তাঁর সৌন্দর্যের আলোচনা শুনে দেখার জন্য কাতর হয়ে আছি। আল্লাহ জানেন, যখন তাঁর মোবারক চেহারার দীদার হবে তখন কি অনুভূতি হবে! আর যখন এই সৌন্দর্যের সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং দীদার দিবেন সেদিন কি অনুভূতি হবে আমাদের।
তবে দীদার কি পাব এই অপবিত্র চোখ, অপবিত্র অন্তর নিয়ে? যেগুলোকে গুণাহ দ্বারা অপবিত্র করে ফেলেছি। আল্লাহ যেন রহম করেন।
সেই নূরানী সত্তাকে অর্থাৎ প্রিয় আক্বাকে যারা সরাসরি দেখেছেন তাদের অবস্থা কি! অনেকে তো তাঁর সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে বাপ-দাদার ধর্ম ছেড়ে মুসলমান হয়ে গেছেন। অনেকেই আবার বর্ণনা করার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। তবে যে যার মতো করে বর্ণনা করার চেষ্টা করেছেন। যা আমাদের নিকট পর্যন্ত পৌঁছেছে।
যেদিন তিনি আগমন করেন এই পৃথিবীতে মহান নূর চমকে উঠলাে, যা দ্বারা পূর্ব ও পশ্চিম আলােকিত হয়ে গিয়েছিলাে। এটি সেই মহান রাত, যে রাতে আল্লাহ্ তায়ালার আদেশে ফিরিশতাদের সর্দার জিব্রাঈল আমীন (আ.) পূর্বদিকে ও পশ্চিম দিকে এবং কাবার উপর পতাকা স্থাপন করেছিলেন।
এটি সেই মহান রাত, যে রাতে আল্লাহ্ তায়ালার মাহবুব, হুযুর পুরনূর এর আগমনে ইরানের বাদশাহ কিসরার প্রাসাদে ভূমিকম্প এসেছিলাে এবং ইরানের এক হাজার বছর থেকে প্রজ্জলিত হওয়া আগ্নেয়গিরী নিভে গিয়েছিলাে।
“বুঝ গেয়ে জিস কে আগে সবী মাশআলে, শামআ ওহ লে কর আয়া হামারা নবী।”
আলা হযরত রহ. কতই না সুন্দর বলেছেন, “তেরে খুলক কো হক নে আযীম কাহা, তেরে খিলক কো হক নে জামিল কিয়া, কোয়ি তুঝ সা হুয়া হে না হাে’গা শাহা, তেরে খালিকে হুসন ও আদা কি কসম।”
একবার কিছু অমুসলিম আমিরুল মুমিনিন হযরত সায়্যিদুনা আলীউল মুরতাদ্বা শেরে খােদা রা. এর দরবারে উপস্থিত হলাে এবং তাকে আরয করলাে: হে আবুল হাসান! আপনার চাচার সন্তান (অর্থাৎ প্রিয় নবীﷺ) এর গুণাবলী বর্ণনা করুন। তখন তিনি বললেন: রাসূলুল্লাহ্ ﷺ খুব বেশি লম্বা ছিলেন না এবং একেবারে খাঁটোও ছিলেন না, বরং মধ্যম আকৃতি থেকে একটু লম্বা ছিলেন।
মােবারক শরীরের রঙ সাদা ছিলাে, চুল মােবারক অনেক বেশি কৃষ্ণবর্ণ ছিলাে না, বরং কিছুটা বক্র ছিলাে, যা কান পর্যন্ত ছিলাে, প্রশস্ত কপাল, সুরমা খচিত চোখ, মুক্তা মতাে সাদা লালচে দাঁত, খাড়া নাক, ঘাড় খুবই স্বচ্ছ যেনাে রূপার পাত্র, যখন হাঁটতেন তখন মজবুতভাবে কদম রাখতেন, যেনাে উঁচু স্থান থেকে নামছেন, যখন কারাে দিকে মনযােগ দিতেন তবে পরিপূর্ণভাবে মনযােগ দিতেন, যখন দাঁড়াতেন তখন লােকদের চেয়ে উচ্চ মনে হতাে এবং যখন বসতেন তখনও সবার মাঝে অনন্য হতেন।
যখন বলতেন তখন লােকদের মাঝে নিরবতা বিরাজ করতাে, যখন খােতবা দিতেন তখন শ্রবণকারীদের মাঝে ক্রন্দন শুরু হয়ে যেতাে, মানুষের প্রতি সবচেয়ে বেশি দয়ালু ও মেহেরবান, এতিমদের জন্য স্নেহময় পিতার ন্যায়, বিধবাদের জন্য দয়ালু ও নম্র, সবচেয়ে বেশি বাহাদুর, সবচেয়ে বেশি দানশীল এবং আলােকিত চেহারার মালিক ছিলেন। জুব্বা পরিধান করতেন, যবের রুটি আহার করতেন।
হুযুর ﷺ এর বালিশ ছিলাে চামড়ার, যাতে খেজুরের গাছের আঁশ ভরা ছিলাে, খাট ছিলাে বাবলা গাছের, যা খেজুরের পাতার রশি দিয়ে বুনানাে ছিলাে, হুযুর ﷺ এর দু’টি পাগড়ী ছিলাে, একটির নাম সাহাব আর অপরটিকে উকাব বলা হতাে।
প্রিয় নবী ﷺ এর প্রয়ােজনীয় বস্তুর মধ্যে তলােয়ার যুলফাকার, উটনী আদ্ববাআ, খচ্চর দুলদুল, গাধা ইয়াফুর, ঘােড়া বাহার, ছাগল বরকতা, লাঠি মামশুক এবং পতাকা “ লিওয়াউল হামদ ” নামের মনােনীত ছিলাে। হুযুর ﷺ উটকে স্বয়ং নিজেই বাধঁতেন এবং সেটিকে খাবার দিতেন, কাপড়ে তালি লাগাতেন।
আর জুতার মেরামতও নিজেই করতেন। পরিপূর্ণ মােবারক আকৃতি বর্ণনা করার পর। আমিরুল মুমিনিন হযরত সায়্যিদুনা মাওলা আলী শেরে খােদা রা. বলেন: আমি হুযুর ﷺ এর পূর্বে এবং হুযুর পুরনূর এর পর তাঁর মতাে আর কাউকে দেখিনি। (ইযালাতুল খাফা, ৪/৪৯৯ ও তিরমিযী, ৫/৩৬৪, হাদীস নং -৩৬৫৭ ও ৩৬৫৮)
“হুসন তেরাসা না দেখা না সুনা কেহতে হে আগলে যামানে ওয়ালে, ওহী ধুম উন কি হে মিট গেয়ে আ’প মিটানে ওয়ালে।”
চলবে…..
জাজাকাল্লাহু খাইরান
স্বাধীন আহমেদ