পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

আহলে আল বাইত আতহার আলাইহিমুস সালামগণ এবং সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম এর মধ্যে পারস্পরিকশ্রদ্ধা, অকৃত্রিম ভালোবাসা ও প্রশংসা (৫)

লেখক: মাবারাত আল-আল ওয়া আল-আসহাব

অনুবাদক: নাঈম আল-জা’ফরী

সম্পাদক: মওলানা মুহাম্মদ রুবাইয়াত বিন মূসা

মূল: মাহাজ্জাহ-ডট-কম

আহলে বাইতের প্রতি সম্মান ও ভালবাসা ঈমানের অপরিহার্য দাবি আর সাহাবীয়ে রাসূল (সাঃ) এর প্রতি ঘৃণা বা সমালোচনা হারাম।

হাদীসে যে ভাবে সাহাবাবৃন্দের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে,

১.

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” اللَّهَ اللَّهَ فِي أَصْحَابِي , لَا تَتَّخِذُوهُمْ غَرَضًا بَعْدِي , فَمَنْ أَحَبَّهُمْ فَبِحُبِّي أَحَبَّهُمْ , وَمَنْ أَبْغَضَهُمْ فَبِبُغْضِي أَبْغَضَهُمْ , وَمَنْ آذَاهُمْ فَقَدْ آذَانِي وَمَنْ آذَانِي فَقَدْ آذَى اللَّهَ وَمَنْ آذَى اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يُوشِكُ أَنْ يَأْخُذَهُ.

’আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেন, আমার সাহাবাগণের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরে তাঁদেরকে (কটূক্তি) লক্ষ্য হিসাবে পরিণত করবে না। যে লোক তাদেরকে ভালোবাসে, সে আমার মুহাব্বাতেই তাদেরকে মুহাব্বাত করল। পক্ষান্তরে যে লোক তাদের প্রতি ঘৃণা ও শত্রুতা রাখে, সে আমার প্রতি ঘৃণা ও শত্রুতা রাখল। আর যে লোক তাদেরকে দুঃখ বা কষ্ট দিল, সে মূলত আমাকেই কষ্ট দিল। অতএব যে আল্লাহ তা’আলাকে কষ্ট দিল, আল্লাহ তা’আলা তাকে শীঘ্রই পাকড়াও করবেন।

[(ক) তিরমিযী : আস সুনান, ৫/৬৯৬, হাদীস নং ৩৮৬২, (খ) আহমদ : আল মুসনাদ, ৩৪/১৬৯, হাদীস নং ২০৫৪৯, (গ) ইবনে হিব্বান : আস সহীহ, ১৬/২৪৪, হাদীস নং ৭২৫৬]

(সুনান আত-তিরমিযী, #৩৮৬২, সাহাবাহ (রাঃ) কে অভিসম্পাতকারী ব্যক্তি সম্পর্কিত অধ্যায়। আল-তিরমিযী এই হাদীস কে গরীব ঘোষণা করেছেন এবং সুনানের কিছু মুদ্রণে হাসান গরীব শব্দ রয়েছে। গরিব বলতে এমন একটি হাদীসকে বোঝায় যা একজন বা একক বর্ণনাকারী দ্বারা বর্ণিত হয়েছে। এই বর্ণনাটি সহীহ ইবনে হিব্বান, # ৬২৫৬-এও এসেছে, তবে বর্ণনাকারীদের এসনাদ কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে।)

২.আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন,

لَا تَسُبُّوا أَصْحَابِي، لَا تَسُبُّوا أَصْحَابِي، فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا، مَا أَدْرَكَ مُدَّ أَحَدِهِمْ، وَلَا نَصِيفَهُ

ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিমী, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনুল আ’লা (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সাহাবাদের গালমন্দ করো না। আমার সাহাবাদের (রাঃ) গালমন্দ করো না। আল্লাহর কসম! যার হাতে আমার জীবন, তোমাদের মধ্যে যদি কেউ উহুদ পর্বতের সমান সদকার নিমিত্তে সোনা দান করে তবে তা মুদ্দা (মুদ্দা: প্রায় ৭৫০ মিলির সমপরিমাণ) সমান হবে না বা তাদের অর্জিত পুরস্কার অর্ধেক মুদ্দাও হবে না (এত কিছু না দেওয়া সত্বেও)। [(ক) মুসলিম : আস সহীহ, ৪/১৯৬৭, হাদীস নং ২৫৪০]

৩. তাওয়াতুর (তাওয়াতুর বলতে এমন একটি প্রতিবেদনকে বোঝায় যেটি এত বেশি প্রামাণিকভাবে বর্ণিত হয়েছে যে এটি অস্বীকার করা অসম্ভব।) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

خير الناس قرني ثم الذين يلونهم.

মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) … আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম মানুষ আমার যুগের মানুষ (সাহাবীগণ)। এরপর তৎসংলগ্ন যুগ।

[ (ক) বুখারী : আস সহীহ, ৫/৩ হাদীস নং ৩৬৫১, (খ) মুসলিম : আস সহীহ, ৪/১৯৬৩ হাদীস নং ২৫৩৩, (গ) ইবনে আবী শায়বা : আল মুসান্নাফ, হাদীস নং ৩২৪০৮, (ঘ) তাবারানী : আল মু’জামুল আওসাত, হাদীস নং ১১২২, (ঙ) আহমদ : আল মুসনাদ, হাদীস নং ৩৫৯৪, (চ) ইবনে হিব্বান : আস সহীহ, হাদীস নং ৭২২৯, (ছ) নাসায়ী : আস সুনান, ৫/৪৪৪ হাদীস নং ৫৯৮৮]

৪. আল্লাহর রসুল (সাঃ) বলেন,

أخبرنا بهز عن أبيه عن جده قال سمعت نبي الله صلى الله عليه وسلم يقول ألا إنكم توفون سبعين أمة. أنتم خيرها وأكرمها على الله

আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই তোমরা সত্তরটি উম্মতকে পূর্ণ করেছ এবং আল্লাহর দৃষ্টিতে তোমরাই শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত।

[ (ক) আহমদ : আল মুসনাদ, ৩৩/২৩১, হাদীস নং ২০০২৯, (খ) বায়হাকী : আস সুনানুল কুবরা, ৯/৮, হাদীস নং ১৭৭১৭, (গ) তাবারানী : আল মু’জামুল কাবীর, ১৯/৪২৪]

রাসূল (সাঃ) এর স‍র্বশ্রেষ্ঠ সাহাবীদের সম্পর্কে ঈমানদার মুসলমানদের আকিদা

উল্লিখিত আয়াত ও হাদীসের এবং টিকাটিপ্পনির ভিত্তিতে – আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর সাহাবীদের সম্পর্কে ঈমানদার মুসলমানদের বিশ্বাস হলো এই যে আম্বিয়া (আঃ) এর পরে তাঁহারাই হলেন সর্বোত্তম নেক আমলকারী বান্দা।

রাসূলুল্লাহ সাঃ এর ওফাতের পরে সাহাবীগণ দ্বারা নির্বাচিত আবু বকর (রাঃ) এর খিলাফত বৈধত হিসাবে মুসলমানরা বিশ্বাস করেন এবং তারপরে উমর (রাঃ)-এর খিলাফত, যাকে আবু বকর (রাঃ) নিযুক্ত করে ছিলেন। এরপরে শুরার সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত হন উসমান (রাঃ), (উমর (রাঃ) কর্তৃক ছয় সাহাবাহ সমন্বিত একটি পরামর্শক কমিটি যাদের কে খালিফা নির্বাচন করার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন।) এবং উমর (রাঃ) দ্বারা পরামর্শ কা‍র্যক্রমের প্রতি সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐক্যমত ছিল। এরপরে আলী ইবনে আবী তালিব (কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুল করীম) এর খেলাফত, যার কাছে বদরের অংশ গ্রহণকারীরা বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন। যেমন আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ), সাহাল ইবনে হুনায়েফ (রাঃ) এবং অন্যান্য সাহাবীরা যারা অনুসরণ করেছিলেন।

মুসলমানগণ নিম্নলিখিত আয়াত এবং অন্যান্য গুলোর উপর ভিত্তিতে সাহাবীদের শ্রেষ্ঠত্বের বিশ্বাস করেন:

لَّقَدْ رَضِىَ ٱللَّهُ عَنِ ٱلْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ ٱلشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِى قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ ٱلسَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَٰبَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا

নিশ্চয় আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন ঈমানদাদের প্রতি যখন তারা ওই বৃক্ষের নীচে আপনার নিকট বাই’আত গ্রহণ করছিলো। সুতরাং আল্লাহ জানেন যা তাদের অন্তরগুলোতে রয়েছে। অতঃপর তাদের প্রতি প্রশান্তি অবতীর্ণ করেছেন এবং তাদেরকে শীঘ্রই আগমনকারী বিজয়ের পুরস্কার দিয়েছেন। [ আল কুরআন : সূরা আল-ফাত্‌হ, ৮/১৮]

وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

আর সবার মধ্যে অগ্রগামী প্রথম মুহাজির ও আনসার এবং যারা সৎকর্মের সাথে তাদের অনুসারী হয়েছে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন বাগানসমূহ (জান্নাতসমূহ), যে গুলোর নিম্নদেশে নহররাজি প্রবাহমান। তারা সদা-সর্বদা সেগুলোর মধ্যে অবস্থান করবে। এটাই হচ্ছে মহা সাফল্য। [ আল কুরআন : সূরা আত তাওবা, ৯/১০০]

সুতরাং যে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তার ভালোবাসার কথা ঘোষণা করেছেন তার পক্ষে এমন কোনো কাজ করা সম্ভব নয় যা আল্লাহর ক্রোধের দিকে টেনে আনবে। কেবল মাত্র যারা ইহসানের সাথে সাহাবীকে অনুসরণ করে (ইহসান মানে আল্লাহ সোবাহানাতায়লার ইবাদতে শ্রেষ্ঠত্বের সাধনা) তারা ব্যতীত সাহাবীগণের পরে আল্লাহ কারো প্রতি তাঁর এই রূপ ভালবাসা ঘোষণা করেননি।

সুতরাং, যদি তাবিয়ীনদের মধ্যে (যারা সাহাবাবৃন্দের সংস্পর্শ পেয়েছেন ) কেউ কোন ভাবে সাহাবাকে তুচ্ছ করে দেখেন, তবে তাকে ইহসানের সাথে সাহাবার অনুসরণকারী হিসেবে গণ্য করা হবে না। ‍অ‍র্থাত্‌ এই বিশেষ ব্যক্তি, আল্লাহ উল্লেখিত দলের জন্য যে ঘোষণা করেছেন সেই ভালবাসার অংশ হবে না। (আবু বকর আল-ইসমাইলীর ই’তিকাদ আল আয়িম্মাতুল হাদীস, খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ৭১; ইবনে কুদামাহর লুম’আতুল ই’তিকাদ, খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ১৭১; ইবনে আবী আল-ইজ-এর শারহ আল-আকিদাতুত তাহাবীয়া, খণ্ড ১ পৃষ্টা ৪৮৫) (আরও অনেক উৎসে আছে)।

হাসান আল-বাসরী রাঃ কে যখন সাহাবীদের মধ্যে কয়েকটি যুদ্ধের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন তিনি একটি চমৎকার উত্তর দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “এগুলি এমন যুদ্ধ ছিল যেগুলিতে সাহাবারা অংশ নিয়েছিলেন এবং আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম না, যে ঘটনাগুলি উদ্ঘাটিত হয়েছিল তারা তা বুঝতে পেরেছিল এবং আমরা বুঝতে পারিনি, তাঁদের মধ্যে ঐক্যমত হয়েছিল আমরা অনুসরণ করেছি এবং তাঁরা মতভেদ করে ছিলেন তাই আমরা পিছিয়ে রইলাম, (আমাদের অভিমত এবং মতামত)।”

পরহেজগার পূর্বসূরীরা এই আলোচনা গুলোতে অংশ না নেওয়া কে বেছে নিয়েছেন। তারা বলতো, “আল্লাহ আমাদের হাত তাদের রক্ত থেকে পবিত্র রেখেছেন তাই আমরা এ নিয়ে আলোচনা করে আমাদের জিহ্বাকে দাগ দেব না।” (আওন আল-মাবুদ, খণ্ড ১২ পৃষ্ঠা ২৭৪)

আমরা তাঁদেরকে আদর্শের মাপকাঠি হিসেবে দেখি।

وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ.

আর আমাদের ভাইদেরকেও, যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে। আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের জন্য হিংসা-বিদ্বেষ সঞ্চার করোনা, হে আমাদের রব! নিশ্চয় আপনিই অতি দয়ার্দ্র, দয়াময়। [ আল কুরআন : সূরা হাশর, ৫৯/১০]

চলবে

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment