আফসোস, শিয়ালের দল যেমন বিভিন্ন দিক হতে ‘হুক্কা হুয়া’ রবে ডেকে উঠে, ঠিক তেমনি দেশে-বিদেশে অবস্থানকারী সাহাবা (রা.)-বিদ্বেষী শিয়াচক্রও তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ফেইসবুকের বিভিন্ন কোণা থেকে আকস্মিক চিৎকার-চেঁচামেচি করছে। অতি সম্প্রতি এরকম একটি পোষ্ট আমার নজরে পড়েছে, যেখানে হিজরতকালে শত্রুপরিবেষ্টিত গুহায় আশ্রয়গ্রহণকারী প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁরই সাহাবী হযরতে আবূ বকর সিদ্দীক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর ঘটনা বর্ণনা করতে যেয়ে মূল লিপির বিকৃতি সাধন করা হয়েছে এবং তা দ্বারা হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে এ মর্মে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে যে, তিনি নাকি ওই সময় নিজের জন্যে দুঃখিত হয়েছিলেন। নাউযুবিল্লাহ মিন যালেক!
চলুন, আল-কুর’আনের মূল লিপিতে কী বলা হয়েছে তা বিশ্লেষণ করা যাক এবং তাফসীরকারের ভাষ্যও তুলে ধরা যাক। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন:
لاَ تَحْزَنْ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَنَا.
অর্থ: (যখন তাঁরা উভয়ই গুহার মধ্যে ছিলেন), যখন আপন সঙ্গীকে (নবী পাক) ফরমাচ্ছিলেন, ‘দুঃখিত হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। [আল-কুর’আন, ৯/৪০; নূরুল ইরফান]
হাকিমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী আশরাফী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) এই আয়াতের তাফসীরে লেখেন:
“আমার জন্যে দুঃখ কোরো না (لاَ تَحْزَنْ)।” কেননা সিদ্দীক্বে আকবর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর মনে নিজের জন্যে দুঃখ ছিলো না। নিজেকে তো (গুহার ভেতরে) সাপ দিয়ে দংশন করিয়েছিলেন (যাতে নবী পাককে সেটা দংশন না করে)। হুযূরের (দ.) প্রতি উৎসর্গ হয়েছিলেন। যদি নিজের জন্যে দুঃখ থাকতো, তবে হুযূরকে (দ.) কাঁধের উপর উঠিয়ে এগারো মাইল অতিক্রম করে পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করতেন না। আর একাকী অন্ধকার গুহায় প্রবেশ করতেন না। সাপ দ্বারা নিজেকে দংশন করাতেন না। তাঁর এ দুঃখও ইবাদত ছিলো। বস্তুতঃ তাঁকে হুযূরের (দ.) সান্ত্বনা দেওয়াও ইবাদত। সুতরাং মহান রব/প্রভু ওই দুই মহান ব্যক্তিত্বকে মাকড়সার জাল ও মাদী-কবুতরের ডিম দ্বারা রক্ষা করেছেন। [সূরাহ তওবাহ, ৪০ আয়াত, ১১৩ নং টীকা; নূরুল ইরফান]
এর সাথে আমি আরো যোগ করবো, মক্কার কুফফার প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় ধরার জন্যে ১০০টি উট পুরস্কারস্বরূপ ঘোষণা করেছিলো। হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এই বিষয়ে অবগত ছিলেন এবং তিনি প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্যেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন। দ্বিতীয়তঃ, কোনো এক জিহাদে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তাঁবু রাতে পাহারা দেওয়ার কথা সাহাবা (রা.)-বৃন্দ আলোচনায় আনার সাথে সাথে অতি ক্ষিপ্রতা সহকারে হযরতে আবূ বকর সিদ্দীক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তরবারি হাতে উঠে দাঁড়ান এবং প্রহরাস্থলে অবস্থান নেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-মণ্ডলী তাঁর তেজস্বিতা ও সাহসিকতা দেখে বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়েন। এগুলো ইতিহাসের ঘটনা যা বিভিন্ন বইয়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে। অতএব, কিছু গণ্ডমূর্খ লোকের ফেইসবুক পোষ্টে এ ব্যাপারে কুৎসা রটনা করা হলে সুন্নী মুসলমান সমাজ তাতে বিভ্রান্ত হবেন না।





Users Today : 250
Users Yesterday : 767
This Month : 14672
This Year : 186543
Total Users : 302406
Views Today : 17535
Total views : 3594278