বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু’র ফজিলত(সংক্ষেপে)
আল্লাহ’র নিমিত্তে সকল প্রশংসা যিনি মহান,সকল দরুদ রসুলুল্লাহর,আল্লাহ বাড়িয়েছেন যার সম্মান।
পুর্বে আমার লিখিত “আমীরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু’র প্রতি বিরুপ মন্তব্য ও গালিগালাজ কারিদের প্রসঙ্গে সকল ওলামাদের ধারণা” নামক ফাতওয়াটি প্রকাশিত হবার পর অনেকেই এই মহান সম্নাণিত সাহাবার শান কোরান হাদিসে কিরুপ ভাবে বর্ণিত হয়েছে তা লেখার জন্য আবেদন করেছেন।যদিও হযরত মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু শান কোরান ও হাদিসের আলোকে পুস্তাকারে “হযরত আমীরে মোয়াবীয়া সাহাবী”প্রকাশিত হয়েছে,তথাপি সংক্ষেপে অল্প কয়েকটি এখানে বর্ণনা করা হল।
এক দিকে তিনি যেমন প্রথম সারীর সাহাবাদের মধ্যে ছিলেন,অপর দিকে হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলায় হে ওয়া সাল্লাম এর উপর নাযিল কৃত ওহী লিপিবদ্ধ করে ইসলামের মধ্যে সুমহান মযার্দা লাভ করে আছেন।
হযরত মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু’র ফজিলতঃ-(কুরআন শরীফ হতে)
১)সুরা হাদিদ ,আয়াত নং ১০- ‘লা ইয়াস্ তাবী মিন কুম…..তামালুনা খাবীর’ অর্থঃ-তোমাদের মধ্যে সমান নয় ওই সকল লোকেরা(সাহাবীগণ)যারা মক্কা বিজয়ের পুর্বে ব্যয় ও জেহাদ করেছে এবং তাঁরা মযাদায় ওই সকল লোকেদের(সাহাবী)চেয়ে উত্তম যারা বিজয়ের পর ব্যয় ও জেহাদ করেছে এবং তাদের সবার সাথে আল্লাহ জান্নাতের ওয়াদা করেছেন।
এই আয়াতটি হযরত মুয়াবিয়া সহ ওই সকল সাহাবীদের শানে নাযিল হয়েছে যারা মক্কা বিজয়ের পুর্বে ও পরে ইসলামের পথে ব্যয় ও জেহাদ করেছেন এবং এরা সকলেই হলেন জান্নাতি।(হযরত মুয়াবিয়া হুনাইনের যুদ্ধে হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলায় হে ওয়া সাল্লামের সহিত অংশ গ্রহন করেছিলেন)
২) সুরা তাওবা,আয়াত নং ১১৭,’লাক্বাদ তা’বাল্লাহু আলান নবীই ই—-র উফুর রহিম’ অর্থঃ আল্লাহর রহমত সমুহ ধাবিত হল নবীর এবং মুহাজির ও আনসারের প্রতি যারা সংকট কালে হুজুর পাকের সংগে ছিল।
হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু হলেন ওই মহান সাহাবী যিনি ‘গযওয়া এ তাবুক’ নামক যুদ্ধের সংকট কালে হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম এর সাথে ছিলেন।
(আরোও অনেক কয়েকটি আয়াত যা হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু’র শানে নাযিল হয়েছে,সংক্ষেপের কারনে এখানে শুধু দুটি দেওয়া হল।)
হযরত মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু’র ফজিলতঃ-(হাদিস হতে)
৩)বোখারী শরীফ ২য় খন্ড,হাদিস নং২৯২৪
হযরত উম্মে হারাম বিনতে মুলহান রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন ‘আমি হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি
أول جيش من أمتي يغزون البحر قد أوجبواঅর্থঃ-আমার উম্মতের যে প্রথম সৈন্য দলটি নৌ অভিযানে অংশ নেবে,তারা নিজেদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে নিয়েছে।(the first army of my ummah nation that will invade the sea,all the sins of its solders will be forgiven)
মুহাদ্দিস গণ বলেন এই হাদিসটি হযরত মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু’র শানে বর্ণিত হয়েছে কারন তিনিই হলেন সর্বপ্রথম সেই সাহাবী যার নেত্বত্বে সর্বপ্রথম সৈন্যদল নৌ অভিযানে অংশ গ্রহন করেছিলেন এবং এরা সকলেই হলেন জান্নাতী যার সু সংবাদ হযুর পুর্বেই দিয়ে ছিলেন।(সংক্ষেপের কারণে শুধু একটি হাদিস বোখারী শ রীফ হতে বর্ণিত হল)
৪)তিরমিযী শরীফ ২য় খন্ড ২২৪ পৃঃ,
হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম হযরত মুয়াবিয়ার জন্য দোওয়া ক রেছিলেন اللهم اجعله هادياً مهدياً واهد به হে আল্লাহ মুয়াবিয়া(রাদিয়াল্লাহু আনহু)কে হাদি(হেদায়াতকারী)ও মাহদী(হেদায়াত প্রাপ্ত)বানিয়ে দাও এবং তার মাধ্যমে মানুষ কে হেদায়াত প্রদান কর।“O Allah!Make him a guide,guided(to right path ),and guide (others)through him”
৫)ইমাম আহমদ ‘ফাদায়েলু সাহাবা’ একটি হাদিসের মধ্যে উল্ল্যেখ করেছেন হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম বলেন اللهم علم معاوية الكتاب والحساب وقه العذاب হে আল্লাহ মুয়াবিয়াকে কেতাব(কোরান)ও হেসাবের জ্ঞান দান করো এবং তাকে আযাব থেকে রক্ষা করো।“O Allah !Teach Muaviya the book(holy Quran)and math,and protect him from punishment”
৬)মুসান্নাফ ইবনে আব্দির রাযযাক হাদিস নং ২০৮৫,আল বেদায়া৮ম খন্ড১৩৫পৃঃ,আল ইসাবাহ ৩য় খন্ড ৪১৩ পৃঃ
হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু’র জ্ঞান,প্রজ্ঞা এবং তাকওয়া ও ধার্মিক তা সর্ম্পকে সাহাবী’য়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু’র মন্তব্য হল ‘শাসন ক্ষমতার জন্য মুয়াবিয়ার চেয়ে উপযুক্ত কেউ আমার নজরে পড়েনি।
৭)তারিখুল ইসলাম গ্রন্থ আল্লামা হাফেয যাহবী একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন হযুর পাক হযরত মুয়াবিয়ার জন্য দোওয়া করেছিলেন ‘হে আল্লাহ মুয়াবিয়ার সিনাকে জ্ঞান দারা পুর্ণ করে দাও’।
এ সকল ছাড়াও যে সকল হাদিস গ্রন্থে হযরত মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু’র শান বর্ণিত হয়েছে তার মধ্যে মুসলিমশরীফ,মিশকাতশরীফ,আলবেদায়া,ইবনেখালদুন,আলবেদায়া অ নেহায়া প্রভূতি অন্যতম।
بسم الله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه أجمعين
হযরত আমীরে মো’আবিয়া রাদীয়াল্লাহু আনহু’র প্রতি বিরুপ মন্তব্য (গালি গালাজ,সাহাবী নয় প্রভুতি ধারনা) পোষন কারীর প্রতি ওলামায়ে কেরামগনের মন্তব্য –
আমীরে মোআবিয়া’র শানে গুস্তাখ বা বিরুপ মন্তব্যকারি প্রসঙ্গে সকল ওলামা যেমন ওলামায়ে সলফ(আগের),ওলামায়ে খলফ(পরের),আরব,মিসর তথা সমগ্র আরব বিশ্বের ওলামা’য়ে কেরাম ফতোয়া দিয়েছেন যে ‘গুস্তাখ রা অবশ্যই ইসলাম বর্হিভুত তাদের জন্য শাস্তি অপরিহার্য’ তাদের কে মজলিস হতে বিতারিত করা প্রয়োজন।
নিম্নে বিভিন্ন ওলামায়ে কেরামদের মন্তব্য তুলে ধরা হলঃ-
১**ইবনে আসাকির ‘তারিখে দামাস্ক’কেতাবের ৫৯ খন্ডের ২১১ পৃষ্ঠায়,আজ রা ‘কেতাবু-শ শরীয়া’৫ম খন্ড ২৪৬৭ পৃষ্ঠায়
. فقال : على أولئك الذين يلعنون لعنة اللهيشتمون يلعنون معاوية قوماً قيل للحسن : يا أبا سعيد , إن
হযরত হাসান কে বলা হল যে হে আবু সাইদ একদল লোক রয়েছে যারা হযরত মো’আবিয়া কে গালিগুলুজ করে ও অভিশাপ দেয়,তখন হযরত হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু বল্লেন যারা এরুপ করে তাদের উপর আল্লাহর লানাত বর্ষিত হয়।
২**ইবনে আসাকির ‘তারিখে দামাস্ক’এর ৫৯ খন্ড ২১১ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন ‘আব্দুল্লাহ বিন মোবারক বলেছেন আমাদের মধ্যে যদি কেউ আমীরে মো’আবিয়া র দিকে বক্রভাবে তাকাই অথবা কু-কথা বলি তা হলে অব্যশই সাহাবার শানে বে আদবী করা হবে,আর সাহাবাদের শানে যারা গুস্তাখি করল তারা জাহান্নামী।
৩**কাজী আইয়াদ ‘আশ শেফা ফি হুকুকিল মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলায় হে অ সাল্লাম’২য় খন্ড ৪৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন
« قال مالك رحمه من شتم أحداً من أصحاب النبي أبا بكر أو عمر أو عثمان أو علي أو معاوية
أو عمرو بن العاص فإن قال : كانوا على ضلال وكفر
হযরত মালিক এর মতে যদি কেহ সাহাবী’য়ে রসুলদের মধ্যে, যেমন হয রত আবুবকর,হযরত ওমর,হযরত ওসমান,হযরত আলি,হযরত মো’আবিয়া ও ওমর বিন আস প্রমুখদের গালি দেয় ,সে গোমরাহ ও কুফরের মধ্যে।
৪**ইবনে আসাকির ‘তারিখ দামাস্ক’৫৯ খন্ড ২১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন ‘মুহাম্মদ বিন মুসলিম তিনি ইব্রাহিম বিন মসিরাহ হতে শুনেছেন-আমি হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয কে দেখেছি তিনি বেতের প্রহার এক মাত্র তাদের কেই করতেন যারা হযরত মো’আবিয়া রাদিয়াল্লাহুর শানে বে’আদবী করত।
৫**খেলাল ‘আস-সুন্নাহ’২য় খন্ড ৪৩৪ ও ৬৫৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন আবি আব্দুল্লাহ’কে জিজ্ঞাসা করা হল ওই সকল লোকেদের সর্ম্পকে যারা বলে ‘আমরা মো’আবিয়া কে কাতিবে ওহী ও মোমিনের মামা
বলে মানি না,প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন
هذا قول سوء رديء ، يجانبون هؤلاء القوم ولا يجالسون .
এটা খুবই খারাপ ধারনা,এই সকল লোকেদের বিতারিত করা ও এদেরকে বয়কট অপরিহার্য
৬**ইমাম নেসাপুরী’র ‘ফি মাসাইলে ইবনে হানি আন-নেসাপুরি’১ম খন্ড৬০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন যারা আমীরে মো’আবিয়ার শানে কটু কথা বলে لا يصلى خلفه ولا كرامةনা তাদের পিছুনে নামায জায়েয না তাদের প্রতি সন্মান প্রদর্শন
৭**ইবনে তইমিয়ার ‘মজমুউল ফাতোয়া’৩৫ খন্ড৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,যারা হযরত মো’আবিয়ার প্রতি লানত এর ধারনা রাখে তাদের প্রতি রায় প্রসঙ্গে ইবনে তইমিয়াকে জিজ্ঞাসা করা হলে প্রত্যুত্তরে বলেন
যারা সাহাবাদের মধ্যে কোন একজন কে যেমন মো’আবিয়া বিন আবু সুফিয়ান,ওমর বিন আস প্রমুখদের গালী দিল فإنه يستحق للعقوبة البليغة باتفاق أئمة الدين অবশ্যই সে শাস্তির যোগ্য ।আর এটাই হল সকল ওলামাদের রায়।
৮** ‘আস সুন্নাহ’২য় খন্ড৪৪৮পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে ‘হযরত আব্দুল্লা কে কোন এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন হে আব্দুল্লাহ আমার এক মামা আছে যে হযরত মো’আবিয়ার শানে গুস্তাখি করে,তার সহিত কি খাওয়া দাওয়া চলবে প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন তার সহিত খাওয়া দাওয়া করা হারাম।
এ সকল ছাড়াও আর ও বহু পুস্তক যেমন الإستيعاب 671,البداية والنهاية 8/139,طبقات الحنابلة 1/285 প্রভুতিতে ও অনুরুপ উক্তি করা হয়েছে।
উপরি উক্ত আলোচনার দারা পরিষ্কার হযরত মো’আবিয়া রাদিয়াল্লাহু শানে গুস্তাখী শরীয়ত বিরোধী কাজ।
অতএব ওই সকল ভাইদের প্রতি যারা হযরত মো’আবিয়ার প্রতি কু-মন্তব্য করেন কর জোড়ে আবেদন তারা যেন এরুপ হতে বিরত থাকেন এবং তওবা করেন।