সিররুল আসরার [তৃতীয় কিস্তি]

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

মূল: গাউছে আজম শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (র.)

ড. এ. এস. এম. ইউসুফ জিলানী

…………………………….

ইলমে জাহের ও ইলমে বাতেন

যে ইলম আমাদেরকে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে দান করা হয়েছে তা দু’প্রকারের। তা হচ্ছে-

১. ইলমে জাহের বা শরীয়তের জ্ঞান। ২. ইলমে বাতিন বা মারিফতের জ্ঞান।

শরীয়তের বিধান আমাদের জাহেরের উপর আর মারিফতের হুকুম বাতেনের উপর কার্যকর হয়। আর এই দুই প্রকার ইলম নাযিল করার উদ্দেশ্য হলো- ইলমে হাকীকতকে পাওয়া। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন-

مَرْجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لا يَبْغِيَانِ

-তিনি দু’টি সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন, যা দেখতে পরস্পর মিলিত আর এ দু’টোর মধ্যে অন্তরায় রয়েছে যে, একটা অপরটাকে অতিক্রম করতে পারে না। [সুরা আর রাহমান,( ৫৫):১৯-২০]

শুধুমাত্র জাহেরী জ্ঞান দ্বারা হাকীকত পর্যন্ত পৌঁছা সম্ভব নয়, আর না লক্ষ্যস্থলে পৌঁছা যায়। (ইবাদতের পূর্ণতার জন্য উভয় প্রকার জ্ঞান থাকা অপরিহার্য, যে- কোন একটা যথেষ্ট নয়।) যেমন, আল্লাহ তা’আলা বলেন-

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ –

আমি জীন ও মানুষকে আমার ইবাদত-বন্দেগীর জন্য সৃষ্টি করেছি।’ [সূরা আযারিয়াত (৫১):৫৬]

এ আয়াতে لِيَعْبُدُونِ মানে হলো ليعرفوني অর্থাৎ তারা আমার পরিচয় লাভের জন্য সচেষ্ট থাকবে। কারণ, যে আল্লাহ তা’আলার মহান সত্তার জ্ঞান রাখে না, সে তাঁর ইবাদত কিভাবে করবে? অন্তরের পরিচ্ছন্নতা ও হৃদয়ের দর্পণ থেকে প্রবৃত্তির তাড়নার মালিন্য ও কদর্যতা দূর করার মাধ্যমে আল্লাহর পরিচিতি অর্জন করা যায়। আর যখন আল্লাহর পরিচয় জ্ঞান লাভ হয়, তখন অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে গুপ্ত ধন-ভাণ্ডার এর জ্যোতি দর্শন সম্ভবপর হয়। যেমন, হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা’আলা বলেন-

كُنتُ كَنرًا مَغخفِيًا فَأَحْبَبْتُ أَنْ أُعْرَفَ فَخَلَقْتُ الخَلْقَ ، لِكَيْ أَعْرِفَ-

আমি গুপ্ত ধন-ভাণ্ডার ছিলাম। আর যখন আমি পরিচিত হওয়ার অভিপ্রায় করলাম তখন মখলুক (বিশ্ব চরাচর) সৃষ্টি করলাম।’ যেন তারা আমার পরিচয় লাভ করে)।

[মোল্লা আলী কারী মিরকাতুল মাফাতীহ, ১:৪৪]

সুতরাং একথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ তা’আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর মা’রিফাত বা পরিচয় অবগত হওয়ার জন্যই।

মারিফাতের প্রকারভেদ

মারিফাত দু’প্রকার। যথা- ১. মারেফাতে জাত বা আল্লাহর সত্তাগত পরিচয়।

২. মারেফাতে সিফাত বা আল্লাহর গুণগত পরিচয়।

মারেফাতে সিফাত বা (গুণগত) মারিফাত হলো ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতের মধ্যে তাঁর আকারহীন অস্তিত্বের প্রকাশ। আর সত্তাগত মারিফাত হল পরজগতে রূহে- কুদসী বা আল্লাহর রূহের পরিচয়ের বিশেষ অংশ লাভ করা। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন-

وَأَيَّدْناَهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ-

আমি তাকে পবিত্র রূহ দ্বারা সাহায্য করেছি। [সূরা বাকারা, ২:২৫৩]

এ দুই ধরণের মারিফাত- মারিফাতে যাতী ও মারিফাতে সিফাতী, দু’প্রকার জ্ঞান ব্যতীত পাওয়া যায় না। তা হল-

১. জাহেরী জ্ঞান ও ২. বাতিনী জ্ঞান। যেগুলোর আলোচনা পূর্বে করা হয়েছে।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী-

الْعِلْمُ عِلْمَانِ : عِلْمٌ عَلَى النِّسَانِ ، فَذَاكَ حُجَّةُ اللَّهِ عَلَى ابْنَ آدَمَ ، وَعِلْمٌ فِي الْقَلْبِ ، فَذَاكَ الْعِلْمُ النَّافِعُ ،

ইলম বা জ্ঞান দুই প্রকার-

১. ইলমে লেসানি বা মৌখিক ইলম, এটা বান্দার প্রতি আল্লাহর দলীল স্বরূপ।

২. ইলমে জেনানী বা আধ্যাত্মিক ইলম, এটা উপকারী ইলম যা লক্ষ্যস্থলে পৌঁছার জন্য খুবই উপকারী।

[ ইবনে রজব হাম্বলী, জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম,: ২১; শরহে মসনদে আবী হানিফা, পৃ. ৩]

মানুষের জন্য সর্বপ্রথম শরীয়তের জ্ঞান অর্জন করা জরুরী। যেন তার রূহ দৈহিক অর্জনের মাধ্যমে মারিফাত জগতের গুণাবলীতে ঐ মহান সত্তার পরিচয় লাভ করতে পারে। আর এটা অনেক মর্যাদা সম্বলিত। তারপর মানুষ বাতিনী জ্ঞানের প্রতি মুখাপেক্ষী, যেন রূহ বা আত্না মারিফাতের জগতে আল্লাহর পরিচয় লাভ করতে পারে। শরীয়ত ও তরীকতের বিপরীতে মারিফাতরূপি যে সব (মনগড়া) রসুম-প্রথা রয়েছে যেসব বর্জন করা ব্যতীত ওই প্রকৃত মারিফাত হাসিল করা সম্ভব নয়। এ মারেফাত অর্জনের জন্য এমন দৈহিক ও আত্মিক পরিশ্রম ও সাধনার প্রয়োজন যা শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ারার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই হবে, কাউকে শুনানো কিংবা দেখানোর জন্য হবে না। মহান রব এরশাদ করেন-

فَمَن كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَلِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا

– অতএব যে ব্যক্তি আপন রবের সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে তার উচিত সৎকর্ম করা ও স্বীয় রবের ইবাদতে কাউকে অংশীদার না করা। [সূরা কাহফ, ১২০]

[চলবে]

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment