৩টি ইসলামিক শিক্ষামূলক গল্প

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

ইসলামিক শিক্ষামূলক গল্প নিয়ে আজকের এই লেখা। শিক্ষামূলক গল্প আমাদের ব্যক্তি জীবনের জন্য এবং শিক্ষা গ্রহণের জন্য অনেক উপকারী। শিক্ষামূলক গল্পগুলো আমাদের সমাজের, রাষ্ট্রের এবং মানবজীবনের রূপ তুলে ধরে সেখান থেকে শিক্ষা অর্জন করতে সহায়তা করে।

আজকের এই লেখায় আমরা এমন ৫টি ইসলামিক গল্প শেয়ার করবো। যেসব গল্প পাঠকদের জন্য হবে উপকারী এবং শিক্ষামূলক। ইসলামিক শিক্ষামূলক গল্প দরবেশ এবং সুলতান পড়ে দেখতে পারেন।

তাই অযথা ভূমিকা বড় না করে। একে একে গল্পগুলো পড়া শুরু করি।

১. ইসলামিক শিক্ষামূলক গল্প শাস্তির উপঢৌকন

পারস্যের এক প্রতাপশালী সম্রাট ছেলের শিক্ষার জন্যে তিনি একজন শিক্ষক নিয়োগ করলেন। ছেলেটির বয়স তখন অনেক বেড়ে গেছে।

একদিন শিক্ষক সম্রাটের ছেলেকে কাছে ডাকলেন। তারপর অকস্মাৎ বিনা কারণে, বিনা দোষে সম্রাটের ছেলেকে ভীষণভাবে শান্তি দিলেন। অকারণে এই শাস্তি ভোগ করায় সম্রাটের ছেলেটি শিক্ষকের ওপর দারুণভাবে রেগে গেলো। কিন্তু মুখে কিছুই বলতে পারলো না। হাজার হোক শিক্ষক তো!

কিছুদিন যেতে না যেতেই পারস্যের সম্রাট রোগে ভুগে ইন্তেকাল করলেন। পিতার ইন্তেকালের পর পারস্যের সিংহাসনে নতুন সম্রাট হিসেবে বদলো সেই ছেলেটি। সম্রাটের আসনে বসে এবার সে তার শিক্ষককে ডাকালও। যথাসময়ে শিক্ষক দরবারে এসে হাজির হলেন। পারস্যের নতুন সম্রাট তার শিক্ষককে জিজ্ঞেস করলো, আপনি অমুক দিন আমাকে বিনা দোষে, বিনা কারণে শাস্তি দিয়েছিলেন কেন?

সম্রাট অপলকে তাকিয়ে আছে শিক্ষকের দিকে। বললও, তাতে কি হয়েছে? তাই বলে আপনি আমাকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দেবেন?

শিক্ষক একটু হাসলেন। তার চোখে-মুখে ভয়ের লেশমাত্র নেই। জবাবে বললেন, হ্যাঁ। আপনাকে সে দিন অন্যায়ভাবে শাস্তি দিয়েছি এই জন্যে যে, আপনি যাতে করে বুঝতে পারেন- বিনা কারণে, বিনা অপরাধে কাউকে শাস্তি দিলে বা কারো ওপর জুলুম করলে তার কতোটা কষ্ট হয়। সেই কষ্টের স্বাদটা সে দিন আমি আপনাকে দিয়েছিলাম যাতে করে আপনি বুঝতে পারেন, মজলুমের কষ্টটা কতো বড় যন্ত্রণাদায়ক । আর সেই বোধ থেকেই যেন আপনি সম্রাট হয়েও কখনো কারো ওপর জুলুম এবং অন্যায়ভাবে শাস্তি না দেন।

শিক্ষকের এই নৈতিক শিক্ষা দেবার অভিনব কৌশল জেনে সম্রাট খুব খুশি হলও এবং শাস্তির পরিবর্তে অনেক মূল্যবান উপঢৌকন দিয়ে সতত তার শিক্ষককে অতি সম্মানের সাথে বিদায় জানালো।

২. ছাদের উপর উটের সন্ধান

এক যে ছিলেন বাদশাহ। নাম ইব্রাহীম আদহাম। কি শান শওকত ছিল তাঁর। হাতীশালে হাতী, ঘোড়াশালে ঘোড়া। আর লোক লস্করও ছিল অনেক। তাঁর ধনদৌলত ছিল অনেক অনেক।

বাদশাহর দিনগুলো ভালোভাবে কাটছিল। তিনি যখন প্রসাদ থেকে বাহিরে বের হতেন, তখন তার সাথে থাকত লোকলস্কর। আগে পিছে থাকতো শতজন দেহরক্ষী। তাদের হাতে অস্ত্র ঝকঝক করতো সূর্যের আলোয়।

একদিন এক ঘটনা ঘটলো। বাদশা বিশ্রাম করছিলেন বালাখানায়। বেশ রাত হয়েছে। একটু পরেই তিনি শয্যা গ্রহণ করবেন। এমন সময় শাহী বালাখানা ছাদের উপর যেন শব্দ শুনতে পেলেন।

 বাদশাহ চমকে উঠলেন। কি ব্যাপার? আমার বিশ্রামের সময় ছাদের উপর পায়ের আওয়াজ। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ছাদের উপর কার পায়ের শব্দ শোনা যায়? কে ওখানে?

উত্তর পাওয়া গেল, আমার একটি উট হারিয়ে গেছে। সে হারানো উটটিই আমি খুঁজতে এসেছি আপনার ছাদে। বাদশাহ আদহাম বললেন, সে কি? উট হারিয়েছে?  আর তাই খুঁজতে এসেছে আমার বালাখানার ছাদে? বেকুব আর কাকে বলে!

ছাদের উপর থেকে তখনি উত্তর শোনা গেল, ঠিক কথা, ঠিক। আপনি কি করছেন তাহলে? আপনিও তো আমার চেয়ে বেশি বেকুবি করছেন। আপনি বাদশাহ, বাদশাহী করছেন আর বাদশাহী তখতে বসে আল্লাহর খোঁজ করছেন।

বালাখানার ছাদে উঠেছি বলে, আপনি আমাকে গালমন্দ করছেন। কিন্তু আপনি নিজের কথা একবার ভেবে দেখেছেন কি?

তাইতো! বাদশাহ ইব্রাহিম আদহাম এ কথা শোনার পর একেবারেই হতভম্ব হয়ে পড়লেন। আর চিন্তা করতে লাগলেন।

৩. ইসলামিক শিক্ষামূলক গল্প একটি বিচারের ফায়সালা

একটি বাড়ি বেচা-কেনা হওয়ার, দুদিন পরের ঘটনা। নতুন বাড়িওয়ালা এলো পুরানো বাড়িওয়ালার কাছে। পুরানো বাড়িওয়ালা জানতে চাইল, হঠাৎ কি মনে করে?

নতুন বাড়িওয়ালা জানাল,এগুলো দিয়ে যেতে। আপনার বাড়িতে পাওয়া গেছে। মনে করলাম ভুলে হয়ত ফেলে এসেছেন। তাই দিতে এলাম।

কি?

নতুন বাড়িওয়ালা থলের মুখ খুলে পুরানো বাড়িওয়ালার সামনে তুলে ধরল, হীরে-জহরত। এটাই যে আপনার জিনিস ঠিক আছে কিনা দেখে রাখুন।

এত হীরে-জহরত! পুরানো বাড়িওয়ালা অবাক হয়ে বলল। ঠিক আছে কিনা কি বলছেন ভাই? আরে ভাই, আমার বাড়িতে এত হীরে জহরত ছিল, তা আমি জানতাম না! এখন জানলাম যাক! এখন বলুন, কেন আমার কাছে এগুলো নিয়ে এসেছেন?

নতুন বাড়িওয়ালা বলল, আবার কেন? আপনাকে দিতে।

পুরানো বাড়িওয়ালা বলল, এগুলো কি আমার? আসলে এখন এগুলোর মালিক আপনি। ফেরত নিয়ে যান। আপনার যে কোন কাজে খরচ করুন গিয়ে।

বললেই হলও নাকি? নতুন বাড়িওয়ালা চেঁচিয়ে বলল, আমি আপনার কাছ থেকে বাড়ি কিনেছি, হীরা-জহরত কিনিনি। আমি কেন এগুলোর মালিক হতে যাব।

শুধু শুধু চেঁচিয়ে আর কথা কাটাকাটি না করে বরং যা বলি তাই করুন। নিন, ধরুন এগুলো নিয়ে চলে যান, খুশি হব। পুরনো বাড়িওয়ালাও রেগে বলল। এ মামুলী কথাটা আপনার মাথায় আসে না, যার বাড়িতে এত পরিমাণ হীরে-জহরত, সে কোন দুঃখ তার থাকার বাড়িটি বেচতে গেল?

নতুন বাড়িওয়ালা বলল, এসব নসিহত-টসীহত আমি বুঝি না। বোঝারও কোন দরকার নাই। আপনার জিনিস আপনাকে বুঝিয়ে দিলাম। এখন তা রাখা না রাখা, আপনার খুশি। আপনি ফেলে দিন, তাতে আমার কি আসে যায়। আমি চললাম।

দাঁড়ান ভাই! এত তাড়াহুড়া করছেন কেন? এগুলো নিয়ে যান। পুরানো বাড়িওয়ালা আবার তাকে বোঝাতে লাগল। দেখুন, আসলে যদি এগুলো আমার নিজের জিনিস হত তাহলে, ভুল কিছুতেই হতনা। এগুলো ভুল হওয়ার মত জিনিসই নয়। তাছাড়া, আমিও জানতাম না যে ও বাড়িতে হীরে-জহরত আছে। আমার কাছ থেকে বাড়ি কেনার দুদিন পর আপনি এগুলোর খোঁজ পেয়েছেন। কাজেই আইনগত মালিক এখন আপনিই।

জী, মাফ করবেন! নতুন বাড়িওয়ালা ঝাঁঝাল সুরে বলল। আমি নই, আইনগত মালিক আপনিই।

দেখছি, আমি ভাল পাগল নিয়ে পড়েছি। পুরানো বাড়িওয়ালা হয়রান হয়ে বলল।

একজন ভাল করে গুছিয়ে বোঝাতে চায় মনে হয় যে আর একজন বুঝেও বুঝতে চায় না। শেষে এ নিয়ে তাদের দুজনে ঝগড়া বেঁধে গেল।

সে কি ঝগড়া!

বাপ রে বাপ!

বেশ তাহলে, চলুন যাই বাদশাহর কাছে। পুরানো বাড়িওয়ালার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই নতুন বাড়িওয়ালা বলল: বেশ, চলুন যাই। বাদশাহ, উভয়ের কথাই মনোযোগ দিয়ে শুনে গেলেন। কিছুক্ষণ ভেবে, বাদশাহ হঠাৎ করেই বললেন –

তোমাদের ছেলে মেয়ে?

একজন বলল, আমার এক ছেলে।

আরেকজন জানাল, আমার একটি মেয়ে।

বাদশাহ এবার বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে কি যেন ভাবলেন। হ্যাঁ, তোমরা বাড়ি যাও। বিয়ের আয়োজন করো গিয়ে। নতুন ও পুরানো বাড়িওয়ালা হা করে বাদশাহর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।

তোমরা হা করে কি ভাবছ? আমার কথা শুনতে পাওনি? বাদশাহ রেগে বললেন যাও! তাড়াতাড়ি, দেরি করো না। যত তাড়াতাড়ি পারো সব ঠিকঠাক করো গিয়ে। আমি একটু পরেই আসছি। বিয়ে পড়িয়ে ফিরব। বাদশাহর হুকুম। হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। হুকুম না মেনে শেষে কি জানটা খোয়াব? উভয়েই হয়তো এ কথাই ভেবে আপন পথে পা চালিয়ে দিল।

বিয়ের মজলিস। নতুন পুরানো বাড়িওয়ালা পাশাপাশি বসে আছে। বাদশাহ তাদের ছেলে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিলেন। এরপর তাদের দুজনের মাঝে আর মন কষাকষির কোন প্রশ্নই থাকতে পারে না।

ধুমসে খানাপিনা চলল।

শাহী খানাপিনা!

খানাপিনা শেষ হল।

বাদশাহ মজলিস থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, হীরে জহরতগুলো নিয়ে এসে। আমাকে দাও, তাড়াতাড়ি করো।

থলে আনা হল। বাদশাহ বললেন, আজ থেকে তোমরা কেউ আর এগুলোর দাবীদার নও। এখন থেকে এ হীরা হজরতগুলোর মালিক হল বর-কনে অর্থাৎ তোমাদের এ ছেলে-মেয়ে। আজ থেকে এক হাজার পাঁচশত বছর আগের এ ঘটনা। এ বাদশাহর নাম নওশেরওয়া। জ্ঞান, বুদ্ধি ও ন্যায় বিচারে সুপ্রসিদ্ধ ছিলেন।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment