শবে বরাত এর নামকরণ ও তার উল্লেখযোগ্য নামসমূহ
شب برات (শবে বরাত) ফার্সী শব্দ, شب (শব) মানে রাত, আর برات (বরাত) মানে ভাগ্য, অর্থাৎ ভাগ্যরজনী। আর এ পবিত্র রাতের আরও বিভিণœ নাম পাওয়া যায়, যেমন- ১. ليلة البراء ة (লাইয়লাতুল বরাত বা বণ্টনের রাত) ২. ليلة مباركة (লাইলাতু মুবারাকা বা বরকতময় রজনী) ৩. ليلة الرحمة (লাইলাতুর রাহমা বা করুণার রজনী) ও ৪. ليلة الصك (লাইলাতুছ্ ছাক বা সনদপ্রাপ্তির রাত)।
হযরত আবদুল কাদের জিলানী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি তাঁর রচিত “গুনিয়াতুত্ ত্বালেবীন” এ উল্লেখ করেন:
: وقيل إنما سميت ليلة البراءة لأن فيها براءتين: براءة للأشقياء من الرحمن وبراءة للأولياء من الخذلان. ( )
‘এ রাতকে ‘লাইলাতুল বরাত’ বলা হয় এ জন্য যে, কেননা এ রাতে দু’ধরনের বরাত হাছিল হয়। একটি হলোঃ হতভাগাদের আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া, অপরটি হলোঃ আল্লাহর প্রিয়জনদের অপমান থেকে মুক্ত ও নিরাপদ থাকা।’’ ( )
আল্লামা যমখ্শরী তাঁর ‘কাশ্শাফ’ নামক তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেন-
ثم أن ليلة النصف من شعبان لها أربعة أسماء: الليلة المباركة، وليلة البراءة، وليلة الصك، وليلة الرحمة، وقيل إنما سميت بليلة البراءة، وليلة الصك، لأن البندار إذا استوفى الخراج من أهله كتب لهم البراءة، كذلك الله عزّ وجلّ يكتب لعباده المؤمنين البراءة في هذه الليلة. (
‘‘নিশ্চয় শাবানের মধ্য রজনী’র চারটি উল্লেখযোগ্য নাম রয়েছে, আর তা হলো- الليلة المباركة লাইলাতুল মুবারাকা (বরকতময় রজনী) ليلة البراءة লাইলাতুল বরায়া (ভাগ্য রজনী) ليلة الرحمة লাইলার্তু রাহমাহ্ (করুণার রজনী) ও ليلة الصك লাইলাতুছ্ ছাক (সনদপ্রাপ্তির রজনী) এ রাতকে বরাত ও ছাক রাত নামে নামকরণের কারণ হিসেবে বলেন- যখন কোন ব্যক্তি তার উপর ধার্যকৃত কর পরিশোধ করেন তখন তাকে কর আদায়কারী ব্যক্তি বা সংস্থার পক্ষ থেকে একটি দায়মুক্তির সনদ দেয়া হয়, অনুরূপভাবে আল্লাহ্ তা’লা তাঁর প্রিয় বান্দাদের এ রাত্রিতে জাহান্নাম থেকে মুক্তির সনদ প্রদান করে থাকেন।’’ ( )
ক্স তাছাড়া, ইমাম কুরতুবী তাঁর তাফসীরের প্রসিদ্ধ গ্রন্থে পবিত্র ক্বোরআনের ‘সূরা দুখান’ এর আয়াত حم والكتاب المبين… এর ব্যাখ্যায় বলেন:
} حم، والكتاب المبين، إنا أنزلناه في ليلة مباركة إنا كنا منذرين- سورة الدخان. آيات: ১-৩{ وَاللَّيْلَة الْمُبَارَكَة لَيْلَة الْقَدْر. وَيُقَال: لَيْلَة النِّصْف مِنْ شَعْبَان, وَلَهَا أَرْبَعَة أَسْمَاء اللَّيْلَة الْمُبَارَكَة, وَلَيْلَة الْبَرَاءَة, وَلَيْلَة الصَّكّ, وَلَيْلَة الْقَدْر. وَوَصَفَهَا بِالْبَرَكَةِ لِمَا يَنْزِل اللَّه فِيهَا عَلَى عِبَاده مِنْ الْبَرَكَات وَالْخَيْرَات وَالثَّوَاب. وَرَوَى قَتَادَة عَنْ وَاثِلَة أَنَّ النَّبِيّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:] أُنْزِلَتْ صُحُف إِبْرَاهِيم فِي أَوَّل لَيْلَة مِنْ رَمَضَان وَأُنْزِلَتْ التَّوْرَاة لِسِتٍّ مَضَيْنَ مِنْ رَمَضَان وَأُنْزِلَتْ الزَّبُور لِاثْنَتَيْ عَشْرَة مِنْ رَمَضَان وَأُنْزِلَ الْإِنْجِيل لِثَمَانِ عَشْرَة خَلَتْ مِنْ رَمَضَان وَأُنْزِلَ الْقُرْآن لِأَرْبَعٍ وَعِشْرِينَ مَضَتْ مِنْ رَمَضَان [. ثُمَّ قِيلَ: أُنْزِلَ الْقُرْآن كُلّه إِلَى السَّمَاء الدُّنْيَا فِي هَذِهِ اللَّيْلَة. ثُمَّ أُنْزِلَ نَجْمًا نَجْمًا فِي سَائِر الْأَيَّام عَلَى حَسَب اِتِّفَاق الْأَسْبَاب. وَقِيلَ: كَانَ يَنْزِل فِي كُلّ لَيْلَة الْقَدْر مَا يَنْزِل فِي سَائِر السَّنَة. وَقِيلَ: كَانَ اِبْتِدَاء الْإِنْزَال فِي هَذِهِ اللَّيْلَة. وَقَالَ عِكْرِمَة: اللَّيْلَة الْمُبَارَكَة هَاهُنَا لَيْلَة النِّصْف مِنْ شَعْبَان.. ( )
আয়াতে ليلة مباركة বা বরকতময় রজনী মানে শবে ক্বদরকে বুঝানো হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন- তা হলো শাবানের মধ্যরজনী (ليلة النصف من شعبان) কে বুঝানো হয়েছে। এ রাতটির চারটি নাম উল্লেখ রয়েছে। আর তাহলো- লাইলাতুল মুবারাকাহ্, লাইলাতুল বারাআ, লাইলাতুল কা¦দর ও লাইলাতুছ্ ছাক। আর এ রাতকে ‘বরকতময় রজনী’ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে, কেননা এ রাতে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের উপর অগণিত বরকত, কল্যাণ ও পূণ্য অবতীর্ণ করে থাকেন। হযরত ক্বাতাদাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াছিলাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘রমযানের প্রথম রাতে অবতীর্ণ হয়েছে ছহীফা ইবরাহীম, সপ্তম রাতে তাওরাত, দ্বাদশতম রাতে যাবুর, উনবিংশ রাতে ইন্জীল এবং চব্বিশতম রাত সমাপনান্তে অবতীর্ণ হয় কুরআন করীম।’ অতঃপর বলা হয়, ‘এ রাতেই পবিত্র ক্বোরআন একই সাথে সম্পূর্ণরূপে অবতীর্ণ হয় এবং পরবর্তীতে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ধাপে ধাপে বছর জুড়ে অবতীর্ণ হয়। আরও বলা হয়, যে পরিমাণ ক্বোরআন সারা বছর অবতীর্ণ হয় ঠিক সমপরিমাণ ক্বোরআন কদরের রাতে অবতীর্ণ হয় একত্রে। আবার কেউ কেউ বলেন, ক্বোরআন অবতীর্ণ হওয়া আরম্ভ হয় শবে বরাতে। ইকরামা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, লাইলাতুল মুবারাকাহ্ মানে এখানে ‘শবে বরাত’ কে বুঝানো হয়েছে। ( )
তিনি আরও বলেন:
وَقَالَ عِكْرِمَة: هِيَ لَيْلَة النِّصْف مِنْ شَعْبَان يُبْرِم فِيهَا أَمْر السَّنَة وَيَنْسَخ الْأَحْيَاء مِنْ الْأَمْوَات, وَيَكْتُب الْحَاجّ فَلَا يُزَاد فِيهِمْ أَحَد وَلَا يَنْقُص مِنْهُمْ أَحَد. وَرَوَى عُثْمَان بْن الْمُغِيرَة قَالَ: قَالَ النَّبِيّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ]تُقْطَع الْآجَال مِنْ شَعْبَان إِلَى شَعْبَان حَتَّى أَنَّ الرَّجُل لِيَنْكِح وَيُولَد لَهُ وَقَدْ خَرَجَ اِسْمه فِي الْمَوْتَى[…قُلْت: وَقَدْ ذَكَرَ حَدِيث عَائِشَة مُطَوَّلًا صَاحِب كِتَاب الْعَرُوس, وَاخْتَارَ أَنَّ اللَّيْلَة الَّتِي يُفْرَق فِيهَا كُلّ أَمْر حَكِيم لَيْلَة النِّصْف مِنْ شَعْبَان, وَأَنَّهَا تُسَمَّى لَيْلَة الْبَرَاءَة… وقال الزَّمَخْشَرِيّ: ” وَقِيلَ يَبْدَأ فِي اِسْتِنْسَاخ ذَلِكَ مِنْ اللَّوْح الْمَحْفُوظ فِي لَيْلَة الْبَرَاءَة وَيَقَع الْفَرَاغ فِي لَيْلَة الْقَدْر ; فَتَدْفَع نُسْخَة الْأَرْزَاق إِلَى مِيكَائِيل, وَنُسْخَة الْحُرُوب إِلَى جِبْرِيل, وَكَذَلِكَ الزَّلَازِل وَالصَّوَاعِق وَالْخَسْف ; وَنُسْخَة الْأَعْمَال إِلَى إِسْمَاعِيل صَاحِب سَمَاء الدُّنْيَا وَهُوَ مُلْك عَظِيم ; وَنُسْخَة الْمَصَائِب إِلَى مَلَك الْمَوْت. ( )
হযরত ইকরামা বলেন, এটি হলো শাবানের মধ্য রজনী (শবে বরাত) আগত বছরের বিষয়াদি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, কারা জীবিত থাকবে এবং কারা মারা যাবে, কারা এ বছর হজ্ব করবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। ফলে এতে কেউ কোনরূপ পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারে না। হযরত ওসমান ইবনে মুগিরাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, শাবান থেকে শাবানের জন্য মানুষের আয়ু নির্ধারণ করা হয়, এমনি মানুষ বিবাহ্ করছে এবং তার সন্তান জন্ম লাভ করছে অথচ তার নাম মৃতদের কাতারে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আমি বলি ‘আল্ আরুস’ নামক কিতাবের লেখক হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা হতে বর্ণিত হাদীস শরীফটি সুবিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন এবং এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, যে রাতে সবকিছু বণ্টন করা হয় তা হলো শাবানের মধ্য রজনী বা শবে বরাত। এজন্য এটাকে বরাত রজনী বলা হয়। আল্লামা জমখ্শরী বলেন- ‘লওহে মাহ্ফুয’ এ লিপিবদ্ধকরণ শুরু হয় শবে বরাতে এবং তার পরিসমাপ্তি ঘটে শবে ক্বদরে। অতঃপর রিয্কের কপি দেয়া হয় হযরত মিকাঈল আলাইহিস্ সালামকে, যুদ্ধের কপি হযরত জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালামকে, অনুরূপভাবে ভূমিকম্প, বজ্রপাত ও ভূমিধ্বস বিষয়ক কপিও। আমলনামার কপি প্রথম আসমানের মহান ফিরিশতা হযরত ইসমাঈল আলাইহিস্ সালামকে এবং বিপদাপদের কপি হযরত আজরাঈল তথা মালাকুল মাওত আলাইহিস্ সালামকে সোপর্দ করা হয়। ( )
ক্স হযরত ইমাম বগবী এ আয়াতের তাফসীরে বলেন-
حم والكتاب المبين إنا أنزلناه في ليلة مباركة: قال قتادة وابن زيد: هي ليلة القدر أنزل الله القرآن في ليلة القدر من أم الكتاب إلى السماء الدنيا، ثم نزل به جبريل عن النبي – صلى الله عليه وسلم – نجوما في عشرين سنة. وقال آخرون: هي ليلة النصف من شعبان. فيها يفرق كل أمر حكيم : وقال عكرمة: هي ليلة النصف من شعبان يبرم فيها أمر السنة وتنسخ الأحياء من الأموات فلا يزاد فيهم أحد ولا ينقص منهم أحد. وأن رسول الله – صلى الله عليه وسلم – قال: ” تقطع الآجال من شعبان إلى شعبان، حتى إن الرجل لينكح ويولد له ولقد أخرج اسمه في الموتى “. وروى عن ابن عباس رضي الله عنهما أن الله يقضي الأقضية في ليلة النصف من شعبان، ويسلمها إلى أربابها في ليلة القدر. ( )
‘ইমাম ক্বাতাদাহ্ এবং ইবনে যায়েদ বলেন- এটি হলো ক্বদরের রাত। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর নিকট সংরক্ষিত উ¤মূল কিতাব (মূল কিতাব) থেকে ক্বদরের রাতকে পৃথিবীর আকাশে কোরআন নাযিল করেন। অতঃপর হযরত জিব্রাঈল বিশ বছর কাল যাবৎ ধরে ধাপে তা প্রিয় নবীর নিকট নিয়ে আসেন। আর অন্যরা বলেছেন- এটি হলো ‘শাবানের মধ্য রজনী’। فيها يفرق كل امرحكيم এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, এটি হলো শাবানের মধ্য রজনী, যাতে পূর্ণ বছরের বিষয়াদি নির্ধারণ করা হয়। হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা বর্ণনা করেন, আল্লাহ্ তা‘আলা নানা বিষয়ে ফয়সালা প্রদান করেন শাবানের মধ্য রজনীতে এবং তা এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতাদের নিকট সোপর্দ করেন ক্বদরের রাতে। ( )
ক্স ইমাম ইবনে কাছীর বলেন:
وَمَنْ قَالَ إِنَّهَا لَيْلَة النِّصْف مِنْ شَعْبَان كَمَا رُوِيَ عَنْ عِكْرِمَة فَقَدْ أَبْعَدَ النُّجْعَة فَإِنَّ نَصَّ الْقُرْآن أَنَّهَا فِي رَمَضَان. وَالْحَدِيث الَّذِي رَوَاهُ عَبْد اللَّه بْن صَالِح عَنْ اللَّيْث عَنْ عُقَيْل عَنْ الزُّهْرِيّ أَخْبَرَنِي عُثْمَان بْن مُحَمَّد بْن الْمُغِيرَة بْن الْأَخْنَس قَالَ: إِنَّ رَسُول اللَّه صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ]تُقْطَع الْآجَال مِنْ شَعْبَان إِلَى شَعْبَان حَتَّى إِنَّ الرَّجُل لَيَنْكِحُ وَيُولَد لَهُ وَقَدْ أُخْرِجَ اِسْمه فِي الْمَوْتَى[ فَهُوَ حَدِيث مُرْسَل وَمِثْله لَا يُعَارَض بِهِ النُّصُوص. ( )
“আর যারা বলেন, বরকতময় রাত বলতে মধ্য শা’বানের রাতকে বুঝানো হয়েছে যেমনটি ইকরামাহ কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে তাদের কথা সত্য থেকে বহু দূরে এবং যে হাদীসটি উছমান ইবনে আখনাস থেকে বর্ণিত অর্থাৎ “এক শাবান মাস হতে অন্য শাবান মাস পর্যন্ত মানুষের হায়াত মাউত ও রিযিকের বার্ষিক ফয়সালা হয়ে থাকে এমনকি কোন লোক বিবাহ করে এবং বাচ্চাও জন্ম গ্রহণ করে অথচ সে জানে না তার নাম মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে।” এ হাদীসটি মুরসাল (অর্থাৎ হাদীসটিতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ নেই।) এ ধরণের হাদীস দ্বারা সহীহ হাদীসকে খন্ডন করা যায় না। ” ( )
এ মাসকে কেন শাবান মাস নামে নামকরণ করা হয়েছে
تسمية شهر شعبان: إنما سمي شعبان لأنه يتشعب فيه خير كثير.وجاء في لسان العرب:شعبان اسم للشهر سمي بذلك لتشعبهم فيه… وقال ثعلب قال بعضهم إنما سمي شعبان شعبان لأنه شعب أي ظهر بين شهري رمضان ورجب ( )
এ মাসকে শাবান বলা হয়েছে এ জন্যই যে, এতে অফুরন্ত কল্যাণের ভান্ডার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ‘লিসানুল আরব’ নামক কিতাবে বলা হয়েছে- শাবানকে এ নামে অভিহিত করার কারণ হলো- কেননা আরবরা এ মাসে কল্যাণের সন্ধানে ছড়িয়ে পড়তো। ছা’লব বলেন- কারো কারো মতে শাবানকে শাবান নামকরণ করা হয়েছে- কেননা এ মাসটি দু’টি বরকতময় মাস তথা রজব ও রমযান মাসের মধ্যবর্তী একটি শাখা। ( )
শাবান মাসের রোযার ফযীলত
মাহে রমযানের প্রস্তুতিকল্পে ইসলামে শাবান মাসকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। মাহে রমযানে দীর্ঘ ৩০টি রোযা পালনের কঠিন কর্মসাধনা সহজ ও নির্বিঘেœ আদায় করার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে শাবান মাসের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বণির্ত:
عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهَا قَالَتْ] كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ حَتَّى نَقُولَ لا يُفْطِرُ، وَيُفْطِرُ حَتَّى نَقُولَ لا يَصُومُ، وَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ قَطُّ إِلا رَمَضَانَ، وَمَا رَأَيْتُهُ فِي شَهْرٍ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَ[ ( )
হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বণির্ত, তিনি বলেন- প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ধারাবাহিকভাবে এতোবেশী নফল রোযা রাখতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হয়তো আর রোযা ছাড়বেন না, আবার কখনও এতো বেশী রোযা থেকে বিরত থাকতেন যে, আমরা বলতাম হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হয়তো আর রোযা (নফল) রাখবেন না। তাই আমরা রমযান মাস ছাড়া আর অন্য কোন মাসে তাঁকে পূর্ণ মাস রোযা রাখতে দেখিনি এবং সবচেয়ে যে মাসে সর্বাধিক নফল রোযা রাখতেন তা হলো শাবান মাসে।( )
নাসায়ী শরীফে বর্ণিত আছে:
عن أسامة بن زيد، قَال: قُلتُ: ]يا رسول الله، لمْ أرَكَ تصوم شهْرًا من الشهور ما تصوم مِنْ شعْبان، قال: ذلك شهْرٌ يغْفُل الناس عنْه بيْن رجب ورمضان، وهو شهْرٌ تُرْفَع فيه الأعْمال إلى ربِّ العالمين، فأحبّ أنْ يرْفعَ عملي وأنا صائمٌ.[ ( )
হযরত উসামা বিন যায়েদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, আমি প্রিয়নবীর দরবারে আরয করলাম এয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়কা ওয়াসাল্লাম! শাবান মাসের ন্যায় অন্য কোন মাসে আপনাকে এতোবেশী (নফল) রোযা রাখতে কখনও দেখি না কেন? উত্তরে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, শাবান এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস যার সম্পর্কে অনেক মানুষ অনবগত, যেটি রজব ও রমযানের মধ্যবর্তী মাস, এটি ওই মহান মাস যে মাসে বান্দার আমলনামা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের দরবারে সরাসরি পেশ করা হয়। তাই আমি চাই আল্লাহর দরবারে আমার আমলসমূহকে এ অবস্থায় উঠানো হোক যে, আমি রোযাদার। ( )
عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ: ]وَكَانَ أَكْثَرُ صِيَامِهِ فِي شَعْبَانَ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا لِي أَرَى أَكْثَرَ صِيَامِكَ فِي شَعْبَانَ ؟ ! فَقَالَ: يَا عَائِشَةُ، إِنَّهُ شَهْرٌ يُنْسَخُ لَمَلَكِ الْمَوْتِ مَنْ يُقْبَضُ، فَأُحِبُّ أَنْ لا يُنْسَخَ اسْمِي إِلا وَأَنَا صَائِمٌ [ ( )
‘‘হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয় নবীর অধিকাংশ রোযা ছিল শাবান মাসে। তখন আমি তাঁর দরবারে আরয করলাম- এয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়কা ওয়াসাল্লাম! আমি দেখছি আপনার অধিকাংশ রোযা রাখা হয় শাবান মাসে? হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ মাসে যাদের ইন্তিকাল হবে তাদের নামের তালিকা মালাকুল মাওত এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাই আমি চাইনা আমার নাম লিপিবদ্ধ হোক আমি রোযাদার থাকা ব্যতিরেকে (অর্থাৎ আমার রোযা অবস্থায়ই আমার নাম লিপিবদ্ধ হোক সেটাই আমি কামনা করি। ( )
হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত: عن عَائِشَةَ تَقُولُ كَانَ أَحَبَّ الشُّهُورِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ يَصُومَهُ شَعْبَانُ ثُمَّ يَصِلُهُ بِرَمَضَانَ ” ( ) ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় মাসের একটি হলো শাবান। এ মাসে নফল রোযা আদায় করেই তিনি মাহে রমযানের রোযা পালন করতেন।’ ( )
এ সম্পর্কে হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেছেন:
عن أنس سئل النبي صلى الله عليه و سلم: أي الصيام أفضل بعد رمضان ؟ قال: شعبان تعظيما لرمضان ( )
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আপনার কাছে মাহে রমযানের পর কোন্ মাসের রোযা অধিক উত্তম?’ তিনি বললেন, ‘রমযান মাসের সম্মান প্রদর্শনকল্পে শাবানের রোযা উত্তম।’( )
আয়শা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা বলেন, শাবানের তুলনায় অন্য কোন মাসে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এত অধিক-হারে রোযা পালন করতে দেখিনি। كان يصوم شعبان كله তিনি শাবানের প্রায় পুরোটাই রোযায় অতিবাহিত করতেন। কিছু অংশ ব্যতীত তিনি পুরো শাবান মাস রোযা রাখতেন। ( )
অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, وما رأيته أكثر صياما منه في شعبان. ( )
‘শাবান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এত অধিক হারে নফল রোযা আদায় করতে দেখি নাই।’ ( )