সর্বপ্রথম সৃষ্টি

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

অনেকেই দেখি লিখে এবং মনে করে যে, আমাদের নবী ﷺ ৪০ বছর বয়সে নবী হয়েছেন। কিন্তু এটা ভুল, বস্তুত ৪০ বছর বয়সে তিনি নব্যুয়ত প্রকাশ করেছেন। তিরমিজির সহিহ হাদিসে রয়েছে যে, উনার নব্যুয়ত তখনও নির্ধারিত ছিল যখন আদম (আঃ) তাঁর শরীর (দেহ) ও রুহের (আত্মা) মধ্যবর্তী ছিলেন।

সাহাবায়ে কেরাম যখন প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! আপনার নবুওয়াত কখন অবধারিত হয়েছে (আপনি কখন থেকে নবী)? তিনি ﷺ বললেনঃ যখন আদম (আঃ) তাঁর শরীর (দেহ) ও রুহের (আত্মা) মধ্যবর্তী ছিলেন। (সূনান আত তিরমিজী ৩৬০৯, মুসতাদরেক হাকিম ৪২৬৫)

এছাড়াও অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তিনি ﷺ তখনও খ্বতামুন-নাব্যিয়িন ছিলেন যখন হযরত আদম আঃ মাটির খামীরার মধ্যে ছিলেন। (মুসনাদে আহমাদ ১৭১৫০, মুসতাদরেক হাকিম ৩৫৬৬, মুজামুল কাবীর ৬২৯, ইবনে হিব্বান ৬৪০৪, মিশকাত ৫৫১২)

জলিলুল কদর সাহাবী হযরত জাবির রা. যখন প্রিয় নবী ﷺ কে জিজ্ঞেস করেছিলেন আল্লাহ তায়া’লা সর্বপ্রথম কি সৃষ্টি করেছেন? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছিলেন, সর্বপ্রথম সৃষ্টি হল নবী ﷺ এঁর নূর মোবারক। (ইমাম বুখারী রহঃ এঁর দাদা ওস্তাদ, মুহাদ্দিস আব্দুর রাজ্জাক রহঃ, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং ১৮, দেওবন্দীদের ওস্তাদ আশরাফ আলী থানবী, নশরুত্ত্বীবঃ পৃষ্ঠা ২৫…..)

“আর আমি মুসলমানদের মধ্যে প্রথম।”- এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে জালালাইনের হাশিয়াতে “রুহুল মা’আনী”র বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে- প্রথম মুসলমান হওয়া দ্বারা এদিকেও ইঙ্গিত হতে পারে যে, সৃষ্টিজগতের মাঝে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর নূর সৃষ্টি করা হয়েছে। এরপর সমস্ত নভোমণ্ডল, ভূমন্ডল ও অন্যান্য সৃষ্টিজগৎ অস্তিত্ব লাভ করেছে। (কেননা) এক হাদিসে বলা হয়েছে- আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম আমার (রাসূলুল্লাহ ﷺ’র) নূর সৃষ্টি করেছেন। (তাফসীরে জালালাইন (হাশিয়া), সূরা আনআম, আয়াত ১৬৩)

এছাড়াও

“(হে মাহবুব) আর স্মরণ করুন, যখন আমি নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম এবং আপনার কাছ থেকেও। আর নূহ, ইব্রাহিম, মূসা, ও মারইয়াম পুত্র ঈসার কাছ থেকেও।” – এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে জালালাইনের হাশিয়াতে তাফসীরে মাযহারীর বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে সাধারণভাবে সমস্ত নবীগণের কথা উল্লেখের পর পাঁচজনের নাম আবার বিশেষভাবে এজন্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, (কারণ) নবীকূলের মধ্যে তারা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদার অধিকারী। এদের মধ্যে রাসূলে মাকবুল ﷺ এঁর আবির্ভাব সকলের শেষে হয়ে থাকলেও “وَمِنكَ “(এবং আপনার থেকেও) শব্দের মাধ্যমে নবীজিকে সর্বাগ্রে উল্লেখ করা হয়েছে। যার কারণ হাদিসের মধ্যে এরুপ বর্ণনা করা হয়েছে – (রাসূলে মাকবুল ﷺ বলেন) আমি (নবীকূলের মাঝে) সৃষ্টিগতভাবে সকলের আগে, কিন্তু আবির্ভাবগতভাবে নবুয়্যত প্রকাশের দিক দিয়ে (প্রেরণের দিক দিয়ে) সকলের পরে। (তাফসীরে জালালাইন (হাশিয়া), সূরা আহযাব, আয়াত ৭)

আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহঃ উল্লেখ করেন,

(সহিহ বুখারীর প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকার) আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহঃ বলেন, সর্ব প্রথম সৃষ্টি নিয়ে বর্ণনার ভিন্নতা রয়েছে তবে তার সারকথা যা আমি শরহু শামায়েলে তিরমিযিতে বর্ণনা করেছি তা হলো- সর্বপ্রথম সৃষ্টি হলো সেই নূর, যা থেকে নবীজি ﷺ কে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতঃপর পানি তারপর আরশ। (মেরকাত শরহে মেশকাত, ১ম খন্ড)

কবি নজরুল লিখলেন,

হেরা হতে হেলে দুলে #নূরানী_তনু ও কে আসে হায়,

সারা দুনিয়ার হেরেমের পর্দা খুলে খুলে যায়,

সে যে আমার কামলিওয়ালা কামলিওয়ালা।।

তার ভাবে বিভোল রাংগা পায়ের তলে,

পর্বত জংগল টলমল টলে,

খোরমা খেজুর বাদাম জাফরানী ফুল

ঝ’রে ঝ’রে যায়..

সে যে আমার কামলিওয়ালা কামলিওয়ালা।

সে যে আমার কামলিওয়ালা কামলিওয়ালা।

আসমানে মেঘ চলে ছায়া দিতে,

পাহাড়ের আসু গলে, ঝর্ণারও পানিতে,

বিজলী চায় মালা হতে

পূর্ণিমা চাঁদ তাঁর মুকুট হতে চায়..

সে যে আমার কামলীওয়ালা কামলিওয়ালা।

সে যে আমার কামলীওয়ালা কামলিওয়ালা।

হেরা হতে হেলে দুলে, নুরানী তনু ও কে আসে, হায়!

সারা দুনিয়ার হেরেমের পর্দা, খুলে খুলে যায়-

সে যে আমার কামলীওয়ালা কামলিওয়ালা।

সে যে আমার কামলীওয়ালা কামলিওয়ালা।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment