মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে পরজগতের স্বপ্ন বেশী দেখতে পাওয়া যায়। স্বপ্নে বিভিন্ন রূহ্ তাঁর সাথে দেখা করে পরকালের বিভিন্ন অবস্থা তাঁকে দেখায়। যখন মোমেন বান্দার রূহ্ বের হয়ে যায়- তখন ফিরিস্তারা তাঁর রূহ্ উর্ধ্ব জগতে নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাযির করে। আল্লাহ্পাক ফিরিস্তাদেরকে বলেন- তাঁকে বেহেস্তে নিয়ে ঘুরিয়ে দেখাও। লাশ গোসল দেওয়ার সময় ফিরিস্তারা তাঁর রূহ্ নিয়ে জান্নাতে ভ্রমন করে, তাঁর জান্নাতী বাসস্থান দেখায়। কাফন পরানোর পর রূহ্ তাঁর কাফন ও শরীরের মাঝখানে ফিরে আসে। যখন লাশ নিয়ে রওয়ানা হয়- তখন রূহ্ তাঁর সম্বন্ধে মানুষের ভাল- মন্দ মন্তব্য শুনতে পায়। জানাযা পড়ায়ে কবরে রাখা হলে রূহ্ শরীরে প্রবেশ করে। তারপর মুনকার নকীর কবরে এসে ছাওয়াল জওয়াব করে। ”ইহাই আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিশুদ্ধ মতামত”- বলে আবুল হাছান ক্বাবেছী (রহঃ) মন্তব্য করেছেন (তাযকিরাহ্ ৬৫ পৃষ্ঠা)। এটা হলো সংক্ষিপ্ত বিবরণ। বিস্তারিত বিবরণ নিম্নে প্রদত্ত হলো,
(১) কবরে যাওয়ার পূর্বেই নেক্কার বা বদকার হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায়ঃ
বারা ইবনে আযেব (রাঃ) বলেন- রাসুল মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “বাক্বিউল র্গাকাদ” (জান্নাতুল বাক্বী) কবরস্তানে এক জানাযায় শরিক হয়ে আমাদেরকে নিয়ে বসলেন। আমরা নিঃশব্দে বসে গেলাম। তিনি তিনবার বল্লেন- “আউযু বিল্লাহি মিন্ আযাবিল কবর” অর্থাৎ আমি আল্লাহর কাছে কবরের আযাব থেকে পানাহ্ চাই।
এরপর মোমেনদের রূহ্ কিভাবে বের করা হয়, কে নিয়ে যায়, কোথায় নিয়ে যায়, কখন কবরে রূহ্ ফিরে আসে, কিভাবে ছাওয়াল জাওয়াব হয়, তারপর ফিরিস্তারা কি সুসংবাদ শুনায়, এরপর নেক আমল কবরে এসে কি সুসংবাদ দেয়- এ সম্পর্কে তিনি দীর্ঘ ভাষন দিলেন। এরপর আবার দীর্ঘ ভাষন দিলেন- কিভাবে কাফেরের রূহ্ বের হয়, কে নিয়ে যায়, কোথায় নিয়ে যায়, কোথায় নিক্ষেপ করে, কিভাবে ছাওয়াল জাওয়াব হয়, ফিরিস্তারা কি দুঃসংবাদ শুনায়, তার কুফরী ও বদ আমল তাকে কিভাবে ভর্ৎসনা করে- ইত্যাদি সম্পর্কে। এতেই বুঝা যায়- কবরে যাওয়ার পূর্বেই নেক্কার ও বদকার হিসাবে সে চিহ্নিত হয়ে যায়।
হযরত বারা ইবনে আযেব (রাঃ) রাসুলেপাকের ভাষন এভাবে বর্ণনা করেন-
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جِنَازَةِ رَجُلٍ مِنْ الْأَنْصَارِ
فَانْتَهَيْنَا إِلَى الْقَبْرِ وَلَمَّا يُلْحَدْ فَجَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَلَسْنَا حَوْلَهُ وَكَأَنَّ عَلَى رُءُوسِنَا الطَّيْرَ وَفِي يَدِهِ عُودٌ يَنْكُتُ فِي الْأَرْضِ
فَرَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ اسْتَعِيذُوا بِاللَّهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا
ثُمَّ قَالَ إِنَّ الْعَبْدَ الْمُؤْمِنَ إِذَا كَانَ فِي انْقِطَاعٍ مِنْ الدُّنْيَا وَإِقْبَالٍ مِنْ الْآخِرَةِ نَزَلَ إِلَيْهِ مَلَائِكَةٌ مِنْ السَّمَاءِ بِيضُ الْوُجُوهِ كَأَنَّ وُجُوهَهُمْ الشَّمْسُ مَعَهُمْ كَفَنٌ مِنْ أَكْفَانِ الْجَنَّةِ وَحَنُوطٌ مِنْ حَنُوطِ الْجَنَّةِ
حَتَّى يَجْلِسُوا مِنْهُ مَدَّ الْبَصَرِ ثُمَّ يَجِيءُ مَلَكُ الْمَوْتِ عَلَيْهِ السَّلَام حَتَّى يَجْلِسَ عِنْدَ رَأْسِهِ فَيَقُولُ أَيَّتُهَا النَّفْسُ الطَّيِّبَةُ اخْرُجِي إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ اللَّهِ وَرِضْوَانٍ قَالَ فَتَخْرُجُ تَسِيلُ كَمَا تَسِيلُ الْقَطْرَةُ مِنْ فِي السِّقَاءِ فَيَأْخُذُهَا
فَإِذَا أَخَذَهَا لَمْ يَدَعُوهَا فِي يَدِهِ طَرْفَةَ عَيْنٍ حَتَّى يَأْخُذُوهَا فَيَجْعَلُوهَا فِي ذَلِكَ الْكَفَنِ وَفِي ذَلِكَ الْحَنُوطِ وَيَخْرُجُ مِنْهَا كَأَطْيَبِ نَفْحَةِ مِسْكٍ وُجِدَتْ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ
قَالَ فَيَصْعَدُونَ بِهَا فَلَا يَمُرُّونَ يَعْنِي بِهَا عَلَى مَلَإٍ مِنْ الْمَلَائِكَةِ إِلَّا قَالُوا مَا هَذَا الرُّوحُ الطَّيِّبُ فَيَقُولُونَ فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ بِأَحْسَنِ أَسْمَائِهِ الَّتِي كَانُوا يُسَمُّونَهُ بِهَا فِي الدُّنْيَاحَتَّى يَنْتَهُوا بِهَا إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيَسْتَفْتِحُونَ لَهُ فَيُفْتَحُ لَهُمْ فَيُشَيِّعُهُ مِنْ كُلِّ سَمَاءٍ مُقَرَّبُوهَا إِلَى السَّمَاءِ الَّتِي تَلِيهَا حَتَّى يُنْتَهَى بِهِ إِلَى السَّمَاءِ السَّابِعَةِ
فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ اكْتُبُوا كِتَابَ عَبْدِي فِي عِلِّيِّينَ وَأَعِيدُوهُ إِلَى الْأَرْضِ فَإِنِّي مِنْهَا خَلَقْتُهُمْ وَفِيهَا أُعِيدُهُمْ وَمِنْهَا أُخْرِجُهُمْ تَارَةً أُخْرَى قَالَ فَتُعَادُ رُوحُهُ فِي جَسَدِهِ فَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولَانِ لَهُ مَنْ رَبُّكَ فَيَقُولُ رَبِّيَ اللَّهُ فَيَقُولَانِ لَهُ مَا دِينُكَ فَيَقُولُ دِينِيَ الْإِسْلَامُ فَيَقُولَانِ لَهُ مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ فَيَقُولُ هُوَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
فَيَقُولَانِ لَهُ وَمَا عِلْمُك فَيَقُولُ قَرَأْتُ كِتَابَ اللَّهِ فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ فَيُنَادِي مُنَادٍ فِي السَّمَاءِ أَنْ صَدَقَ عَبْدِي فَأَفْرِشُوهُ مِنْ الْجَنَّةِ وَأَلْبِسُوهُ مِنْ الْجَنَّةِ وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ قَالَ فَيَأْتِيهِ مِنْ رَوْحِهَا وَطِيبِهَا وَيُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ مَدَّ بَصَرِهِ
قَالَ وَيَأْتِيهِ رَجُلٌ حَسَنُ الْوَجْهِ حَسَنُ الثِّيَابِ طَيِّبُ الرِّيحِ فَيَقُولُ أَبْشِرْ بِالَّذِي يَسُرُّكَ هَذَا يَوْمُكَ الَّذِي كُنْتَ تُوعَدُ فَيَقُولُ لَهُ مَنْ أَنْتَ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يَجِيءُ بِالْخَيْرِ فَيَقُولُ أَنَا عَمَلُكَ الصَّالِحُ فَيَقُولُ رَبِّ أَقِمْ السَّاعَةَ حَتَّى أَرْجِعَ إِلَى أَهْلِي وَمَالِي
قَالَ وَإِنَّ الْعَبْدَ الْكَافِرَ إِذَا كَانَ فِي انْقِطَاعٍ مِنْ الدُّنْيَا وَإِقْبَالٍ مِنْ الْآخِرَةِ نَزَلَ إِلَيْهِ مِنْ السَّمَاءِ مَلَائِكَةٌ سُودُ الْوُجُوهِ مَعَهُمْ الْمُسُوحُ فَيَجْلِسُونَ مِنْهُ مَدَّ الْبَصَرِ
ثُمَّ يَجِيءُ مَلَكُ الْمَوْتِ حَتَّى يَجْلِسَ عِنْدَ رَأْسِهِ فَيَقُولُ أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْخَبِيثَةُ اخْرُجِي إِلَى سَخَطٍ مِنْ اللَّهِ وَغَضَبٍ قَالَ فَتُفَرَّقُ فِي جَسَدِهِ فَيَنْتَزِعُهَا كَمَا يُنْتَزَعُ السَّفُّودُ مِنْ الصُّوفِ الْمَبْلُولِ فَيَأْخُذُهَا فَإِذَا أَخَذَهَا لَمْ يَدَعُوهَا فِي يَدِهِ طَرْفَةَ عَيْنٍ حَتَّى يَجْعَلُوهَا فِي تِلْكَ الْمُسُوحِ وَيَخْرُجُ مِنْهَا كَأَنْتَنِ رِيحِ جِيفَةٍ وُجِدَتْ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ
فَيَصْعَدُونَ بِهَا فَلَا يَمُرُّونَ بِهَا عَلَى مَلَإٍ مِنْ الْمَلَائِكَةِ إِلَّا قَالُوا مَا هَذَا الرُّوحُ الْخَبِيثُ فَيَقُولُونَ فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ بِأَقْبَحِ أَسْمَائِهِ الَّتِي كَانَ يُسَمَّى بِهَا فِي الدُّنْيَا حَتَّى يُنْتَهَى بِهِ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيُسْتَفْتَحُ لَهُ فَلَا يُفْتَحُ لَهُ
ثُمَّ قَرَأَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ { لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَلَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ } فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ اكْتُبُوا كِتَابَهُ فِي سِجِّينٍ فِي الْأَرْضِ السُّفْلَى فَتُطْرَحُ رُوحُهُ طَرْحًا ثُمَّ قَرَأَ { وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنْ السَّمَاءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ }
فَتُعَادُ رُوحُهُ فِي جَسَدِهِ وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولَانِ لَهُ مَنْ رَبُّكَ فَيَقُولُ هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي فَيَقُولَانِ لَهُ مَا دِينُكَ فَيَقُولُ هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي فَيَقُولَانِ لَهُ مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ فَيَقُولُ هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي
فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنْ السَّمَاءِ أَنْ كَذَبَ فَافْرِشُواََََ
لَهُ مِنْ النَّارِ وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى النَّارِ فَيَأْتِيهِ مِنْ حَرِّهَا وَسَمُومِهَا وَيُضَيَّقُ عَلَيْهِ قَبْرُهُ حَتَّى تَخْتَلِفَ فِيهِ أَضْلَاعُهُ وَيَأْتِيهِ رَجُلٌ قَبِيحُ الْوَجْهِ قَبِيحُ الثِّيَابِ مُنْتِنُ الرِّيحِ
فَيَقُولُ أَبْشِرْ بِالَّذِي يَسُوءُكَ هَذَا يَوْمُك
الَّذِي كُنْتَ تُوعَدُ فَيَقُولُ مَنْ أَنْتَ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يَجِيءُ بِالشَّرِّ فَيَقُولُ أَنَا عَمَلُكَ الْخَبِيثُ فَيَقُولُ رَبِّ لَا تُقِمْ السَّاعَةَ ََََ)
رواه الإمام أحمد و أبو داود وروى النسائي
وابن ماجه أوله ورواه الحاكم و أبو عوانة الإسفرائيني في صحيحيهما و ابن حبان ۔
অর্থাৎঃ (আমরা সাহাবীগণ বাক্বীউল র্গাকাদে একটি জানাযায় অংশ গ্রহণ করেছিলাম। এমন সময় সেখানে আমাদের মাঝে এসে উপস্থিত হলেন রাসুলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হুযুর (ﷺ) কবরস্তানে বসে গেলেন। আমরাও তাঁর চারপাশে বসলাম। তখন আমরা এমন নিস্তব্ধ ছিলাম যে, আমাদের মাথার উপরে যেন পাখীরা আমাদেরকে মরুগাছ মনে করে নির্ভয়ে বসে আছে। নবী করীম (ﷺ) তিনবার পড়লেন “আমি আল্লাহর কাছে কবর আযাব থেকে পানাহ্ চাই”)।
“এরপর তিনি এক দীর্ঘ ভাষনে এরশাদ করলেন- ”যখন কোন মুমিনবান্দা দুনিয়া ছেড়ে আখেরাতমুখী হয়- তখন তাঁর কাছে ফিরিস্তারা আগমন করে। তাঁদের চেহারা সূর্যউজ্জ্বল। তাঁরা এসে মোমিনবান্দার দৃষ্টিসীমা জুড়ে বসে যায়। এরপর মালাকুল মউত এসে তাঁর মাথার কাছে বসে বলতে থাকে- হে পবিত্র আত্মা, বের হয়ে আসো এবং তোমার প্রভূর মাগফিরাত ও সন্তুষ্টির দিকে ফিরে চলো। অতঃপর তাঁর রূহ্ এভাবে স্রোতের মত আছানীর সাথে বের হয়ে আসে- যেভাবে কলসের পানি সহজে তাঁর মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে। রূহ্ বের হওয়ার সাথে সাথে মালাকুল মউত রূহ্কে ধরে ফেলে। যখন সে রূহ্ ধরে ফেলে- তখন সাথের ফিরিস্তারা তাঁর হাতে রূহ্কে চোখের পলকের সময় পর্যন্ত রাখতে দেয়না। তাঁরা উক্ত রুহ্কে নিয়ে সুগন্ধি মেখে একটি রেশমী কাপড়ে জড়িয়ে নেয়। তখন এ কাপড় বা রুমাল হতে দুনিয়ার মিশ্ক আম্বরের সুগন্ধি বের হতে থাকে। নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেন- অতঃপর ফিরিস্তারা ঐ রূহ্কে নিয়ে উপরের দিকে উঠতে থাকে। উর্দ্ধ জগতের ফিরিস্তাদের পার্শ দিয়ে তাঁরা গমনকালে ওরা জিজ্ঞেস করে- এটা কার রূহ্? বহনকারী ফিরিস্তারা তাঁর সুন্দর নাম উল্লেখ করে বলবে- অমুকের পুত্র অমুকের সম্মানিত রূহ্। অতঃপর তাঁরা প্রথম আকাশের দরজা খুলে দেয়ার জন্য বললে তাঁর জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়। প্রত্যেক আকাশের ফিরিস্তারা তাঁকে স্বাগত সম্ভাষন দিতে দিতে আল্লাহর দরবারে তাঁর রূহ্কে নিয়ে যায়। (প্রথম আকাশেই সাতশ কোটি ফিরিস্তা নিয়ে ইসমাঈল ফিরিস্তা অভ্যর্থনা জানাবে- তাযকিরাহ্)। তখন আল্লাহ্পাক বলবেন- আমার প্রিয় বান্দার আমলনামা ইল্লিয়্যীনে তালিকাভূক্ত করে নাও এবং এই রূহ্কে তাঁর কবরে নিয়ে যাও- যেখান থেকে আমি তাদেরকে পয়দা করেছি, সেখানে তাদেরকে ফিরিয়ে আনব এবং সেখান থেকেই পুনরায় তাদেরকে বের করে আন্ব”। (ছুরা তোয়াহা আয়াত ৫৫)।
নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেন- ”অতঃপর তার রূহ্কে তার শরীরে সংযুক্ত করে দেয়া হবে। এরপর তার কবরে দুই ফিরিস্তা এসে তাকে বসাবে এবং প্রশ্ন করবে- “তোমার রব বা প্রতিপালক কে? তোমার দ্বীন বা ধর্ম কী? তোমাদের নিকট যে ”এই ব্যক্তিকে” প্রেরণ করা হয়েছিল- তাঁর নাম কি? মোমিনব্যক্তি বলবে- আমার রব আল্লাহ্, আমার ধর্ম ইসলাম এবং ইনি হচ্ছেন আল্লাহর রাসুল। ফিরিস্তাদ্বয় জিজ্ঞেস করবে- কে তোমাকে এগুলো শিক্ষা দিয়েছে? মোমিনবান্দা বলবে”- আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, অতঃপর ঈমান এনে সত্য বলে বিশ্বাস করেছি”। তখন আকাশ থেকে একজন ফিরিস্তা আল্লাহর পক্ষে এভাবে ঘোষনা করবে- হ্যাঁ, আমার বান্দা সঠিক বলেছে। তাঁকে জান্নাতী বিছানা বিছিয়ে দাও- জান্নাতের দিকে তার জন্য একটি দরজা খুলে দাও”। রাসুলেপাক (ﷺ) বলেন- অতঃপর তার কবরে বেহেস্তের বাতাস ও সুগন্ধি আসতে থাকবে এবং দৃষ্টিসীমা পর্য্যন্ত তার কবরকে প্রশস্ত করে দেয়া হবে।
হুযুরপাক (ﷺ) এরশাদ করেন- তারপর মোমেনবান্দার কাছে সুগন্ধিমাখা উত্তম পোষাক পরিহিত এক ব্যক্তি এসে বলবে- আজকের এই সুখশান্তির জন্য সুসংবাদ গ্রহণ করো- যেদিনের প্রতিশ্রুতি তোমাকে দুনিয়াতে অহরহ দেয়া হতো। মোমিনব্যক্তি বলবে- তুমি কে? এমন উত্তম সংবাদ নিয়ে তোমার মত মানুষের আগমন হলো! ঐ ব্যক্তি বলবে- আমি তোমার নেক আমল। তখন মোমিনব্যক্তি বলবে- হে রব, এখনই কিয়ামত সংঘটিত করো- যাতে আমি আমার পরিবার পরিজন ও সম্পদের সাথে (জন্নাতে) মিলিত হতে পারি”। (আবু দাউদ, তিরমিযি, ইবনে মাজাহ্ ও নাছায়ী”)।
উক্ত দীর্ঘ ভাষনের শেষাংশে নবী করীম (ﷺ) বদকার ও কাফিরের মৃত্যু প্রসঙ্গ টেনে এরশাদ করলেন- “কাফেরের যখন আয়ু ফুরিয়ে যাবে এবং দুনিয়া ছেড়ে পরকালে আগমনের সময় হবে- তখন আকাশ থেকে কালো চেহারা বিশিষ্ট ফিরিস্তারা নেমে আসবে। তাঁদের সাথে থাকবে পশমের মোটা খসখসে কাপড়। তাঁরা এসে কাফির ব্যক্তির দৃষ্টিসীমা জুড়ে বসবে। এরপর আসবে মালাকুল মউত। তার মাথার কাছে বসে মালাকুল মউত বলবে- হে খবিছ ও অপবিত্র রূহ্! তুই আল্লাহর অসন্তোষ ও গযবের দিকে ফিরে আয়। নবী করীম (ﷺ) তখনকার অবস্থা বর্ণনা করে বলেন- ফিরিস্তারা তার শরীরে পৃথক পৃথক ভাবে প্রবেশ করে তার রূহ্কে এভাবে টেনে বের করবে- যেভাবে ভিজা তুলা থেকে লোহার শলা টেনে বের করা হয়। অতঃপর মালাকুল মউত তাঁর রূহ্কে হাতে ধরে ফেলবে। ফিরিস্তারা চোখের পলক পর্যন্ত তাঁকে মালাকুল মউতের কাছে রাখবেনা। তাঁরা তাঁর রূহ্কে নিয়ে ঐ মোটা খসখসে পশমী কাপড়ে পেঁচিয়ে নিবে। আর তাঁর রূহ্ থেকে দুনিয়ার মৃত জন্তুর দূর্গন্ধের ন্যায় পঁচা দুর্গন্ধ বের হতে থাকবে। অতঃপর ঐ রূহ্কে নিয়ে তাঁরা উপরের দিকে উঠতে থাকবে। যখন উর্দ্ধজগতের ফিরিস্তাদের পাশ দিয়ে তাঁরা গমন করতে থাকবে- তখন তাঁরা জিজ্ঞেস করবে- এই খবিছ রূহ্ কার? ফিরিস্তারা তার বিকৃত নাম উচ্চারন করে বলবে- ফলানার পুত্র ফলানার।
অতঃপর এই খবিছ রূহ্ নিয়ে ফিরিস্তারা প্রথম আকাশে গিয়ে দরজা খোলার আবেদন করলে দরজা খোলা হবে না। একথা বলেই নবী করীম (ﷺ) ছুরা আ’রাফের একটি আয়াত তিলাওয়াত করলেন তা হলো-
لاَ تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَاء وَلاَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ
অর্থাৎঃ “অবিশ্বাসী কাফিরদের জন্য আকাশের দরজা খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না- যে পর্য্যন্ত না সূঁচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে”। (ছুরা আ’রাফ ৪০ আয়াত)। এমতাবস্থায়ই আল্লাহ্পাকের পক্ষ হতে বলা হবে- “তার আমলনামা সর্বনিম্ন জাহান্নামের ছিজজীনে তালিকাভূক্ত করে রুহ্কে খুব জোরে নিচের দিকে নিক্ষেপ করো”। এর প্রমাণ স্বরূপ নবীজি (ﷺ) কোরআন মজিদের একটি আয়াত তিলাওয়াত করলেন- তাহলো-
وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَاء فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ ۔
অর্থাৎঃ “যেব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরিক করে- সে যেন আকাশ থেকে ছিট্কে পড়লো। অতঃপর মৃতভোজী কোন পাখী এসে তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেলো- অথবা বাতাস এসে তাকে উড়িয়ে নিয়ে কোন এক দূরবর্তীস্থানে নিক্ষেপ করলো”। (ছুরা হজ্ব ৩১ আয়াত)।
অতঃপর রূহ্কে তার শরীরের সাথে সংযুক্ত করে দেয়া হবে এবং দু’ ফিরিস্তা এসে তাকে ছাওয়াল করবে- “বল্ -তোর রব কে? তোর দ্বীন কী? আর এই ব্যক্তিকে যে তোদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল- ইনি কে? খবীছ রূহ্ বলবে- হায় হায়! জানি না- চিনিনা। অতঃপর আল্লাহর পক্ষ হতে এক ফিরিস্তা আওয়ায দিয়ে বলবে- আমার এই খবিছবান্দা মিথ্যাবাদী। তাকে জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও, দোযখের দিকে একটি দরজা খুলে দাও- যাতে জাহান্নামের উত্তাপ তার কবরে আসে”।
আর কিছুক্ষণের জন্য তার কবর এমন সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং তাকে এমনভাবে চাপ দেয়া হবে যে, একদিকের হাঁড় অন্য দিকে চলে যাবে। এরপর একজন বিশ্রী পোষাকধারী কুশ্রী দুর্গন্ধময় লোক তার কাছে এসে বলবে- তুই সুসংবাদ গ্রহণ কর ঐ বদ আমলের- যা তোকে আজকের এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। কাফির ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করবে- তুমি কে? কে তুমি এই দুঃসংবাদ নিয়ে আগমনকারী? ঐ কুশ্রী ব্যক্তি বলবে- আমি তোর খবীছ আমল। তখন কাফির ব্যক্তি বলবে- হে আল্লাহ্! কিয়ামত ঘটাইওনা”। (আমাকে পুনরায় শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে)। (হযরত বারা ইবনে আযেব (রাঃ) -এর সনদে আবু দাউদ, তিরমিযি, ইবনে মাজাহ্ ও নাছায়ী)।
বুঝা গেল- মুনকার- নকীর কবরে আসার পূর্বেই মুর্দা জান্নাতী বা জাহান্নামী হিসাবে চিহ্নিত হয়ে যাবে। মুনকার- নকীর, কিয়ামত, আমলনামা, মিযান- ইত্যাদি হবে তার বাস্তব প্রমাণ। আরো বুঝা গেল- কবরে রূহ্ এসে শরীরের সাথে সংযুক্ত হবে। ইল্লিয়্যীন বা ছিজজীন হলো স্থায়ী আবাস ও নির্জন অফিস।





Users Today : 250
Users Yesterday : 767
This Month : 14672
This Year : 186543
Total Users : 302406
Views Today : 17244
Total views : 3593987