সাহাবাকেরামের সমালোচনা হারাম

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।


بسم الله الرحمن الرحيم. الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد المرسلين وعلى آله وصحبه أجمعين, أما بعد!

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম এবং সালেহীন তথা সৎকর্মপরায়নগণের প্রতি যাঁরা হলেন হেদায়তের পূর্ণশিখা।

হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমের প্রতি মুহব্বত রাখা, তাঁদের প্রতি সুধারণা পোষণ করা হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ। তাঁদের ইত্তেবা বা অনুসরণ করা -ওয়াজিব। আর তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, তাঁদেরকে কষ্ট দেয়া, সমালোচনা করা, নাকিছ বা অপূর্ণ বলা সম্পূর্ণ গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা। এটাই আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা বা বিশ্বাস। এর বিপরীত আক্বীদা পোষণ করা বৃহত্তর মুসলিম ঐক্যের বিপরীতে অবস্থান গ্রহনের নামান্তর।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের একটি মূলনীতি হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবাদের ব্যাপারে তাদের অন্তর এবং বাক-যন্ত্র পুত-পবিত্র ও সংযত থাকবে, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীর প্রতিও তারা আমল করবে, রাফেযী- খারেজীদের ভ্রষ্ট তরীকা থেকে তারা মুক্ত থাকবে। কিতাব ও সুন্নায় সাহাবায়ে কিরামের যে ফযিলত বর্ণনা করা হয়েছে, আহলে সুন্নাত তা মেনে নেয় এবং বিশ্বাস করে যে, তারাই যুগের সর্বোত্তম প্রজন্ম। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন:

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بن مسعود رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ يَجِيءُ أَقْوَامٌ تَسْبِقُ شَهَادَةُ أَحَدِهِمْ يَمِينَهُ، وَيَمِينُهُ شَهَادَتَهُ ( ) 

আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু নাবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার যুগের লোকেরাই সর্বোত্তম ব্যক্তি, অতঃপর যারা তাদের নিকটবর্তী। অতঃপর যারা তাদের নিকটবর্তী এরপরে এমন সব ব্যক্তি আসবে যারা কসম করার আগেই সাক্ষ্য দিবে, আবার সাক্ষ্য দেয়ার আগে কসম করে বসবে। ( )।

আল্লাহ তা‘আলা ছাহাবীদের প্রশংসা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের ওপর তাঁর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। আল্লাহ কর্তৃক তাঁদের স্তুতি ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তাঁদের ভূয়সী প্রশংসাই প্রমাণ করে যে তাঁরা হলেন ন্যায়নিষ্ঠ, তাঁরা ছিলেন ভূ-পৃষ্ঠের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তির শ্রেষ্ঠতম সহচর। সর্বোপরি আপন নবীর সঙ্গী ও তাঁর সহযোগী হিসেবে আল্লাহ যাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন তাঁদের তো আর কোনো ন্যায়নিষ্ঠতা প্রমাণের প্রয়োজন নেই। এর চেয়ে বড় আর কোনো সনদ হতে পারে না। এর চেয়ে পূর্ণতার আর কোনো দলীল হতে পারে না।( )

তাঁদের যাবতীয় অপ্রকাশ্য বিষয় সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত আল্লাহ কর্তৃক ন্যায়নিষ্ঠতার ঘোষণার পর আর কোনো সৃষ্টি কর্তৃক তাঁদেরকে ন্যায়নিষ্ঠ ঘোষণার প্রয়োজন নেই। আর তাঁদের মর্যাদা এমনই প্রশ্নাতীত যে তাঁদের মর্তবা সম্পর্কে যদি আয়াতগুলো নাযিল না করতেন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরোল্লিখিত হাদীসগুলো উচ্চারণ না করতেন, তথাপি তাঁদের হিজরত, জিহাদ, নুছরত, পদ ও প্রতিপত্তি ত্যাগ, পিতা ও পুত্রের বিরুদ্ধে লড়াই, দ্বীনের জন্য অবর্ণনীয় কল্যাণকামিতা এবং ঈমান ও ইয়াকিনের দৃঢ়তা তাঁদের ন্যায়নিষ্ঠতা থেকে বিচ্যুত হওয়া ঠেকাত, তাঁদের পবিত্রতা ও মহানুভবতার পক্ষে সাক্ষী হত। মোদ্দাকথা তাঁরা তো সকল সত্যায়নকারী ও সাফাইকারীর চেয়েই শ্রেষ্ঠ যারা তাঁদের পর এসেছে। এটাই উল্লেখযোগ্য আলেম এবং ফিকহবিদের মত। ( )

হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর একটি উক্তি এখানে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, 

عبد الله بن مسعود رضي الله عنه : ” مَن كانَ مُسْتَنًّا ، فَلْيَسْتَنَّ بمن قد ماتَ ، فإنَّ الحيَّ لا تُؤمَنُ عليه الفِتْنَةُ ، أولئك أصحابُ محمد صلى الله عليه وسلم، كانوا أفضلَ هذه الأمة : أبرَّها قلوبًا، وأعمقَها علمًا، وأقلَّها تكلُّفًا، اختارهم الله لصحبة نبيِّه ، ولإقامة دِينه ، فاعرِفوا لهم فضلَهم، واتبعُوهم على أثرهم، وتمسَّكوا بما استَطَعْتُم من أخلاقِهم وسيَرِهم ، فإنهم كانوا على الهُدَى المستقيم “. 

“তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অনুসরণ করতে চায় তবে সে যেন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছাহাবীগণেরই অনুসরণ করে। কারণ, তাঁরাই ছিলেন এ উম্মতের মধ্যে আত্মার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি নেককার, ইলমের দিক থেকে গভীরতর, লৌকিকতার দিক থেকে সল্পতম, আদর্শের দিক থেকে সঠিকতম, অবস্থার দিক থেকে শুদ্ধতম। তাঁরা এমন সম্প্রদায় আল্লাহ যাদেরকে আপন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংস্পর্শধন্য হবার জন্য এবং তাঁর দ্বীন কায়েমের উদ্দেশ্যে বাছাই করে নিয়েছেন। অতএব তোমরা তাঁদের মর্যাদা অনুধাবন করো এবং তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করো। কারণ, তাঁরা ছিলেন সীরাতে মুস্তাকীমের ওপর প্রতিষ্ঠিত। ( )

‘তাঁরা ইলম, ইজতিহাদ, তাকওয়া ও জ্ঞান-বুদ্ধিতে আমাদের ওপরে। তাঁরা আমাদের চেয়ে উত্তম এমন বিষয়ে যে ব্যাপারে ইলম জানা গেছে কিংবা যা ইস্তিমবাত বা উদ্ভাবন করা হয়েছে। তাঁদের রায়গুলো আমাদের কাছে প্রশংসনীয়। আমাদের নিজেদের ব্যাপারেই আমাদের সিদ্ধান্তের চেয়ে তাঁরাই অগ্রাধিকার পাবার হকদার।’ ( )

আর এ সকল ফযীলতের কারনে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম সম্পর্কে বিখ্যাত ফক্বীহ ছাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের সমালোচনা করা, বিদ্বেষ করা কুফরী: আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন: إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِينًا “নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ পাক ও তার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের প্রতি আল্লাহ পাকের অভিসম্পাত এবং তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” [ সূরা আহযাব ৫৭ ]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন: 

حَدَّثَنَا آدَمُ بْنُ أَبِيْ إِيَاسٍ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ الأَعْمَشِ قَالَ سَمِعْتُ ذَكْوَانَ يُحَدِّثُ عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: لَا تَسُبُّوْا أَصْحَابِيْ فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيْفَهُ. 

“তোমরা আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমকে গালি দিও না। কেননা যদি তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমান স্বর্ণ আল্লাহ পাকের রাস্তায় দান করে, তবুও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের এক মুদ (১৪ ছটাক) বা অর্ধ মদ (৭ ছটাক) সমপরিমান গম দান করার ফযীলতের সমপরিমান ফযীলতও অর্জন করতে পারবে না।” ( )

সমগ্র দুনিয়ার সকল মানুষের নেক আমল এক করলেও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের কয়েক মুহূর্তের আমলের সমান হবে না। হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন , لا تَسُبُّوا أَصْحَابَ مُحَمَّدٍ فَلَمَقَامُ أَحَدِهِمْ سَاعَةً خَيْرٌ مِنْ عَمَلِ أَحَدِكُمْ عُمْرَهُ ‘তোমরা হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছাহাবীদের গালাগাল করো না। কেননা তাঁদের এক মুহূর্তের (ইবাদতের) মর্যাদা তোমাদের প্রত্যেকের জীবনের আমলের চেয়ে শ্রেষ্ট।’ ( )

এ ব্যাপারে ইবন হাযম রাহিমাহুল্লাহর একটি মূল্যবান বাক্য রয়েছে, তিনি বলেন, ‘আমাদের কাউকে যদি যুগ-যুগান্তর ব্যাপ্ত সুদীর্ঘ হায়াত প্রদান করা হয় আর সে তাতে অব্যাহতভাবে ইবাদত করে যায়, তবুও তা ওই ব্যক্তির সমকক্ষ হতে পারবে না যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক সেকেন্ড বা তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য দেখেছেন।’ ( )

ইবন মুগাফফাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ الْمُزَنِيِّ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” اللَّهَ اللَّهَ فِي أَصْحَابِي، اللَّهَ اللَّهَ فِي أَصْحَابِي، لَا تَتَّخِذُوهُمْ غَرَضًا بَعْدِي، فَمَنْ أَحَبَّهُمْ فَبِحُبِّي أَحَبَّهُمْ، وَمَنْ أَبْغَضَهُمْ، فَبِبُغْضِي أَبْغَضَهُمْ، وَمَنْ آذَاهُمْ فَقَدْ آذَانِي، وَمَنْ آذَانِي فَقَدْ آذَى اللَّهَ، وَمَنْ آذَى اللَّهَ فَيُوشِكُ أَنْ يَأْخُذَهُ ” ( ) 

‘আমার ছাহাবীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরবর্তীকালে তোমরা তাঁদের সমালোচনার নিশানায় পরিণত করো না। কারণ, যে তাদের ভালোবাসবে সে আমার মুহাব্বতেই তাদের ভালোবাসবে। আর যে তাঁদের অপছন্দ করবে সে আমাকে অপছন্দ করার ফলেই তাঁদের অপছন্দ করবে। আর যে তাঁদের কষ্ট দেবে সে আমাকেই কষ্ট দেবে। আর যে আমাকে কষ্ট দেবে সে যেন আল্লাহকেই কষ্ট দিল। আর যে আল্লাহকে কষ্ট দেবে অচিরেই আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন।’ ( )

সূতরাং উক্ত দলীল থেকে বোঝা গেল, যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমদের প্রতি বিন্দু মাত্র সমালোচনা করবে, উনাদের বিরুদ্ধে স্বজন প্রীতির অপবাদ দিবে, তারা নিশ্চিত কাফির হয়ে জাহান্নামে যাবে। আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন: لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ “একমাত্র কাফিররাই তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করে। (সূরা ফাতাহ ২৯ )

এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীস শরীফে বর্নিত আছে:

قال الإمامُ مالك ـ رحمه الله ـ: ্রمن أصبحَ في قلبِه غَيْظٌ عَلى أحَدٍ مِن أصْحَابِ رَسُولِ الله – صلى الله عليه وسلم – فقد أصَابَتْه الآية ( )

ইমাম মালেক বলেন, যে ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করবে, সে এ আয়াতের হুকুমের আওতায় পড়বে।”( ) হাদীস শরীফে বর্নিত আছে:

أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- عَنْ النَّبِيِّ -صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- قَالَ: آيَةُ الْإِيمَانِ حُبُّ الْأَنْصَارِ، وَآيَةُ النِّفَاقِ بُغْضُ الْأَنْصَارِ( )

“হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের প্রতি বিশেষ করে আনসারগনের প্রতি মুহব্বত ঈমান, আর উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করা নিফাক তথা কুফরী।”( ) 

ইমাম আবূ যুর‘আ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, 

قال الإمام أبو زرعة العراقي أحد مشايخ مسلم: ( ):إذا رأيت الرَّجلَ يَنْتَقِصُ أحدًا منْ أصحابِ رسولِ الله -صلى الله عليه وسلَّم- فاعْلَمْ أنَّه زِنْدِيقٌ؛ وذلك أنَّ الرَّسولَ -صلى الله عليه وسلَّم- عندنا حقٌّ، والقرآنُ حقٌّ، وإنَّما أدَّى إلينا هذا القرآنَ والسُّنَنَ أصحابُ رسولِ الله -صلى الله عليه وسلَّم-، وإنَّما يريدون أن يُجَرِّحُوا شهودَنا لِيُبْطِلُوا الكتابَ والسُّنَّةَ، والجَرْحُ بهم أَوْلَى، وهم زَنادِقَة. ( )

‘যখন তুমি কোনো ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছাহাবীগণের কোনো একজনের মর্যাদাহানী করতে দেখবে তখন বুঝে নেবে যে সে একজন ধর্মদ্রোহী নাস্তিক। আর তা এ কারণে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে সত্য, কুরআন সত্য। আর এ কুরআন ও সুন্নাহ আমাদের কাছে পৌঁছিয়েছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছাহাবায়ে কিরাম। নিশ্চয় তারা চায় আমাদের প্রমাণগুলোয় আঘাত করতে। যাতে তারা কিতাব ও সন্নাহকে বাতিল করতে পারে। এরা হলো ধর্মদ্রোহী- নাস্তিক। এদেরকে আঘাত করাই শ্রেয়।’ ( )

হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফের পর একটা মুরতাদ দল বের হবে যারা কিনা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাদের প্রতি বিদ্বেষ করবে। এদের সম্পর্কে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্বেই সতর্ক করে ভবিষ্যতবানী করেছেন: 

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ اللَّهَ اخْتَارَنِي، وَاخْتَارَ أَصْحَابِي، وَإِنَّهُ سَيَجِيءُ قَوْمٌ يَنْتَقِصُونَهُمْ، وَيُعِيبُونَهُمْ، وَيَسُبُّونَهُمْ، فَلا تُجَالِسُوهُمْ، وَلا تُؤَاكِلُوهُمْ، وَلا تُشَارِبُوهُمْ، وَلا تُصَلُّوا مَعَهُمْ، وَلا تُصَلُّوا عَلَيْهِمْ “. ( )

“অতি শীঘ্রই একটি দল বের হবে, যারা আমার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগনকে গালি দিবে, উনাদের নাকিছ বা অপূর্ন বলবে। সাবধান ! সাবধান ! তোমরা তাদের মজলিসে বসবে না, তাদের সাথে পানাহার করবে না, তাদের সাথে বিয়ে-শাদীর ব্যবস্থা করবে না। অন্য রেওয়াতে আছে, তাদের পেছনে নামাজ পড়বে না এবং তাদের জন্য দোয়া করবে না।”( )

আরো ইরশাদ হয়েছে: 

عَنْ نَافِعٍ ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” إِذَا رَأَيْتُمُ الَّذِينَ يَسُبُّونَ أَصْحَابِي فَقُولُوا: لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى شَرِّكُمْ ” ( )

“যখন তোমরা কাউকে আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগনকে গালি দিতে দেখবে, তখন তোমরা বলো, এ নিকৃষ্ট কাজের জন্য তোমাদের প্রতি আল্লাহ পাকের লা’নত বর্ষিত হোক।”( )

হযরত আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” مَنْ سَبَّ أَصْحَابِي فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ، وَالْمَلائِكَةِ، وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ، لا يَقْبَلُ اللَّهُ مِنْهُ صَرْفًا وَلا عَدْلا ” ، قَالَ : الْعَدْلُ: الْفَرَائِضُ , وَالصَّرْفُ: التَّطَوُّعُ . ( )

‘যে ব্যক্তি আমার ছাহাবীকে গাল দেবে তার ওপর আল্লাহ, ফেরেশতা সকল মানুষের অভিশাপ। আল্লাহ তার নফল বা ফরয কিছুই কবুল করবেন না।’( )

হযরত আতা ইবন আবী রাবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে আমার ছাহাবীদের ব্যাপারে আমাকে সুরক্ষা দেবে কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুরক্ষাকারী হব। আর ‘যে আমার ছাহাবীকে গাল দেবে তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ।’ ( )

বিখ্যাত সিরাত গ্রন্থ “শিফা”তে বর্নিত আছে: إِذَا ذُكِرَ أَصْحَابِي فَأَمْسِكُوا ،( )“আমার ছাহাবীদের আলোচনাকালে তোমরা সংযত থেকো।” ( )

মহান আল্লাহ ঈমানদারগণকে ছাহাবায়ে কেরাম -এর জন্য দো‘আ প্রার্থনার আদেশ করেছেন এবং সত্যিকার মুমিনগণ তা বাস্তবায়নও করেছেন। কিন্তু কতিপয় লোক কুরআন ও হাদীছ নির্দেশিত এই পথ প্রত্যাখ্যান করে চরম ধৃষ্টতার পরিচয় দিয়েছে। ক্ষমা প্রার্থনার পরিবর্তে তারা তাঁদেরকে দিয়েছে গালি এবং প্রশংসার পরিবর্তে করেছে নিন্দা।

আমাদের আলোচনার এটিই শেষ বিষয়। ছাহাবীগণের মধ্যে যেসব মতানৈক্য হয়েছে, তদ্বিষয়ে আমাদের করণীয় কি? সালাফে ছালেহীনের এক ব্যক্তিকে যখন এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তখন তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, আল্লাহ তা থেকে আমাদের তরবারীকে মুক্ত রেখেছেন। অতএব, আমরা তা থেকে আমাদের যবানকেও মুক্ত রাখব’।( )

আরেকজনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি নিম্নোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করেন, تِلْكَ أُمَّةٌ قَدْ خَلَتْ ۖ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَلَكُم مَّا كَسَبْتُمْ ۖ وَلَا تُسْأَلُونَ عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ ‘তারা ছিল এক সম্প্রদায়, যারা গত হয়ে গেছে। তারা যা করেছে, তা তাদেরই জন্য। তারা কি করত, সে সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না’ ( )

ছাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে আমাদের অন্তঃকরণকে নিষ্কলুষ রাখতে হবে। তাঁদের প্রতি হৃদয়ে কোন হিংসা-বিদ্বেষ বা ঘৃণা থাকবে না; থাকবে না কোন প্রকার শত্রুতা। বরং হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান পাবে শুধু ভালবাসা, অনুগ্রহ আর সহানুভূতি।

وصلى الله على سيدنا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين. والحمد لله رب العالمين

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment