আল্লামা শায়খ জামালুদ্দীন আহমদ গাযনুভী হানাফী {৫৯৩হি.}বলেন-
والمعراج حق عرج رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم بشخصه فِي الْيَقَظَة إِلَى السَّمَاء ثمَّ إِلَى حَيْثُ شَاءَ الله
-‘‘মি‘রাজ সত্য, তা হলো রাসূল (ﷺ)‘র জাগ্রত অবস্থায় আসমানে ভ্রমণ, তারপর আল্লাহর ইচ্ছা যতটকু ততটুকু।’’ ➤শায়খ জামালুদ্দীন আহমদ গাযনুভী হানাফী, উসূলুদ্-দ্বীন, ১/১৩৪ পৃষ্ঠা, দারুল বাশায়েরুল ইসলামিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ, ১৪১৯ হিজরি।
ইমাম ত্বাহাবী (رحمة الله) বলেন-
وَالْمِعْرَاجُ حَقٌّ، وَقَدْ أُسْرِيَ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعُرِجَ بِشَخْصِهِ فِي الْيَقَظَةِ، إِلَى السَّمَاءِ. ثُمَّ إِلَى حَيْثُ شَاءَ اللَّهُ مِنَ الْعُلَا وَأَكْرَمَهُ اللَّهُ بِمَا شَاءَ، وَأَوْحَى إِلَيْهِ مَا أَوْحَى
-‘‘মি‘রাজ হলো রাসুল (ﷺ) এর জীবনে সংঘটিত একটি সত্য ঘটনা। নবি করিম (ﷺ)-কে রাত্রিতে ভ্রমন করানো হয়েছে এবং জাগ্রত অবস্থায় সশরীরে আল্লাহ তা‘য়ালা যতদূর ইচ্ছা করেছেন, আকাশের দিকে তাকে উত্তোলন করেছেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন, তা দ্বারা তাঁকে সম্মানিত করেছেন। আর আল্লাহ তাঁর প্রতি যা প্রত্যাদেশ করার তা প্রত্যাদেশ করেছেন।’’
➤ ইমাম তাহাভী হানাফী, (শরাহ সহ) আক্বিদাতুত তাহাবী, ১/১৯৫ পৃষ্ঠা,
মুফতি আমিমুল ইহসান (رحمة الله) এর মতে-
وَالْمِعْرَاجُ صعوده صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ إِلَى السَّمَاءِ فِي الْيَقَظَةِ
-‘‘মি‘রাজ হলো রাসূল (ﷺ)‘র ঊর্ধ্বগমন, যা জাগ্রত অবস্থায় আসমানে হয়েছিল।’’
➤ মুফতি আমিমুল ইহসান, কাওয়াইদুল ফিক্হ, পৃষ্ঠা,২৭২
ইমাম কালাবাজি বুখারী হানাফি (ওফাত. ৩৮০হি.) বলেন-
أقروا بمعراج النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَأَنه عرج بِهِ إِلَى السَّمَاء السَّابِعَة وَإِلَى ماشاء الله فِي لَيْلَة فِي الْيَقَظَة بِبدنِهِ
-‘‘রাসূল (ﷺ)‘র মি’রাজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে যে, নিশ্চয় তা জাগ্রত অবস্থায় এবং সপ্তম আকাশেরও উপরে রাতে আল্লাহর যতটুকু ইচ্ছা ততটুকু নিয়েছেন।’’ ➤ ইমাম কালাবাজি, আল-তারুফুল মাযহাবে আহলে তাসাউফ, ৫৭ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বর্ণনা করেন হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেছেন যে,
فِي الْيَقَظَةِ رَآهُ بِعَيْنِهِ، -‘‘ রাসূল (ﷺ) মি’রাজের রজনীতে তার রবকে জাগ্রত অবস্থায় চর্ম চক্ষু দ্বারা অবলোকন করেছেন।’’
➤মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৯/৩৭৫৭ পৃষ্ঠা, হাদিস ৫৮৬১, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত , লেবানন।
বুঝা গেলে জাগ্রত অবস্থায় মি’রাজ না হলে জাগ্রত অবস্থায় আল্লাহ দেখার কথা চিন্তা করা অবান্তর। আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন-
أَنَّ الْإِسْرَاءَ إِلَى بَيْتِ الْمَقْدِسِ كَانَ فِي الْيَقَظَةِ لِظَاهِرِ الْقُرْآنِ-‘‘নিশ্চয় বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত রাতে ভ্রমণ ইসরা বা মি’রাজ জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে তা কোরআন থেকেই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।’’
➤ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১৩/৪৮৯ পৃষ্ঠা,
তাই বুঝা যায় বায়তুল মুকাদ্দাস যদি জাগ্রত অবস্থায় না হয় তার পরপরই তো তিনি বুরাকে আসমানে গিয়েছিলেন। বুঝা গেল বাকীটাও জাগ্রত অবস্থায়ই হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি এ কিতাবের অন্য স্থানে বলেন-
أَنَّ الْإِسْرَاءَ كَانَ فِي الْيَقَظَةِ
-‘‘নিশ্চয় ইসরা জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে।’’
➤ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১৩/৪৮০ পৃষ্ঠা।
বর্তমান আহলে হাদিস তথা সালাফিরা রাসূল (ﷺ)‘র জাগ্রত অবস্থায় মি‘রাজ হওয়াকে অস্বীকার করছে। তাদের এ মতের খন্ডনে ‘আকিদাতুত ত্বহাবী’ গ্রন্থের ব্যাখ্যায় আল্লামা মুহাম্মদ তাইয়্যিব (رحمة الله) বলেন-
قوله تعالى: أَسْرَى بِعَبْدِهِ اشارة الى الْمِعْرَاجُ الجسمانى لا فى المنام فان العبد ان ذات الشريف مجموع الجسم والروح لا روح فقط والا قيل أَسْرَى بروحه او ذهب بروحه-
-‘‘আল্লাহর বাণী- أَسْرَى بِعَبْدِهِএটা সশরীরে মি‘রাজ হওয়ার প্রতি ইশারা করছে। কেননা العبد হলো দেহ ও রূহের সমষ্টি। কেবল روح কে العبد বলা হয় না। روح -কে যদি عبد বলা হতো অথবা স্বপ্নের মাধ্যমে যদি মি‘রাজ হতো, তাহলে أَسْرَى بِعَبْدِهِ -এর পরিবর্তে أَسْرَى بروحه অথবা ذهب بروحه বলা হতো।’’{তথ্য সূত্রঃ আকিদাতুত তাহাভী (শরাহ সহ) পৃ.৬৯}
আমাদের বক্তব্য হলো যদি ঘুমন্ত অবস্থায় মি‘রাজ হতো, তাহলে কোন বিতর্কের সৃষ্টি হতো না। কারণ স্বপ্নেযোগে মানুষ সেকেন্ডের মধ্যে প্রাচ্য থেকে প্রাশ্চাত্য পর্যন্ত ভ্রমণ করা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আরবদের এটা জানা ছিল। অথচ কাফেররা মি‘রাজের ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর এর বিরুদ্ধে তুমুল বিতর্কে লিপ্ত হলো। সুতরাং এতে প্রমাণিত হয়, রাসূল (ﷺ)‘র মি‘রাজ সশরীরে জাগ্রত অবস্থায় হয়েছিল। যা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতেরও অভিমত। ইমাম তাযুল কুরা বুরহান উদ্দিন কিরমানী (ওফাত.৫০৫হি.) বলেন-
ومذهب أهل السنة والجماعة في المعراج أنه أسرى بروحه وجسده إلى بيت المقدس، ثم إلى السماوات حتى انتهى إلى سدرة المنتهى، فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى
-‘‘এটাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অভিমত যে, রাসূল (ﷺ)‘র ইসরা বায়তুল মুকাদ্দাস এবং সেখান থেকে সিদরাতুল মুনতাহা এবং আল্লাহর নিকট দু ধনুকের নিকটবর্তী হওয়া পর্যন্ত রূহ ও সশরীরের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়েছে।’’
➤ ইমাম তাযুল কুরা বুরহান উদ্দিন কিরমানী, গারায়েবুল তাফসীর, ১/৬২০ পৃষ্ঠা, মুয়াস্সাতুল উলূমুল কোরআন, বয়রুত, লেবানন।