শেয়ার কাকে বলে? শেয়ার সম্পদের যাকাত কিভাবে আদায় করতে হবে?
যৌথ মূলধনী কোম্পানির মোট মূলধনকে সমমূল্য বিশিষ্ট বহুসংখ্যক ক্ষুদ্রাংশে বিভক্ত করা হয়। এরূপ ক্ষুদ্রাংশগুলোকে শেয়ার বলে। শেয়ার মালিককে কোম্পানির নিট সম্পত্তির একজন অংশীদার হিসাবে গণ্য করা হয়। শেয়ার ক্রয়ের উদ্দেশ্য বৃহৎ কোম্পানির ব্যবসায় বিনিয়োগ, কোম্পানির আংশিক মালিকানা অর্জন এবং লভ্যাংশ বা মুনাফা উপার্জন করা। ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ যেমন- অসামাজিক বা অনৈতিক ব্যবসায়ে লিপ্ত, নিষিদ্ধ পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয় বা সুদী কারবার ও দৈবনির্ভর লেনদেনে নিয়োজিত কোম্পানির শেয়ার ক্রয় বৈধ নয়।
কোম্পানি নিজেই যদি শেয়ারের উপর যাকাত প্রদান করে তাহলে শেয়ার মালিককে তার মালিকানাধীন শেয়ারের উপর যাকাত দিতে হবে না। কোম্পানি যাকাত প্রদান করতে পারবে যদি কোম্পানির উপ-বিধিতে এর উল্লেখ থাকে অথবা কোম্পানির সাধারণ সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় অথবা শেয়ার মালিকগণ কোম্পানিকে যাকাত প্রদানের ক্ষমতা প্রদান করেন। কোম্পানি নিজে তার শেয়ারের উপর যাকাত প্রদান না করলে শেয়ার মালিককে নিম্নোক্ত উপায়ে যাকাত প্রদান করতে হবে:
১. শেয়ার মালিক যদি শেয়ারগুলো বার্ষিক লভ্যাংশ অর্জনের কাজে বিনিয়োগ করে, তাহলে যাকাতের পরিমাণ নিম্নোক্ত উপায়ে নির্ণয় করা হবে: (ক) শেয়ার মালিক যদি কোম্পানির হিসাবপত্র যাচাই করে তার মালিকানাধীন শেয়ারের বিপরীতে যাকাতযোগ্য সম্পদের পরিমাণ জানতে পারেন, তাহলে তিনি ২.৫% হারে যাকাত প্রদান করবেন। (খ) কোম্পানির হিসাবপত্র সম্পর্কে যদি তার কোন ধারণা না থাকে তাহলে তিনি তার মালিকানাধীন শেয়ারের উপর বার্ষিক অর্জিত মুনাফা যাকাতের জন্য বিবেচ্য অন্যান্য সম্পত্তির সাথে মূল্য যোগ করবেন এবং মোট মূল্য নিছাব পরিমাণ হলে ২.৫% হারে যাকাত প্রদান করবেন।
২. শেয়ার মালিক যদি শেয়ার বেচাকেনার ব্যবসা (মূলধনীয় মুনাফা) করার জন্য শেয়ারগুলো ব্যবহার করেন তাহলে যেদিন যাকাত প্রদেয় হবে, শেয়ারের সেদিনের বাজার মূল্য ও ক্রয়-মূল্যের মধ্যে যেটি কম তারই ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে ২.৫% হারে যাকাত প্রদান করবেন। একজন শেয়ার মালিক ইচ্ছে করলে যেকোন সময় শেয়ার বিক্রি করে দিতে পারেন। কোম্পানির শেয়ার ক্রয় ও বিক্রয়ের এই স্বাধীনতা শেয়ার বাজারকে এমন পরিণতির দিকে নিয়ে যায় যে, কিছু ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে শেয়ারের মূল্য বাড়িয়ে বা কমিয়ে একটি সাধারণ ব্যবসা কার্যক্রমকে প্রায় জুয়াখেলায় পরিণত করে। এটা ইসলামী শরীয়ার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অবৈধ। উল্লেখ্য যে, সমবায় সমিতিতে বিনিয়োগকৃত টাকার পরিমাণ যদি নিছাব পরিমাণ হয় বা যাকাতযোগ্য অন্য কোন সম্পদের সাথে যোগ করলে নিছাব পরিমাণ হয়, তাহলেও এর যাকাত দিতে হবে।
ব্যবসা বা বাণিজ্যিক সম্পদ কাকে বলে? এর যাকাত কিভাবে আদায় করতে হবে?
ব্যবসার নিয়তে (পুনঃবিক্রয়ের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ মুনাফা অর্জনের জন্য) ক্রয়কৃত, আমদানী-রপ্তানী পণ্য, ট্র্যানজিট বা পরিবহন পণ্য, বিক্রয় প্রতিনিধির (এজেন্ট) কাছে রাখা পণ্যদ্রব্য ও মজুদ মালামালকে ব্যবসা বা বাণিজ্যিক সম্পদ বলে। ব্যবসার পণ্যের উপর সর্বসম্মতভাবে যাকাত ফরয। এমনকি ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত জমি, দালান বা যেকোন বস্তু অথবা মালামালের মূল্যের উপরও যাকাত প্রদান করতে হবে। বাকী বিক্রির পাওনা, এলসি মার্জিন ও আনুষঙ্গিক খরচ, ব্যবসার নগদ অর্থসহ অন্যান্য চলতি সম্পদ যাকাতের হিসাবে আনতে হবে।
অন্যদিকে ব্যবসার দেনা যেমন বাকীতে মালামাল বা কাঁচামাল ক্রয় করলে কিংবা বেতন, মজুরী, ভাড়া, বিদ্যুৎ, টেলিফোন ও গ্যাস বিল, কর ইত্যাদি পরিশোধিত না থাকলে উক্ত পরিমাণ অর্থ যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে। যাকাত নির্ধারণের জন্য বিক্রেতা তার পণ্যের ক্রয়-খরচ মূল্যকে (ক্রয়মূল্যের সাথে ভাড়াসহ ক্রয়-সংক্রান্ত অন্যান্য খরচ যোগ করে) হিসাবে ধরবেন। ব্যবসা বা বাণিজ্যিক সম্পদ যদি স্বর্ণ বা রূপার নিছাব পরিমাণ হয় তাহলে ৪০ ভাগের এক ভাগ সম্পদ বা এর সমমূল্যের টাকা যাকাত হিসেবে দিতে হবে।
ইসলামী গবেষণা বিভাগ
বাগদাদী ফাউন্ডেশন, কুমিল্লা- ৩৫০০, বাংলাদেশ।