আল্লাহর প্রিয় হাবীব [ﷺ] পিতা-মাতার মাধ্যমে নূর হিসাবেই দুনিয়াতে আবির্ভূত হয়েছেন। কিন্তু তাঁর আগমনের ধরণ ছিল ভিন্ন রকম। সাধারণ মায়েরা গর্ভকালীন ব্যথা অনুভব করে থাকেন এবং প্রসবকালীন সময়ে প্রচন্ড কষ্ট ও যন্ত্রণা অনুভব করে থাকেন। কিন্তু বিবি আমেনা (رضي الله عنها) গর্ভকালীন ও প্রসবকালীণ সময়ে কোন ওজন অথবা ব্যথা-বেদনা কিছুই অনুভব করেননি। অন্যান্য মায়েদের প্রসবকালীন সময়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। কিন্তু নবীজীর মায়ের এ অবস্থা ছিল না। বরং তাঁর থেকে বের হয়েছিল একটি নূর, যা মক্কাভূমি থেকে সিরিয়া পর্যন্ত আলোকিত করেছিল। সে নূর ছিল নবী করিম [ﷺ]-এঁর নূর মোবারক।
অন্যান্য সন্তানগণ মায়ের নাভির মাধ্যমে গর্ভে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে এবং ভূমিষ্ট হওয়ার পর তাদের নাভি কাটা হয়। কিন্তু নবী করিম [ﷺ] পবিত্র মায়ের নাভির সাথে যুক্ত ছিলেন না – বরং নাভি কর্তিত অবস্থায় ভূমিষ্ট হয়েছেন। অন্যান্য সন্তানগণ রক্তমাখা অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়, কিন্তু নবী করীম [ﷺ] পবিত্র অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়েছেন। অন্যান্য সন্তানগণ উলঙ্গ ও খতনাবিহীন অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে - কিন্তু নবী করিম [ﷺ] বেহেশতী লেবাছ পরিহিত, সুরমা মাখা চোখ ও খতনাকৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছেন।
নবী করিম [ﷺ] এরশাদ করেছেন-
عَن أنس قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من كَرَامَتِي على رَبِّي عز وَجل أَنِّي ولدت مختونا لم ير أحد سوءتي
”আনাস (রাদ্বিয়ালাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল [ﷺ] বলেছেন, আল্লাহ জাল্লা জালালুহু’র পক্ষ থেকে আমার মু’জিজা হলো আমি খৎনা অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছি এবং জন্মকালে কেউ আমার ছতর দেখে নি।”
(বেদায়া ও নেহায়া, ২য় খন্ড, ২৬১ পৃষ্ঠা, পুরাতন ছাপা।)
মাদারিজুন নবুয়ত কিতাবে এর বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। অন্যান্য সন্তানগণ ভূমিষ্ট হয়ে ওয়াঁ ওয়াঁ (হুয়া) করে চিৎকার দেয়। কিন্তু নবী করিম [ﷺ] ভূমিষ্ট হয়েই প্রথমে সিজদা করেন এবং পরে শুদ্ধ আরবী ভাষায় ”আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্নী রাসুলুল্লাহ” কালেমা শরীফ পাঠ করেছিলেন।
(আল্লামা দিয়ার বিকরীর তারিখুল খামিছ ও সুয়ূতীর খাছায়েছে কুবরা)
সুতরাং নবী করিম [ﷺ]-এঁর ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রকৃতি ভিন্ন ধরণের হওয়াই স্বাভাবিক। আল্লাহ যাকে যেভাবে ইচ্ছা সৃষ্টি করতে পারেন।
আল্লাহ তায়ালা আদম (عليه السلام) ও বিবি হাওয়া (عليها السلام) কে পিতামাতা ছাড়াই সরাসরি পয়দা করেছেন – একজনকে মাটি দিয়ে, অন্যজনকে বাম পাঁজরের হাঁড় দিয়ে। হযরত ঈসা (عليه السلام) কে পিতার বীর্য ছাড়া শুধু রুহ দিয়ে বিবি মরিয়মের গর্ভে পয়দা করেছেন। সাধারণ মানুষ পয়দা হয় পিতা-মাতার নুৎফা বা বীর্য থেকে, সরাসরি মাটি থেকে নয়। কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী [ﷺ]-কে আল্লাহ পয়দা করেছেন নূর দ্বারা। এই নূর কোন পদ্ধতিতে পিতার পৃষ্ঠ থেকে মায়ের গর্ভে গেলেন এবং কোন পদ্ধতিতে মায়ের গর্ভ হতে দুনিয়াতে পদার্পণ করলেন তা গবেষণার বিষয় নয়, বরং কুদরতের উপর বিশ্বাস স্থাপনই এর একমাত্র সমাধান।
মাওলানা আব্দুল আউয়ান জৌনপুরীর ফতোয়া:
এবার আসুন, এ ব্যাপারে ওলামাগণের মতামত কী- তা আলোচনা করি। হাদীয়ে বাংগাল ও আসাম নামে পরিচিত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী সাহেবের সাহেবজাদা মাওলানা আবদুল আউয়াল জৌনপুরী সাহেব আরবিতে একখানা কিতাব রচনা করেছেন। উক্ত কিতাবের নাম- عمدة النقول في كيفية ولادة الرسول
অর্থঃ- ” নবী করিম [ﷺ]-এঁর বেলাদত শরীফের ধরণ সম্পর্কে উত্তম রেওয়ায়াত ও দলীল।”
উক্ত কিতাবে তিনি কয়েকখানা বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবের এবারত উদ্ধৃত করে অবশেষে নিজের মতামত বা ফতোয়া প্রদান করেছেন। আমরা উক্ত কিতাবের ফতোয়ার এবারত হুবহু পাঠকের সামনে উপস্থাপন করছি। উক্ত কিতাবের ফটোকপি অধম লেখকের নিকট সংরক্ষিত আছে। কিতাবের এবারত নিম্নরূপঃ-
وفى الاتحاف بحب الاشراف للعلامة عبد الله الشبراوى الشافعى رحمة الله تعالى قال فى تعليقه على قوله وإذ كنا نحكم بطهارة فضلاته صلى الله عليه وسلم الغريبة قال العلامة التلمسانى كل مولد غير الأنبياء يولد من الفرج وكل الانبياء غير نبينا مولودون من فوق الفرج وتحت السرة وأما نبينا صلى الله عليه وسلم فمولود من الخاصرة اليسرى تحت الضلوع ثم التام لوقته خصوصية له ولم يصح نقل ن نبيا من-الانبياء ولد من لفرج ولهذا افتي المالكية بقتل من قال ان النبي صلي الله عليه وسلم ولد من مجري ايول -انتها –
অর্থঃ- ”আল্লামা আবদুল্লাহ শাবরাভী শাফেয়ী (رضي الله عنه) স্বীয় ‘আল আতহাফ বিহুব্বিল আশরাফ’- গ্রন্থে নবী করিম [ﷺ]-এঁর পবিত্র দেহ থেকে বহির্গত যাবতীয় বর্জ বস্তুর পবিত্রতা শীর্ষক আলোচনা প্রসঙ্গে আল্লামা তিলিমসানী কর্তৃক একটি ফতোয়ার উল্লেখ করে বলেন - উক্ত আল্লামা তিলিমসানী ফতোয়া দিয়েছেন যে, ”আম্বিয়ায়ে কেরাম (عليهم السلام) ব্যতীত প্রত্যেক মানব সন্তান মায়ের প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে ভূমিষ্ট হয়ে থাকে। অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরামগণ (عليهم السلام) ভূমিষ্ট হয়েছেন মায়ের নাভি ও প্রস্রাবের রাস্তার মধ্যবর্তীস্থান দিয়ে এবং আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা [ﷺ] ভূমিষ্ট হয়েছেন বিবি আমেনার (رضي الله عنه) বাম উরুদেশ দিয়ে – যা বাম পাঁজরের হাঁড়ের নিচে অবস্থিত। তারপর উক্ত স্থান সাথে সাথেই জোড়া লেগে যায়। এই বিশেষ ব্যবস্থাধীনে ভূমিষ্ট হওয়া নবী করিম [ﷺ]-এঁর একক বৈশিষ্ট্য। কোন নবী (عليه السلام) মায়ের প্রস্রাবের স্থান দিয়ে ভূমিষ্ট হওয়ার বর্ণনাটি সঠিক নয়। একারণেই মালেকী মাযহাবের মুফতী ও উলামাগণ ফতোয়া দিয়েছেন যে, ”যে ব্যক্তি বলবে – নবী করিম [ﷺ] মায়ের প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে ভূমিষ্ট হয়েছেন, তাকে কতল করা ওয়াজিব” (উমদাতুন নুকুল ফী কাইফিয়াতে বিলাদাতির রাসূল- মাওলানা আবদুল আউয়াল জৌনপুরী এবং মূল গ্রন্থ আল আতহাফ বি-হুব্বিল আশরাফ- আল্লামা শাবরাভী)
(মূল কিতাব ”আল আতহাফ” লন্ডন থেকে ফটোকপি করে নিয়ে এসেছি)।
উক্ত ফতোয়া উল্লেখ করে মাওলানা আবদুল আউয়াল জৌনপুরী সাহেব নিজের মন্তব্য ও ফতোয়া এভাবে পেশ করেছেনঃ-
اقول وبالله التوفيق- انه لما كان صلي الله عليه وسلم نورا كما قال الله تعالى فى القرآن المجيد قَدۡ جَآءَكُمۡ مِّنَ اللّٰهِ نُوۡرٌ وَّكِتٰبٌ مُّبِيۡنٌۙ٠ وكما روى عن ذكوان أنه لم يكن له صلى الله عليه وسلم ظل لا فى قمر رواه الحاكم الترمذى وكما قال ابن سبع كان صلى الله عليه وسلم نورا فكان إذا مشى فى الشمس أو القمر لا يظهر له ظل قال غيره ويشهد له قوله عليه السلآم فى دعائه واجعلني نورا كذا فى المواهب والذى يدل على أنه كان نورا فى يكن أمه أيضا الاخ … فأى استبعاد خروجه صلى الله عليه وسلم من غير مخرج معتاد للناس وإذا أراد الله لخلق يخلق ويبدع كيف ما يشاء إبداعا حقيقا من غير مثال سبق الأخ
অর্থঃ- “আল্লাহর নিকট তৌফিক চেয়ে আমি (আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী) বলছি- নবী করিম [ﷺ] আপাদমস্তক দেহধারী নূর।” যেমন, কোরআন মাজীদে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে একজন সম্মানিত নূর ও একটি স্পষ্ট কিতাব এসেছে।” পবিত্র হাসীসেও রাসূল [ﷺ]-কে নূর বলে প্রমাণ করা হয়েছে। যেমন- হযরত যাকওয়ান (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে এসেছে যে- “চন্দ্র-সূর্যের আলোতে নবী করিম [ﷺ]-এঁর ছায়া পড়তো না।”
কেননা, নূরের ছায়া হয় না। উক্ত হাদীস হাকিম তিরমিজী নিজ কিতাবে সংকলন করেছেন। হযরত ইবনে ছায়াব বর্ণনা করেন-“নবী করিম [ﷺ] ছিলেন আপাদমস্তক নূর। কেননা, যখন তিনি দিবাকরের আলোতে কিংবা চন্দ্রিমা নিশিতে চলাফেরা করতেন, তখন তাঁর ছায়া দেখা যেত না।”
নূরের প্রমাণবহ আরেকখানা হাদীস অন্য সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। নবী করিম [ﷺ] উক্ত হাদীসে এরশাদ করেছেন, “হে আল্লাহ! আমাকে নূর হিসেবে গণ্য কর।” (মাওয়াহেবে লাদুনিয়া)
নবী করিম [ﷺ] যে মায়ের গর্ভেও নূর হিসেবেই বিরাজমান ছিলেন, এ মর্মে আবু যাকারিয়া ইবনে ইয়াহইয়া কর্তৃক বর্ণিত হাদীসও এটার সত্যতা প্রমাণ করে। “সুতরাং নবী করিম [ﷺ] অন্যান্য মানব সন্তানের জন্মের চিরাচরিত নিয়মের ব্যতিক্রমধর্মী স্থান দিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেছেন, এটা কোন অসম্ভব ব্যাপারই নয়।” আল্লাহ যখন কিছু সৃষ্টির ইচ্ছা করেন, তখন পুর্ববর্তী চিরাচরিত যে কোন নিয়ম ও রীতি ভঙ্গ করে নূতন পন্থায় সম্পূর্ণ নতুন নিয়মে সৃষ্টি করতে পারেন।
তোমরা কি জান না, কিভাবে আদম-হাওয়াকে চিরাচরিত নিয়মের ব্যতিক্রমধর্মী নিয়মে পয়দা করেছেন? হযরত ঈসা (عليه السلام)-কেও চিরাচরিত নিয়মের বিপরীত ব্যবস্থায় শুধু মায়ের গর্ভে বীর্য ছাড়া পয়দা করেছেন।” সুতরাং নবী করিম [ﷺ]-কে ভিন্ন নিয়মে ভূমিষ্ঠ করানো অসম্ভব হবে কেন? –আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী।
পাঠকবৃন্দ! জৌনপুরের মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেব নবী করিম [ﷺ]-কে আপাদমস্তক নূর বলেছেন এবং মায়ের নাভির বামপার্শ্ব দিয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রমাণ দিয়েছেন। অথচ মাওলানা ফজলুল করিম তার ‘নূরে মুহাম্মদী’ বইয়ে নবীকে মাটি বলে উল্লেখ করেছে। ঢাকার দারুস সালামের আব্দুল কাহহার তার ‘অসিয়ত ও নছিহত’ বইয়ে বলেছে, “রাসূলে পাক [ﷺ] পিতার নাপাকী মায়ের নাপাকীর সাথে মিশে গর্ভে গিয়ে পুনরায় মায়ের নাপাক জায়গার ভিতর দিয়েই পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন।” (নাউজুবিল্লাহ!)
তাদের এই অশালীন ও অসভ্য উক্তি কুফরী পর্যায়ভুক্ত। (তাহকীরুল আম্বিয়ায়ে কুফরুন, ফয়যুল বারী শরহে বুখারী)
আমরা এখানে জৌনপুরের মাওলানা আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী ও দারুস সালামের আব্দুল কাহহার গংদের মধ্যে তুলনা করলে দেখতে পাবো, একজনের কথা সুপ্রমাণিত ও নূরে ভরপুর এবং অন্যজনের কথা দুর্গন্ধময় ও কুফরীতে ভরপুর এবং প্রমাণবিহীন। মাওলানা আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী সাহেব ছিলেন বিজ্ঞ আলেম এবং কাহহার হচ্ছে নিরেট জাহেল ও মুর্খ।
আওর মুহাম্মদীয়া তরীকার সিলসিলার মধ্যে ফুরফুরার চেয়ে অনেক উপরে জৌনপুর। একথা কোন সমালোচকও স্বীকার করতে বাধ্য। মজার ব্যাপার হলো, মাওলানা আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী সাহেব যে পীরের সিলসিলাভূক্ত অর্থাৎ ছৈয়দ আহমদ বেরেলভীর তরীকায়ে মুহাম্মদীয়া, সে তরীকারই একজন অধঃস্তন স্বঘোষিত পীর আব্দুল কাহহার কিভাবে কোন প্রমাণ ছাড়াই নাপাক স্থান দিয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়ার এমন কুৎসিত বিবরণ দিতে পারলো? তার মা সম্পর্কে যদি কেউ এমন অশ্লীল উক্তি করে, তাহলে তার মনে কি কষ্ট আসবে না? নিশ্চয়ই আসবে।
তাহলে নবী করিম [ﷺ]-এঁর পিতামাতা সম্পর্কে আব্দুল কাহহার যে মিথ্যা উক্তি করেছে, তাতে কি নবীজী’র হৃদয়ে আঘাত লাগে নি? নিশ্চয়ই লেগেছে। কেননা, তিনি হায়াতুন্নবী। তিনি উম্মতের ভালমন্দ কর্ম ও চিন্তাধারনা সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। হাদীসে পাকে এসেছে-
انما اعمالكم تعرضون على –
অর্থঃ “তোমাদের ভালমন্দ সব আমলই আমার নজরে আনা হয়।”
সুতরাং নবী করিম [ﷺ]-এঁর ব্যতিক্রমধর্মী বেলাদাত শরীফ সম্পর্কে কোন ঈমানদারের মনে আর সন্দেহ থাকতে পারে না।
কিতাবে প্রমাণ পাওয়া গেলে মানতে অসুবিধা কোথায়? আসলে এক ধরণের জ্ঞানপাপীরা সবসময়ই নবী করিম [ﷺ]-কে সাধারণ মানুষের সাথে তুলনা করতে আনন্দবোধ করে! যেমন- আনন্দবোধ করতো মক্কার কাফিরগণ। তারা বলতো- “মুহাম্মদ [ﷺ] তো আমাদের মতই একজন মানুষ।” এ ধরণের উক্তি কাফেররাই করে, কোন মোমেন করতে পারে না। নবীজী বিনয়মূলক বলতে পারেন, “আমি তোমাদের ন্যায় একজন মানুষ।” কিন্তু উম্মত একথা বলতে পারবে না যে, তিনি আমাদের মতই একজন মানুষ।
সারকথা হলো, সাধারণ সন্তানগণের ভূমিষ্ঠ হওয়ার ধরণ এক রকমের। অন্যান্য নবীগণ (আলাইহিমুস সালাম)’র ভূমিষ্ঠ হওয়ার ধরণ আরেক রকমের এবং আমাদের নবী করিম [ﷺ]-এঁর ভূমিষ্ঠ হওয়ার ধরণ অন্যান্য নবীগণ থেকেও ভিন্ন।
সাধারণ ডাক্তারগণ বর্তমানকালে নরমাল ও সিজারিয়ান- এই দুই পদ্ধতিতেই সন্তান ভূমিষ্ঠ করাতে সক্ষম। সৃষ্টিকর্তার কুদরত কি এতই অক্ষম হয়ে গেলো? (নাউজুবিল্লাহ!) নবীগণের জন্ম-মৃত্যু ও জীবনপদ্ধতি সাধারণ মানুষের চেয়ে উন্নত ধরণের হওয়াই যুক্তিযুক্ত। সবকিছুই যদি সাধারণ মানুষের ন্যায় হতো, তবে তাঁদেরকে মহামানব বলা হতো না। আল্লামা শরফুদ্দীন বুছিরী, যিনি নবীজী’র শানে কছিদায়ে বুরদা লিখে দুরারোগ্য প্যারালাইসিস থেকে আশ্চর্যজনকভাবে মুক্তিলাভ করেছিলেন। তিনি তাঁর কাসিদায় বলেছেনঃ-
محمد بشر لا كالبشر-ياقوت حجز لا كالحجر-
”মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানবজাতি হয়েও কোন মানুষের মতোই নন। যেমন ইয়াকুত পাথর হয়েও অন্য কোন পাথরের মতো নয় (কাসিদায়ে বুরদা শরীফ)।
নবীজির হাকীকত পরিচয় দিয়ে জনৈক উর্দু কবি বলেছেনঃ-
تو خدا نہین جو خدا کہون
تو بتا تجھے کیا کہون
نھ فلک پہ تیرا جواب ہے
نھ زمین پہ تیری مثال ہی
بلغ العلے
অর্থাৎঃ- ”হে প্রিয় রাসুল! আপনি তো খোদা নন যে – খোদা বলবো। আপনিই বলে দিন – আপনাকে কি নামে আখ্যায়িত করবো? কেননা, উর্দ্ধজগতেও আপনার মতো কেউ নেই এবং জমীনেও আপনার মতো কেউ নেই।” অর্থাৎ আপনার উদাহরণ আপনিই। ”নূরের ফেরেশতা যে সীমায় গেলে জ্বলে পুড়ে যায়, সেখানে আপনি নিরাপদে বিচরণ করেছেন।”
বুঝা গেলো – তিনি মাটির দেহধারী ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন নূরানী মহামানব।