এই সুরার অবতরণস্থল ও মহাপুণ্যতীর্থ মদীনা। এর মধ্যে আয়াত রয়েছে ৬টি।
সূরা নাসঃ আয়াত ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬
তাফসীরে মাযহারী/৬৪৮
বল, ‘আমি শরণ লইতেছি মানুষের প্রতিপালকের,
‘মানুষের অধিপতির,
‘মানুষের ইলাহের নিকট
আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার ‘অনিষ্ট হইতে,
‘যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে,
‘জিন্নের মধ্য হইতে এবং মানুষের মধ্য হইতে।’
প্রথমে বলা হয়েছে ‘ক্বুল আঊ’জু বি রব্বিন্ নাস’ (বলো আমি শরণ গ্রহণ করছি মানুষের প্রতিপালকের)। এখানে ‘বলো’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে রসুল স.কে। আর এখানে ‘রববিন্ নাস’ অর্থ মানুষের প্রভুপালক। এভাবে বক্তব্যটি দাঁড়ায়জ্জ হে আমার প্রিয়তম রসুল! আপনি আপনার প্রার্থনায় বলুন, মানুষের যিনি স্রষ্টা, পালয়িতা ও ব্যবস্থাপয়িতা, আমি সেই মহান প্রভুপালনকর্তারই শরণ যাচনা করি।
পরের আয়াতে (২) বলা হয়েছেজ্জ ‘মালিকিন নাস’ (মানুষের অধিপতির)। অর্থাৎ সেই প্রভুপালয়িতার কাছেই আমি শরণ প্রার্থনা করি, যিনি মানুষের অস্তিত্বেরও অধিপতি।
এরপরের আয়াতে (৩) বলা হয়েছেজ্জ ‘ইলাহিন্ নাস্’ (মানুষের ইলাহের নিকট)। বাক্যটি আগের বাক্যদু’টোর বিস্তৃতি বা বিবৃতি। অর্থাৎ শরণ কামনা করি আমি সেই প্রভুপালক ও অধিকর্তার নিকট, যিনি একমাত্র উপাস্যও। কেননা পালয়িতা তো বলা হয় মাতা-পিতাকে, অথবা অন্যান্য অভিভাবককেও। আবার অধিপতি বলা হয় রাজা-বাদশাহকেও। কিন্তু উপাস্য তারা কদাচ নন। আল্লাহ্র প্রতিপালকত্ব ও অধিপতিত্ব যে অন্য কারো মতো নয়, সেকথা প্রমাণার্থেই তাই অবশেষে বলা হয়েছে ‘মানুষের উপাস্যের নিকট’। অর্থাৎ তিনি পালনকর্তা ও অধিপতিই কেবল নন, তিনি উপাস্যও।
এখানকার ‘আন্ নাস্’ (মানুষ) পদটির নির্দিষ্টবাচক ‘আলিফ লাম’ সীমিতার্থক। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে সীমিত-সংখ্যকদেরকে। অর্থাৎ রসুল স. ও তাঁর সহচরবৃন্দকে। আল্লাহ্পাকের পালকত্ব, আধিপত্য ও উপাস্য হওয়ার বিষয়টি সার্বজনীন হওয়া সত্ত্বেও এখানে বিশেষভাবে তাঁদেরকে সম্বোধন করার উদ্দেশ্য তাঁদের বিশেষ মর্যাদাকে প্রকাশ করতে। এর আরো একটি কারণ এ-ও হতে পারে যে, এই সুরা দুটো অবতীর্ণই করা হয়েছে রসুল স. এবং তাঁর সহচরবর্গের উপর থেকে যাদুর প্রভাবকে চিরতরে তিরোহিত করা। কেননা পাল্যজনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব বহন করতে হয় পালনকর্তাকেই। গউছুছ্ ছাকালাইন বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী তাই বলেছেনজ্জ
‘যখন তুমিই আমার পৃষ্ঠদেশের আশ্রয়, তখন আমার কাছে কি লাঞ্ছনা-গঞ্জনা আসতে পারে? পৌঁছতে কি পারে আমার কাছে কোনো জুলুম, যখন তুমিই আমার সাহায্যদাতা? চারণভূমির রক্ষাকর্তা যদি তা রক্ষা করতে সমর্থ হয়, আর এদিকে
তাফসীরে মাযহারী/৬৪৯
হারিয়ে যায় উটের পা বাঁধার রশি, তবে কি তার জন্য এটা লজ্জার ব্যাপার নয়? অবিশ্বাসীরাও আল্লাহ্র প্রভুপালকত্ব ও শাসনকর্তৃত্বের অধীন।। তাই তারা তাঁর হেফাজত থেকে বঞ্চিত। একারণেই আহযাব যুদ্ধের সময় রসুল স. তাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আমাদের পালনকর্তা আছেন, তোমাদের কোনো পালনকর্তা নেই।
২ ও ৩ সংখ্যক আয়াতে পুনঃপুনঃ ‘মানুষ’ উল্লেখ না করে সর্বনাম ব্যবহার করলেই যথেষ্ট হতো। কিন্তু তা করা হয়নি ব্যাখ্যাটিকে সুদূরপ্রসারী করণার্থে এবং রসুল স. ও তাঁর একনিষ্ঠ অনুগামীগণের সূউŽচ মাহাত্ম্য প্রকাশার্থে। উল্লেখ্য, সুরা ফালাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দৈহিক দুর্বিপাক থেকে আশ্রয় গ্রহণের, যে দুর্বিপাকে পতিত হতে থাকে মানুষসহ অন্য সকল সৃষ্টি। তাই সেখানে বলা হয়েছে ‘রব্বিল ফালাক্ব’। কিন্তু এখানে আশ্রয় প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে হৃদয়ঘটিত অনিষ্টতা থেকে, যা কেবল মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সেকারণেই এখানে ‘রব’ (প্রভুপালক)কে সম্বন্ধযুক্ত করা হয়েছে মানুষের সাথে। বলা হয়েছে ‘রববিন্ নাস’। এভাবে এখানকার বক্তব্যটি দাঁড়িয়েছেজ্জ মানুষকে প্রবঞ্চনায় নিক্ষেপকারী প্রবৃত্তির প্ররোচনার অনিষ্টতা থেকে আমি শরণ গ্রহণ করছি কেবল আল্লাহ্র, যিনি মানুষের কার্যাবলীর অধিপতি এবং মানুষের একমাত্র উপাস্য।
উল্লেখ্য, এই সূরার ৬টি আয়াতের মধ্যে ৫টিতেই উল্লেখ করা হয়েছে ‘আন্ নাস’ (মানুষ)। সর্বনাম ব্যবহার করা হয়নি একটিতেও। এভাবে এখানে বক্তব্যকে করে তোলা হয়েছে অধিকতর উদ্দেশ্যপূর্ণ ও গুরুত্ববহ, সর্বনাম ব্যবহার করলে যা হতো না। তাছাড়া এখানে প্রতিটি আয়াতের উদ্দেশ্যও পৃথক পৃথক। সর্বনাম ব্যবহার করলে উদ্দেশ্যের এই পৃথকতাও প্রকাশ পেতো না। বক্তব্যটি হয়ে যেতো একমুখী। তাই কোনো কোনো বিদ্বান বলেছেন ১. প্রথমোক্ত ‘আন্ নাস’ অর্থ মানব শিশু, যারা লালন পালনের মুখাপেক্ষী। সেজন্যই বলা হয়েছে ‘রব্বিন্ নাস’ (মানুষের প্রতিপালকের) ২. দ্বিতীয় আয়াতের ‘আন্ নাস’ অর্থ যুবক, যারা যুদ্ধ করে আল্লাহ্র পথে। রাষ্ট্ররক্ষায় তাদের প্রয়োজন অনিবার্য। তাই বলা হয়েছে ‘মালিকিন্ নাস’ (মানুষের অধিপতির) ৩. তৃতীয় আয়াতের ‘আন্ নাস’ অর্থ বয়োপ্রবীণ, যারা পার্থিব কর্মকাণ্ড থেকে অবকাশ পেয়ে নিমগ্ন হয় এক আল্লাহ্র একনিষ্ঠ ইবাদতে। তাই বলা হয়েছে ‘ইলাহিন্ নাস’ (মানুষের ইলাহের নিকট) ৪. পঞ্চম আয়াতের ‘আন্ নাস’ অর্থ পরিশুদ্ধ মানুষ, যারা শয়তানের শত্রু। তাই আশ্রয় কামনা করতে বলা হয়েছে এভাবে ‘মিন শাররিল ওয়াস্ওয়াসিল্ খন্নাস’ (যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে) ৫. ষষ্ঠ আয়াতের ‘আন্ নাস’ অর্থ শয়তান প্রভাবিত মানুষ। অর্থাৎ শয়তান যেমন মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়, তেমনি কুমন্ত্রণা দেয় তার দলভূত মানুষেরাও। তাই তাদের অপপ্রভাব থেকেও আশ্রয় প্রার্থনা করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে এখানে। রসুল স. বলেছেন, যদি অথর্ব বৃদ্ধ, দুগ্ধপোষ্য শিশু ও চারণশীল চতুষ্পদ জন্তু না থাকতো, তাহলে তোমাদের উপরে নেমে আসতো শাস্তি। হজরত আবু হোরায়রা থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আবু
তাফসীরে মাযহারী/৬৫০
ইয়াসা, বাযযার ও বায়হাকী। এর সমর্থনে রয়েছে আরো একটি অপরিণত সূত্রবিশিষ্ট হাদিস, যা জুহুরী সূত্রে বর্ণনা করেছেন আবু নাঈম। আবার এক আয়াতে বলা হয়েছে ‘যদি বিশ্বাসী নর-নারী না থাকতো, যাদেরকে তোমরা জানতেনা ……’ শেষ পর্যন্ত।
বায়যাবী লিখেছেন, আলোচ্য সুরার বাক্যগুলোর গতিধারা থেকে একথাই প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ্পাক পুনরুত্থান ঘটাতে সম্পূর্ণ সক্ষম। আর বাক্যগুলোর ধারাবাহিক বিন্যাস থেকে প্রতীয়মান হয়, মানুষের জন্য মর্যাদার স্তরও রয়েছে অনেক। তবে এমন স্তরের রহস্যভেদ করতে পারেন কেবল তাঁরা, যাঁরা আল্লাহ্র পরিচয়ধন্য। তাঁরা আল্লাহ্র বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অনুগ্রহসম্ভারের প্রতি দৃষ্টিপাত করে অভিভূত হয়ে যান। হৃদয় ও মস্তিষ্ক দিয়ে বুঝতে পারেন, অবশ্যই আল্লাহ্ একমাত্র প্রভুপালয়িতা, যিনি কারোরই মুখাপেক্ষী নন, অথচ সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। সৃষ্টির প্রতিটি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করেন সেই আনুরূপ্যবিহীন আল্লাহ্ই, অন্য কেউ নয়। তিনিই মালিক, মোখতার এবং সর্বাধিপতি। সুতরাং তিনিই সকলের একমাত্র উপাস্য।
এরপরের আয়াতে (৪) বলা হয়েছেজ্জ ‘মিন শাররিল ওয়াস্ওয়াসিল খন্নাস’ (আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট থেকে)। এখানকার ‘আল ওয়াস্ওয়াসি’ নামপদ, অর্থ কুমন্ত্রণা। হ্রস্ব থেকে অতি হ্রস্ব ধ্বনির নাম ‘ওয়াস্ওয়াসা’, যা কেবল হৃদয়ে অনুভব্য, শ্রুতির অতীত। এখানে ‘ওয়াস্ওয়াসা’ বলে বুঝানো হয়েছে শয়তানের সেরূপ সূক্ষ্ম কুমন্ত্রণাকে। অথবা বলা যায়, আধিক্য বুঝানোর জন্যই এখানে ধাতুমূলকে ব্যবহার করা হয়েছে কর্তৃবাচক শব্দরূপের স্থলে। কিংবা এখানে সম্বন্ধপদ রয়েছে অনুক্ত। অর্থাৎ কুমন্ত্রণা প্রক্ষেপণকারী। এরকম বলেছেন জুজায।
এখানকার ‘আল খন্নাস’ (আত্মগোপনকারী) শব্দটি ‘আল ওয়াস্ওয়াসা’ (কুমন্ত্রণা) এর বিশেষণ। শব্দটির ধাতুমূল ‘খনসুন’ বা ‘খুনসুন’ অর্থ চুপিসারে পশ্চাদপসরণ করা। এটাই শয়তানের রীতি। যখন আল্লাহ্র জিকির করা হয়, তখন সে চুপিসারে পিছনে হটে যায়। এ জন্যই তাকে এখানে বলা হয়েছে ‘আত্মগোপনকারী’। হজরত আবদুল্লাহ্ ইবনে শাকীক বর্ণনা করেছেন, রসুল স. বলেছেন, মানুষের হৃদয়ে আছে দুইটি কুঠরীজ্জ একটিতে থাকে ফেরেশতা, অপরটিতে শয়তান। মানুষ যখন আল্লাহ্র জিকিরে মগ্ন হয়, তখন শয়তান পিছনে সরে যায়। আর যখন মানুষ জিকির থেকে উদাসীন থাকে, তখন সে তার ঠোঁট দিয়ে হৃদয়ে ঠোকর মারতে থাকে। এভাবে হৃদয়ে প্রক্ষেপ করে প্ররোচনা। আবু ইয়ালা।।
এরপরের আয়াতে (৫) বলা হয়েছেজ্জ ‘আল্ লাজী ইউওয়াস্উইসু ফী সুদূরিন্ নাস’ (যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে)। একথার অর্থজ্জ মানুষ যখন আল্লাহ্র স্মরণচ্যুত হয়, তখন শয়তান তার অন্তরে দেয় কুমন্ত্রণা। এভাবে এখানে বিবৃত হয়েছে ‘ওয়াস্ওয়াসা’ পদের দ্বিতীয় বিশেষণ।।
তাফসীরে মাযহারী/৬৫১
শেষোক্ত আয়াতে বলা হয়েছে ‘মিনাল জ্বিন্নাতি ওয়ান্ নাস’ (জ্বিনের মধ্য থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকে)। এই বাক্যটিও ‘ওয়াস্ওয়াসা’র বিবরণ, অথবা বিবরণ ‘আল্ লাজী’র। অর্থাৎ কুমন্ত্রণাদাতা জ্বিনের মধ্য থেকে যেমন হয়, তেমনি হয় মানুষের মধ্য থেকেও। যেমন এক আয়াতে বলা হয়েছে ‘আমি মানুষ শয়তান ও জ্বিন শয়তানকে প্রত্যেক নবীর জন্য শত্রু বানিয়ে দিয়েছি’। সারকথা হচ্ছে, আলোচ্য সুরার মাধ্যমে আল্লাহ্ তাঁর প্রিয়তম রসুল এবং তাঁর অনুগামীগণকে জ্বিন ও মানুষের অনিষ্টতা থেকে আত্মরক্ষার নিমিত্তে আল্লাহ্ সকাশে আশ্রয় যাচনা করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
একটি সংশয়ঃ একজন মানুষ আর এক জন মানুষের হৃদয়ে তো প্রবেশ করতে পারে না। তাহলে মানুষ কুমন্ত্রণাদাতা, এরকম বলার অর্থ কী?
সংশয়ভঞ্জনঃ মানুষও কুমন্ত্রণাদাতা। তবে তাদের কুমন্ত্রণা প্রভাব বিস্তার করে পরিবেশ-পরিসি’তি অনুসারে। মানুষের কথা অন্য মানুষের হৃদয়ে প্রভাব বিস্তার করেই। তখন হৃদয়ে কার্যকর হয় কুমন্ত্রণা। অথবা এখানকার ‘মিনাল জ্বিন্নাতি ওয়ান নাস’ কথাটি সম্পৃক্ত হবে আগের আয়াতের ‘ওয়াস্ওয়াসা’ পদের সাথে। অর্থাৎ মানুষের মনের ভিতর জ্বিন ও মানুষ বিভিন্ন কার্যোপলক্ষে কুমন্ত্রণা সৃষ্টি করে। কালাবী বলেছেন, আগের আয়াতের ‘কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে’ কথাটিতে যে মানুষ উদ্দেশ্য ‘জ্বিনের মধ্য থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকে’ বাক্যে দেওয়া হয়েছে তারই পরিচয়। যেনো মানুষ জ্বিন ও মানুষ উভয়ের কুমন্ত্রণার ধারক। ‘নাস’ অর্থ আবার জ্বিনও হয়। যেমন এক আয়াতে বলা হয়েছে ‘ওয়া আন্নাহু কানা রিজ্বালুম মিনাল ইনসি ওয়া ইয়াউজুনা বি রিজ্বালিম মিনাল জ্বিননি’। এই আয়াতে রিজ্বালুম মিনাল ইনসি’ (অনেক লোক) বলে বুঝানো হয়েছে জ্বিনদেরকে)। বাগবী লিখেছেন, এক বেদুইন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, একদিন তার সামনে একদল জ্বিন উপসি’ত হলো। সে জিজ্ঞেস করলো, তোমরা কে? তারা বললো, আমরা জ্বিনদের লোক। ফাররার বক্তব্যও এরকম। আবার এরকমও বলা যেতে পারে যে, এখানকার বক্তব্যটি হবেজ্জ আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি জ্বিনজাতীয় শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে এবং মানুষের অনিষ্ট থেকে।
হজরত উকবা ইবনে আমের বর্ণনা করেছেন, রসুল স. একবার বললেন, তোমরা কি জানো, আজ রাতে এমন কিছু অবতীর্ণ হয়েছে, যার মতো ইতোপূর্বে আর অবতীর্ণ হয়নি। শোনো, সদ্য অবতীর্ণ সুরা ফালাক্ব ও সুরা নাস। মুসলিম। আহমদের বর্ণনায় বিষয়টির উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে, রসুল স. একবার বললেন, আমি কি তোমাদের এমন সুরা শিক্ষা দিবো না, যার অনুরূপ কোরআনে, যবুরে এবং ইঞ্জিলে নেই? বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র প্রিয়তম রসুল! অবশ্যই শিক্ষা দিন। তিনি তখন আবৃত্তি করলেন সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক্ব ও সুরা নাস।
তাফসীরে মাযহারী/৬৫২
উম্মতজননী হজরত আয়েশা সিদ্দিকা বর্ণনা করেছেন, রসুল স. শয্যাগ্রহণের সময় সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক্ব ও সুরা নাস পাঠ করে দুই হাত একত্র করে তাতে ফুঁ দিতেন। তারপর দুই হাত দিয়ে মুছে ফেলতেন তাঁর পবিত্র শরীর। মুছতেন মস্তক, মুখমণ্ডল, দেহের উভয় পার্শ্ব, যতদূর হস্ত প্রসারিত করা যায়। এরূপ করতেন তিনি তিনবার। মুসলিম।
হজরত উকবা ইবনে আমের বর্ণনা করেছেন, এক যাত্রায় আমি ছিলাম রসুল স. এর সহগামী। জুহফা এবং আবওয়ার মাঝখানে পথ চলার সময় হঠাৎ শুরু হলো ঝড়। অন্ধকার আমাদেরকে ঢেকে ফেললো। রসুল স. সুরা ফালাক্ব ও সুরা নাস পাঠ করে আল্লাহ্র সাহায্য কামনা করতে লাগলেন। আমাকে বললেন, উকবা! তুমিও এমন করো। আমিও তাঁর অনুসরণ করলাম। ওভাবে কেউ কখনো আল্লাহ্ সকাশে সাহায্যপ্রার্থী হয়নি। আবু দাউদ।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে হাবীব বর্ণনা করেছেন, এক রাতে মুষল ধারায় বৃষ্টি শুরু হলো। চরাচর ঢেকে গেলো ঘোর অন্ধকারে। আমরা রসুল স. এর শরণাপন্ন হলাম। তিনি স. বললেন, বলো। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কী বলবো? তিনি স. বললেন, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক্ব ও সুরা নাস। তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ। যখন খুব বেশী দুর্বল হয়ে পড়লেন, তখন আমিই সুরা দু’টো পাঠ করে তাঁর উপর ফুঁক দিতে লাগলাম। কিন্তু ফুঁক দিতাম তাঁর হাতে, আর তাঁর হাতই বুলিয়ে দিতাম তাঁর পবিত্র শরীরে। বাগবী। তবুও আল্লাহ্র সঙ্গে তাদের কোনো পরিচয়ই নেই তিনি এই হাদিসটি হজরত আনাস থেকেও বর্ণনা করেছেন শব্দটিতে যের যুক্ত করা হয়েছে সে কারণেই এই তিনটি সুরা সকাল-সন্ধ্যায় তিন বার করে পাঠ করলে তোমরা রক্ষা পাবে যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে জননী আয়েশা বর্ণনা করেছেন, রসুল স. যখন অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তখন সুরা ফালাক্ব ও সুরা নাস পাঠ করে তাঁর নিজের উপরে ফুঁক দিতে লাগলেন





Users Today : 253
Users Yesterday : 767
This Month : 14675
This Year : 186546
Total Users : 302409
Views Today : 19732
Total views : 3596475