১৬। প্রশ্নোত্তরে মাসয়ালার মিমাংসা 

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

প্রশ্ন     (১) -   নিকটের মাদ্রাসায়    দান  না    করে অন্য    জেলার   মাদ্রাসায় কুরবানীর পয়সা দান করলে জায়েজ কিনা?

উত্তর-     তা জায়েজ     (ফাতাওয়ায়ে   আব্দুলহাই)    যদি  আহলে  সুন্নাত            এর মাদ্রাসা হয় তাহলে জায়েজ   হবে।  মাদ্রাসা    যদি ওহাবি দেওবন্দিদের হয় তাহলে  কুরবানী নির্দেশ  অনুযায়ী কোন  প্রকার   দান দেয়া জায়েজ হবেনা। 

প্রশ্ন(২) – দানের পশু কুরবানী জায়েজ কিনা?

উত্তর-  জায়েজ। (ফাতাওয়ায় – আব্দুল হাই) 

প্রশ্ন(৩) – নিজের পালিত পশু কুরবানী জায়েজ কিনা?

উত্তর- জায়েজ।  বরং যদি পালিত পশু মোটা তাজা হয় তাহলে উত্তম হবে। (মসনাদে ইমাম আহমাদ) 

প্রশ্ন(৪) – বেহেশতী জেওর কিতাবে মৌলবি আশরাফ আলি থানবি সাহেব লিখেছেন  পশুর      কান  এক   তৃতীয়াংশ   কেটে    গেলে  অথবা        চোখের জ্যোতিঃ এক তৃতীয়াংশ নষ্ট হয়ে গেলে তার কুরবানী জায়েজ হবেনা। কিন্ত আমজাদ আলী আলাইহির রহমান বাহারে শরিয়াত কিতাবে তার কুরবানী জায়েজ বলেছেন। কোন উক্তি টি সঠিক?

উত্তর- বেহেশতি জেওর  এর মাশলাটি  ভূল। এক তৃতীয়াংশ নষ্ট হয়ে গেলে তার কুরবানী   জায়েজ  হবে।      তার    বেশি   নষ্ট    হলে জায়েজ    হবেনা। (খোলাসা তুল ফাতাওয়া ও ফাতাওয়া শামী, আলমগীরী) 

প্রশ্ন(৫) – অনেকে বলে থাকে যে যাদের কুরবানী করার সামর্থ্য নেই তারা কুরবানীর   দিনে  কমপক্ষে  একটি মোরগ  জবেহ     করলে কুরবানী হয়ে যাবে। তা কি সঠিক?

উত্তর- যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় তার জন্য কুরবানীর দিনে মোরগ ও মুরগী    ইত্যাদি কুরবানী    নিয়তে   জবেহ        করা         মাকরূহ।  কারণ    তা অগ্নিপূজকদের প্রথা। (খোলাসা তুল ফাতাওয়া) 

প্রশ্ন(৬)  - কুরবানী         পয়সা সরাসরি    ভাবে       মসজিদ  ও  মাদ্রাসার   কাজে ব্যবহার করা যাবে কিনা?

উত্তর-  কুরবানীর  পয়সা   সমস্ত প্রকার   ভালো কাজে ব্যবহার  করা জায়েজ। কুরবানীর  পয়সা  সরাসরি মসজিদ  ও  মাদ্রাসা  নির্মানের  জন্য ব্যবহার করা  জায়েজ। অবশ্য যাকাত ও  ফিতরার  পয়সা  সরাসরি  মসজিদ   ও মাদ্রাসাতে দান করা জায়েজ হবে না।  (বাহারে শরীয়ত ও ফাতাওয়ায় দামানে মোস্তাফা) 

প্রশ্ন(৭) – কোটি    কোটি  টাকার মালিক   এই   প্রকার  সাতজন মানুষ  একটি গরু কুরবানী করলে জায়েজ হবে কিনা?

উত্তর- জায়েজ হবে। (রদ্দুল মুহতার) 

প্রশ্ন(৮) – যদি কোনো ব্যক্তি কুরবানী মান্নত করে এবং গরু   অথবা ছাগল নির্দিষ্ট না করে,  তাহলে কি কুরবানী করবে? এবং ঐ  কুরবানীর মাংস নিজে খেতে পারবে কিনা? 

উত্তর- কমপক্ষে একটি ছাগল কুরবানী করতে হবে। মান্নতের কুরবানী মাংস নিজের     খাওয়া   জায়েজ   নয়।    সমস্ত        মাংস             সাদকা  করতে  হবে। (আলমগিরী) 

প্রশ্ন(৯) – যদি  ছাগল  কুরবানী  করার মান্নত করে এবং  গরু কুরবানী করে দেয়,    তাহলে মান্নত  আদায় হবে   কিনা?   যদি মান্নতের    মাংস     খেয়ে ফেলে তাহলে কি করতে হবে?

উত্তর- ছাগলের পরিবর্তে  গরু কুরবানী করলে জায়েজ হবে। যত টুকু মাংস খেয়েছে তার মূল্য সাদকা করতে হবে। (আলমগীরী) 

প্রশ্ন(১০) -  কুরবানী মাংস   বিক্রয়  করা জায়েজ  কিনা?  মসজিদের  খতীব বহু     মাংস   পেয়ে      থাকেন।      তার  জন্য          তা   বিক্রয়      করা        জায়েজ কিনা?

উত্তর- কুরবানীর মাংস বিক্রয় মূলত জায়েজ  নয়। চাই কুরবানী দাতা হোক অথবা       মসজিদের   খতীব  হোক।               অবশ্য  উক্ত  মাংসের     পরিবর্তে ব্যবহারিক বস্তু নিতে পারে। (খোলাসাতুল ফাতাওয়া) 

প্রশ্ন(১১) -   অনেক স্থানে দানের মাংস একত্রিত করে মহল্লায় বিতরণ করা হয়ে  থাকে। উক্ত        মাংস কুরবানী দাতার জন্য      নেওয়া জায়েজ    হবে কিনা?

উত্তর- নিশ্চয় জায়েজ হবে।  কুরবানীর     মাংস  বিতরণ    করা মুস্তাহাব। ইচ্ছা করলে সমস্ত মাংস খাওয়া জায়েজ (আলমগিরী)। 

প্রশ্ন(১২) – পোষণী গরু ছাগলের কুরবানী না হবার কারণ কি?

উত্তর- কুরবানীর জন্য শর্ত মালিক হওয়া। যেহেতু পালনকারী পশুর মালিক নয়, সেহেতু তার কুরবানী জায়েজ হবেনা (রদ্দুল মুহতার)। 

প্রশ্ন(১৩)   -  যে ব্যক্তির  উপর কুরবানী    ওয়াজিব,   যদি তার  নিকট হালাল পয়সা না থাকে তাহলে কি করবে?

উত্তর-  কার  নিকট হতে  পয়সা  ধার  নিয়ে     কুরবানী করবে এবং     পরে  ঋণ পরিশোধ করবে (কুতুবে ফিকাহ)। 

প্রশ্ন(১৪) –      কোন  মৃত ব্যক্তির   নামে  অথবা      আউলিয়া ও আম্বিয়া  গণের নামে যে কুরবানী   করা হয়ে থাকে,     কুরবানী  দাতার  জন্য উক্ত   মাংস খাওয়া জায়েজ কিনা?

উত্তর- নিশ্চয় জায়েজ। অবশ্য মৃত ব্যক্তি যদি কুরবানী করার অসিয়ত করে যায় তাহলে তার মাংস খাওয়া জায়েজ হবেনা। (আলামগিরী) 

প্রশ্ন(১৫)  –    নির্দোষ   পশু ক্রয় করার  পর    কুরবানীর পূর্বে   যদি  দোষযুক্ত হয়ে যায় তাহলে তার কুরবানী জায়েজ হবে কিনা?

উত্তর- ধনী ব্যক্তির জন্য জায়েজ নয়। গরীব মানুষের জন্য জায়েজ। অবশ্য গরীবের মান্নতের           কুরবানী         হলে  জায়েজ    হবেনা। (হিদায়া, রদ্দুল মুহাতার) 

প্রশ্ন(১৬) – অনেকে বলে  থাকে  কুরবানীর মাংস তিন দিনের বেশি খাওয়া জায়েজ নয় তা কি ঠিক?

উত্তর-  তা  ঠিক   নয়। তিন মাস   ধরে খেতে    পারে। অবশ্য   হুজুর  সাল্লালাহু তায়ালা  আলাইহি   ওসাল্লালাম  এই    প্রকার    বলেছেন।  পরে    তিনি তা বাতিল করেছেন (মোসনাদে ইমাম আ’যম)। 

প্রশ্ন(১৭)  -      যারা  কুরবানীর      মাংস  তৈরি   করতে  সাহায্য    করে       তাদের পারিশ্রমিক হিসেবে উক্ত মাংস প্রদান করা জায়েজ কিনা?

উত্তর- পারিশ্রমিক  হিসেবে গোশত, চামড়া ইত্যাদি কিছু দেয়া জায়েজ হবে না (হেদায়া) 

প্রশ্ন(১৮) –   যদি  কুরবানীর মাংস চুরি হয়ে  যায়  এবং  পরে  চোরের  নিকট হতে মূল্য আদায় করলে তা কি করতে হবে?

উত্তর- সাদকা করে দেয়া জরুরী (আলামগীরি) 

প্রশ্ন(১৯)  –  যদি কুরবানীর     দিনে     পশু         মারা যায়     তাহলে  কি          করতে হবে?

উত্তর-    ধনী  ব্যক্তির    জন্য    অন্য পশু  কুরবানী   করা       ওয়াজিব।     যদি পশু সংগ্রহ করা  সম্ভব         না হয় তাহলে  কম     পক্ষে     একটি  ছাগলের  মূল্য সাদকা  করতে   হবে। যদি গরীব   মানুষের পশু মারা যায় তাহলে  অন্য পশু কুরবানী করা ওয়াজিব নয় (দুররে মুখতার)।

প্রশ্ন(২০) – যদি পশু হারিয়ে যায় অথবা চুরি হয়ে যায় এবং অন্য পশু ক্রয় করার পর যদি তা পাওয়া যায় তাহলে কি করতে হবে?

উত্তর- ধনী হলে দুইটির মধ্যে যে কোনো একটি কুরবানী করলে হবে। যদি প্রথমটি কুরবানী করতে চায় এবং তার মূল্য দ্বিতীয়টির থেকে   কম হয় তাতে  কোনো দোষ হবেনা।   যদি দ্বিতীয় টি কুরবানী করতে  চায় এবং তার মূল্য    প্রথমটির  অপেক্ষায় কম  হয়,  তাহলে    যত    টাকা কম    হবে ততটাকা সাদকা করতে হবে। গরীবের প্রতি দুইটি পশুর কুরবানী করা ওয়াজিব। (রদ্দুল মুহতার) 

প্রশ্ন(২১) – এক ব্যক্তির প্রতি কুরবানী ওয়াজিব ছিলো কিন্ত কোনো কারণে করা হয়নি। সে এই বৎসর তার কাজা করতে চাচ্ছে। তা জায়েজ হবে কিনা?

উত্তর- গত        বৎসরের  কুরবানী   এই   বৎসর জায়েজ  নয়।  একটি  ছাগলের মূল্য সাদকা করতে হবে। (রদ্দুল মুহতার) 

প্রশ্ন(২২) – একই পশুতে আক্বীকাহ ও কুরবানী অংশ নেওয়া জায়েজ হবে কি? তার মাংস কি প্রকারে বণ্টন করতে হবে?

উত্তর-    তা জায়েজ।  কুরবানী    ও আক্বীকাহ     মাংস  বন্টনের    একই    নিয়ম। (রদ্দুল মুহতার) 

প্রশ্ন(২৩) – যদি অংশীদারদের   মধ্যে কারো নিয়ত বিশুদ্ধ না হয়, তাহলে কি কারো কুরবানী হবে?

উত্তর-  এক  জনের  নিয়ত     খারাপ থাকলে  কারো  কুরবানী হবে   না। (রদ্দুল মুহতার)  বর্তমানে   বহু  মানুষ  বিভিন্ন   নিয়তে  অংশ  গ্রহণ করে থাকে। সেহেতু সম্ভব হলে একাই কুরবানী করা উচিৎ। 

প্রশ্ন(২৪)   – কুরবানীর   জন্য   পশু ক্রয়   করার   পর      যদি বাচ্চা         হয়ে যায় তাহলে কি করতে হবে?

উত্তর-  বাচ্চাসহ  জবেহ   করে  দিবে।    যদি বাচ্চা বিক্রয়     করে দেয়   তাহলে তার  মূল্য সাদকা করতে   হবে।  যদি   জবেহ  ও বিক্রয়  কিছুই  না করে এবং     কুরবানী    দিন গুলো   অতিক্রম  হয়ে       যায়,     তাহলে    ঐ বাচ্চাটি জীবিত অবস্থায়    সাদকা করে   দিতে  হবে।  যদি  কিছুই না  করে   রেখে দেয়  এবং পরের বৎসর  যদি তা কুরবানী করতে চায়  তাহলে জায়েজ হবেনা। যদি  তা  কুরবানী করে দেয় তাহলে তার        মাংস  সাদকা করে দিতে       হবে  এবং         আরো      একটি        পশু       কুরবানী               করতে  হবে। (আলমগিরী)

প্রশ্ন(২৫)   – জবেহ  করার পর যদি   পেট থেকে  বাচ্চা      বের       হয়     তাহলে কুরবানী                 জায়েজ           হবে      কিনা এবং     তার    মাংস   খাওয়া     চলবে কিনা?

উত্তর-      কুরবানী জায়েজ      হবে  এবং  তার    মাংস ও   খাওয়া জায়েজ  হবে। এমন কি পেটের বাচ্চা    টি  জীবিত অবস্থায় বের   হলে তাকে ও  জবেহ করে    খাওয়া    হালাল।     অবশ্য  মরা        বাচ্চাটির মাংস    খাওয়া  হারাম। (বাহারে শরীয়ত) 

প্রশ্ন(২৬) -  জবেহ   করার    পূর্বে  পশুর   চামড়া বিক্রয়  করা জায়েজ কিনা? তাতে কুরবানীর কোনো ক্ষতি হবে কিনা?

উত্তর- কুরবানী হয়ে      যাবে।  কিন্ত     জবেহ করার      পূর্বে চামড়া  বিক্রয়   করা নাজায়েজ।      চাই    কুরবানী  চামড়া   হোক   অথবা  অন্য  চামড়া     হোক। যেমন   পুকুরের  মাছ     পানিতে   থাকা  অবস্থায়  এবং       যে কোনো      ফল খোশার মধ্যে থাকা অবস্থায় বিক্রয় না জায়েজ। (হেদায়া) 

প্রশ্ন(২৭) – অনেক স্থানে মোল্লার পারিশ্রমিক হিসেবে কল্লা দিয়ে থাকে তা কি জায়েজ?

উত্তর-      তা নাজায়েজ।   পারিশ্রমিক হিসেবে   মাথা       ও মাংস    কিছুই       দেয়া যাবেনা। পয়সা দিতে  হবে। অবশ্য    কুরবানী  ও  আক্বীক্বাহ ছাড়া অন্য জবেহ       এর  ক্ষেত্রে        ঐ  গুলো            দেয়া  ও  নেওয়া  জায়েজ।    (বাহারে শরিয়াত) 

প্রশ্ন(২৮) – অনেকেই কলিজা ইত্যাদি নিজের ভাগে  রেখে দেয় এবং তার পরিবর্তে   নিজের ভাগের  মাংস  দিয়ে  দেয়।  তা কি  জায়েজ?  অনুরূপ অনেকেই মাংস  সম্পূর্ণ তৈরি  হবার  পূর্বে  ২/৪  কিলো নিয়ে নেয়  এবং পরে তার নিজের ভাগ হতে দিয়ে দেয়। তা কি জায়েজ?

উত্তর-    জায়েজ।    তাতে কুরবানীর   কোনো       ক্ষতি    হবেনা। কারণ  কুরবানী দাতার   জন্য সমস্ত  মাংস  খাওয়া  জায়েজ। (খোলাসাতুল ফাতাওয়া  ও হেদায়া) 

প্রশ্ন(২৯)     -  অনেক স্থানে  কুরবানীর  সমস্ত পশু   একত্রিত  করে এক  পশুর সামনে অন্য পশুকে জবেহ করা হয়।  তাতে কোনো  ক্ষতি হবে কিনা? 

উত্তর-    পশুর সামনে  ছুড়িতে ধার  দেয়া মাকরুহ।    কারণ      তাতে পশুর কষ্ট হয়ে থাকে।   অতএব  এক  পশুর   সম্মুখে অন্য      পশুকে   জবেহ  করলে কুরবানী হয়ে যাবে কিন্ত মাকরূহ হবে। (দুররে মুখতার) 

প্রশ্ন(৩০) – কুরবানীর পশুর ভুড়ি খাওয়া জায়েজ কিনা?

উত্তর- ভূঁড়ি খাওয়া মাকরূহে তাহরিমী চাই কুরবানী পশুর হোক অথবা অন্য পশুর হোক। (বাহারে শরিয়াত ও আনওয়ারুল হাদীস) 

প্রশ্ন(৩১) -   স্ত্রীলোক       যদি কুরবানীর পশু জবেহ করে তাহলে তা জায়েজ হবে কিনা?

উত্তর- স্ত্রীলোক যদি মুসলমান হয় এবং কাফেরা, মোশরেকা ও ওহাবীয়া না হয়, তাহলে জায়েজ হবে। (আলামগিরী) 

প্রশ্ন(৩২) – যদি কুরবানীর পশুর মস্তক কেটে আলাদা হয়ে যায় তাহলে কি হবে?

উত্তর-       কুরবানী   হয়ে যাবে। কিন্ত   এই   প্রকার  মস্তক       আলাদা করে ফেলা মাকরুহ। (হিদায়া) 

প্রশ্ন(৩৩)  -   সাহেবে নিসাব     ব্যক্তির প্রতি  কি প্রতি বৎসর  কুরবানী      করা জরুরী?

উত্তর- হ্যাঁ। প্রতি  বৎসর  কুরবানী  করা ওয়াজিব।    অন্যের   নামে       কুরবানী করতে চাইলে নিজের নামে কমপক্ষে একাংশ কুরবানী করতে হবে। ( রদ্দুল মুহতার)। 

প্রশ্ন(৩৪) – কুরবানী দাতার নখ, চুল কাটা জায়েজ আছে কিনা?

উত্তর- চাঁদ ওঠার পর হতে কুরবানী করা পর্যন্ত কেবল কুরবানী দাতার জন্য নখ চুল না কাটাই মুস্তাহাব। (হেদায়া) 

প্রশ্ন(৩৫) -  কুরবানীর পশুকে শোয়াবার পর  ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ পাঠ  করেছে। কিন্ত কোনো  কারণে  জবেহ না করে  ঐ স্থলে   অন্য   পশু জবেহ করলে পশু হালাল হবে কিনা?

উত্তর-  হালাল  হবে  না। অবশ্য   অন্য  পশুর জন্য নতুন  ভাবে    “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর” পাঠ করলে হালাল হবে। (হেদায়া) 

প্রশ্ন(৩৬)  - যদি  কোনো ব্যক্তি নিজস্ব  পশুর    কুরবানীর  নিয়ত  করে থাকে অথবা পশু   ক্রয়      করার সময় কুরবানীর নিয়ত       ছিলোনা   পরে  নিয়ত করেছে। এমতাবস্থায় তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে কিনা?

উত্তর– এ প্রকার নিয়তে কুরবানী ওয়াজিব হবেনা। (আলমগিরী) 

প্রশ্ন(৩৭) – একই পরিবারে একাধিক মানুষের নিকট যদি নেসাব পরিমান মাল থাকে তাহলে কি সবার পক্ষ হতে কুরবানী করতে হবে?

উত্তর-   যাদের    নিকট         নিসাব   পরিমাণ    মাল   থাকবে      তাদের   প্রত্যেকের কুরবানী  করা ওয়াজিব। স্বামী কুরবানী      করলে  স্ত্রীর   ওয়াজিব  আদায় হবেনা।      অবশ্য   মালিকে নিসাব  ব্যক্তি  স্ত্রী  ও বালেগ পুত্রের  অনুমতি নিয়ে     কুরবানী          করলে               তাদের    ওয়াজিব      আদায়      হয়ে      যাবে। (আলমগীরি)। 

প্রশ্ন(৩৮) -  আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে যদি  ২৯ তারিখে  চাঁদ    দেখা সম্ভব না হয় এবং চাঁদ ২৯ তারিখের বলে যদি সন্দেহ হয় তাহলে কি প্রকারে কুরবানী করতে হবে?

উত্তর- এমতাবস্থায় ১২ই জিলহজ্বের পূর্বে কুরবানী করে ফেলতে হবে। যদি ১২  তারিখে কুরবানী  করা হয় তাহলে সমস্ত মাংস   সাদকা করে  দিতে হবে (আলমগিরী)। 

প্রশ্ন(৩৯)   -  যদি  ছাগলের বয়স  এক     বৎসর   হতে   ২/৫ দিন কম     থাকে তাহলে তার কুরবানী জায়েজ হবে কিনা?

উত্তর- ছাগল যতই মোটা তাজা হোক না কেনো বৎসর পূর্ণ হতে ১দিন কম থাকলেও কুরবানী জায়েজ হবে না। (দুররে মুখতার) 

প্রশ্ন(৪০) – ছাগলের বাচ্চা  যদি কুকুরের দুধ পান করে থাকে তাহলে তার কুরবানী জায়েজ হবে কিনা?

উত্তর-        কুরবানী জায়েজ হবে।   যদি দীর্ঘদিন  কুকুরের দুধপান করে  থাকে তাহলে কিছুদিন বেঁধে রাখতে হবে। 

প্রশ্ন(৪১) – পাঁঠা কুরবানী জায়েজ কিনা?

উত্তর- পাঁঠাকে  বহুদিন   বেঁধে  রাখতে হবে  যাতে    তার দেহের গন্ধ দুরিভূত হয়ে যায়  এবং তার মাংসে কোনো প্রকার  গন্ধ না      থাকে  তাহলে তার কুরবানী জায়েজ হবে। (বাহারে শরীয়ত) 

প্রশ্ন(৪২)       –  যে        ছাগলটির   মূল্য     ১০০০    টাকা,     যদি   ওই       ছাগল     টি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২০০০০ টাকায়  ক্রয় করে কুরবানী করা হয় তাহলে সওয়াব পাবে কিনা?

উত্তর- সওয়াব     বেশি পাবে না।   বরং   আল্লাহর  ওয়াস্তে  না  হয়ে যদি সুনাম অর্জনের জন্য হয় তাহলে মূলতঃ কুরবানীই হবে না। 

প্রশ্ন(৪৩) – যদি আটজন  অথবা   ৯  জন  মানুষ    সাতটি    গরু সমান  অংশে কুরবানী করে তাহলে জায়েজ হবে কিনা?

উত্তর–  এ প্রকার  কুরবানী জায়েজ হবেনা কারণ গরু   ৭ অংশের  বেশি  হয় না।  যখন ৮ অথবা   ৯    ব্যক্তি    ৭টি গরু কুরবানী করবে, তখন প্রতিটি গরু আট      অংশ        অথবা  ৯  অংশ  হয়ে যাবে। যা  না-জায়েজ।  (রদ্দুল মুহতার) 

প্রশ্ন(৪৪) – যদি গ্রামের মানুষ ঈদের নামাজের আগে কুরবানী করে ফেলে তাহলে কুরবানী জায়েজ হবে কিনা?

উত্তর- জায়েজ হবে।   অবশ্য শহরের মানুষ ঈদের নামাজের  পূর্বে  কুরবানী করলে জায়েজ হবে না। (আলমগিরী) 

প্রশ্ন(৪৫) – যদি কোনো কারণে ১০ জিলহজ্ব ঈদের নামাজ না হয় তাহলে কুরবানী কখন করবে?

উত্তর– ১০ তারিখে কুরবানী করতে ইচ্ছা করলে জাওয়ালের আগে জায়েজ হবেনা।    ১১    ও    ১২  তারিখে কুরবানী  করলে ঈদের   নামাজের আগে জায়েজ হবে (দুররে মুখতার) 

প্রশ্ন(৪৬) -  কুরবানী  পশু জবেহ  করার পর হাত তুলে  দোয়া করা জায়েজ কিনা?

উত্তর- জায়েজ। 

প্রশ্ন(৪৭)  – একটি ছাগলের মূল্য  ১০০০ টাকা। একটি গরুর মূল্য ১০০০ টাকা এমতাবস্থায় কোনটির কুরবানী উত্তম হবে?

উত্তর-  গরু    কুরবানী করা     উত্তম হবে।  কারণ   ছাগল  অপেক্ষা গরুর  মাংস বেশি পাওয়া যাবে এবং সাত জনের  নাম   কুরবানী করা যাবে। (রদ্দুল মুহতার) 

প্রশ্ন(৪৮)   – উঁট,  গরু  ও  মহিষের  মূল্য  ও    মাংস      যদি  সমান  সমান     হয় তাহলে কোনটির কুরবানী উত্তম হবে?

উত্তর- যেহেতু উটের   চামড়া বিক্রয় হয়না, সেহেতু তা অপেক্ষা   গরু  অথবা মহিষের  মধ্যে  যার মাংস     পছন্দনীয় হবে      এবং  চামড়ার    মূল্য  বেশি পাওয়া যাবে তার কুরবানী উত্তম হবে। 

প্রশ্ন(৪৯) – যে পশুর জন্ম  হতে শিং নেই       অথবা কান   নেই অথবা একটি কান নেই। তার কুরবানী জায়েজ কিনা?

উত্তর-    জন্ম  হতে  শিং   না থাকলে কুরবানী   জায়েজ  হবে।  কিন্ত   জন্ম  হতে কান      না   থাকলে    অথবা      একটি  কান না  থাকলে   কুরবানী       জায়েজ হবেনা। অবশ্য কান ছোট থাকলে জায়েজ হবে। (আলমগিরী) 

প্রশ্ন(৫০) -  পশুর       দাঁত না থাকলে কুরবানী  জায়েজ হবে কিনা? অনুরূপ যদি তার থান কেটে অথবা শুকিয়ে যায় তাহলে কি হবে?

উত্তর- তার    কুরবানী না  জায়েজ।   ছাগলের   একটি  থান শুকিয়ে   যাওয়া না জায়েজ  হবার জন্য যথেষ্ট। গরু ও মহিষের একটি থান শুকিয়ে গেলে কুরবানী জায়েজ হবে (দুররে মুখতার) 

প্রশ্ন(৫১) – হিজড়া পশুর কুরবানী জায়েজ কিনা?

উত্তর- নাজায়েজ। (দুররে মুখতার) 

প্রশ্ন(৫২) -  যদি গরীব মানুষ কুরবানী করে এবং সমস্ত মাংস নিজের জন্য রেখে দেয় তাহলে কুরবানী জায়েজ হবে কিনা?

উত্তর-  জায়েজ হবে।    বরং       গরীবের  জন্য সমস্ত  মাংস   রেখে  দেয়া    উত্তম (আলমগিরী)। 

প্রশ্ন(৫৩)         -    কুরবানী   মাংস  অমুসলিমদের     কে   দান   করলে   কুরবানীর কোনো ক্ষতি হবে কিনা?

উত্তর- কুরবানী  হয়ে যাবে। কিন্ত অমুসলিমদেরকে    দেয়া  জায়েজ     হবেনা। কারণ    এখানকার অমুসলিমরা হারবী       কাফের।        (শামী         ও  বাহারে শরীয়ত) 

প্রশ্ন(৫৪) – যদি দুই ব্যক্তি অস্ত্র ধরে  জবেহ করে  তাহলে  কি      দুই   জনের প্রতি বিসমিল্লাহ পাঠ করা ওয়াজিব হবে?

উত্তর- দুই  জনের   প্রতি বিসমিল্লাহ্   পাঠ  করা  ওয়াজিব হবে। যদি  একজন বিসমিল্লাহ্    ত্যাগ  করে তাহলে  কুরবানী তো  দুরের কথা    পশু    হালাল হবে না। (দুররে মুখতার) 

প্রশ্ন(৫৫)  -    অনেকেই   জবেহ  করা   দেখতে     পারেনা।    এমতাবস্থায়    যদি জবেহ করার সময়  উপস্থিত না  থাকে তাহলে   কুরবানীর কোনো  ক্ষতি হবে কিনা?

উত্তর- কোনো ক্ষতি হবেনা। কিন্ত সম্ভব হলে নিজ  হস্তে জবেহ করা  উত্তম। কম পক্ষে জবেহ করার সময় উপস্থিত থাকা উচিৎ। (হেদায়া)। 

প্রশ্ন(৫৬)   -       কোনো দোয়া  পাঠ না           করলে  কেবল বিসমিল্লাহে   আল্লাহু আকবর পাঠ করে জবেহ করলে কুরবানী হবে কিনা?

উত্তর- কুরবানীর কোনো ক্ষতি হবেনা। অবশ্য যার নামে কুরবানী হবে তার নাম জবেহ করার পর এই প্রকারে বলবে – 

“হেআল্লাহ্ আমার অথবা অমুকের কুরবানী কবুল করে নাও যেমন তোমার দোস্ত   হজরত  ইব্রাহীম       আলাইহিসালাম     ও তোমার   হাবীব        হজরত মোহাম্মদ সাল্লালাহু  তায়ালা     আলাইহি    ওসাল্লালামের  কুরবানী  কবুল করেছো।“

প্রশ্ন(৫৭) – আক্বীক্বার চামড়ার হুকুম কি?

উত্তর- কুরবানী ও  আক্বীক্বার    চামড়ার  একই হুকুম। নিজের কাজে ব্যবহার করা  জায়েজ।   কিন্ত  বিক্রয়    করলে     মসজিদ,       মাদ্রাসা  অথবা       অন্য কোনো       ভালো       কাজে  দান              করতে         হবে।       (বাহারে   শরীয়ত)। 

******************************

বিশেষবিজ্ঞপ্তি

========

আমারসুন্নী   ভাইগণ!    খুব সাবধান  হয়ে   যান। অন্যথায়    আপনারা যেকোনো মূহুর্তে   ওহাবী         সম্প্রদায়ের       শিকার হয়ে        যাবেন।   বর্তমানে   সৌদি আরবের গোমরাহ   ওহাবী  সরকার  বিশ্ব সুন্নী মুসলমানদেরকে, বিশেষ করে ভারতীয় সুন্নী মুসলীমদেরকে মুশরিক বলে থাকে, এরা নিজেদের বানোয়াট     তাওহীদ প্রচারে ব্যস্ত হয়ে    পড়েছে।  এইখাতে খরচ করছে কোটি    কোটি  রিয়াল। এই রিয়াল আমাদের   দেশে ব্যাপক      পরিমানে চলে       আসছে            তথাকথিত    আহলে     হাদীস  ও      তাবলীগ  জামাতের মাধ্যমে।   ফলে ওহাবী    দেওবন্দীদের শতশত মাদ্রাসা মাকতাব     গড়ে উঠছে।  আর      দিনের   পর       দিন    দুর্বল  হয়ে  যাচ্ছে   সুন্নীদের    মাদ্রাসা গুলো। এই মাদ্রাসাগুলো   দুর্বল  হয়ে  যাবার  অর্থ  হলো   সুন্নীয়ত  খতম হয়ে   যাবার পূর্বাভাষ। অতএব     আপনার     যাকাত,     ফিতরা,    উশুর  ও কুরবানীর সমস্ত পয়সা       সুন্নী     মাদ্রাসা গুলোতে দিয়ে দিন।   খবরদার! আপনার  একটি পয়সাও    যেনো এদিক সেদিক চলে  না যায়।   আল্লাহ্ তালা  যেনো   আমাদের    সবাইকে বোঝার তৌফিক দান করে থাকেন। আমিন ইয়া রব্বাল আ’লামীন। 

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment