মূল: শায়খ সালিম আল-সানহুরী (মিসর)
সম্পাদনা: শায়খ সালিহ আল-জা’ফরী (মিসর)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
আরবী রিসোর্স: মওলানা Muhammad Robayed Bin Musa
[”রেসালাত আল-কাশফ ওয়াল-বয়ান ‘আন ফাযায়েলে লায়লাত আন-নিসফে মিন শা’বান” শীর্ষক পুস্তিকা থেকে সংগৃহীত]
ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, আত্ তাবারানী, আদ্ দারু কুতনী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ও অন্যান্য হাদীসবেত্তা বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
إِنَّ اللَّهَ لَيَطَّلِعُ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ.
– আল্লাহতা’লা শা’বান মাসের ১৫ তারিখের রাতে সবাইকে মাফ করেন, কেবল তাঁর সাথে শরীককারী ব্যক্তি ও মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ ও বৈরিতা পোষণকারী ব্যক্তি (মোশায়াহিন) ছাড়া। [১]
আদ্ দারু কুতনী ও অন্যান্য উলেমা বর্ণনা করেন যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
يَطْلُعُ اللهُ عَلَى عِبَادِهِ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِلْمُؤْمِنِينَ وَيُمْهِلُ الْكَافِرِينَ، وَيَدَعُ أَهْلَ الْحِقْدِ بِحِقْدِهِمْ حَتَّى يَدْعُوهُ.
– শবে বরাতের রাতে আল্লাহ পাক ঈমানদারদের ক্ষমা করেন এবং অবিশ্বাসীদের শাস্তি বিলম্বিত করেন; এর ব্যতিক্রম হলো (অন্তরে) আক্রোশ (হিকদ) লালনকারী ব্যক্তিবর্গ, যাদেরকে তিনি (শাস্তির মধ্যে) ছেড়ে দেবেন যতোক্ষণ না তারা আক্রোশ পরিত্যাগ করে।[২]
ইমাম আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে তিনি ইমাম আওযাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি-কে ’মোশায়াহিন’ (অন্তরে বিদ্বেষভাব পোষণকারী ব্যক্তিবর্গ) শব্দটির ব্যাখ্যা করতে শুনেছেন এভাবে যে,
أَرَادَ بِالْمُشَاحِنِ هَاهُنَا صَاحِبُ الْبِدْعَةِ اْلمُفَارِقِ لِجَمَاعَةِ الْأُمَّةِ.
– ওই লোকেরা হলো বেদআতী (ধর্মে নতুন প্রথা প্রবর্তনকারী) যারা জামা’আত ও উম্মাহকে ত্যাগ করেছে।
হযরত উমর ইবনে হানী’ বলেন,
هُوَ الْتَّارِكُ لِسُنَّةِ نَبِيِّهِ صَلَّىَ اَللهُ عَلَيْهِ وَآَلِهِ وَسَلَّمَ اَلْطَّاعِنُ عَلَىْ أُمَّتِهِ، اَلْسَّافِكُ لِدِمَائِهِمْ.
– আমি হযরত ইবনে সওবান রহমতুল্লাহি আলাইহি-কে ’মোশায়াহিন’-দের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেন, এই ব্যক্তি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহকে ত্যাগ করেছে, তাঁর উম্মাহর প্রতি বিষোদগার করছে এবং তাঁদের রক্ত ঝরাচ্ছে।[৩]
হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী শবে বরাতকে ’লাইলাতুল হায়াহ’ তথা জীবনের রাতও বলা হয়। নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
مَنْ أَحْيَا لَيْلَةَ الْعِيدِ، وَلَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ لَمْ يَمُتْ قَلْبُهُ يَوْمَ تَمُوتُ الْقُلُوبُ
– যে ব্যক্তি ঈদের রাত ও মধ্য-শা’বানের রাতকে (এবাদত দ্বারা) জীবন্ত করে তুলবে, তার অন্তর ওই দিন মারা যাবে না যেদিন অন্তরসমূহ মারা যাবে” [হাদীসবেত্তা ইমাম মুনযিরী কর্তৃক বর্ণিত]। [৪]
এর মানে হলো, ওই পুণ্যবান ব্যক্তির অন্তর দুনিয়ার মোহে দুষ্ট হবে না, যেহেতু এর দরুন তিনি নেক আমল ও ধর্মীয় কাজে ব্যস্ত থাকবেন; কেননা, অন্য এক হাদীসে এরশাদ হয়েছে,
– মৃতদের সাথে বসো না!
অর্থাৎ, দুনিয়ার মোহাচ্ছন্ন লোকদের এখানে ‘মৃত’ বলা হয়েছে।
لَمْ يَمُتْ قَلْبُهُ يَوْمَ تَمُوتُ الْقُلُوبُ
– অন্তরসমূহ যেদিন মারা যাবে সেদিন তার অন্তর মারা যাবে না।
এই হাদীসটির অর্থ,
وَاَلْمُرَادُ بِعَدَمِ مَوْتِ قَلْبِهِ عَدْمِ تَحَيَّرهِ عِنْدَ الَنَّزْعِ وَالْقِيَامَةْ
– তার রূহ কবজের সময় বে-ঈমান হবে না এবং পুনরুত্থান দিবসেও সে বিভ্রান্ত (পেরেশান) হবে না।
তথ্যসূত্র:
[১] ইবনে মাজাহ : আস সুনান, বাবু মা জাআ ফি লায়লাতিন নিসফি, ১:৪৪৫ হাদীস নং ১৩৯০।
(ক) ইবনে হিব্বান : আস সহীহ, ১২:৪৮১ হাদীস নং ৫৬৬৫।
[২] তাবারানী : আল মু‘জামুল কাবীর, মাকহূল আন আবী ছা‘লাবা, ২২:২২৩। (ক)বায়হাকী : আস সুনান আস সগীর, বাবু সাওমি ফিশ শা‘বান, ২:১২২ হাদীসনং ১৪২৬।
[৩] আত তারগীব ওয়াত তারহীব, ২:৩৯৭।
[৪] ইবনে আ‘রাবী : আল মু‘জাম, ৩:১০৪৭ হাদীস নং ২২৫২।
*সমাপ্ত*