এখানে সে সমস্ত হাদীছের উল্লেখ করা হবে যেগুলি ইলমে-গায়েব এর মাসআলায় পূর্বেই আলোচিত হয়েছে। সে সব হাদীছের মধ্যে হাদীছ নং ৬, ৭, ৮, ও ৯ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সেগুলোর মূল কথা হল সমস্ত জগতকে আমি হাতের তালুর মত স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। আমার উম্মতকে তাদের নিজ নিজ আকৃতিতে আমার নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল, আমি তাদের নাম, তাদের বাপ-দাদাদের নাম, এমন কি তাদের ঘোড়াসমূহের বর্ণ সম্পর্কেও জ্ঞাত ইত্যাদি। এভাবে ওসব হাদীছের ব্যাখ্যায় হদীছবেত্তাগণের যে সব উক্তি পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে, সেগুলো বিশেষ করে মিরকাত যুরকানী ইত্যাদি গ্রন্থের ইবারতসমূহও এখানে বর্ণিত হবে। এ ছাড়া নিম্নে বর্ণিত হাদীছ সমূহও এখানে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
সুবিখ্যাত হদিছ গ্রন্থ মিশকাত শরীফের ইছবাতু আযাবিল কবর শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে
(১) فَيَقُوْ لَانِ مَاكُنْتَ تَقَوْلُ فِىْ هذَا الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ
মুনকার নকীর ফিরিশতাদ্বয় কবরে শাযিত মৃত ব্যাক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন ওনার (মুহা্ম্মদ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে তুমি কি ধারনা পোষন করতে?
হাদিছের সুবিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ আশআতুল লমআত-এ উক্ত হাদীছ
ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- هذَا الرَّجُلِ দ্বারা হুযুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিএ গুণাবলী সও্বার প্রতীই নিদের্শ হয়ে থাকে ।
উক্ত ব্যাখ্যায় গ্রন্থে এ হদীছের ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়েছেঃ কিংবা কবরের মধ্যে হুযুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র সত্ত্বাকে দৃশ্যতঃ উদ্ভাসিত করা হয়। এটা এভাবেই হয় যে কবরে তার জিসমে মিছালীকে উপস্থাপন করা হয়। এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম এর দিদারে প্রত্যাশী চিন্তীত ব্যাক্তিবর্গের জন্য এটাই শুভ সংবাদ যে তারা যদি এ প্রত্যাশিত সাক্ষাতের আশায় প্রাণ বির্সজন দিয়ে কবরে চলে যান তাহলে তাদেরও এ সুযোগ রয়েছে ।
মিশকাত শরীফের হাশিয়ায় সে একই হাদিছের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে-
قِيْلَ يُكْشَفُ لِلْمَيِّتِ حَتَّى يَرَى النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَهِىَ بُشْرَى عَظِيْمَةٌ
বলা হয়েছে মৃত ব্যাক্তির দৃষ্টি থেকে আবরণ উঠিয়ে নেয়া হয়, যার ফলে সে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে দেখতে পায়। এটা তার জন্য বড়ই শুভ সংবাদ ।
সুপ্রসিদ্ধ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় গ্রন্থ কুসতলানীর ৩য় খন্ডে ৩৯০ পৃষ্টায় কিতাবুল জানায়েযে বর্নিত আছেঃ
فَقِيْلَ يُكْشَفُ لِلْمَيِّتِ حَتَّى يَرىَ النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ وَهِىَ بَشْرَى عَظِيْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِ اِنْ صَحَّ
অর্থাৎ এও বলা হয়েছে যে মৃত ব্যক্তির দৃষ্টির আবরণ অপসারণ করা হয় যার দরুণ সে নবী আলাইহিস সালামকে দেখতে পায়। এটি মুসলমানদের জন্য বড় সুখের বিষয় যদি সে সঠিক পথে থাকে।
কেউ কেউ উক্ত হাদীছে উল্লেখিত هذَا الرَّجُلِ (এ ব্যক্তি) বলে হৃদয় ফলকে অংকিত হুযুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানসিক প্রতিচ্ছবির প্রতি ইঙ্গিত করা হয় বলে মত পোষন করেন। অথাৎ মৃত ব্যাক্তিকে ফিরিশতাগন জিজ্ঞাসা করেনঃ তোমরা অন্তরে যে মহান সও্বার প্রতিচ্ছবির বিদ্যমান রয়েছে, তার সর্ম্পকে তুমি কি ধারনা পোষন করতে? কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয়। কেননা সেক্ষেত্রে মৃত কাফীর ব্যাক্তিকে এ প্রশ্ন করান যৌক্তিকতা কোনরূপ থাকেনা। কারণ, কাফিরের অন্তরে হুযুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কোনরূপ ধারনা থাকার কথা নয়। অধিকন্তু, তা যদি হত মৃত কাফিরের সে প্রশ্নরে উত্তরে বলত না আমি জানি না বরং বলত আপনারা কার কথা জিজ্ঞাসা করছেন? উওরে তার لَااَدْرِىْ আমি জনি না (বলার ব্যাপারে) থেকে জানা যায় যে সেও হুজুর আলাইহিস সালাম স্বচক্ষে দেখে তবে চিনতে বা পরিচয় করতে পারে না। সুতরাং উক্ত প্রশ্নে মানসিক কোন প্রতিচ্ছবির কথা জিজ্ঞাসা করা হয় না বরং প্রকাশ্যে বিরাজমান সেই মহান সও্বার প্রতি ইঙ্গিত করেই প্রশ্ন করা হয়।
এ হাদিছও সংশ্লিষ্ট উদ্বৃতিসমূহ থেকে জানা যায় যে কবরের মধ্যে হুযুর আলাইহিস সালামের দিদার লাভের সু-বন্দোবস্ত করেই আলোচ্য প্রশ্নের অবতারনা করা হয়। এ শামসুদ্দোহা বদরুদ্দুজা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিনি তোমার সামনেই দৃশ্যমান আছেন তার সম্পর্কে তোমার কি মত? هذَا (এই) সর্বনাম দ্বারা নিকটবর্তী ব্যাক্তি বা বস্তুর প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়ে থাকে । এতে বোঝা যায় হুজুর আলাইহিস সালামকে দেখিয়ে ও নিকটে উপস্থাপন করেই উক্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়। এজন্য সুফিয়ানে কিরামও আশেকানগন মৃত্যুর প্রত্যাশা করে থাকেন ও কবরের প্রথম রজনীকে বরের সঙ্গে প্রত্যাশিত সাক্ষাতের রাত রূপে গণ্য করেন। যেমন আলা হযরত (রহঃ) বলেন- প্রানতো চলে যাবেই। এ প্রান যাবার ব্যাপারটি হচ্ছে কিয়ামত। তবুও সুখের বিষয় যে এরপর প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাক্ষাত লাভের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করার সুবন্দোস্ত রয়েছে । মৌলানা আসী বলেন- কবরে গমনের প্রথম রাতে কাফন পরিহিত অবস্থায় এজন্য গর্ববোধ করব যে, যে ফুলের (প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সন্নিধ্য লাভের সারাজীবন প্রত্যাশী হয়ে আসছি আজ রাতই হচ্ছে সে মহান সে ফুলের সংস্পর্শ আমার প্রকৃষ্ট সময়।
আমি আমার রচিত দিওয়ানে সালেক কাব্য গ্রন্থে লিখেছি-
কবরে প্রথম রাত হচ্ছে মহান রবের (প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দর্শন লাভের সৌভাগ্য রজনী। একজন আশেক এর জন্য ঈদের আনন্দও এ রাত্রির অপুর্র আনন্দের কাছে মূল্যহীন। এ রাতেই প্রিয়জনের সান্নিধ্য লাভের অনাস্বাদিত সুখানুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না।
এজন্যই বুযুর্গানে দ্বীনের পরলোক গমনের দিনকে বলা হয় উরসের দিন। উরস শব্দের অর্থ শাদী বা আনন্দ। ঐ দিনই হচ্ছে দু’জাহানের দুলহা উরস হুযুর আলাইহিস সালামের দর্শন লাভের দিন।
লক্ষ্যণীয় যে একই সময় হাজার হাজার মৃত ব্যাক্তির লাশ দফন করা হয়ে থাকে । হুজুর আলাইহিস সালাম যদি হাযির-নাযির না হন তাহলে, তিনি প্রতিটি কবরে উপস্থীত থাকেন কি রূপে? অতএব প্রমানিত হল যে, আমাদের দৃষ্টির উপরই আবরন বা পর্দা রয়েছে ফিরিশতাগন এ পর্দা অপসারন করে দেন। যেমন কেউ দিনে তাবুর মধ্যে অবস্থান করেছে বিধায় সূর্য তার দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না, এমন সময় কেউ এসে উপর থেকে তাবু হটিয়ে তাকে সূর্য দেখিয়ে দিল।
২) মিশকমাত শরীফের التحريص على قيام الليل শীর্ষক অধ্যায়ে বর্নিত আছেঃ
اِسْتَيْقَظَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةً فَزِعًا يَقُوْلُ سُبْحَنَ اللهِ مَاذَا اُنْزِلَ اللَّيْلَةَ مِنَ الْخَزَ ائِنِ وَمَا ذَااُنْزِلَ مِنَ الْفِينِ
[এক রাতে হুযুর আলাইহিস সালাম ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় ঘুম থেকে জাগরিত বিস্ময়াবিভূত হয়ে বলতে লাগলেন সুবহানাল্লাহ আজ রাত কতই না ঐশ্বর্য সম্ভার ও ফিতনা (বালা মুসিবত ইত্যাদি) অবতীর্ণ করো হলো!] এ থেকে জানা যায় যে ভবিষ্যতে যে সব ফিতনা আত্নপ্রকাশ করবে সেগুলো তিনি স্বচক্ষে অবলোকন করেছিলেন।
৩) মিশকাত শরীফের المعجزات শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত আনাস (রহঃ) থেকে বর্নিত আছেঃ
نَعَى الَّنَبِىُّ عَلَيْهِ السَّلَامُ زَيْدًاوَجَعْفَرَ وَاِبْنَ رَوَاحَةَ لِنَّاسِ قَبْلَ اَنْ يَّا تِبَهُمْ خَبْرُ هُمْ فَقَالَ اَخَذُ الرَّايَةَ زَيْدٌفَاُصِيْبُ ( اِلَى) حَتَّى اَخَذَ الرّايَةَ سَيْقٌ مِنْ سُيُوْ اللهِ يَعْنِىْ خَالِدَابْنَ الْوَلِيْدِ حَتَّى فَتَحَ اللهُ عَلَيْهِمْ
হযরত যায়েদ জাফর ও ইবন রওয়াহা (রিদওয়ানুল্লাহে আলাহীম আজমায়ীন) প্রমুখ সাহাবীগনের শাহাদত বরনের সংবাদ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আসার আগেই হুযুর আলইহিস সালাম মদীসার লোকদেরকে উক্ত সাহাবীগণের শহীদ হওয়ার কথা জানিয়ে দেন। তিনি বলেনঃ পতাকা এখন হযরত যায়দের (রাঃ) হাতে, তিনি শহীদ হয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর তলোয়ার উপাধিতে ভূষিত সাহাবী হযরত খালেদ বিন ওয়ালীদ (রাঃ) ঝান্ডা হাতে নিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তাকে জয় যুক্ত করলেন ।
এতে বোঝা গেল মদীনা থেকে অনেক দূরে অবস্থিত যুদ্ধ ক্ষেত্র বে’রে মাউনা’য় যা কিছু হচ্ছিল, হুযুর আলাইহিস সালাম তা সুদূর মদীনা থেকে অবলোকন করছিলেন।
(৪) মিশকাত শরীফের ২য় খন্ডের الكرامات অধ্যায়ের পরে وفاة النبى عليه السلام শীর্ষক অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে- তোমাদের সঙ্গে আমার পুনরায় সাক্ষাতকারের জায়গা হল হাউজে কাউছারের যা আমি এখান থেকেই দেখতে পাচ্ছি ।
(৫) মিশকাত শরীফের تسوية الصف শিরোনামের অধ্যায়ে বর্নিত আছেঃ
اَقِيْمُوْا صُفُوْ فَكُمْ فَاِنِّىْ اَرَاكُمْ مِنْ وَّرَاِئْ
নামাযে তোমাদের কাতার সোজা রাখ; জেনে রাখ, আমি তোমাদেরকে পিছনের দিক থেকেও দেখতে পাই ।
(৬) সুপ্রসিদ্ধ হাদীছের গ্রন্থ তিরমিযী শরীফ ২য় খন্ডে ‘বাবুল ইলম‘ এর অন্তর্ভুক্ত مَاجَاءَ فِىْ ذَهَابِ الْعِلْمِ শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে।
كُنَّا مَعَ النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَشَخَصَ ببَصَرِه اِلى سَّمَاءِ ثُمَّ قَالَ هذَا اَوَانٌ يُخْتَلَسُ الْعِلْمُ مِنَ النَّاسِ حَتَّى لَاَ يَقْدِرُوْا مِنْهُ عَلى شَيْئٍ
[একদা আমরা হুজুর আলাইহিস সালামের সাথেই ছিলাম। তিনি আসমানের দিকে দৃষ্টি করে বললেনঃ ইহাই সে সময়, যখন জনগণ থেকে জ্ঞান ছিনিয়ে নেয়া হবে। শেষ পর্যন্ত তারা এ জ্ঞানের কিছুই ধারনা করতে পারবে না।]
এ হাদিছের ব্যাখ্যায় হদীছের সুবিখ্যাত ভাষ্যকার মোল্লা আলী কারী (রহঃ) তাঁর বিরচিত মিরকাত এর কিতাবুল ইলম এ বলেছেনঃ
فَكَاَنَّهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ لَمَّا نَظَرَ اِلَى السَّمَءِ كُوْشِفَ بِاِقْتِرَابِ اَجَلِه فَاَخْبَرَ بِذَالِكَ
হুযুর আলাইহিস সালাম যখন আসমানের দিকে তাকালেন, তখন তার নিকট প্রকাশ পায় যে তাঁর পরলোক গমনের সময় ঘনিয়ে আসছে। তখনই তিনি সে সংবাদ দিয়েদিলেন।
(৭) মিশকাত শরীফের বাবুল ফিতান এর প্রারম্ভে প্রথম পরিচ্ছেদে বর্নিত আছেঃ হুযুর আলাইহিস সালাম একদা মদীনা মুনাওয়ারার এক পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে সাহবায়ে কেরামকে জিজ্ঞাসা করলেন আমি যা দেখতে পাচ্ছি তোমরা ও কি দেখতে। করলেনঃ জি‘না। তখন তিনি ইরশাদ করেন-
فَاِنِّيْ اَرَى الْفِتنَ تَقَعُ خِلَالَ بُيُوْ تِكُمْ كَوَ قْعِ الْمَطَرِ
[অর্থাৎ আমি তোমাদের বাড়িতে ফিতনাসমূহ একটির পর একটি বৃষ্টিরমত পতিত হতে দেখতে পাচ্ছি।]
বোঝা গেল যে, কুখ্যাত ইয়াজিদ ও হাজ্জাজের শাসনামলে তথা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম এর অফাত এর পরে যে সব ফিতনা-ফ্যাসাদ সংঘটিত হবার ছিল সেগুলো তিনি অবলোকন করছিলেন। এগুলিই একটির পর একটি আত্নপ্রকাশ করতে দেখতে পাচ্ছিলেন।
উল্লেখিত হাদিছ সমূহ এর আলোকেই এ কথাই জানা গেল যে হুযুর আলাইহিস সালাম তার সত্যদর্শী দৃষ্টিতে ভবিষ্যতের ঘটনাবলী দূরের ও নিকটের যাবতীয় অবস্থা, হাউজে কাউছার, বেহেশত-দোযখ, অবলোকন করেন। তারই বদৌলতে তার ভক্ত ও অনুরক্ত খাদিমগণকেও আল্লাহ তআলা এ শক্তি ও জ্ঞান দান করে থাকেন ।
(৮) মিশকাত শরীফের ২য় খন্ডের باب الكرامات শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছেঃ হযরত উমর (রাঃ) হযরত সারিয়া (রাঃ) কে এক সেনা বাহিনীর অধীনায়ক নিযুক্ত করে নেহাওয়ানন্দ নামক স্থানে পাঠিয়েছিলেন। এর পর একদিন হযরত উমর ফারুক (রাঃ) মদীনা মুনাওয়ারায় খুতবা পাঠের সময় চিৎকার করে উঠলেন । হাদীছের শব্দগুলো হলঃ
فَبَيْنَمَا عُمَرَيَخْبُطُ فَجَعَلَ يَصِيْخُ يَا سَارِيَةُ الْجَبَلَ
অর্থাৎ হযরত উমর (রাঃ) মদীনা মুনাওয়ারায় খুতবা পড়ার সময় চীৎকার করে বলে উঠলেন ওহে সারিয়া! পাহাড়ের দিকে পিঠ দাও ।
বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর উক্ত সেনাবাহিনী থেকে বার্তা বাহক এসে জানানঃ আমাদিগকে শত্রুরা প্রায় পরাস্ত করে ফেলেছিল । এমন সময় কোন এক আহবানকারীর ডাক শুনতে পেলাম। উক্ত অদৃশ্য আহবানকারী বলছিলেনঃ সারিয়া! পাহাড়ের শরণাপন্ন হও। তখন আমরা পাহাড়কে পিঠের পেছনে রেখে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলাম। এরপর আল্লাহ আমাদের সহায় হলেন, ওদেরকে পর্যুদস্ত করে দিলেন ।
(৯) ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) তাঁর রচিত ফিকহে আকবর গ্রন্থে ও আল্লামা জালালুদ্দীন সয়ুতী (রহঃ) জামেউল কবীর গ্রন্থে হযরত হারিছ ইবনে নুমান (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন একবার আমি (হারিছ) হুযুর আলাইহিস সালামের খিদমতে উপস্থিত হই। সরকারে দুজাহান আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন হে হারিছ! তুমি কোন অবস্থায় আজকের এ দিনটিকে পেয়েছ? আরয করলামঃ খাটি মুমিন। পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার ঈমানেব স্বরূপ কি? আরয করলাম-
وَكَاَنِّىْ اَنْظُلُرُ اِلَى عَرْشِ رَبِّىْ بَارِزًا وَكَاَ نِّىْ اَنْظُرُ اِلَى اَهْلِ الْجَنَّةِ يَتَظَاوَرُوْنَ فِيْهَا وَكَاَنِّىْ اَنْظُرُ اِلَى اَهْلِ النَّرِ يَتَضَا عَوْ نَ فِيْهَا
অথাৎ আমি যেন খোদার আরশকে প্রকাশ্যে দেখছিলাম। জান্নাতাবাসীদেরকে পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাত করতে এবং দোযখবাসীদেরকে অসহনীয় যন্ত্রণা হট্টগোল করতে দেখতে পাচ্ছিলাম।
এ কাহিনীটি প্রসিদ্ধ মছবী শরীফেও সুন্দর ভাবে বিধৃত হয়েছেঃ- হযরত হারিছ (রাঃ) বলছিলেন- আমার দৃষ্টির সামনে আটটি বেহেশত ও সাতটি দোযখ এমন ভাবে উদ্ভাসিত যেমন- হিন্দুদের সামনে তাদের প্রতিমা বিদ্যমান রয়েছে। সৃষ্টির প্রত্যেক ব্যক্তিও প্রত্যেকটি বস্তুকে এমন ভাবে চিনতে পারছিলাম যেমন- গম চুর্ণ করার সনাতন চাক্কীর মধ্যে গম ও যবকে স্পষ্টরূপে চিনা যায় । জান্নাতবাসী দোযখবাসী মাছ ও পিঁপড়ার মত স্পষ্ট রূপে আমার সামনে উদ্ভাসিত ছিল ইয়া রসুলুল্লাহ! এখানে ক্ষান্ত হব না আরো কিছু বলব? হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম) তার মুখ চেপে ধরে বললেন, আর কিছু বলার দরকার নেই।
এখান লক্ষ্যনীয় যে, সূর্যের পরমানু সদৃশ সাহাবীগনের দৃষ্টি শক্তির এ অবস্থা যে, বেহেশত-দোযখ, আরশ-পাতালপুরী, জান্নতবাসী ও দোযখবাসীকে স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছেন, তাহলে দু-জাহানের সূর্য সদৃশ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দৃষ্টিশক্তি সম্পর্কে কোন আপত্তি তোলার অবকাশ আছে কি? -সুত্রঃ জাআল হক ১ম খন্ড-