সন্তানের প্রতি মা-বাবার ভালোবাসা কেমন হওয়া উচিত

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

সন্তানের প্রতি মানুষের ভালোবাসা সহজাত। ইসলাম মানব প্রকৃতির অনুকূল ধর্ম। তাই ইসলাম সন্তানের প্রতি মানুষের সহজাত এ ভালোবাসাকে উদ্বুদ্ধ করে। এমনকি ইসলাম সন্তানের প্রতি মা-বাবার ভালোবাসার বিনিময় হিসেবে জান্নাতের ঘোষণা দিয়েছে।আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, এক মহিলা আয়েশা (রা.)-এর কাছে এলে তিনি তাকে তিনটি খেজুর দেন। সে তার দুই ছেলেকে একটি করে খেজুর দেয় এবং নিজের জন্য একটি রেখে দেয়। তারা খেজুর দুটি খেয়ে তাদের মায়ের দিকে তাকালো এবং অবশিষ্ট খেজুরটি পেতে চাইল। তখন ওই নারী সেই খেজুরটি দুই টুকরা করে প্রত্যেককে অর্ধেক অর্ধেক দিল।নবী (সা.) ঘরে এলে আয়েশা (রা.) তাঁকে বিষয়টি অবহিত করেন। তিনি বলেন, এতে তোমার বিস্মিত হওয়ার কি আছে। সে তার দুই ছেলের প্রতি দয়াপরবশ হওয়ার কারণে আল্লাহ তার প্রতি দয়াপরবশ হয়েছেন। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৮৮)

সন্তানের প্রতি স্নেহশীল হতে হবে কেন

ইসলাম সন্তানের প্রতি স্নেহপূর্ণ আচরণ করতে বলেছে।কেননা সুসন্তান ইহকালের সৌন্দর্য ও পরকালের সম্বল। যেমন—

১. সন্তান জীবনের সৌন্দর্য : সন্তান মানুষের জীবনের সৌন্দর্য। আর সৌন্দর্যের দাবি হলো তার প্রতি যত্নবান হওয়া এবং কোমল আচরণ করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সম্পদ ও সন্তান পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৪৬)

২. সন্তান চোখ শীতল করে : আদর্শ স্ত্রী ও সন্তান ব্যক্তির চোখ শীতল করে।

তাই চোখ শীতলকারী সন্তানকে স্নেহ-মমতায় প্রতিপালন করতে হবে এবং তারা যেন সত্যিই চোখ শীতলকারী হয়ে ওঠে সেই চেষ্টা ও দোয়া করতে হবে। পবিত্র কোরআনে দোয়া শেখানো হয়েছে, ‘এবং যারা বলে, হে আমাদের প্রভু! আমাদের দান করুন চোখ শীতলকারী স্ত্রী ও সন্তান। আমাদের আপনি খোদাভীরুদের নেতা নির্বাচন করুন।’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৭৪)

৩. স্নেহ-মমতা ঈমানের পরিচায়ক : শিশুদের প্রতি স্নেহ ও মমতা মুমিনের ঈমানের পরিচায়ক। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ ব্যাপারে বলেন, যারা বড়কে সম্মান করে না এবং ছোটকে স্নেহ করে না, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯২১)

৪. পরকালের সম্বল : সুসন্তান ব্যক্তির জন্য পরকালীন সম্বল। কেননা হাদিসে সুসন্তানকে সদকায়ে জারিয়া বলা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার আমলের পথ বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি আমল ছাড়া—সদকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান, যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। (মুসলিম, হাদিস : ১৬৩১)

সন্তানের জন্য আত্মত্যাগ নিষ্ফল নয়

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আলোচ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, সন্তানের জন্য মা-বাবার আত্মত্যাগ নিষ্ফল নয়, বরং আল্লাহ তাদেরকে এর বিনিময় দান করবেন। তা হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভ। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সে তার দুই ছেলের প্রতি দয়াপরবশ হওয়ার কারণে আল্লাহ তার প্রতি দয়াপরবশ হয়েছেন। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৮৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তিকে কন্যাসন্তানদের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং সে তাদের প্রতি উত্তম আচরণ করেছে, সে কন্যারা তার ও জাহান্নামের মধ্যে অন্তরায়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬২৯)

ছেলে-মেয়েতে বৈষম্য নয়

বহু মানুষকে দেখা যায় তারা মেয়ের তুলনায় ছেলেকে বেশি আদর করে। আবার অনেকে ছেলের তুলনায় মেয়ে বেশি আদর করে। তবে ইসলামের শিক্ষা হলো ছেলে ও মেয়ের ভেতর বৈষম্য না করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) ছেলেমেয়ে-নির্বিশেষে সবার ভেতর ন্যায়ানুগ আচরণ করতে বলেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহকে ভয় করো! সন্তানদের ভেতর সুবিচার করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫৮৭)

এ ছাড়া আল্লাহ তাআলা ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্মকে সুসংবাদ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইয়াহইয়া (আ.) সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে জাকারিয়া! নিশ্চয় আমি তোমাকে পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি। তার নাম ইয়াহইয়া। এই নাম পূর্বে কারো রাখা হয়নি।’ (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ৭)

অন্যদিকে মারিয়াম (আ.)-এর জন্মের সুসংবাদ দিয়ে আল্লাহ বলেছেন, ‘অনেক পুরুষ নারীর সমকক্ষ নয়।’ (সুরা : মরিয়াম, আয়াত : ৩৬)

অর্থাৎ তোমাদের যে কন্যাসন্তান দান করা হয়েছে, তা অনেক পুরুষের তুলনায় উত্তম হতে পারে। অনেক পুরুষ অনেক নারীর তুলনায় অধমও হয়। যারা এই সুসংবাদে সন্তুষ্ট হতে পারে না, মনে মনে ব্যথিত হয়, আল্লাহ তাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তাদেরকে কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয় মনঃকষ্টে তাদের চেহারা কালো হয়ে যায়। তাদের যে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে—তার কারণে তারা নিজ সম্প্রদায়ের লোক থেকে মুখ লুকিয়ে রাখে। তারা ভাবে এই সন্তান রাখবে, নাকি মাটিকে পুঁতে ফেলবে। সাবধান! তাদের সিদ্ধান্ত কতই না নিকৃষ্ট।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৫৮-৫৯)

হৃদয়হীনতা নিন্দনীয়

সন্তানের প্রতি হৃদয়হীন কঠোর আচরণ করা নিন্দনীয়। হাদিসে এসেছে, এক বেদুইন নবী (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আপনারা শিশুদের চুম্বন করেন, কিন্তু আমিরা ওদের চুম্বন করি না। নবী (সা.) বললেন, আল্লাহ যদি তোমার অন্তর থেকে দয়া উঠিয়ে নেন, তবে তোমার ওপর আমার কি কোনো অধিকার আছে? (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৯৮)

সন্তানেরও আছে দায়িত্ব

সন্তান প্রতি পালনে বেশির ভাগ মা-বাবা নিজেদের ওপর সন্তানদের প্রাধান্য দেন। সুতরাং সন্তানদের দায়িত্ব মা-বাবার প্রতি অনুরূপ সদ্ব্যবহার করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করতে এবং মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে উফ বোলো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বোলো। মমতাবশে তাদের প্রতি নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত কোরো এবং বোলো, হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া কোরো যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৩-২৪)

আল্লাহ সবাইকে সন্তানের প্রতি দয়াশীল হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment