শানে মুস্তাফা ﷺ

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

পাপিষ্ট ইয়াজিদ (লাঃ) কর্তৃক মদিনা আক্রমণ

রওজা হতে গুণগুণ শব্দে নামাজের ওয়াক্ত নির্ধারণ

সাঈদ ইবনে আব্দুল আযীয রহঃ বলেন, আইয়ামুল হাররায় (যেই সময়ে ইয়াজিদ কর্তৃক মদিনা শরীফের উপর অত্যাচার চালানো হয়েছিল) মসজিদে নববী ﷺ এ তিন দিন পর্যন্ত আজান ও জামা’আতে নামাজ অনুষ্ঠিত হয়নি। সে সময় সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যেব (রঃ) মসজিদেই আটকা পড়েছিলেন। কিন্তু নামাজের ওয়াক্ত নির্ধারণ করতে পারতেন না, তবে (নামাজের ওয়াক্ত হলে) তিনি নবী ﷺ এঁর রওজা হতে গুণগুণ শব্দ শুনতে পেতেন। (সুনান আদ দারেমী ৯৪, মিশকাত ৫৯৫১)

ইমাম দারেমী রহঃ এটি বর্ণনা করেছেন, সুনান আদ দারেমীর ভূমিকা অধ্যায়ের “ওফাতের পর নবী ﷺ কে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক সম্মান দেয়া” নামক পরিচ্ছেদে। খতিব তিবরিযী রহঃ এনেছেন মিশকাতের “বাবুল কারামাত” এ।

মিশকাতের এই হাদিসের ব্যাখ্যায় আহলে হাদিসদের hadithbd ওয়েবসাইটে রয়েছে, ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা (হাররার দিন) ইসলামের ইতিহাসে একটি প্রসিদ্ধ দিন। ইয়াযীদ ইবনু মু’আবিয়াহ্-এর সিরিয়া থেকে আগত সেনাবাহিনী মদীনায় হামলা করেছিল মদীনায় থাকা সাহাবী ও তাবিঈদেরকে হত্যা করার জন্য। তাঁর সেনাপতি ছিল মুসলিম ইবনু ‘উয়াইনাহ আল মুরুরী। আর এ ঘটনা ঘটেছিল হিজরী ৬৩ সনের যিলহজ্জ মাসে। এ ঘটনার পরপরই ইয়াযীদ মারা গিয়েছিল। এ ঘটনাটি ঘটেছিল মদীনার হাররাহ্ এলাকায় যেখানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কালো অনেক পাথর ছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

বাংলায় অনুদিত, আহলে হাদিস মান্যবর ইমাম ইবনুল জাওযি এর লিখিত “ইয়াযিদকে নিন্দা করার বৈধতা ও বিরুদ্ধবাদীদের যুক্তিখন্ডন” এর ৫১ পৃষ্ঠায় রয়েছে,

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. এর ছেলে সালিহ রহঃ একবার উনার আব্বাজানকে বলেন, “একদল লোক আমাদেরকে ইয়াযিদের মিত্র (বন্ধু) বলে মনে করে।” তিনি (ইমাম আহমাদ রহঃ) বললেন, বাছা! ইয়াযিদের সাথে ঈমানদার কেউ সম্পর্ক রাখতে পারে???

সালিহ রহঃ বললেন, তাহলে আপনি তাকে লানত দেন না কেন? তিনি বললেন, তুমি কবেই বা আমাকে কোন কিছুকে লানত দিতে দেখেছ? আল্লাহ স্বয়ং যাকে পবিত্র কুরআনেই লানত দিয়েছেন, তাকে কেন লানত দেয়া হবে না?

সালিহ রহঃ বললেন, আল্লাহ তার কিতাবের কোথায় ইয়াযিদকে লানত দিলেন? তখন ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. নিম্নোক্ত কুরআনের আয়াত পাঠ করলেন:

“তবে কি তোমাদের এই লক্ষণ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে যে,

যদি তোমরা শাসন-ক্ষমতা লাভ কর তবে পৃথিবীতে বিপর্যয় (ফাসাদ) ছড়াবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। আল্লাহ এদেরকেই লানত করেন আর বধির ও অন্ধ করেন।” (সূরা মুহাম্মাদ: ২২-২৩)

ইয়াজিদ শুধুমাত্র প্রিয় নবী ﷺ এঁর দৌহিত্র জান্নাতী যুব-সর্দার ইমাম হুসাইন রঃ এবং অন্যান্যদের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিল এমন নয় বরং তার নিকৃষ্টতম কাজের মধ্যে পবিত্র মক্কা ও মদিনায় আক্রমণ করাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইমাম হুসাইন রঃ এঁর শাহাদাতের ঘটনার সাথে আমরা নবীজি ﷺ এঁর একটি মু’জিযা তথা আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতায় কারবালায় উপস্থিত হওয়ার ঘটনা দেখতে পায়। তেমনিভাবে ইয়াজিদ কর্তৃক মদীনায় আক্রমণের ঘটনার সাথেও আমরা দেখতে পেলাম নবীজির অন্য এক মু’জিযা।

হ্যাঁ, আল্লাহ প্রদত্ত এই মর্যাদার বর্ণনা অন্যান্য হাদিসে পাকেও পাওয়া যায়-

রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, (মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেও আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতায়) নবীগণ তাদের কবরে জীবিত। তারা সেখানে সালাত আদায় করেন। [মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ৩৪২৫; হায়াতুল আম্বিয়া লিল বাইহাকী, হাদীস ১-৪, ফাতহুল বারী ৬/৬০৫]

এভাবে শুধু আমাদের নবী নন, অন্যান্য নবীগণও আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতায় জীবিত এবং আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতায় বিভিন্ন জায়গায় উপস্থিত বা হাজির হতে পারেন। মিরাজের রাত্রির ঘটনাগুলোও এটিই প্রমাণ করে।

রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ যে রাত্রে আমার মি‘রাজ হয়েছিল সে রাত্রে আমি মূসা (আলায়হিস সালাম) এঁর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি লাল বালুকা স্তুপের নিকট তাঁর রওজায় দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন।

(সহিহ মুসলিম ৬০৫১)

রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা নবীদের দেহ ভক্ষণ করা মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন। নবীগণ কবরে জীবিত এবং তাদেরকে রিযিক দেয়া হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ ১৬৩৭, মিশকাত ১৩৬৬…….)

বিখ্যাত ফকিহ ও হাদিস বিশারদ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহঃ উল্লেখ করেন,

আউলিয়াদের ইহকালীন জীবনের অবস্থা এবং পরকালীন জীবনের অবস্থার মাঝে কোন পার্থক্য নাই, এজন্য বলা হয় আল্লাহর ওলীগণ (প্রিয় বান্দাগণ, সাধারণদের মত) মৃত্যুবরণ করেন না বরং (মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে, দুনিয়া হতে পর্দা করে) তারা এক ঘর থেকে আরেক ঘরে বা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবর্তন হন মাত্র। তিনি আরো উল্লেখ করেন, ইমাম বায়হাকী রহঃ বলেন, নবীগণ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত হতে পারেন এটা আকল দ্বারাও বৈধ, যেমনিভাবে হাদিস দ্বারাও প্রমাণিত। (মিশকাতের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মেরকাতের ৩য় খন্ড, ৪১৪-৪১৫ পৃষ্ঠা)

ইমাম আহমদ রেজা খান ব্রেলভী রহঃ রাসূলে পাক ﷺ এঁর শানে লিখেন,

তু জিন্দা হ্যায় ওয়াল্লাহ, তু জিন্দা হ্যায় ওয়াল্লাহ,

মেরে চশমে আলম ছে ছুপ জানে ওয়ালে

বঙ্গানুবাদঃ

আল্লাহ’র কসম! (হে নবী ﷺ!) আপনি জিন্দা,

  (কিন্তু) আমার চোখের আড়াল হয়ে আছেন।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment