৩৯ – بَابُ مَا جَاءَ فِي صَلَاةِ الْـمَرِيْضِ
১২৪ – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَطَاءٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّىٰ قَاعِدًا وَقَائِمًا وَمُحْتَبِيًا.
বাব নং ৫৪. ৩৯. রোগীর নামায প্রসঙ্গে
১২৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আতা থেকে, তিনি ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) বসে, দাঁড়িয়ে এবং হাঁটু গেড়ে বসে নামায পড়েছেন।
১২৫ – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَبِيْ سُفْيَانَ، عَنِ الْـحَسَنِ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّىٰ مُحْتَبِيًا مِنْ رَمَدٍ كَانَ بِعَيْنِهِ.
১২৫. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবু সুফিয়ান থেকে, তিনি হাসান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) চোখের ব্যাথার কারণে হাঁটু গেড়ে বসে নামায আদায় করেছেন।
126 – مُحَمَّدٌ بْنُ بُكَيْرٍ قَاضِيُ الدَّامِغَانِ قَالَ: كَتَبْتُ إِلَىٰ أَبِيْ حَنِيْفَةَ فِي الْـمَرِيْضِ إِذَا ذَهَبَ عَقْلُهُ، كَيْفَ يَعْمَلُ بِهِ فِيْ وَقْتِ الصَّلَاةِ؟ فَكَتَبَ إِلَيَّ يُخْبِرْنِيْ: عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْـمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ ، قَالَ: مَرِضْتُ، فَعَادَنِي النَّبِيُّ ، وَمَعَهُ أَبُوْ بَكْرٍ وَعُمَرُ، وَقَدْ أُغْمِيَ عَلَيَّ فِيْ مَرَضِيْ، وَجَاءَتِ الصَّلَاةُ، فَتَوَضَّأَ رَسُوْلُ اللهِ ، وَصَبَّ عَلَيَّ مِنْ وَضُوْئِهِ، فَقَالَ: «كَيْفَ أَنْتَ يَا جَابِرُ»؟ ثُمَّ قَالَ: «صَلِّ مَا اسْتَطَعْتَ، وَلَوْ أَنْ تُوْمِيَ».
১২৬. অনুবাদ: দামেগানের কাযী মুহাম্মদ ইবনে বুকাইর (رحمة الله) বলেন, আমি হযরত আবু হানিফা (رحمة الله)’র নিকট এই বিষয়ে পত্র লিখি যে, যখন কোন রুগ্ন ব্যক্তি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, তখন সে নামাযের সময় কি করবে? তখন তিনি আমার নিকট পত্র লিখেন এবং মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির (رحمة الله) থেকে একটি হাদিস রেওয়ায়েত করেন যে, হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) বলেন, আমি একদা অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং রাসূল (ﷺ) হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর (رضي الله عنه) কে সাথে নিয়ে আমার রোগের অবস্থা দেখার জন্য আগমণ করেন। এ সময় রোগের কারণে আমি অজ্ঞান ছিলাম। তখন নামাযের সময় হয়ে যায়। রাসূল (ﷺ) উযূ করেন এবং উযূর পানি আমার উপর ছিঁটিয়ে দেন। তারপর আমার জ্ঞান ফিরে আসে এবং তিনি আমাকে বলেন, জাবির! তোমার অবস্থা কেমন? এরপর তিনি বললেন, ইশারা করে হলে ও নামায আদায় কর, যতক্ষণ শক্তি থাকে।
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রুগ্ন ব্যক্তি কোন অবস্থাতেই যেন নামায পরিত্যাগ না করে। দাঁড়িয়ে হোক, বসে হোক, চিৎ হয়ে হোক কিংবা মাথার ইশারায় হোক, নামায আদায় করতেই হবে। এ সম্পর্কে হযরত জাবির (رضي الله عنه) ও হযরত আলী (رضي الله عنه) এবং হযরত ওমর (رضي الله عنه) থেকে মারফু’ ও মওকুফ হাদিস বর্ণিত আছে যে, সামান্যতম ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যেন কেউ নামায পরিত্যাগ না করে।
127 – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ ، قَالَتْ: لَـمَّا أُغْمِيَ عَلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ ، قَالَ: «مُرُوْا أَبَا بَكْرٍ، فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ»، فَقِيْلَ: إِنَّ أَبَا بَكْرٍ رَجُلٌ حَصْرٌ، وَهُوَ بِنَفْسِهِ يَكْرَهُ أَنْ يَقُوْمَ مَقَامَكَ، قَالَ: «افْعَلُوْا مَا آمُرُكُمْ بِهِ».
১২৭. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আলকামা থেকে, তিনি উম্মুল মু‘মিনীন হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, (রোগের কারণে) যখন রাসূল (ﷺ) জ্ঞান হারিয়ে ফেলার উপক্রম হন। তখন তিনি আমাকে বলেন, আবু বকরকে বল, তিনি যেন লোকদের নিয়ে জামাতে নামাযে পড়ান। হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) আরয করলেন, আবু বকর একজন নম্র স্বভাবের লোক এবং তিনি নিজেও আপনার স্থানে দাঁড়াতে অপছন্দ করেন। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, আমি যা বলছি, তা কর। (বুখারী, ১/১৩৭/৬৮২)
128 – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ أُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ، قَالَتْ: لَـمَّا أُغْمِيَ عَلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ ، قَالَ: «مُرُوْا أَبَا بَكْرٍ، فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ»، فَقِيْلَ لَهُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنَّ أَبَا بَكْرٍ رَجُلٌ حَصْرٌ، وَهُوَ يَكْرَهُ أَنْ يَقُوْمَ مَقَامَكَ، قَالَ: «مُرُوْا أَبَا بَكْرٍ، فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ يَا صُوَيْحِبَاتِ يُوْسُفَ، وَكَرَّرَ».
১২৮. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আলকামা থেকে, তিনি উম্মুল মু‘মিনীন হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) যখন সংজ্ঞাহীনতার উপক্রম হন, তখন তিনি বলেন, তোমরা আবু বকরকে বল, তিনি যেন লোকদের নামায পড়ান। তখন তাঁকে বলা হলো- হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ! হযরত আবু বকর অত্যন্ত দুর্বল চিত্তের মানুষ। তিনি আপনার জায়গায় দাঁড়িয়ে নামায পড়াকে অপছন্দ করেন। তখন তিনি বললেন, হে ইউসুফের সঙ্গিনীগণ! আবু বকরকে বল যেন লোকদের নামায পড়ান।
129 – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ : أَنَّ النَّبِيَّ لَـمَّا مَرِضَ الْـمَرَضَ الَّذِيْ قُبِضَ فِيْهِ خَفَّ مِنَ الْوَجَعِ، فَلَـمَّا حَضَرَتِ الصَّلَاةُ، قَالَ لِعَائِشَةَ: «مُرِيْ أَبَا بَكْرٍ، فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ»، فَأَرْسَلَتْ إِلَىٰ أَبِيْ بَكْرٍ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ يَأْمُرُكَ أَنْ تُصَلِّيَ بِالنَّاسِ، فَأَرْسَلَ إِلَيْهَا: إِنِّيْ شَيْخٌ كَبِيْرٌ رَفِيْقٌ، وَإِنِّيْ مَتَىٰ لَا أَرَىٰ رَسُوْلَ اللهِ فِيْ مَقَامِهِ أَرِقُّ لِذَلِكَ، فَاجْتَمِعِيْ أَنْتِ وَحَفْصَةُ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ ، فَيُرْسِلَ إِلَىٰ عُمَرَ، فَلْيُصَلِّ بِهِمْ، فَفَعَلَتْ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : «أَنْتُنَّ صَوَاحِبُ يُوْسُفَ، مُرِيْ أَبَا بَكْرٍ، فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ»، فَلَـمَّا نُوْدِيَ بِالصَّلَاةِ، يَسْمَعُ النَّبِيُّ الْـمُؤَذِّنَ، وَهُوَ يَقُوْلُ: حَيَّ عَلَى الصّلَاةِ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : «ارْفَعُوْنِيْ»، فَقَالَتْ عَائِشَةُ: قَدْ أَمَرْتُ أَبَا بَكْرٍ أنَ يُصَلِّيَ بِالنَّاسِ، وَأَنْتَ عَذِرٌ، قَالَ: «ارْفَعُوْنِيْ»، فَإِنَّهُ جُعِلَتْ قُرَّةَ عَيْنِيْ فِي الصَّلَاةِ. قَالَتْ عَائِشَةُ: فَرُفِعَ بَيْنَ اثْنَيْنِ، وَقَدَمَاهُ تَخُدَّانِ الْأَرْضَ، فَلَـمَّا سَمِعَ أَبُوْ بَكْرٍ لِحِسِّ رَسُوْلِ اللهِ تَأَخَّرَ، فَأَوْمَأَ إِلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ ، فَجَلَسَ النَّبِيُّ عَنْ يَسَارِ أَبِيْ بَكْرٍ، وَكَانَ النَّبِيُّ حِذَاءَهُ يُكَبِّرُ، وَيُكَبِّرُ أَبُوْ بَكْرٍ بِتَكْبِيْرِ النَّبِيِّ ، وَيُكَبِّرُ النَّاسُ بِتَكْبِيْرِ أَبِيْ بَكْرٍ حَتَّىٰ فَرَغَ، ثُمَّ مَا صَلَّىٰ بِالنَّاسِ غَيْرَ تِلْكَ الصَّلَاةِ حَتَّىٰ قُبِضَ، وَكَانَ أَبُوْ بَكْرٍ الْإِمَامُ، وَالنَّبِيُّ وَجِعٌ حَتَّىٰ قُبِضَ.
১২৯. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আসওয়াদ থেকে তিনি হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) যখন এমন রোগে আক্রান্ত হন, যাতে তিনি ইন্তেকাল করেন। রোগের ব্যথার তীব্রতার কারণে তিনি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েন। নামাযের সময় হলে তিনি আয়েশা (رضي الله عنه) কে বলেন, আবু বকরকে বল, যেন লোকদেরকে নামায পড়ান। তখন আয়েশা (رضي الله عنه) হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)’র নিকট লোক পাঠিয়ে বলেন যে, রাসূল (ﷺ) লোকদেরকে নামায পড়ানোর জন্য আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আয়েশা (رضي الله عنه)’র নিকট এই বলে সংবাদ পাঠান যে, আমি বৃদ্ধ ও দুর্বল মনের লোক। রাসূল (ﷺ) কে তাঁর জায়গায় দেখতে না পেলে আমি ধৈর্যধারণ করতে পারব না। সুতরাং তুমি এবং হাফসা উভয়ে মিলে রাসূল (ﷺ) ’র নিকট বল, তিনি যেন লোক পাঠিয়ে হযরত ওমর (رضي الله عنه) কে নামায পড়ানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বলেন, আমি সেই ব্যবস্থা করলাম। কিন্তু রাসূল (ﷺ) বলেন, তোমরা হলে ইউসূফের (عليه السلام) সঙ্গিণীদের মত। আবু বকরকে বল, তিনি যেন নামায পড়ান। অতঃপর নামাযের জন্য যখন আযান দেওয়া হয় এবং রাসূল (ﷺ) মুয়াযিযনের কণ্ঠে حى على الصلوة শুনতে পান, তখন তিনি বলেন, আমাকে উঠাও। হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) আরয করলেন, আমি আবু বকর (رضي الله عنه) কে নামায পড়ানোর জন্য বলে দিয়েছি, আপনি অসুস্থ (কেন কষ্ট করবেন)। তখন তিনি বলেন, আমাকে উঠাও, আমার চোখের শান্তি হলো নামায। হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বলেন, আমি তাঁকে উঠালাম এবং দু’জন ব্যক্তির উপর ভর করে তিনি পা মাটির উপর হেঁচড়িয়ে হেঁচড়িয়ে মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন। যখন হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ) ’র পবিত্র পায়ের আওয়ায শুনতে পেলেন তখন পিছনে চলে আসতে চাইলেন। কিন্তু রাসূল (ﷺ) ইশারায় তাঁকে পিছনে আসতে নিষেধ করেন।
অতঃপর তিনি হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)’র বামদিকে এসে বসে পড়েন। নবী করিম (ﷺ) তাঁর বরাবর তাকবীর বলতেন আর হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) নবী (ﷺ)’র তাকবীরের অনুসরণ করতেন। লোকজন হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)’র তাকবীরের অনুসরণ করতেন, এভাবেই নামায সমাপ্ত হয়। এরপর ইন্তেকাল পর্যন্ত এই নামায ব্যতীত অন্য কোন নামায পড়ান নি। এরপর থেকে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) নামাযের ইমামতি করতেন এবং নবী করিম (ﷺ) অসুস্থ ছিলেন। অবশেষে তিনি ইন্তেকাল করেন।
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদিসগুলো দ্বারা হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)’র শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ হয়েছে। ইমামতে সুগরার দায়িত্ব দিয়ে ইমামতে কুবরা’র যোগ্যতার প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। স্বয়ং হযরত আলী (رضي الله عنه) হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) কে খলিফা নির্বাচন করার সময় বলেন
-كيف لانوثره علينا فى امردنيا فاوقد اشره النبى صلى الله عليه وسلم علينا فى امرديننا“
দুনিয়াবী কাজে আমরা তাঁকে কেন খলীফা মানব না। অথচ নবী করিম (ﷺ)সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীনি কাজে তাঁকে আমাদের নেতৃত্বের জন্য মনোনীত করেছিলেন।