১৯৮৭ সালে অ্যামেরিকান ম্যাগাযিন ‘গাইড’ এর নভেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত হয় মার্শাল কার্ক এবং হান্টার ম্যাডসেনের লেখা প্রায় ৫০০০ শব্দের একটি আর্টিকেল। দু’বছর পর নিউরোসাইক্রিয়াট্রি রিসার্চার কার্ক এবং পাবলিক রিলেইশান্স কনসালটেন্ট ম্যাডসেন একে পরিণত করেন ৩৯৮ পৃষ্ঠার একটি বইয়ে। হান্টার ও ম্যাডসেনের এই আর্টিকেল উপস্থাপিত ধারণা ও নীতিগুলো পরবর্তী ৩ দশক জুড়ে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করে রাজনীতি, মিডিয়া, অ্যাকাডেমিয়া, বিজ্ঞান, দর্শন ও চিন্তার জগতে। সারা বিশ্বজুড়ে। সমকামীদের ম্যাগাযিন গাইডে প্রকাশিত মূল আর্টিকেলটির নাম ছিল “The Overhauling of Straight America ”। ৮৯ তে প্রকাশিত সম্প্রসারিত বইয়ের নাম দেওয়া হয় – After the Ball: How America Will Conquer Its Fear and Hatred of Gays in the 90s. কার্ক ও ম্যাডসেনের উদ্দেশ্য ছিল সিম্পল –সমকামিতা ও সমকামিদের প্রতি অ্যামেরিকানদের মনোভাব বদলে দেওয়ার জন্য একটি স্টেপ বাই স্টেপ ব্লু-প্রিন্ট বা ম্যানুয়াল তৈরি করা।
.
কিন্তু কেন প্রায় তিন দশক পর বাংলাদেশে বসে কার্ক-ম্যাডসেনকে নিয়ে চিন্তা করা? কার্ক-ম্যাডসেনের নাম শুনেছেন বা তাদের লেখার সম্পর্কে জানেন এবং মানুষ খুজে পাওয়া কঠিন। শুধু বাংলাদেশেই না, বিশ্বজুড়েই। কিন্তু তাদের ব্লু-প্রিন্টের প্রভাব কোন না কোন ভাবে প্রভাবিত করে নি এমন সমাজ বা রাষ্ট্র খুজে পাওয়াটাও কঠিন। গত ৩০ বছরে সমকামিতার স্বাভাবিকীকরন, সমকামিতাকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং সমকামিতার মধ্য এতোটা অস্বাভাবিক একটি বিষয়ের প্রতি মানুষের সংবেদনশীলতাকে নষ্ট করার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা প্রায় হুবহু মিলে যায় কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্টের সাথে। আর বাংলাদেশেও সমকামিতার প্রচার, প্রসার এবং সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা তৈরির জন্য এখন এই একই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে, একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। বর্তমানে ২২টি দেশে সমলৈঙ্গিক ‘বিয়ে’ আইনগত ভাবে স্বীকৃত। কোন আগ্রাসী সেনাবাহিনী শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে এদেশগুলোর জনগোষ্ঠীর উপর সমকামিতা চাপিয়ে দেয় নি। তবে নিঃসন্দেহে মানুষের স্বভাবজাত মূল্যবোধ, ফিতরাহর বিরুদ্ধে গিয়ে জঘন্য একটি বিকৃতিকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈধতা দেওয়া, মানুষের মাঝে এই বিকৃতির গ্রহনযোগ্য তৈরি করা একটি যুদ্ধের অংশ। এই যুদ্ধ মনস্তাত্ত্বিক, আদর্শিক। এই যুদ্ধ সর্বব্যাপী এবং ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আপনি এই যুদ্ধের অংশ। আর এই যুদ্ধে শত্রুপক্ষের স্ট্র্যাটিজির মূল ভিত্তি কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্ট। আর তাই কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্ট সম্পর্কে জানা, শত্রুর কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে জানা একটি আবশক্যতা, কোন অ্যাকাডেমিক কৌতুহল না।
.
যে মডেলের মাধ্যমে অ্যামেরিকায় অভূতপূর্ব সাফল্য পাওয়া গিয়েছে বাংলাদেশসহ অন্যান্য মুসলিম দেশে এখন সেই একই মডেল বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই পায়ুকাম প্রচার করা ইয়াহু চ্যাট গ্রুপ, ফেইসবুক গ্রুপ, ফোরাম, রুপবান ম্যাগাযিন, শাহবাগে সমকামি প্যারেড, বইমেলায় সমকামিতা নিয়ে কবিতার বই প্রকাশ, গ্রামীনফোনের ফান্ডিং এ আরটিভিতে প্রচারিত নাটক, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও এনজিও গুলোর মাধ্যমে পায়ুকামে উৎসাহিত করা, বিনামূল্যে কনডম-লুব্রিকেন্ট বিতরণ – এই সবকিছুকে দেখতে হবে একটি বৃহৎ, গ্লোবাল এজেন্ডার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ হিসেবে।
.
. . . কার্ক-ম্যাডসেনের ব্লু-প্রিন্টের প্রথম ধাপ এটাই। মানুষকে সমকামিতার ব্যাপারে ডিসেনসেটাইয করা –
.
“প্রথম কাজ হল সমকামি এবং সমকামিদের অধিকারের ব্যাপারে অ্যামেরিকার জনগনের চিন্তাকে অবশ করে দেওয়া, তাদের সংবেদনশীলতা নষ্ট করে দেওয়া [desensitization]। মানুষের চিন্তাকে অবশ করে দেওয়ার অর্থ হল সমকামিতার ব্যাপারে তাদের মধ্যে উদাসীনতা তৈরি করা…একজন স্ট্রবেরি ফ্লেইভারের আইস্ক্রিম পছন্দ করে আরেকজন ভ্যানিলা। একজন বেইসবল দেখে আরেকজন ফুটবল। এ আর এমন কী!” [Kirk & Madsen, The Overhauling of Straight America’]
.
সমকামিতার প্রচার ও প্রসারের জন্য যারা কাজ করছে তাদের রেটোরিক খেয়াল করলে দেখবেন তাদের অধিকাংশ ঠিক এই মেসেজটাই দিতে চাচ্ছে। ‘সমকামিতা ভালো বা খারাপ না, জীবনের একটা বাস্তবতা মাত্র’। পহেলা বৈশাখের সময় শাহবাগে সমকামি প্যারেড কিংবা ঈদের সময় ঈদের নাটক হিসেবে সমকামিদের গল্প তুলে ধরার পেছনে একটি মূল উদ্দেশ্য হল সমাজের বিকৃতকামী এক্সট্রিম মাইনরিটিকে সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা। একই সাথে সমকামিতাকে ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত করা, যেমনটা জাতিসংঘের Free & Equal ক্যাম্পেইনেও করা হয়েছে।
.
কার্ক-ম্যাডসেনের আরেকটি সাজেশান হল সমকামিদের ভিকটিম হিসেবে উপস্থাপন করা। সমকামিদের ভিকটিম হিসেবে চিত্রিত করার দুটি ডাইমেনশান থাকবে। প্রথমত, সমকামিতাকে একটি সিদ্ধান্তের পরিবর্তে প্রাকৃতিক বা জন্মগত হিসেবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে সমকামিদের জন্মগতভাবেই ভিকটিম হিসেবে উপস্থাপন করা। দ্বিতীয়ত, সমকামিদের সমাজ দ্বারা নির্যাতিত হিসেবে চিহ্নিত করা।
.
বাংলাদেশে এবং বিশ্বজুড়ে যারা সমকামিতার প্রচার ও প্রসারের কাজ করে তাদের প্রপাগ্যান্ডা ও বক্তব্য আপনি সবসময় এ দুটো মোটিফ দেখতে পাবেন।
.
সমকামিরা জন্মগতভাবেই সমকামি এটা প্রমানের উদ্দেশ্য হল যদি সমকামিতাকে জন্মগত বা প্রাকৃতিক প্রমান করা যায় তাহলে সমকামিদের সম্পূর্ণ নৈতিক দায়মুক্তি সম্ভব। সমকামিতা যদি জন্মগত হয় তাহলে সমকামিতা একটি ‘অ্যাক্ট’ বা ক্রিয়া হিসেবে নৈতিকভাবে নিউট্রাল, কারন এর উপর ব্যক্তির কোন নিয়ন্ত্রন নেই। কিন্তু সমকামি জন্মগত – এই দাবির কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি তো নেই-ই, বরং বিভিন্ন পরীক্ষা ফলাফল ইঙ্গিত করে যে Sexual Oreintation নির্ভর করে ব্যক্তির ‘চয়েস’ বা স্বেচ্ছায় গৃহীত সিদ্ধান্তের উপর ।
.
আরেকটি বিষয় হল সমকামিতা যদি জন্মগত হয় তাহলে অন্যান্য বিকৃত যৌনাচার কেন জন্মগত বলে গন্য হবে না? শিশুকামি, বা পশুকামিদের কেন অপরাধী গণ্য করা হবে? ইন ফ্যাক্ট শিশুকামের সাথে সমকামের, বিশেষ করে পায়ুকামের সম্পর্ক তো হাজার বছরের পুরনো। প্রাচীন গ্রিসে শিশুদের সাথে মধ্য বয়স্ক পুরুষদের পায়ুকামী সম্পর্ক বা Pederasty প্রায় প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে চালু ছিল প্লেইটো তার রিপাবলিক ও ল’স – রচনাতে প্রাচীন পেডেরাস্টি এবং সমকামিতার ব্যাপক প্রচলনকে গ্রীসের অধঃপতনের একটি কারন হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
.
অ্যামেরিকাতেও অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদের সাথে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অধিকারের জন্য আন্দোলন করা NAMBLA (North American Man Boy Love Association) – দীর্ঘদিন ছিল গে-প্রাইড প্যারেডের নিয়মিত অংশ। বিখ্যাত অ্যামেরিকান কবি সমকামি অ্যালেন গিন্সবার্গ (সেপ্টেবর অন যশোর রোড – এর রচয়িতা) ছিল NAMBLA এর সদস্য। এছাড়া অসংখ্য সমীক্ষার মাধ্যমে একথা প্রমাণিত যে সমকামিতার সাথে অন্যান্য যৌন বিকৃতির বিশেষ করে শিশুকামিতার ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে [ ৯]। সমকামিতার বিশেষ করে পায়ুকামিতার সাথে শিশুকামের গভীর সম্পর্কের ব্যাপারে সংক্ষেপে বোঝার জন্য পায়ুকামি ও শিশুকামি কেভিন বিশপের এই উক্তিটি যথেষ্ট –
.
“Scratch the average homosexual and you will find a pedophile” [Kevin Bishop in an interview. Angella Johnson, “The man who loves to love boys,” Electronic Mail & Guardian, June 30, 1997]
.
.
নোটঃ সমকামি এজেন্ডাঃ ব্লু প্রিন্ট
লেখকঃ আসিফ আদনান
পুরো লিখার লিংকঃ http://ow.ly/H5wo30dgWbt