সায়্যিদাতুন নিসা আল-আলামিন মা ফাতেমা (আ.)

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

 সায়্যিদাতুন নিসা আল-আলামিন “

_________________________________

” ফাত্‌ম ” শব্দের শাব্দিক অর্থ হেফাজত করা, রক্ষা করা, মুক্ত করা। এ সম্পর্কে প্রিয় নবী 

صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم

বলেন: ‘তাঁর নামকরণ করা হয়েছে ফাতেমা। কারণ, আল্লাহ তাঁকে ও তাঁর আহল এবং অনুসারীদের জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত রেখেছেন।

সূরা আল ইমরানের ৪২নং আয়াতের তাফসিরে দূররুল মানসুরে ও যাখায়েরুল উকবাহ, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, বায়যাবী, তাবারী ইত্যাদি তাফসীরে বলা হয় যে, উক্ত আয়াতে কারীমার মর্মার্থ মা ফাতেমা রাদি; এর শানে

বর্নিত হয়েছে।

وَ اِذۡ قَالَتِ الۡمَلٰٓئِکَۃُ یٰمَرۡیَمُ اِنَّ اللّٰہَ اصۡطَفٰکِ وَ طَہَّرَکِ وَ اصۡطَفٰکِ عَلٰی نِسَآءِ  الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۴۲﴾ 

উচ্চারণঃ ওয়া ইয কা-লাতিল মালাইকাতুইয়া-মারইয়ামু ইন্নাল্লা-হাসতাফা-কি ওয়া তাহহারাকি ওয়াসতাফা-কি ‘আলা-নিছাইল ‘আ-লামীন।

অর্থঃ আর স্মরণ কর, যখন ফেরেশতারা বলল, ‘হে মারইয়াম, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করেছেন ও পবিত্র করেছেন এবং নির্বাচিত করেছেন তোমাকে বিশ্বজগতের নারীদের উপর’।

( সূরাঃ আল ইমরান, আয়াতঃ 42) 

[১] মারয়্যাম (আলাইহাস্ সালাম)-এর এই মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব তাঁর যুগ অনুযায়ী ছিল। কেননা, সহীহ হাদীসে মারয়্যামের সাথে সাথে খাদীজা (রাঃ) -কেও সর্বশ্রেষ্ঠা নারী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর কোন কোন হাদীসে চারজন নারীকে সব দিক দিয়ে পূর্ণতাপ্রাপ্ত (কামেল) বলা হয়েছে। তাঁরা হলেনঃ মারয়্যাম, আসিয়া (ফিরআউনের স্ত্রী), খাদীজা এবং আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহুন্না)। আর আয়েশা (রাঃ) সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, সমস্ত নারীদের উপর তাঁর ফযীলত ও শ্রেষ্ঠত্ব ঐরূপ, যেরূপ (রুটি, গোশত ও ঝোল মিশিয়ে প্রস্তুত এক প্রকার উপাদেয় খাদ্য) এসবের শ্রেষ্ঠত্ব অন্য যাবতীয় খাদ্যের উপর। (ইবনে কাসীর) তিরমিযীর বর্ণনায় পাওয়া যায় ফাতিমা (রাঃ)ও শ্রেষ্ঠত্বপূর্ণ নারীদের মধ্যে শামিল করা হয়েছে। (ইবনে কাসীর) এর অর্থ এটাও হতে পারে যে, উল্লিখিত নারীগণ এমন গরীয়সী নারী, যাঁদেরকে মহান আল্লাহ অন্যান্য সমস্ত নারীদের তুলনায় বিশেষ ফযীলত, মর্যাদা ও মাহাত্ম্য দান করেছিলেন। অথবা তাঁরা সব সব যুগে এই বিশেষ ফযীলত ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারিণী ছিলেন। আর আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।

[২] রাসূলুল্লাহ 

صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم

বলেছেনঃ সবচেয়ে উত্তম মহিলা হলেন মারইয়াম বিনতে ইমরান। অনুরুপভাবে সবচেয়ে উত্তম মহিলা হলেন খাদিজা বিনতে খুয়াইলেদ। [বুখারীঃ ৩৪৩২, মুসলিমঃ ২৪৩০] অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ 

صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم

 বলেছেনঃ পুরুষের মধ্যে অনেকেই পূর্ণতা লাভ করেছে। মেয়েদের মধ্যে কেবলমাত্র ফিরআউনের স্ত্রী আছিয়া এবং ইমরানের কন্যা মারইয়াম পূর্ণতা লাভ করেছে আর সমস্ত নারীদের উপর আয়েশার শ্রেষ্ঠত্ব যেমন সমস্ত খাবারের উপর ছারদ’-এর শ্রেষ্ঠত্ব। [বুখারী ৩৪৩৩; মুসলিম: ২৪৩১] অন্য বর্ণনায় এসেছে, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ 

صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم

বলেছেন, “সৃষ্টিকুলের মহিলাদের মধ্যে শুধু উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, মারইয়াম বিনতে ইমরান, খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মাদ ও ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়া। ” [তিরমিযী ৩৮৭৮; মুসনাদে আহমাদ ৩/১৩৫; মুসান্নাফে আবদির রাযযাক: ১১/৪৩০]

ইবনে আব্বাস(রা)বর্ননা করেন রাসূল 

صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم

বলেন চার জন নারী সমগ্র নারীজাতির মাঝে সর্বোত্তম যথা মরিয়ম বিনতে ইমরান ;আসিয়া বিনতে মোজাহেম ;খাদিজা বিনতে খুয়াইলেদ এবং ফাতেমা বিনতে মোহাম্মদ(সাঃ) । তবে ইহাদের মধ্যে সর্বোত্তম হলেন ফাতেমা(আঃ)

যেমম সহীহ হাদীসে উল্লেখিত রয়েছে – 

أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَالِدِ ابْنِ عَثْمَةَ، قَالَ حَدَّثَنِي مُوسَى بْنُ يَعْقُوبَ الزَّمْعِيُّ، عَنْ هَاشِمِ بْنِ هَاشِمٍ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ وَهْبٍ، أَخْبَرَهُ أَنَّ أُمَّ سَلَمَةَ أَخْبَرَتْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم دَعَا فَاطِمَةَ يَوْمَ الْفَتْحِ فَنَاجَاهَا فَبَكَتْ ثُمَّ حَدَّثَهَا فَضَحِكَتْ ‏.‏ قَالَتْ فَلَمَّا تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم سَأَلْتُهَا عَنْ بُكَائِهَا وَضَحِكِهَا قَالَتْ أَخْبَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ يَمُوتُ فَبَكَيْتُ ثُمَّ أَخْبَرَنِي أَنِّي سَيِّدَةُ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ إِلاَّ مَرْيَمَ ابْنَتَ عِمْرَانَ فَضَحِكْتُ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏

উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

মক্কা বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ

(صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ) 

ফাতিমাকে ডেকে তার সাথে চুপিসারে কিছু কথা বলেন। এতে ফাতিমা কেঁদে ফেলেন। তারপর তিনি কিছু কথা বললে ফাতিমা হাসেন। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ

 (صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم )

-এর ইন্তিকালের পরে আমি ফাতিমাকে তাঁর হাসি-কান্নার কারণ প্রশ্ন করি। তিনি বলেন, 

রাসূলুল্লাহ

(صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم  )

আমাকে অবহিত করেন যে, অচিরেই তিনি আমাদের হতে বিদায় নিবেন, তাই আমি কেঁদেছি। তারপর তিনি আমাকে অবহিত করেন যে, মারইয়াম বিনতু ইমরান ব্যতীত আমি জান্নাতের রমণীদের সর্দারনী হব, তাই আমি হেসেছি।

( জামে তিরমিজি – ৩৮৭৩ / মিশকাত ৬১৮৪) 

এছাড়াও প্রিয় নবী 

صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم

আরও ইরশাদ ফরমান – 

আবুল ওয়ালীদ রহ………মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ 

صَلَّওی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم   বলেছেন, ফাতিমা আমার (দেহের) অংশ। যে তাকে অসন্তুষ্ট করল সে আমাকেই অসন্তুষ্ট করল। ( সহিহুল বুখারি হাদীস নং ৩৪৯৫) 

ওনার মান মর্যাদা সমস্ত নারী জাতীর উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার একমাত্র কারণ তাকওয়া এবং সবর। তাঁর জীবন ছিলো অত্যন্ত তাকওয়াপূর্ণ। একজন মহীয়সী নারীর যেসব গুণাগুণ থাকা অপরিহার্য তা বিন্দু বিন্দুতে পরিপূর্ণতা লাভ করেছিলো তাঁর হায়াতে জিন্দেগিতে। হবেই বা না কেন! তিনি তো আল্লাহর নবীরই কন্যা.! প্রিয় নবী আদর করে ডাকতেন ” কুরাতুল আঈন ” তথা নয়নমণি।

💜 ওনার সুমহান মর্যাদাময় কুনিয়াত –

* উম্মে আবিহা। 

* উম্মে আল-হাসানাহ। 

* উম্মে আল-হাসান। 

* উম্মে আল-হুসাঈন। 

💜 ওনার সমুন্নত উপাধি – 

* আল-সিদ্দিকাহ 

* আল-মুবারাকাহ। 

* আল-তাহিরাহ। 

* আল-জাকিয়াহ। 

* আল-রাদিয়াহ। 

* আল-মুহাদ্দাথাহ। 

* আল-বাতুল। 

* আল-জহরা। 

* সৈয়দাতুন নিসা আল-আলামিন। 

তিনি সৈয়দাতুন নিসা আল আলামিন হওয়ার ব্যাপারে অপর একটি হাদীস বুখারি শরীফের (كتاب المناقب) অধ্যায়ে মা আয়েশা রাযি: হতে রেওয়ায়ত হয়েছে এভাবে – 

আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ 

صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم

-এর চলার ভঙ্গিতে চলতে চলতে ফাতিমাহ (রাঃ) আমাদের নিকট আগমন করলেন। তাঁকে দেখে রাসূলুল্লাহ  

صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم 

বললেন, আমার স্নেহের কন্যাকে মোবারকবাদ। অতঃপর তাঁকে তার ডানপাশে অথবা বামপাশে বসালেন এবং তাঁর সঙ্গে চুপিচুপি কথা বললেন। তখন ফাতিমাহ (রাঃ) কেঁদে দিলেন। আমি [‘আয়িশাহ (রাঃ) তাঁকে বললাম] কাঁদছেন কেন? রাসূলুল্লাহ

 صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم

পুনরায় চুপিচুপি তার সঙ্গে কথা বললেন। ফাতিমা (রাঃ) এবার হেসে উঠলেন। আমি [‘আয়িশাহ (রাঃ)] বললাম, আজকের মত দুঃখ ও বেদনার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দ ও খুশী আমি আর কখনো দেখিনি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি 

صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم

কী বলেছিলেন? তিনি উত্তর দিলেন, আমি আল্লাহর রাসূল 

صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم

 -এর গোপন কথাকে প্রকাশ করব না। শেষে নাবী 

صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم

 -এর ইন্তিকাল হয়ে যাবার পর আমি তাঁকে (আবার) জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কী বলেছিলেন?

তিনি বললেন, তিনি (صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم) 

প্রথম বার আমাকে বলেছিলেন, জিবরীল (আঃ) প্রতি বছর একবার আমার সঙ্গে কুরআন পাঠ করতেন, এ বছর দু’বার পড়ে শুনিয়েছেন। আমার মনে হয় আমার বিদায় বেলা উপস্থিত এবং অতঃপর আমার পরিবারেরর মধ্যে তুমিই সর্বপ্রথম আমার সঙ্গে মিলিত হবে। তা শুনে আমি কেঁদে দিলাম। অতঃপর বলেছিলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, জান্নাতবাসী নারীদের অথবা মু’মিন নারীদের তুমি সরদার হবে। এ কথা শুনে আমি হেসেছিলাম। (আ: প্র: ৩৩৫৪, ই:ফাঃ ৩৩৬১)(৩৬২৬, ৩৭১৬, ৪৪৩৪, ৬২৮৬, মুসলিম ৪৪/১৫ হাঃ ২৪৫০, আহমাদ ২৬৪৭৫) (ই:ফা:৩৩৬১)

আজ সুমহান মর্যাদাপূর্ণ এই মহীয়সী নারীর ওয়াফাত দিবস। আল্লাহর তা’আলা ওনার ওসিলায় আমাদের কবুল করুন সাথে আমাদের আহলে বায়েতের প্রেমিক হিসেবে কবুল করুন। আমীন।

Sifat Sultan Alif.

Ala Hazrat Research Academy.

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment