রাসূল ﷺ এর শানে কটুক্তিকারীর শাস্তি

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

একজন নদভি আলেমও এর পক্ষে অপূর্ণ সব মন্তব্য করে হাদিসটিকে অগ্রহণযোগ্য প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। আসুন দেখা যাক হাদিসটির আসলে সিদ্ধান্ত কেমন হবে!

ইমাম নাসায়ি ‘সুনান’ গ্রন্থে এবং
সুনানু আবি দাউদ
কিতাব: আল-হুদুদ
বাব: بَابُ الْحُكْمِ فِيمَنْ سَبَّ النَّبِيَّ ﷺ
এ উল্লেখ আছে,

حَدَّثَنَا عَبَّادُ بْنُ مُوسَى الْخُتَّلِيُّ، أَخْبَرَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ جَعْفَرٍ الْمَدَنِيُّ، عَنْ إِسْرَائِيلَ، عَنْ عُثْمَانَ الشَّحَّامِ، عَنْ عِكْرِمَةَ، قَالَ: حَدَّثَنَا ابْنُ عَبَّاسٍ، أَنَّ أَعْمَى كَانَتْ لَهُ أُمُّ وَلَدٍ تَشْتُمُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَتَقَعُ فِيهِ، فَيَنْهَاهَا، فَلَا تَنْتَهِي، وَيَزْجُرُهَا فَلَا تَنْزَجِرُ، قَالَ: فَلَمَّا كَانَتْ ذَاتَ لَيْلَةٍ، جَعَلَتْ تَقَعُ فِي النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَتَشْتُمُهُ، فَأَخَذَ الْمِغْوَلَ فَوَضَعَهُ فِي بَطْنِهَا، وَاتَّكَأَ عَلَيْهَا فَقَتَلَهَا، فَوَقَعَ بَيْنَ رِجْلَيْهَا طِفْلٌ، فَلَطَّخَتْ مَا هُنَاكَ بِالدَّمِ، فَلَمَّا أَصْبَحَ ذُكِرَ ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَجَمَعَ النَّاسَ فَقَالَ: أَنْشُدُ اللَّهَ رَجُلًا فَعَلَ مَا فَعَلَ لِي عَلَيْهِ حَقٌّ إِلَّا قَامَ، فَقَامَ الْأَعْمَى يَتَخَطَّى النَّاسَ وَهُوَ يَتَزَلْزَلُ حَتَّى قَعَدَ بَيْنَ يَدَيِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَنَا صَاحِبُهَا، كَانَتْ تَشْتُمُكَ، وَتَقَعُ فِيكَ، فَأَنْهَاهَا فَلَا تَنْتَهِي، وَأَزْجُرُهَا، فَلَا تَنْزَجِرُ، وَلِي مِنْهَا ابْنَانِ مِثْلُ اللُّؤْلُؤَتَيْنِ، وَكَانَتْ بِي رَفِيقَةً، فَلَمَّا كَانَ الْبَارِحَةَ جَعَلَتْ تَشْتُمُكَ، وَتَقَعُ فِيكَ، فَأَخَذْتُ الْمِغْوَلَ فَوَضَعْتُهُ فِي بَطْنِهَا، وَاتَّكَأْتُ عَلَيْهَا حَتَّى قَتَلْتُهَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَلَا اشْهَدُوا أَنَّ دَمَهَا هَدَرٌ

—হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. সূত্রে বর্ণিত জনৈক অন্ধ লোকের একটি উম্মু ওয়ালাদ’ ক্রীতদাসী ছিলো। সে নবী ﷺ কে গালি দিতো এবং তাঁর সম্পর্কে মন্দ কথা বলতো। অন্ধ লোকটি তাকে নিষেধ করা সত্ত্বেও সে বিরত হতো না। সে তাকে ভৎর্সনা করতো; কিন্তু তাতেও সে বিরত হতো না। এক রাতে সে যখন নবী ﷺ কে গালি দিতে শুরু করলো এবং তাঁর সম্পর্কে মন্দ কথা বলতে লাগলো, সে একটি একটি ধারালো ছোরা নিয়ে তার পেটে ঢুকিয়ে তাতে চাপ দিয়ে তাহেত্যা করলো। তার দু’ পায়ের মাঝখানে একটি শিশু পতিত হয়ে রক্তে রঞ্জিত হলো। ভোরবেলা নবী ﷺ ঘটনাটি অবহিত হয়ে লোকজনকে সমবেত করে বলেনঃ আমি আল্লাহর কসম করে বলছিঃ যে ব্যক্তি একাজ করেছে, সে যদি না দাঁড়ায় তবে তার উপর আমার অধিকার আছে।
একথা শুনে অন্ধ লোকটি মানুষের ভিড় ঠেলে কাঁপতে কাঁপতে সামনে অগ্রসর হয়ে নবী ﷺ এর সামনে এসে বসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সেই নিহত দাসীর মুনিব। সে আপনাকে গালাগালি করতো এবং আপনার সম্পর্কে অপমানজনক কথা বলতো। আমি নিষেধ করতাম; কিন্তু সে বিরত হতো না। আমি তাকে ধমক দিতাম; কিন্তু সে তাতেও বিরত হতো না। তার গর্ভজাত মুক্তার মতো আমার দু’টি ছেলে আছে, আর সে আমার খুব প্রিয়পাত্রী ছিলো। গত রাতে সে আপনাকে গালাগালি শুরু করে এবং আপনার সম্পর্কে অপমানজনক কথা বললে, আমি তখন একটি ধারালো ছুরি নিয়ে তার পেটে স্থাপন করে তাতে চাপ দিয়ে তাকে হত্যা করে ফেলি। নবী ﷺ বলেন, তোমরা সাক্ষী থাকো, তার রক্ত বৃথা গেলো।

বর্তমানকালের মুহাক্কিকদের অভিমত:

✔১.আলবানি: সহিহ সুনানে আবি দাউদ এবং নাসায়ির তাহকিক
‘মানারিস সাবিল’ এর তাখরিজে আলবানি বলেছেন, ❝আমি বলছি এই হাদিসের সনদ বুখারি মুসলিমের শর্তের ওপর বিশুদ্ধ।❞
[৫ম খণ্ড,১২৫১ নং হাদিস]

✔২.আরনাউত্ব: 
إسناده قوي من أجل عثمان الشحام
উসমান ইবনু শাহহাম সহকারে হাদিসটির সনদ শক্তিশালি।(৬/৪১৬পৃ, মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ)

সুনানু আবি দাউদের তাহক্বিক।

✔৩.ইবনু আবি ‘আলিফাহ: 

صحيح،حححه حاكم

– সহিহ, হাকিম সহিহ বলেছেন।

সুনানু আবি দাউদের তাহকিক,(দারুল হাদ্বারাত লিন নাশার, রিয়াদ)

✔৪.বায়তুল আফকার এর তাহকিক অনুসারে সহিহ।

✔৫.মুখতাসারুস সুনান আবি দাউদ,লিল হাফিয মুনযিরি (৬৩৫হি.), ৩/১৪৭,তাহকিক: মুহাম্মাদ সুবহি বিন হাসান আল-খাল্লাক্ব।রিয়াদ হতে প্রকাশিত।

✔৬।সুনানু আবি দাউদ,দারুস সিদ্দিক রিয়াদ হতে প্রকাশিত, মুহাক্কিক সহিহ বলেছেন

✔৭। মুওয়াসসাসাতুর রিসালাতু নাশিরুন হতে প্রকাশিত সুনানের মুহাক্কিকগণ বলেন, 

إسناده قوي

সনদ শক্তিশালী।

নদভি আলেম এই হাদিসের রাবি উসমান আল শাহহামের ওপর প্রশ্ন তুলেছেন। সেগুলোর আলোচনায় আসা যাক এবার।

রাবি উসমান আশ-শাহ্হাম এর আলোচনা:

সমালোচনা অংশ:

১।ইমাম ইবনু ‘আদি ‘আল-কামিল’ গ্রন্থের ৬/২৯৩ পৃষ্ঠায় ১৩২৮ নং জীবনীতে উল্লেখ করেন, ইমাম ইয়াহইয়া ইবন সাইদ আল-কাত্তান বলেন,

حَدَّثَنَا ابن حماد، قَال: حَدَّثني صالح، قَال: حَدَّثَنا علي، قَالَ: سَمِعْتُ يَحْيى وذكر عُثْمَان الشحام فَقَالَ يعرف وينكر ولم يكن عندي بذاك

— তার কাছে পরিচিত এবং পরিতাজ্য (উভয় রকমের হাদিসই) পাওয়া যায়। 

ইবনু আদি বলেন,ইমাম আবু ইয়া’লা হাদিস বর্ণনাকালে বলেছেন,

وَعُثْمَانُ الشَّحَّامُ لَيْسَ لَهُ كَثِيرُ حَدِيثٍ

— এবং উসমান আশ-শাহ্হাম প্রচুর হাদিস বর্ণনাকারিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।

২।এভাবে ইমাম নাসায়ি তাকে ‘শক্তিশালি নন’ বলেছেন। 

শাহহাম এর সত্যিকার অবস্থা:

★১। ইমাম ইবনু ‘আদি ‘আল কামিল’ গ্রন্থে ইমাম আবু ইয়া’লার বক্তব্যে আরো কথা এনেছেন যা উল্লেখ না করলে শাহহামের প্রতি অবিচার হবে। হাফিয আবু ইয়ালা হতে ইমাম ইবনু আদি বর্ণনা করেছেন,

حَدَّثَنَا أَبُو يَعْلَى، حَدَّثَنا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْحَجَّاجِ، حَدَّثَنا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ عُثْمَانَ الشَّحَّامِ عَنْ مُسْلِمِ بْنِ أَبِي بَكْرَةَ، عَنْ أَبِيهِ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ. وَعُثْمَانُ الشَّحَّامُ لَيْسَ لَهُ كَثِيرُ حَدِيثٍ وَمَا رَأَى بِهِ بَأْسًا فِي رِوَايَاتِهِ

— আবু ইয়ালা হাদিস বর্ণনা করেছেন আমার নিকট, তিনি হাদিস বর্ণনা করেন….. নবি ﷺ বলতেন, ❝হে আল্লাহ! আমাকে আপনার নিকট আপনার অস্বীকৃতি হতে, দারিদ্রতা হতে এবং ক্ববরের আযাব হতে পানাহ চাইছি।❞

[আবু ইয়ালা বলেন] এবং শাহহাম অধিক হাদিস বর্ণনাকারিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।আমি তার থেকে হাদিস গ্রহণ করতে কোনো সমস্যা দেখি না

(আল কামিল ফিদ্ব দ্বুআফাইর রিজাল,প্রাগুক্ত)

★২। ইমাম দারাকুতনি, যিনি হাদিসের ত্রুটি বর্ণনার জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন, উনি উনার বিশ্বস্ত বর্ণনাকারিদের তালিকাগ্রন্থ ‘যিকরু আসমায়ি ওয়াত তাবিয়িন‘ গ্রন্থের ২/১৭০ পৃ. শাহহামকে সিকাহ/বিশ্বস্ত বর্ণনানাকারিদের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন।

★৩। ইমাম আবু হাতিম আর-রাযি ‘কিতাবু জারহ ওয়াত তাদিল’ ৬ষ্ঠ খন্ড/৯৫১ নং জীবনীতে বলেন,

عثمان الشحام أبو سلمة بصرى روى عن عكرمة…. نا عبد الرحمن أنا عبد الله بن أحمد بن محمد بن

حنبل فيما كتب إلي قال سألت ابى عن عثمان الشحام فقال ليس به بأس، ثنا عبد الرحمن قال ذكره أبي عن إسحاق بن منصور عن يحيى بن معين قال عثمان الشحام ثقة، نا عبد الرحمن قال سألت ابى عن عثمان الشحام فقال بصرى ما أرى بحديثه بأسا، ثنا عبد الرحمن قال سئل أبو زرعة عن عثمان الشحام فقال بصرى ثقة

— উসমান আশ-শাহহাম আবু সালামাহ, বসরার অধিবাসি, তাবিয়ি’ ইকরিমাহ হতে বর্ণনা করেছেন। ☞হাফিয আবদুর রহমান ইবনু আহমাদ বিন হাম্বল বলেছেন,’আমি আমার পিতা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলকে জিজ্ঞেস করেছি, তিনি বলেছেন, শাহহামের হাদিসে কোনো সমস্যা নেই।’

(موسوعه اقوال الامام احمد بن حنبل في رجال الحديث وعلله, 2/438, রাবী নং 1756)

☞বিখ্যাত হাদিসবিশারদ, হাকিম ফিল হাদিস ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু মু’ইন বলেছেন,’সে বিশ্বস্ত’!

☞ইমাম আবদুর রহমান বলেন,’আমার পিতা বলেছেন, আমি তার হাদিসে কোনো সমস্যা দেখিনা!’

☞বিশ্বনন্দিত মুহাদ্দিস ইমাম আবি যুর’আ বলেছেন, শাহহাম সিক্বাহ/বিশ্বস্ত!

★৪। ইমাম ইবনু হিব্বান তাকে ‘কিতাবুস সিকাত‘ গ্রন্থে উল্লেখ করে বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী ঘোষণা দিয়েছেন।

★৫।ইমাম আল-আজুরি বলেছেন, আমিকে শাহহামের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি। তিনি তাকে সিকাহ/বিশ্বস্ত বলেছেন।অথবা, এও বলেছেন ‘তার থেকে হাদিস নিতে কোনো সমস্যা নেই।’

শেষের দিকে আজুরি একটা বক্তব্য এনেছেন,

فقيل له انه وجد بخط

— ❝বলা হয়ে থাকে, শাহহামের মধ্যে ত্রুটির অনুপ্রবেশ হয়েছিল।❞

কিন্তু হাদিস বিশারদ বা উসুলবিদদের নিকট একথা জানা যে, قيل/ক্বিইলা দ্বারা দূর্বল অভিমত বুঝানো হয়ে থাকে। সুতরাং অভিমতটি দূর্বল![সাওয়ালাতে আজুরি,৩/৩৫০]

★৬। রিজালশাস্ত্রের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ইমাম জামালুদ্দিন মিযযির ‘তাহযিবুল কামাল’ হতে শাহহামের আলোচনা :

وقال إسحاق بن منصور عن يحيى بن معين، وأبو زرعة

ثقة.وقال أبو حاتم: ما أرى بحديثه بأسا….وقال في موضع آخر: ليس به بأس….روى له مسلم، وأبو داود، والترمذي، والنسائي

ইসহাক বিন মানসুর ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু মু’ইন এবং আবু যুরআ হতে বর্ণনা করেন, উনারা বলেছেন, শাহহাম সিক্বাহ/বিশ্বস্ত! ইমাম আবু হাতেম বলেছেন, আমি তার থেকে হাদিস গ্রহণ করতে কোনো সমস্যা দেখিনা।…ইমাম নাসায়ি অন্যত্র বলেছেন, তার থেকে হাদিস নিতে কোনো অসুবিধা নেই।…ইমাম মুসলিম,ইমাম আবু দাউদ,ইমাম তিরমিযি এবং ইমাম নাসায়ি তার থেকে হাদিস গ্রহণ করেছেন।

★৭। ‘ইক্বমালু তাহযিবুল কামাল’ গ্রন্থে হাফিয মুগলতা’য়ি বলেছেন, ❝আল্লামা ইবনু খালফূন (ইনি বুখারি মুসলিমের শায়খের উপর গ্রন্থ রচনা করেছেন ) তাকে স্বীয় ‘সিকাত’ বা বিশ্বস্ত রাবীদের জীবনী গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।তিনি এও বলেছেন, তার নিকট শাহহাম ৩য় দরজার মুহাদ্দিস। ইমাম ইবনু আবদির রাহিম বলেছেন, তার থেকে হাদিস নিতে কোনো অসুবিধা নেই।’ ❞ মুগলতায়ি লিখেন,

 وذكره ابن شاهين في كتاب الثقات 

 ❝ইমাম ইবনু শাহিন তার বিশ্বস্ত রাবিদের গ্রন্থে শাহহামকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

 وسماه أبو بشر الدولابي في كتاب «الكني» والنسائي، ويعقوب الفسوي : عثمان بن مسلم من غير تردد

 — আবু বিশর আদ-দুওলাবি ‘আল-কুনা’ গ্রন্থে, নাসায়ি এবং ইয়াকুব আল-ফাসাওয়ি বলেছেন, শাহহহাম প্রত্যাখ্যাত বর্ণনাকারীদের অন্তর্ভুক্ত নয়।(অর্থাৎ তার হাদিস মক্ববুল বা গ্রহণ করা হবে।)

 [মুগলতায়ি,৩৬৬২ নং রাবি]

★৮। ‘আল আনসাব’ গ্রন্থের ৭ম খণ্ডে হাফিয সাম’আনি (৫৬২হি.) ‘শিন এর পর হা’ অধ্যায়ে আলোচনা এনেছেন। বিস্তারিত আলোচনার পর উনি লিখেন,

قال يحيى ابن معين : مسلم بن إبراهيم ثقة مأمون، وقال أبو حاتم : هو ثقة صدوق

— ইবনু মু’ইন বলেছেন, মুসলিম বিন ইবরাহিম, মানে শাহহাম হল বিশ্বস্ত এবং ন্যায়পরায়ণ রাবি। আবু হাতিম বলেছেন সে সত্যবাদি এবং বিশ্বস্ত/সিকাহ।

★৯।শায়খুল ইসলাম ইবনু হাজার ‘তাক্বরিব’ গ্রন্থে ৪৫৬৩ নং জীবনিতে বলেন, ‘তার থেকে হাদিস গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই।’

★১০। হাফিয যাহাবির মতামত

وثقه جماعة

— তাকে এক জামাত মুহাদ্দিস বিশ্বস্ত বলেছেন।

[দিওয়ানুদ দ্বু’আফা,২৭৯২ নং জীবনী]

যাহাবি ‘আল কাশেফ’ গ্রন্থে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বলের ‘কোনো সমস্যা নেই’— উক্তি উল্লেখ করে, শাহহামের সত্যায়ন করেছেন।

পৃথিবীর ইতিহাসের বিশুদ্ধতম হাদিস গ্রন্থ ‘সহিহ মুসলিম’ এ ইমাম মুসলিম শাহহামের সনদে হাদিস এনেছেন। 

ইমাম মুসলিমের সনদ:

১।

حَدَّثَنِي أَبُو كَامِلٍ الْجَحْدَرِيُّ، فُضَيْلُ بْنُ حُسَيْنٍ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، حَدَّثَنَا عُثْمَانُ، الشَّحَّامُ قَالَ

কিতাবুল ফিতান

বাব: باب نُزُولِ الْفِتَنِ كَمَوَاقِعِ الْقَطْرِ 

হাদিস নং : ৭১৪২-(২৮৮৭) (হাদিস একাডেমি)

২।

 وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَأَبُو كُرَيْبٍ قَالاَ حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ، بْنُ الْمُثَنَّى حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عَدِيٍّ، كِلاَهُمَا عَنْ عُثْمَانَ الشَّحَّامِ، بِهَذَا الإِسْنَادِ 

কিতাবুল ফিতান

বাব: باب نُزُولِ الْفِتَنِ كَمَوَاقِعِ الْقَطْرِ 

হাদিস নং : ৬৯৮৭ (ইফা)

সুতরাং শাহহাম এর সনদকে জাল-দূর্বল বলার আগে ভাবা উচিত!

সনদগত রসাত্মক আপত্তি, এই হাদিস নাকি Extra Ordinary. আর একারণে এটা দূর্বল।

নাসায়ি স্বীয় ‘মুজতাবা’ বা সুনান গ্রন্থে অবিকৃত সনদে এই হাদিস এনেছেন।

কিতাবু তাহরিমুদ-দাম বা হত্যা অবৈধ হওয়ার অধ্যায়

বাব: الْحُكْمُ فِيمَنْ سَبَّ النَّبِيَّ ﷺ 

আমরা এই হাদিসের আরো কিছু সন্ধান দিচ্ছি।

✔সমার্থক হাদিস ১:

হাফিয ইবনু যানজুভিয়াহ (২৫০হি.) স্বীয় ‘আমওয়াল’ গ্রন্থের ১ম খন্ডের ৪৩২ পৃ. (কিং সাউদ রিসার্চ ইন্সটিটিউট হতে প্রকাশিত) উল্লেখ করেন,

انا حميد قال: قال ابو عبيد: انا ابن ابي علي انا عثمان الشحام عن عكرمة أن رجلا كانت له ام ولد وكانت تكثر الوقوع في رسول الله ﷺ والشتم له، وينهاها فلا تنتهي فقتلها فرفع ذلك الى ﷺ ماهدر دمها

✔সমার্থক হাদিস ২ ও ৩:

সুনানু কুবরা লিল বায়হাক্বি,

16863 

– أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ عَبْدَانَ، أنبأ أَحْمَدُ بْنُ عُبَيْدٍ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ يُونُسَ، ثنا أَبُو عَاصِمٍ، عَنْ عُثْمَانَ الشَّحَّامِ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ:” أُمَّ وَلَدٍ لِرَجُلٍ سَبَّتْ رَسُولَ اللهِ ﷺ فَقَتَلَهَا، فَنَادَى مُنَادِي رَسُولِ اللهِ ﷺ: إِنَّ دَمَهَا هَدَرٌ

আরেকটি ভিন্ন সনদে ইমাম বায়হাক্বি আনেন,

20434 –

 أَخْبَرَنَا أَبُو الْحُسَيْنِ بْنُ بِشْرَانَ , أنبأ أَبُو جَعْفَرٍ الرَّزَّازُ , ثنا عَلِيُّ بْنُ إِبْرَاهِيمَ , ثنا الْحَارِثُ بْنُ مَنْصُورٍ , ثنا إِسْرَائِيلُ , عَنْ عُثْمَانَ الشَّحَّامِ , عَنْ عِكْرِمَةَ , عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ , فِي قِصَّةِ الرَّجُلِ الَّذِي قَتَلَ امْرَأَتَهُ بِالْوَقِيعَةِ فِي رَسُولِ اللهِ ﷺ قَالَ: فَلَمَّا كَانَ الْبَارِحَةُ ذَكَرَتْكَ , فَوَقَعَتْ فِيكَ , فَلَمْ أَصْبِرْ أَنْ قُمْتُ إِلَى الْمِعْوَلِ فَوَضَعْتُهُ فِي بَطْنِهَا , فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ اشْهَدُوا أَنَّ دَمَهَا هَدَرٌ

✔সমার্থক হাদিস নং ৪:

‘আহকামু আহলিল মিলাল’ গ্রন্থে ইমাম আবু বকর আল খাল্লাল (৩১১হি) উল্লেখ করেন

۷۲۸ – أخبرني عبد الله قال: حدثني أبي قال: حدثنا روح قال : حدثنا عثمان الشحام قال: حدثنا عكرمة مولى ابن عباس رضي الله عنه : أن رجلاً كانت له أم ولد تشتم النبي ﷺ فقتلها فسأله النبي ﷺ عنها فقال يا رسول الله إنها كانت تشتمك فقال رسول الله ﷺ: ألا إن دم فلانة هدر.

✔সমার্থক হাদিস নং ৫:

ইমাম আদ-দারাকুৎনী উল্লেখ করেন,

حدثنا عبد الله بن محمد بن عبد العزيز ، حدثنا أبو جعفر محمد ابن أبي سمينة وحدثنا عمر بن أحمد بن علي القطان ، حدثنا محمد بن عثمان بن كرامة ، حدثنا عبيد الله بن موسى ، حدثنا إسرائيل ، عن عثمان الشحام ، عن عكرمة حدثنا ابن عباس…. 

(হাদিস নং ৩১৯৪)

দারাকুৎনী মোট তিনভাবে হাদিসটা এনেছেন, এর মধ্যে আরেকটি হল

4503- حدثنا أبو القاسم بن منيع قراءة عليه ، حدثنا أبو جعفر محمد بن أبي سمينة ، حدثنا عبيدالله بن موسى ، حدثنا إسرائيل ، عن عثمان الشحام ، عن عكرمة عن ابن عباس… 

✔সমার্থক হাদিস নং ৬ ও ৭:

‘আহাদিসুল মুখতারাহ’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে দুইটি সনদ যা আল্লামা মাক্বদিসি স্বীয় পদ্ধতিতে এনেছেন,

أخبرنا أبو جعفر الصيدلاي وفاطمة بنت سعد الخير – أنّ

فاطمة بنت عبد الله أخبرتهم، ابنا محمّد، ابنا سليمان بن أحمد الطبراني، ثنا الحسن بن علويه القطان، ثنا عباد بن موسى الخلي، ثنا إسماعيل بن جعفر، عن إسرائيل، عن عثمان الشخام، عن عكرمة، عن ابن عباس….

أخبرنا أبو جعفر الصيدلاي وفاطمة بنت سعد الخير – أنّ فاطمة بنت عبد الله أخبرتهم، ابنا محمّد، ابنا سليمان بن أحمد الطبراني، ثنا الحسن بن علويه القطان، ثنا عباد بن موسى الخلي، ثنا إسماعيل بن جعفر، عن إسرائيل، عن عثمان الشخام، عن عكرمة، عن ابن عباس…..

ওয়াল্লাহু আ’লাম।

সুতরাং প্রমাণিত হল, এ হাদিসখানা সহিহ এবং ঘটনাটি অপ্রমাণিত নয়।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment