عمره، وسار جيش الحرة إلى مكة لقتال ابن الزبير، فمات أمير الجيش بالطريق، فاستخلف عليه أميرًا، وأتوا مكة، فحاصروا ابن الزبير وقاتلوه ورموه بالمنجنيق، وذلك في صفر سنة أربع وستين، واحترقت من شرارة نيرانهم أستار الكعبة وسقفها وقرنا الكبش الذي فدى الله به إسماعيل وكانا في السقف، وأهلك الله يزيد في نصف شهر ربيع الأول من هذا العام، فجاء الخبر بوفاته والقتال مستمر، فنادى ابن الزبير: يا أهل الشام إن طاغيتكم قد أهلك، فانقلبوا وذلوا وتخطفهم الناس، ودعا ابن الزبير إلى بيعة نفسه, وتسمى بالخلافة، وأما أهل الشام فبايعوا معاوية بن يزيد، ولم تطل مدته كما سيأتي.

–      নগরী লুঠপাটের পরে সে তার বাহিনীকে পবিত্র মক্কায় পাঠায় সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করার জন্যে। ওই সময় ‘হাররা’-এর ঘটনা ঘটে। হাররায় কী ঘটেছিল আপনারা জানেন কি? এ প্রসঙ্গে (তাবেঈ) হযরত হাসসান বলেন, হযরত নওফল বিন আবি ফিরায়াত রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন যে একবার তিনি খলীফা উমর ইবনে আব্দিল আযীযের দরবারে বসেছিলেন; এমন সময় এক লোক এয়াযীদকে ‘আমীরুল মো’মেনীন’ খেতাবে সম্বোধন করে। এতে খলীফা (রাগান্বিত হয়ে) তাকে বলেন, “তুমি এই ব্যক্তিকে ’আমীরুল মো’মেনীন’ বলো?” অতঃপর তিনি ওই লোককে ২০টি দোররা মারার আদেশ দেন। ৬৩ হিজরীতে এয়াযীদ জানতে পারে যে মদীনাবাসী মুসলমানবৃন্দ তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাই সে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী পবিত্র নগরীতে প্রেরণ করে এবং মদীনাবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পবিত্র “মদীনা মোনাওয়ারায় হামলা হলে পর কেউই নিরাপদ ছিলেন না। অসংখ্য সাহাবী ও অন্যান্য মানুষ শহীদ হন এবং মদীনায় লুঠপাট হয়; আর সহস্র সহস্র কুমারী মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করা হয়। ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন। … মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন: “মদীনাবাসীকে যে কেউ (সন্ত্রাসের মাধ্যমে) হয়রানি বা ভীত-সন্ত্রস্ত করলে আল্লাহ-ও তাকে অনুরূপ প্রতিদান দেবেন এবং তার ওপর আল্লাহর লা’নত, ফেরেশতাকুল ও মানব জাতির (মো’মেনদের) লা’নত-ও” (মুসলিম শরীফ)। মদীনাবাসী মুসলমানবৃন্দ যে কারণে এয়াযীদের বায়াত গ্রহণ করেন নি, তা হলো সে ’অত্যধিক পাপাচারে লিপ্ত’ ছিল। আল-ওয়াকিদী সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ বিন খাযলাতাল গুসাইল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “আল্লাহর শপথ! আমরা এয়াযীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি যখন আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে ‘আমাদের প্রতি আসমান থেকে পাথর নিক্ষেপ করা হবে’; কেননা, এয়াযীদী গোষ্ঠী তাদের মা, বোন ও কন্যাদের বিয়ে করা আরম্ভ করেছিল, প্রকাশ্যে মদ্যপান করছিল এবং নামাযও তরক করছিল।” ইমাম যাহাবী বলেন, এয়াযীদ ‘মদ্যপান ও অন্যান্য কুকর্মে লিপ্ত’ হবার পর মদীনাবাসীদের প্রতি জুলুম-নিপীড়ন করলে মক্কাবাসী মুসলমানবৃন্দও চারদিক থেকে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। আল্লাহতা’লা এয়াযীদের জীবনে কোনো রহমত-বরকত দেন নি। (এয়াযীদ মক্কা আক্রমণ করে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুকেও শহীদ করে)।[১০. দলিলচিত্র-http://www.ahlus-sunna.com/index.php?option=com_content&view=article&id=46&Itemid=29&limitstart=32]

৬/ – আল্লামা মাহমূদ আলূসী তাঁর কৃত ‘তাফসীরে রূহুল মা’আনী’ কেতাবে সূরা মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর ২২-২৩ নং আয়াতগুলোর ব্যাখ্যায় বলেন:

واستدل بها أيضا على جواز لعن يزيد عليه من الله تعالى ما يستحق نقل البرزنجي في الإشاعة والهيثمي في الصواعق أن الإمام أحمد لما سأله ولده عبد الله عن لعن يزيد قال كيف لا يلعن من لعنه الله تعالى في كتابه فقال عبد الله قد قرأت كتاب الله عز وجل فلم أجد فيه لعن يزيد فقال الإمام إن الله تعالى يقول: فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحامَكُمْ أُولئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ الآية وأي فساد وقطيعة أشد مما فعله يزيد انتهى.

–      “এয়াযীদের প্রতি ‘লা’নত’ দেয়ার দালিলিক প্রমাণ এই আয়াত থেকেই বের করা হয়েছে, যেমনটি ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সূত্রে উল্লেখ করেছেন আল-বরযানজি রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজ ‘আল-আশআত’ পুস্তকে এবং আল-হায়তামী তাঁর ‘আস্ সাওয়াইক্ক’ গ্রন্থে এই মর্মে যে, ইমাম আহমদ (রহ:)-এর পুত্র আবদুল্লাহ তাঁকে এয়াযীদের প্রতি লা’নত দেয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন। ইমাম সাহেব বলেন, ‘তার প্রতি লা’নত দেয়া যাবে না কেন, যেখানে স্বয়ং আল্লাহতা’লা-ই কুরআন মজীদে তাকে লা’নত দিয়েছেন?’ আবদুল্লাহ আবার প্রশ্ন করেন, ‘কিতাবুল্লাহর ওই আয়াতটি তেলাওয়াত করুন যাতে আমি জানতে পারি কীভাবে এয়াযীদের প্রতি লা’নত দেয়া হলো?’ এমতাবস্থায় ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি নিম্নবর্ণিত আয়াতগুলো তেলাওয়াত করেন, ‘তবে কি তোমোদের এ লক্ষণ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে যে তোমরা শাসনক্ষমতা লাভ করলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং আপন আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে? এরা হচ্ছে ওই সব লোক যাদের প্রতি আল্লাহতা’লা অভিসম্পাত (লা’নত) দিয়েছেন…’ (আল-কুরআন, ৪৭:২২-২৩)। অতঃপর তিনি বলেন, ‘এয়াযীদ যা করেছে তার থেকে বড় বিপর্যয় আর কী হতে পারে’?”[১১.]

দ্বিতীয়তঃ  আল্লামা আলূসী আরও বলেন,

ولو سلّم أن الخبيث كان مسلما فهو مسلم جمع من الكبائر ما لا يحيط به نطاق البيان، وأنا أذهب إلى جواز لعن مثله على التعيين ولو لم يتصور أن يكون له مثل من الفاسقين، والظاهر أنه لم يتب، واحتمال توبته أضعف من إيمانه، ويلحق به ابن زياد وابن سعد وجماعة فلعنة الله عز وجل عليهم أجمعين، وعلى أنصارهم وأعوانهم وشيعتهم ومن مال إليهم إلى يوم الدين ما دمعت عين على أبي عبد الله الحسين.

–      “আর আমি বলি, আমার ভাবনায় যা প্রাধান্য পায় তা হলো এই খবীস (এয়াযীদ) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রেসালতের পক্ষে সাক্ষ্য দেয় নি। আমার মতে, এয়াযীদের মতো লোককে লা’নত দেয়া সঠিক, যদিও তার মতো এতো বড় ফাসিকের কথা কল্পনা করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়; আর এটাও স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে সে কখনোই তওবা করে নি; (উপরন্তু) তার তওবা করার সম্ভাবনাও তার ঈমান পোষণ করার সম্ভাবনার চেয়ে ক্ষীণতর। এয়াযীদের পাশাপাশি ইবনে যিয়াদ, ইবনে সা’আদ ও তার দল-বল এতে জড়িত। অবশ্যঅবশ্য কেয়ামত দিবস অবধি এবং ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুএর জন্যে (মো’মেনদের) চোখের পানি যতোদিন ঝরবে ততোদিন পর্যন্ত আল্লাহর লা’নত তাদের সবার ওপর পতিত হোক; তাদের বন্ধু-বান্ধব, সমর্থক, দল-বল এবং ভক্তদের ওপরও পতিত হোক!” [১২. দলিলচিত্র-http://www.ahlus-sunna.com/index.php?option=com_content&view=article&id=46&Itemid=29&limitstart=43]

৭/ – ইমাম যাহাবীর ভাষ্য –

وَكَانَ نَاصِبِيّاً فَظّاً غَلِيْظاًجَلْفاً, يتناول المسكر, ويفعل المنكر. افْتَتَحَ دَوْلَتَهُ بِمَقْتَلِ الشَّهِيْدِ الحُسَيْنِ, وَاخْتَتَمَهَا بِوَاقِعَةِ الحَرَّةِ فَمَقَتَهُ النَّاسُ وَلَمْ يُبَارَكْ فِي عُمُرِه. وَخَرَجَ عَلَيْهِ غَيْرُ وَاحِدٍ بَعْدَ الحُسَيْنِ: كَأَهْلِ المَدِيْنَةِ قَامُوا للهِ,.

–      ‘‘এয়াযীদ ছিল এক জঘন্য নসিবী (আহলে বায়তকে ঘৃণাকারী)। সে রাজত্ব আরম্ভ করে ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করে এবং রাজত্বের ইতি টানে হাররা-এর ঘটনা দ্বারা (অর্থাৎ, মদীনা অবরোধ, যার দরুন সহীহ হাদীস মোতাবেক সে লা’নতের যোগ্য হয়)। ফলে মানুষেরা তাকে ঘৃণা করতো; অধিকন্তু সে জীবনে রহমত-বরকত কিছুই পায় নি; ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুএর শাহাদাতের পরে তার বিরুদ্ধে অনেকে অস্ত্র তুলে নেন – যেমনটি করেছিলেন মদীনাবাসীগণ, যাঁরা আল্লাহর ওয়াস্তে (তার বিরুদ্ধে) রুখে দাঁড়ান।”[১৩.]

দ্বিতীয়তঃ ইমাম যাহাবী আরও লিখেন,

قلت: ولما فَعَلَ يَزِيدُ بِأَهْلِ الْمَدِينَةِ مَا فَعَلَ، وَقُتِلَ الْحُسَيْنُ وَإِخْوَتُهُ وَآلُهُ، وَشَرِبَ يَزِيدُ الْخَمْرَ، وَارْتَكَبَ أَشْيَاءَ مُنْكَرَةً، بَغِضَهُ النَّاسُ، وَخَرَجَ عَلَيْهِ غَيْرُ وَاحِدٍ، وَلَمْ يُبَارِكِ اللَّهُ فِي عُمْرِهِ، فَخَرَجَ عَلَيْهِ أَبُو بِلَالِ مِرْدَاسِ بْنِ أُدَيَّةَ الْحَنْظَلِيُّ.

–      “আমি বলি, এয়াযীদ মদীনাবাসীদের সাথে যে আচরণ করেছিল, এবং ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর বংশধরদের যেভাবে হত্যা করেছিল, আর যেভাবে মদ্যপান ও গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়েছিল, তাতে মানুষেরা তাকে ঘৃণা করতেন এবং তার বিরুদ্ধে একাধিকবার রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। আল্লাহতা’লা এয়াযীদের জীবনে রহমত-বরকত দেন নি; উপরন্তু, আবু বিলাল মিরদাস্ বিন আদইয়া আল-হানযালী তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।”[১৪. দলিলচিত্র-http://www.ahlus-sunna.com/index.php?option=com_content&view=article&id=46&Itemid=29&limitstart=44]

তৃতীয়তঃ ইমাম যাহাবী আরও লিখেন,

وَعَنْ زِيَادٍ الحَارِثِيِّ, قَالَ: سَقَانِي يَزِيْدُ شَرَاباً مَا ذُقْتُ مِثْلَهُ, فَقُلْتُ: يَا أَمِيْرَ المُؤْمِنِيْنَ, لَمْ أُسَلْسِلْ مِثْلَ هَذَا قَالَ هَذَا رُمَّانُ حُلْوَانَ بِعَسَلِ أَصْبَهَانَ, بِسُكَّرِ الأَهْوَازِ, بِزَبِيْبِ الطَّائِفِ, بِمَاءِ بَرَدَى. وَعَنْ مُحَمَّدِ بنِ أَحْمَدَ بنِ مِسْمَعٍ, قَالَ: سَكِرَ يَزِيْدُ, فَقَامَ يَرْقُصُ, فَسَقَطَ عَلَى رَأْسِهِ, فَانْشَقَّ وَبَدَا دِمَاغُهُ.

–      “যিয়াদ হারসী বর্ণনা করে: ‘এয়াযীদ আমাকে মদ পান করতে দেয়। আমি ইতিপূর্বে কখনোই এ রকম মদ পান করি নি; তাই তাকে জিজ্ঞেস করি কোথা থেকে সে এই মদের উপাদান সংগ্রহ করেছে। এয়াযীদ জবাবে বলে, এটি মিষ্টি ডালিম, ইসপাহানের মধু, হাওয়াযের চিনি, তায়েফের আঙ্গুর ও বুরদাহ-এর পানি দ্বারা প্রস্তুতকৃত।’ আহমদ ইবনে মাসামা বর্ণনা করেন: ‘একবার এয়াযীদ মদ্যপান করে নাচা আরম্ভ করে; হঠাৎ সে পড়ে যায় এবং তার নাক দিয়ে রক্ত বেরুতে আরম্ভ করে’।”[১৫. দলিলচিত্র-http://www.ahlus-sunna.com/index.php?option=com_content&view=article&id=46&Itemid=29&limitstart=46]

৮/ – এয়াযীদ সম্পর্কে কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ভাষ্য – 

মহান মুফাসসির ও সুবিখ্যাত গ্রন্থাবলীর প্রণেতা এবং সকল সুন্নী মুসলমানের কাছে গ্রহণযোগ্য ইসলামী জ্ঞান বিশারদ কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি কুরআন মজীদের ১৪:২৮ আয়াতখানি উদ্ধৃত করেন:

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ بَدَّلُوا نِعْمَتَ اللَّهِ كُفْرًا وَأَحَلُّوا قَوْمَهُمْ دَارَ الْبَوَارِ.

–      “আপনি কি তাদেরকে দেখেন নি যারা অকৃজ্ঞতাবশত আল্লাহর অনুগ্রহকে বদল করেছে এবং আপন সম্প্রদায়কে ধ্বংসের ঘরে নামিয়ে এনেছে?”

অতঃপর এর তাফসীরে হযরত পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেন,

اما بنوا امية فمتعوا بالكفر حتّى اسلم ابو سفيان ومعاوية وعمرو بن العاص وغيرهم- ثم كفر يزيد ومن معه بما أنعم الله عليهم وانتصبوا العداوة ال النبي صلى الله عليه وسلم وقتلوا حسينا رضى الله عنه ظلما وكفر يزيد بدين محمّد صلى الله عليه وسلم حتّى انشد أبياتا حين قتل حسينا رضى الله عنه- مضمونها اين أشياخي ينظرون انتقامي بال محمّد وبنى هاشم واخر الأبيات

ولست من جندب ان لم انتقم … من بنى احمد ما كان فعل

وايضا أحل الخمر وقال

مدام كنز فى اناء كفضة … وساق كبد مع مدام كانجم

وشمسه كرم برجها قعرها … ومشرقها الساقي ومغربها فهى

فان حرمت يوما على دين احمد … فخذها على دين المسيح بن مريم

–      “বনী উমাইয়া সব সময় কুফরীর ওপর উল্লাস প্রকাশ করেছিল; তবে আবু সুফিয়ান, আমীরে মোয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, আমর ইবনে আস্ এবং অন্যান্যরা মুসলমান হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে এয়াযীদ ও তার সাথীরা আল্লাহর এই নেয়ামত (আশীর্বাদ) প্রত্যাখ্যান করে আহলে বায়তের প্রতি বৈরিতার পতাকা উড়ায়; আর শেষমেশ ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায়, যেখানে সে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর ধর্মকে অস্বীকার করে বসে। ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুএর শাহাদাতের পরে সে বলে: ‘আমার পূর্বপরুষেরা বেঁচে থাকলে তাঁরা আজ দেখতেন কীভাবে আমি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর পরিবার ও বনী হাশেমের ওপর প্রতিশোধ নিয়েছি।’ সে এ কথা ব্যক্ত করতে যে দ্বিচরণ শ্লোক ব্যবহার করে তার শেষাংশে আছে – ’বদরের যুদ্ধে আহমদ (মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আমার পূর্বপুরুষদের সাথে যা কিছু করেছেন, তার বদলা আমি নেবো’ (নাউযুবিল্লাহ)। সে মদ হালাল ঘোষণা করে এবং এর প্রশংসায় বলে, ‘যদি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর ধর্মে মদ হারাম হয়, তাহলে ঈসা ইবনে মরঈয়মের (আ:) ধর্মে একে জায়েয জেনো’।”

৯/ – ইবনে কাসীরের ভাষ্য –

ইবনে কাসীর তার রচিত ‘আল-বেদায়া’ গ্রন্থের ৮ম খণ্ডের ১১৬৯ পৃষ্ঠায় ‘যিকরে এয়াযীদ বিন মোয়াবিয়া’ শীর্ষক অধ্যায়ে লিখেন:

বিভিন্ন বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে এয়াযীদ দুনিয়ার কুকর্ম পছন্দ করতো; মদ্যপান করতো, গান-বাজনায় ছিল আসক্ত, দাড়িবিহীন ছেলেদের সাথে সমকামিতায় লিপ্ত, ঢোল বাজাতো, কুকুর পালতো, ব্যাঙের, ভালুকের ও বানরের লড়াই লাগিয়ে দিতো। প্রতিদিন সকালে সে মদ্যপ অবস্থায় বানরকে ঘোড়ার পিঠের সাথে বেঁধে ঘোড়াকে দৌড় দিতে বাধ্য করতো।”

১০/ – ইবনে আসীরের মন্তব্য

ইবনে আসীর নিজ ‘তারীখ আল-কামিল’ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ৪৫০ পৃষ্ঠায় মুনযির ইবনে যাবীর থেকে বর্ণনা করেন:

إِنَّهُ قَدْ أَجَازَنِي بِمِائَةِ أَلْفٍ وَلَا يَمْنَعُنِي مَا صَنَعَ بِي أَنْ أُخْبِرَكُمْ خَبَرَهُ، وَاللَّهِ إِنَّهُ لَيَشْرَبُ الْخَمْرَ.

–      ‘‘এটি সত্য যে এয়াযীদ আমাকে ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) দিরহাম পুরস্কারস্বরূপ দিয়েছিল, কিন্তু এটি তার প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করা হতে আমাকে রুখবে না। আল্লাহর কসম, সে একজন মাতাল।”

১১/ – ‘মাতাল’ এয়াযীদ সম্পর্কে ইবনে জাওযীর মন্তব্য

ইবনে জাওযী তাঁর ‘ওয়াফা আল-ওয়াফা’ কেতাবে বলেন:

ما ذكره الإمام ابن الجوزي قال: لما دخلت سنة اثنين وستين ولّى يزيد عثمان بن محمد بن أبي سفيان المدينة، فبعث إلى يزيد وفدا من المدينة، فلما رجع الوفد أظهروا شتم يزيد، وقالوا: قدمنا من عند رجل ليس له دين، يشرب الخمر، ويعزف بالطنابير، ويلعب بالكلاب؛ وإنا نشهدكم أنا قد خلعناه. وقال المنذر: أما واله لقد أجازني مائة ألف درهم، ولا يمنعني ما صنع أن أصدقكم عنه.

–      এয়াযীদ তার চাচাতো ভাই উসমান বিন মুহাম্মদ বিন আবি সুফিয়ানকে মদীনার শাসক পদে নিয়োগ করে। উসমান উপহার সামগ্রীসহ এক প্রতিনিধি দল প্রেরণ করে এয়াযীদের কাছে তারই আনুগত্যের শপথ নেয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু প্রতিনিধি দলের প্রত্যাবর্তনশেষে এর সদস্যরা বলেন, ‘আমরা এমন এক লোকের সাথে সাক্ষাৎ করে এসেছি যার কোনো ধর্ম নেই; সে মদ্যপান করে, বাদ্যযন্ত্র বাজায়, গায়িকা (ভ্রষ্টা নারী) ও কুকুর সাথে রাখে। আমরা তার প্রতি আনুগত্যের শপথ প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা ঘোষণা করছি।’ আবদুল্লাহ ইবনে আবি উমরু বিন হাফস মখযুমী বলেন, ‘এয়াযীদ আমাকে উপহার সামগ্রী দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই লোক আল্লাহর একজন শত্রু এবং মদ্যপ। আমি যেভাবে আমার এমামা (পাগড়ী) মাথা থেকে সরিয়ে ফেলছি, ঠিক একইভাবে তার থেকে নিজেকে আলাদা করবো।”[১৬.]

১২/ – কুসতুনতুনিয়া-বিষয়ক হাদীসের অপব্যাখ্যার অপনোদন

 ‘‘তিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘নৌযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আমার সাহাবীদের প্রথম দলটি বেহেশতী হবে।’ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর বলেন,

أوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِي يَغْزُونَ مَدِينَةَ قَيْصَر مَغْفُورٌ لَهُمْ.

–      ‘আমার সাহাবীদের মধ্যে প্রথম বাহিনী যারা (রোমক) সিজারের শহর (কুসতুনতুনিয়া তথা কনস্টানটিনোপোল/ইস্তাম্বুল) জয় করবে, তাদের গুনাহ মাফ করা হবে’।”[১৭.]

প্রথমতঃ সিজারের শহর জয়ী প্রথম বাহিনীর মধ্যে এয়াযীদ ছিল না, যেমনটি আবু দাউদের সুনানে বর্ণিত সহীহ হাদীসে বিবৃত হয়েছে:

عَنْ أَسْلَمَ أَبِي عِمْرَانَ قَالَ: غَزَوْنَا مِنَ الْمَدِينَةِ نُرِيدُ الْقُسْطَنْطِينِيَّةَ، وَعَلَى الْجَمَاعَةِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيدِ.

–       হযরত আসলাম আবি ইমরান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “আমরা কনস্টানটিনোপোল জয়ের উদ্দেশ্যে মদীনা হতে বের হই। আবদুর রহমান বিন খালেদ বিন ওয়ালিদ ছিলেন এই বাহিনীর প্রধান।” [১৮.]

ইমাম তাবারী নিজ ‘তারিখ’ গ্রন্থে বলেন –

فمما كان فيها من ذلك دخول المسلمين مع عبد الرحمن بن خالد بن الوليد بلاد الروم ومشتاهم بها وغزو.

–      আবদুর রহমান বিন খালেদ বিন ওয়ালিদের সেনাপতিত্বে ৪৪ হিজরী সালে মুসলমান বাহিনী রোমে (কনস্টানটিনোপোল) প্রবেশ করেন এবং সেখানে গযওয়া (ধর্মযুদ্ধ) সংঘটিত হয়।[১৯. দলিলচিত্র-http://www.ahlus-sunna.com/index.php?option=com_content&view=article&id=46&Itemid=29&limitstart=82]

অথচ এয়াযীদ আরও বহু পরে ওখানে যায়। উপরন্তু, তাকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল শাস্তিস্বরূপ; আর সে ওই প্রথমে অংশগ্রহণকারী যোদ্ধাদের প্রতি বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য করেছিল।

ইমাম ইবনে আসীর রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেন: 

في هذه السنة وقيل ‏:‏ سنة خمسين سير معاوية جيشًا كثيفًا إلى بلاد الروم للغزاة ، وجعل عليهم سفيان بن عوف ، وأَمَرَ ابنه يزيد بالغزاة معهم فتثاقل واعتلّ فأمسك عنه أبوه ، فأصاب الناس في غزاتهم جوعٌ ومرض شديد ، فأنشأ يزيد يقول ‏:ما إن أبالي بما لاقت جموعهم  بالفرقدونة من حمى ومن موم

إذا اتكأت على الأنماط مرتفقًا  بدير مروان عندي أم كلثومِ ‏

فبلغ معاوية شعره، فأقسم عليه ليلحقنّ بسفيان في أرض الروم، ليصيبه ما أصاب الناس، فسار ومعه جمع كثير أضافهم إليه أبوه.

–      এই বছর, অর্থাৎ, ৪৯ বা ৫০ হিজরী সালে হযরত আমীরে মোয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রোমের (কনস্টানটিনোপোল) উদ্দেশ্যে এক বিশাল বাহিনী প্রেরণ করেন। তিনি এর দায়িত্বভার অর্পণ করেন সুফিয়ান বিন আউফের প্রতি এবং তাঁর ছেলে এয়াযীদকে ওই বাহিনীর সাথে যেতে বলেন। কিন্তু এয়াযীদ ‘অসুস্থ হওয়ার ভান করে এবং যেতে অস্বীকৃতি জানায়’। যোদ্ধারা যখন ক্ষুধা ও রোগ-ব্যাধিগ্রস্ত হন, তখন সে ব্যঙ্গ করে কবিতায় বলে, ‘ফারকুদওয়ানা-এ মহা গযবে তারা পতিত হয়েছে; তাদের জ্বর বা অন্য যা-ই কিছু হোক, তাতে আমার যায় আসে না। কেননা, আমি বসে আছি উচ্চ ফরাশে (ম্যাট্রেস); আর আমার বাহুবন্ধনে আছে উম্মে কুলসুম (এয়াযীদের স্ত্রীদের একজন)।’

‘‘হযরত আমীরে মোয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যখন এই কবিতার শ্লোক সম্পর্কে জানতে পারেন, তখন তিনি এয়াযীদকে শপথ গ্রহণ করতে ও কনস্টানটিনোপোলে সুফিয়ান ইবনে আউফের সাথে যোগ দিতে বাধ্য করেন, যাতে করে ’সেও ইসলামের মোজাহিদদের মোকাবেলাকৃত কঠিন পরীক্ষার অংশীদার হতে পারে’ (এটি এয়াযীদের প্রতি শাস্তি ছিল)।এমতাবস্থায় এয়াযীদ অসহায় হয়ে পড়ে এবং তাকে যুদ্ধে যেতে হয়; আর হযরত আমীরে মোয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তার সাথে আরেকটি বাহিনী প্রেরণ করেন।” [২০.]

ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন:

قلت: الْأَظْهر أَن هَؤُلَاءِ السادات من الصَّحَابَة كَانُوا مَعَ سُفْيَان هَذَا وَلم يَكُونُوا مَعَ يزِيد بن مُعَاوِيَة، لِأَنَّهُ لم يكن أَهلا أَن يكون هَؤُلَاءِ السادات فِي خدمته.

–      আমি বলি, অসংখ্য সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত সুফিয়ান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহুএর অধীনে যুদ্ধে গিয়েছিলেন এবং ‘এয়াযীদ ইবনে মোয়াবিয়ার নেতৃত্বে যান নি, কেননা সে তাঁদেরকে নেতৃত্বদানে অযোগ্য ছিল’।” [২১.]

কনস্টানটিনোপোলে সেনা অভিযানের সার-সংক্ষেপ নিম্নরূপ:

* প্রথম আক্রমণ  পরিচালিত হয় ৪২ হিজরী সালে। দ্বিতীয় দফায় আক্রমণ হয় ৪৩ হিজরীতে এবং এর সেনাপতি ছিলেন হযরত বসর বিন আবি আরকা।

* তৃতীয় অভিযান পরিচালনা করা হয় ৪৪ হিজরী সালে এবং এটি নেতৃত্ব দেন আবদুর রহমান বিন খালেদ বিন ওয়ালীদ। পরবর্তী অভিযান ছিল ৪৬ হিজরীতে যার সেনাপতি ছিলেন মালিক বিন আবদির্ রহমান ও আবদুর রহমান বিন খালেদ বিন ওয়ালীদ।

* ৪৭ হিজরীতে পরবর্তী অভিযান পরিচালনা করেন মালিক বিন হোবায়রা ও আবদুর রহমান বিন কায়েমী। ৪৯ হিজরী সালে কনস্টানটিনোপোল তিনবার আক্রমণ করা হয়। আর সর্বশেষ ৫০ হিজরীতে যে অভিযান পরিচালিত হয় তাতে এয়াযীদ যোগ দেয় ।

হযরত আমীরে মোয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এয়াযীদকে আটক করে সিজারের ওখানে পাঠান, কারণ সে মোজাহিদীনবৃন্দের প্রতি বিদ্রূপ করতো। তাই শাস্তিস্বরূপ তাকে ওখানে পাঠানো হয়েছিল, জ্বেহাদের জন্যে নয়।

অতএব, এয়াযীদ সপ্তম সেনা অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিল, প্রথম অভিযানে নয় । আর বোখারী শরীফে উল্লেখিত হয়েছে,

أوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِي يَغْزُونَ مَدِينَةَ قَيْصَر مَغْفُورٌ لَهُمْ.

–      আমার উম্মতের মধ্যে সিজারের নগরী আক্রমণকারী প্রথম সেনা দলের পাপ-পঙ্কিলতা মাফ করা হবে।”

রেফারেন্স:

আল-বেদায়া ওয়ান্ নেহায়া

ইবনে খালদুনের ইতিহাস

ইমাম ইবনে আসীরের ইতিহাস

১৩/ – এয়াযীদের কুরআন প্রত্যাখ্যান

নিচের রেফারেন্সগুলো দেখুন –

১. আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৮ম খণ্ড, ২০৪ পৃষ্ঠা, যিকর রাস আল-হুসাইন

২. মিনহাজ আস্ সুন্নাহ ২য় খণ্ড, ২৪৯ পৃষ্ঠা, যিকর এয়াযীদ

৩. শরহে ফেকাহে আকবর, ৭৩ পৃষ্ঠা, যিকর এয়াযীদ

৪. শরহে তাফসীরে মাযহারী, ৫ম খণ্ড, ২১ পৃষ্ঠা, সূরাহ ইবরাহীম

৫. শাযরাহ আল-যাহাব, ৬৯ পৃষ্ঠা, যিকরে শাহাদাতে হুসাইন

৬. মাকাতাহিল হুসাইন ২য় খণ্ড, ৫৮ পৃষ্ঠা, যিকরে শাহাদাতে হুসাইন

৭. তাযকিরায়ে খাওওয়াস, ১৪৮ পৃষ্ঠা

৮. তারীখে তাবারী ১১তম খণ্ড, ২১-২৩ পৃষ্ঠা, যিকর ২৮৪ হিজরী

৯. তাফসীরে রূহুল মা’আনী (সূরা মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)

১৪/ – তাফসীরে রূহুল মা’আনী গ্রন্থটি এয়াযীদকে কাফের ঘোষণা করে

আল্লামা আলূসী বলেন,

وعلى هذا القول لا توقف في لعن يزيد لكثرة أوصافه الخبيثة وارتكابه الكبائر في جميع أيام تكليفه ويكفي ما فعله أيام استيلائه بأهل المدينة ومكة.

–      অপবিত্র এয়াযীদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রেসালতকে অস্বীকার করেছিল। মক্কা মোয়াযযমা ও মদীনা মোনাওয়ারার মুসলমান সর্বসাধারণ এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর পরিবার সদস্যদের প্রতি যে (অসভ্য ও বর্বর) আচরণ সে করেছিল, তাতে প্রমাণ হয় যে সে কাফের (অবিশ্বাসী) ছিল।”

আমীরুল মোমেনীন (খলীফা) উমর ইবনে আব্দিল আযীযের দরবারে একবার মানুষেরা এয়াযীদ সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় মানুষের মধ্যে কেউ একজন এয়াযীদকে ‘আমীরুল মোমেনীন’ বলে সম্বোধন করে। এতে খলীফা রাগান্বিত হয়ে ওই লোককে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি (দুশ্চরিত্র, দুরাত্মা) এয়াযীদকে আমীরুল মোমেনীন হিসেবে ডাকো?’ অতঃপর খলীফা উমর ইবনে আবদিল আযীয ওই লোককে ২০টি দোররা মারার নির্দেশ দেন।[২২.]

১৫/ – এয়াযীদের প্রতি লা’নত তথা অভিসম্পাত দেয়ার প্রমাণ

نقل البرزنجي في الإشاعة والهيثمي في الصواعق أن الإمام أحمد لما سأله ولده عبد الله عن لعن يزيد قال كيف لا يلعن من لعنه الله تعالى في كتابه فقال عبد الله قد قرأت كتاب الله عز وجل فلم أجد فيه لعن يزيد فقال الإمام إن الله تعالى يقول: فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحامَكُمْ أُولئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ الآية وأي فساد وقطيعة أشد مما فعله يزيد انتهى.

–       এয়াযীদের প্রতি অভিসম্পাত দেয়ার প্রমাণ বের করা হয়েছে নিম্নবর্ণিত আয়াতটি থেকে যা আল-বরযানজি নিজ ’আল-আশয়াত’ কেতাবে এবং ইমাম হায়তামী তাঁর ‘আস্ সাওয়াইক’ পুস্তকে বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে এই মর্মে যে, ইমাম সাহেবের পুত্র আবদুল্লাহ এয়াযীদের প্রতি লা’নত বর্ষণের পক্ষে কুরআন মজীদের কোথায় প্রামাণ্য দলিল আছে সে ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞেস করেন। ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এর পক্ষে উদ্ধৃত করেন আল-কুরআনের বাণী: “তবে কি তোমোদের এ লক্ষণ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে যে তোমরা শাসনক্ষমতা লাভ করলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং আপন আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে? এরা হচ্ছে ওই সব লোক যাদের প্রতি আল্লাহতা’লা অভিসম্পাত (লা’নত) দিয়েছেন…” (৪৭:২২-২৩)। বস্তুতঃ এয়াযীদ যে অপকর্ম করেছে, তার থেকে বড় কোনো ফিতনা আর হতে পারে কি?[২৩].

–                                                 সমাপ্ত

তথ্যসূত্র

১. আহমদ : আল মুসনাদ, মুসনাদু আলী ইবনে আবী তালিব, ১:৮১, হাদীস নং ৬১৫।

ক) বুখারী : আস সহীহ, বাবু হারামিল মদীনা, ৩:২০ হাদীস নং ১৮৬৭।

খ) মুসলিম : আস সহীহ, বাবু ফদ্বলিল মদীনা, ২:৯৯৪ হাদীস নং ১৩৬৬।

গ) আবূ দাঊদ : আস সুনান, বাবু ফি তাহরিমিল মদীনা, ২:২১৬ হাদীস নং ২০৩৪।

ঘ) তিরমিযী : আস সুনান, ৪:৪৩৮ হাদীস নং ২১২৭।

ঙ) নাসায়ী : আস সুনানুল কুবরা, ৪:২৫৮ হাদীস নং ৪২৬৩।

চ) ইবনে কাসীর : আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮:২৭৪।

২. আল কুরআন : আল আহযাব, ৩৩:৫৭।

৩. ইবনে কাসীর : আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮:২৮৩।

৪. ইবনে কাসীর : আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮:২৭৯।

৫. ইবনে কাসীর : আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮:২৮০।

৬.ইবনে কাসীর : আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮:২৮১।

৭. ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী : ‘আল-’এমতা বিল্ আরবাঈন আল-মাতবাইনাত আস্ সামা’আ’, দার আল-কুতুব আল-এলমিয়্যা, বৈরুত, লেবানন হতে ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত  প্রণীত  পুস্তকের ৯৬ পৃষ্ঠা।

৮. ইমাম আসকালানী : ‘তাহযিবুত্ তাহযিব’, ৬:৩১৩।

৯. ইমাম সৈয়ুতী রচিত : তারিখুল খুলাফা, ১:১৬৫।

১০. ইমাম সৈয়ুতী প্রণীত : তারিখুল খুলাফা ১:১৬৭।

১১. আল্লামা আলূসী : রূহুল মা’আনী’, আত তাফসীর ৯ম খণ্ড, আল-কুরআন ৪৭:২২-২৩-এর ব্যাখ্যায়।

১২. আল্লামা আলূসী : রূহুল মা’আনী’, আত তাফসীর, ২৬:৭৩।

১৩. সিয়্যার আল-আ’লম আন্ নুবালা : ৪:৩৭-৩৮।

১৪. তারিখুল ইসলাম ওয়া তাবাকাত আল-মাশাহির ওয়াল্ আ’লম : ৫:৩০।

১৫. সিয়ার আল-আ’লম আন্ নুবালাহ : ৪:৩৭ ।

১৬. ইবনে জাওযী : ওফাউল ওফা, ১:১০৩।

১৭.  বুখারী : আস সহীহ, ৪র্থ খণ্ড, হাদীস – ১৭৫।

১৮. আবু দাউদ : আস সুনান, ২য় খণ্ড, হাদীস নং ২৫১২; আলবানীও এই হাদীসকে সহীহ বলেছে তার ‘তাখরিজ’ পুস্তকে।

১৯. তারিখে তাবারী : ৪৪ হিজরীর ঘটনা, ৫:২১২ পৃষ্ঠা; কায়রোর ‘দারুল মা’আরিফ’ প্রকাশনী হতে প্রকাশিত।

২০ ‘তারিখে ইবনে আল-আসীর’, ৩:১৩১ পৃষ্ঠা।

২১.‘উমদাতুল কারী : শরহে সহীহ আল-বোখারী, ১৪/১৯৭-১৯৮।

২২. তাহযিবুত্ তাহযিব : ১:৩৬১ পৃষ্ঠা।

২৩. আল্লামা আলূসী : রুহুল মা’আনী, আত তাফসীর, ৯ম খণ্ড, সূরা মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম), ২২-২৩।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment