সম্মানীত পাঠকগণ
আমরা এই নতুন দিন গুলি থেকে একেবারে রাসূল (দ:)ওনারসেই সোনালী দিন গুলিতে ফিরে গেলামযখন ওনার উপর একটু একটু করে বিভিন্ন অবস্থায় লাওহোমাহফুজে সংরক্ষিত কোরান মাজীদ নাযিল হয়েছিল.ঠিক তখনকার সময় বিভিন্ন সাহাবীগণ একজন ২জন ৫জন সাত জন ১০জন১২জন এরকম করে তারা ইসলাম ধর্মের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল ঠিক তখন রাসূল(দ:)ওনার উপর ও কোরান মাযিদএকটু একটু করে নাযিল হচ্ছিল কিন্তু ইসলাম ধর্ম একেবারে নতুন হওয়ায় কুরআনহাদীসের সাথে তাদেরকোন পূর্ব পরিচয়ছিলনা যার ফলে তারা যখন রাসূল(দ:)ওনার কাছ থেকে কোন কিছুশুনতেন কেউ মুখস্থ করতেন কেউ আবারলিখে রাখতে চেষ্টা করতেন এটা ছিল প্রাথমিক অবস্থায়.তবে এই লিখে রাখার ব্যপারটি কেউ রাসূল(দ:)অনুমতি নিয়েলিখতেন আবার কেউ তাদের ব্যক্তিগত উদ্যেগে লিখেরাখতেন.কিন্তু সেই প্রাথমিক কালে লিখেরাখার পদ্ধতি টি তেমন উন্নতি সাধনহয়নি.কারণ রাসূল(দ:)যখন কোনকিছু বলতেন তখন সেটার সাথে কোরান ও হাদীস দুটোই মিশ্রণ ভাবে বলতেনবা পৃথক পৃথকবলতেন এতে অনেকসাহাবায়ে কেরাম তার(দ:)ঐ বক্তব্য অনুযায়ী কোরান ও হাদীস মিশ্রণ করে লিখে রাখতেন কারণতখনকার সময় কোনটা কোরানের বা কোনটা রাসূল (দ:)ওনারহাদীস সেটা বুঝাখুবই কঠিন ব্যপার ছিলো আবার এখন একটি ব্যপারে কোরানের আয়াত নাযিল হয়েছেআবার পরোক্ষেন সেটা রহিত হয়ে গিয়েছে এগুলি সাহাবায়ে কেরামদের প্রাথমিক অবস্থায় বুঝে উঠা কষ্ট্যসাধ্য ছিলো যার ফলে অনেকেই কোরান ও হাদীস দুটোএকসাথে মিশ্রণ করে লিখে ফেলতেন.কিন্তু এই কোরান ও হাদীস এ দুটিরমিশ্রণ পদ্ধতির এ লেখন রীতী নি:সন্দেহে ঝুকিপূর্ণ ছিলো.এর ফলে কোরান ও হাদীস অবিমিশ্রিত সন্দেহ গ্রন্থ হওযারআশংকা ছিলো এবং এই কোরান হলোলাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত কোরানের হুবুহ না আছে তার কোনকমতি বর্তমান কোরানের সাথে এর মধ্যেকোন শব্দ কম বা বেশী করারঅনুমতি দেওয়া হয়নি.তাই রাসূল (দ:)সাহাবায়ে কেরামের এই প্রাথমিক অবস্থা ও তাদের কোরান ও হাদীস দুটো মিশ্রণ পদ্ধতির লিখন দেখেসাময়িকভাবে কুরআন ব্যতীত অন্যকিছু লিখতে নিষেধকরেন যার ফল শ্রুতিতে এই নিষেধাজ্ঞার উপর কয়েকটি হাদীসলিপিবদ্ধ হয় হাদীসগুলি নিম্নরুপ :-
০১.রাসূল (দ:)আমাদীগকে কুরআন ব্যতিত অন্যকিছুই না লিখতেআদেশ দেন-সূত্র-উমদাতুল কারী-শরহেবূখারী.
০২.আমরা প্রিয়নবীর কাছে যা শুনতাম তা লিখে রাখতাম একদাতিনি আমাদের কাছে আসলেন এবং বললেন তোমরা এগুলিকি লিখছো,আমারাউত্তর দিলাম,আপনারনিকট যা শুনিতাই লিখে রাখি,তিনি বললেন,আল্লাহর কিতাবের সাথে মিশ্রীত করে আরেক কিতাবতৈরী করছো.এরুপলিখা ত্যাগ করো.তখন সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম বলেন আমরামিশ্রিতভাবে যা লিখেছিলাম সবগুলো একত্রে করে একটি মাঠে নিয়েএগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলি-সুত্র-মুসনাদে ইমাম আহমদ,মাজমাউয খাওয়ায়িদ.
০৩.আমরা রাসূল (দ:)এর নিকট লেখারব্যাপারে অনুমতি প্রার্থনা করলাম তখন তিনিআমাদের অনুমতি দেন নি-সূত্র-উমদাতুল কারী-শরহে বূখারী.এই কতিপয় হাদীস গুলিরউপর ভিত্তিকরে বর্থমানে আমরাবলে থাকি রাসূল(দ:)ওনার ওফাতের শতাব্দী পর হাদীসলিখন শুরু হয় এটা আমাদের ভুল ধারনা.
প্রিয় পাঠকগণ উপরোক্ত বক্তব্য থেকেবুঝা যায় রাসূল(দ:)কেন হাদীসলিখে রাখতে নিষেধকরেছিলেন কারণগুলি আমি আবার লিখলাম :-
১.সে সময়টি মধ্যেসাহাবীরা এক নতুনকোরান ও হাদীসশুনতেন রাসূল (দ:)ওনার পাক জবানথেকে
২.সেই কোরানের আয়াত কখন প্রযোয্য কখন প্রযোয্য না সেটাতখন সাহাবী তেমনবুঝতেন না
৩.আর তখন মানুষধীরে ধীরে ইসলামের দিক অগ্রসর হচ্ছিলেন
৪.আর এ সময় কোরানের অনেক আয়াতরহিত অবস্থায় ছিলো
৫.তকন সমস্ত কোরান একেবারেই নাযিল হয়নিযার ফলে নতুননুতন সম্যস্য সম্পর্কে ফায়সালা দেওয়া যেতনা
৬.কোরান একটু একটুকরে নাযিল হতোআর একটু একটুকরে হুকুম জারিহতো.
৭.আর তখনকার সাহাবীরা সবচেয়ে ঝুকিপূর্ন যে কাজটি করত তা হলো তারা কোরান ও হাদীস দুটোই একসাথে বা মিশ্রীতভাবে লিখে রাখত আর এটাই ছিলো মূল কারণ. পাঠকগণ ৭ নং পয়েন্টি অন্তরে গেথে নিন বেশিরভাগ এই কারনটির কারণেরাসূল (দ:)তখনকার আমলে সাময়িক অবস্থার জন্য বা কিছুদিনের জন্য হাদীস লিখেরাখতে নিষেধ করেনঅন্যদিকে তা মূখস্থ করতে এবং প্রচার করতে আদেশ দেস.কিন্তু রাসূল (দ:)সাহাবায়ে কেরামকে সর্বোচ্চো সাবধানতা অবলম্বন করতেনির্দেশ দেন তারাযেন কোন ক্রমেই কুরানের সহিত হাদীসের মি্শ্রন না ঘটায়তা ও বর্ণনা করেন সেই উদ্দেশ্য রাসূল (দ:)একটিহাদীস বর্ণনা করেনহাদীসটি নিম্নরুপ :-
১.হযরত আবু সাঈদ(রা:)থেকে বর্ণিত আমার কোন কথা তোমরা লিখো না,যে ব্যক্তি কুরানব্যতিত আমার নিকটথেকে অন্য কিছুলিখেছে সে যেন তা মুছে ফেলে.তবে আমার কথা বা আমার সম্পর্কীয় কথা তোমরা মৌখিকবর্ণনা কর.তাতেকোন দোষ নেই,মূল কথা হলোআমার বাণীগুলোর মধ্যেও যেন অবিমিশ্রিত নিখুত সত্যতা বজায় থাকে,যেন কোন প্রকার মিথ্যার প্রশ্রয় দেওয়ানা হয়.কারণযে আমার সম্পর্কে কোন মিথ্যা কথা বলবে সে যেন জাহান্নামকে নিজের ঠিকনাবানিয়ে দিবে-সুত্র-সহীহ মুসলিম.প্রিয়পাঠকগণ আশাকরি অধমেরএটুকু লিখাতেই বুঝতেপেরেছেন কেন রাসূল(দ:)হাদীস লিখতেনিষেধ করেছেন সাময়িক অবস্থার জন্য.
হাদীস লিখে রাখতে আদেশ:-ইতিপূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি কেন রাসূল(দ:)সাময়িক কালেরজন্য ইসলামের সূচনাপর্বে সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে হাদীস লিখে রাখতেনিষেধ করেছিলেন.কিছু কাল বা দিন অতিবাহীত হওয়ার পর রাসূল (দ:)যখন নিজেই দেখলেন ওনারসকল সাহাবীগণ সেই ঝুকি থেকে মুক্তহয়েছেন তখন রাসূল(দ:)নিজেই হাদীসলিখতে অনুমতি সহ উতসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে নির্দেশ দেন.এ প্রসঙ্গে কতিপয় হাদীস প্রেরণ করলাম :-
০১.আবু হুরায়রা (রা:)বলেন,আনসারদের জনৈক ব্যক্তি প্রিয়নবীর মজলিসে যাতায়াত করতেন.তিনিপ্রিয়নবীর কথা বার্তা শুনতেন তার ভালইলাগতো কিন্তু তিনিতা মুখস্থ করতেপারতেন না.কাজেইতিনি প্রিয় নবীর কাছে থেকেএ সমস্যাটি জানিয়ে বলেন আমি আপনারকোন কথা বার্তা মনে রাখতে পারিনা,তখন রাসূল(দ:)বলেন তুমিডান হাতের সাহায্য নাও এ কথা বলে রাসূল (দ:)নিজের হাত তাকেলিখে রাখার ইশারাকরে দেখিয়েছেন-সূত্র-জামি তিরমিযী:আবুয়াবুল ইলম.
০২.আব্দুল্লাহ ইবন আমর(রা:)থেকে বর্নিত নবী (দ:)বলেছেন ইলমে হাদীসকে আবদ্ধকরে রাখ.আমি বললাম এটা আবদ্ধকরার অর্থ কি তিনি বললেন এর অর্থ হলো ইলমেহাদীসকে লিখে রাখো-সূত্র-মুস্তাদরাকে হাকিম:কিতাবুল ইলম.
০৩.সহীহ বূখারীতে বর্নিত আছে যে,বনু লাইসের লোকেরা খোজায়া গোত্রের একজনকে হত্যাকরে,এই হত্যার বিনিময়ে খোয়ায়া গোত্রের রোকজন মক্কা বিজয়ের বছর বুন লাইসের একজনকে হত্যা করে,এ প্রসঙ্গে নবী (দ:)একটি খুতবাপ্রদা করেন.উপস্তিত লোকদের মধ্যে আবু শাহ নামক এক সাহাবী খুতবাটি লিখেদেওয়ার জন্য আবদেনকরলে প্রিয়নবী (দ:)আবু শাহকে এ খুতবা লিখে দিতেনির্দেশ দেন-সূত্র-সহীহ বূখারী.
শুধু লেখার নির্দেশ নয় বরং তার (দ:) যবান মুবারক থেকেনির্গত সকল অবস্থার কথা লিখে রাখতেঅনুমতি প্রদান করেন.এরপর থেকে নবী করীম (দ:)ওনারপ্রত্যেকটি কথাই আমি হিফযতের উদ্দেশ্য লিখে রাখতাম.এ অবস্থা দেখে কুরাইশ বংশেরসাহাবীগণ আমাকে এ কাজ করতে নিষেধকরেন,তারা আমাকেবললেন,তুমি রাসূল(দ:)এর মুখ থেকে যাই শোনতার সবই লিখেরাখো. অতচ তিনিতো একজন মানুষই.কখনো সন্তোষ আবারকখেনা ক্রোধের অবস্থা থেকে কথা বলেন.হযরত আব্দুল্লাহ (রা:)বলেন,এ কথা শুনে আমি লেখাবন্ধ করে দেই এবং এ ব্যপারটি রাসূল (দ:)ওনারকাছে প্রকাশ করি তখন রাসূল (দ:)আমার কথার সাথেসাথে আপন ওষ্ঠদ্বয়ের দিকে ইশারা করে বলে উঠলেন :
তুমি লিখতে থাকো.যে আল্লাহর মুষ্টিবদ্ধ আমার প্রাণ তার কসম করে বলছি,আমারএ মুখ থেকেকোন অবস্থায় প্রকৃত সত্য ব্যতীত কিছু্ই নির্গত হয় না.এ কথা শুনেআব্দূল্রাহ (রা:)পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ আপনার যবানথেকে যা শুনবতার সবই কি লিখব.রাসূল (দ:)বললেন হ্যা.পুনরায় আব্দুল্রাহ (রা:)আবারজিঙ্গাসা করলেন আপনারক্রোধ এবং সন্তোষ উভয় অবস্থার সকল কথাই কি লিখেরাখব.তখন রাসূল(দ:)চুড়ান্তভাবে বললেন,হ্যা,এ সকল অবস্থার মধ্যেও আমি প্রকৃত সত্য ব্যতিত আর কিছু বলি না-সুত্র-সুনানে দারমী,মুস্তাদরাকে হাকিম.
এই হুকুম জারি হওয়ারপর খেকেই কিছুসংখ্যক সাহাবী যারালিখতে পারতেন তারাসকলেই রাসূল (দ:)ওনার পবিত্র যবানথেকে যা শুনতেন তা সবই লিখেরাখতেন.
উপরোক্ত আলোচনা থেবে এ প্রমান বহন করে যে প্রাথমিক অবস্থার বিশেষবিশেষ কারনে রাসূল(দ:)হাদীস লিখতেনিষেধ করেন কিন্তু যখন কালের পরিবর্তন হলো এবং বহু সংখ্যাক সাহাবী ইসালামে দীক্ষিত হলো এবং রাসূল সকল সন্দিহান দুর হলো তখন রাসূল (দ:)ওনারজবান থেকে যা নির্গত গতো তা সবি লিখে রাখতেআদেশ করেন.
বর্থমানে আমরা যারা এখনোবলি যে রাসূল(দ:)ওনার ওফাতের বহু শতব্দি পর হাদীস লিখন শুরুহয় সেই ভ্রান্ত ধারণা থেক দয়াকরে বেড়িয়ে আসূণ এবং সত্যর বণী পৌছেদিতে এই পোষ্টটি অধিক শেয়ার করুন..আল্লাহ আমিন..প্রচারে-মোখলেছিয়া সূন্নী খানকাশরীফ।