আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলেন, “অতঃপর যখন আসবে ওই কর্ণবিদারক ধ্বনি, সেদিন মানুষ পলায়ন করবে নিজ ভাই, মাতা ও পিতা এবং স্ত্রী ও সন্তানদের থেকে। সেদিন তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকবে। (সূরা আবাসাঃ ৩৩-৩৭)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, “প্রত্যেক বংশীয় ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়তা কিয়ামতের দিন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, শুধু আমার বংশীয় ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়তা ব্যতিত।” {আল মু’জামুল কাবীর, তাবরানী-৩:৪৫ (২৬৩৪), আল ফাওয়ায়েদ, ২:৩৩৩ (১৬০৩), আস সুনানুল কুবরা, ৭:১০২ (১৩৩৯৫/১৩৩৯৬)}
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ যে দিন লোকদেরকে উঠানো হবে (কবর হতে কিয়ামাতের মাঠে) সেদিন আমিই সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশকারী হব। যখন সকল মানুষ আল্লাহ তা’আলার আদালতে একত্র হবে, তখন আমি তাদের ব্যাপারে বক্তব্য উত্থাপন করব। তারা যখন নিরাশ ও হতাশাগ্রস্ত হবে তখন আমিই তাদের সুখবর প্রদানকারী হব। সে দিন প্রশংসার পতাকা আমার হাতেই থাকবে। আমার প্রতিপালকের নিকট আদম-সন্তানদের মধ্যে আমিই সবচাইতে সম্মানিত, এতে গর্বের কিছু নেই। (সূনান আত তিরমিজী ৩৬১০, মিশকাত ৫৭৬৫)
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর নিকট নিবেদন করলাম যে, তিনি যেন কিয়ামত দিবসে আমার জন্য সুপারিশ করেন। তিনি ﷺ বললেন, ঠিক আছে আমি সুপারিশ করব। আমি প্রশ্ন করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! আমি আপনাকে কোথায় খোঁজ করব? তিনি ﷺ বললেন, তুমি সর্বপ্রথম আমাকে পুলসিরাতের সামনে খোঁজ করবে। আমি বললাম, পুলসিরাতে যদি আপনাকে না পাই? তিনি বললেন, তাহলে মীযানের ঐখানে খুঁজবে। আমি আবার বললাম, মীযানের ঐখানেও যদি আপনাকে না পাই? তিনি বললেন, তাহলে হাওযে কাওসারের সামনে খুঁজবে। আমি এ তিনটি জায়গার যে কোন একটিতে অবশ্যই উপস্থিত থাকব। (সূনান আত তিরমিজী ২৪৩৩, মিশকাত ৫৫৯৫)
ইবনে ‘উমার (রাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন লোকেরা ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। প্রত্যেক নবীর উম্মত স্বীয় নবীর অনুসরণ করবে। তারা বলবেঃ হে অমুক (নবী)! আপনি সুপারিশ করুন। হে অমুক (নবী)! আপনি সুপারিশ করুন। (কেউ সুপারিশ করতে চাইবেন না)। শেষ পর্যন্ত সুপারিশের দায়িত্ব নবী মুহাম্মাদ ﷺ এঁর উপর পড়বে। আর এ দিনেই আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে “মাকামে মাহমূদ” এ পৌঁছাবেন। (সহীহ বুখারী ৪৭১৮)
এসব তো আমার নবীর শান প্রকাশের মহা আয়োজন। এটাকে শাফায়াতে কুবরা বলা হয়। অতঃপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা অন্যান্যদেরকেও শাফায়াতের অনুমতি দিবেন, যাদের শাফায়াতের কথা অসংখ্য হাদিসে পাকে এসেছে।
আমার আল্লাহ বললেন,
‘‘অচিরেই আপনার প্রতিপালক আপনাকে মাকামে মাহমুদে (যেখানে সব কিছুই আপনার প্রশংসা করবে) উন্নীত করবেন।’’ (সূরা বনী ইসরাঈলঃ ৭৯)
আমার আলা হযরত রহঃ বললেন,
দেখনি হে হাশর মে ইজ্জত রাসুলুল্লাহ কি
কবর মে লেহরায়ে গে তা হাশর চশমে নুর কে
জল্ওয়া ফরমা হোগি জব তাল’আত রাসুলুল্লাহ কি।
সুরজ উল্টে পাও পাল্টে চাঁদ ইশারে ছে হো চাক
আন্ধে নজদী দেখলে কুদরত রাসুলুল্লাহ কি।
~আলা হযরত আহমদ রেজা খান রহঃ
সূরা বাকারাহ এর ৮-২০ পরপর তেরটি আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা মুনাফিকদের নিয়ে আলোচনা করেছেন। ১৮ নং আয়াতে বলছেন,
‘তারা বধির, বোবা ও অন্ধ। তারা (হকের দিকে) আদৌ ফিরে আসবে না।’ (সূরা বাকারাহ ১৮)
বিঃদ্রঃ নজদী বলতে শয়তানের শিং ইবনে আব্দুল ওয়াহাব নজদীর অনুসারীদের বলা হচ্ছে। যাকে সৌদি আরবের মুফতিও শয়তানের শিং ফতোয়া দিয়েছেন।
শয়তানের শিং এর ভবিষ্যদ্বাণীকৃত হাদিসে মুবারকা যেখান থেকে উম্মতের সবচেয়ে বড় ফেতনাবাজ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব নজদীর জন্ম হয়েছে,
ইবনু উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ হে আল্লাহ! আমাদের শামদেশে বরকত দান করুন, হে আল্লাহ! আমাদের ইয়ামানদেশে বরকত দান করুন। লোকেরা বললেন, আমাদের নজদের জন্যও (দুআ করুন)। তিনি পুনরায় বলেনঃ হে আল্লাহ! আমাদের সিরিয়ায় বরকত দান করুন, আমাদের ইয়ামানদেশে বরকত দান করুন। এবারও লোকেরা বলল, আমাদের নজদের জন্যও (দু’আ করুন)। তিনি বললেনঃ সেখানে তো ভূমিকম্প, বিশৃঙ্খলা বা ফিতনা আর সেখান হতেই শয়তানের শিং আবির্ভাব হবে।
(সূনান আত তিরমিজী ৩৯৫৩, সহিহ বুখারী ৭০৯৪)