তাকবীরে তাহরিমার সময়ে হাত উঠানো সুন্নাত। এ ব্যাপারে হাদীসে ভিন্ন কোন হুকুম নেই এবং উম্মাতের মধ্যেও এ নিয়ে কোন মতবিরোধ নেই। তবে তাকবীরে তাহরিমা ব্যতীত বাকী অন্যান্য ক্ষেত্রে হাত উঠানো নিয়ে সাহাবায়ে কিরামের যুগ থেকে অদ্যাবধি দুটি আমলই চলে আসছে। আমলগত এ পার্থক্যের প্রতি ইঙ্গিত করে ইমাম তিরমিজী রহ. ‘রফউল ইয়াদাইন’-এর পক্ষে বর্ণিত হযরত ইবনে উমার রা.-এর হাদীস পেশ করে বলেন: সাহাবা ও তাবিঈদের মধ্যে কেউ কেউ (রুকু-সিজদাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে) হাত উঠানোর পক্ষে মতামত দিয়েছেন। আবার ‘রফউল ইয়াদাইন’ না করার পক্ষে বর্ণিত হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা.-এর হাদীস পেশ করে বলেন: সাহাবা ও তাবিঈদের মধ্যে কেউ কেউ হাত না উঠানোর
পক্ষেও মতামত দিয়েছেন।
উল্লিখিত দুটি মতের মধ্যে হযরত ইবনে মাসউদ রা. ও অন্যান্য সাহাবায়ে কিরাম হাত না উঠানোর যে আমল গ্রহণ করেছেন, হানাফী মাজহাবের উলামায়ে কিরাম তদানুযায়ী রসূলুল্লাহ ﷺ কর্তৃক হাত না উঠানোর আমলকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। হাদীসের বিভিন্ন কিতাব থেকে উক্ত আমলের দালীলিক ভিত্তি আপনাদের সামনে তুলে ধরা হবে ইনশাআল্লাহ।
তিরমিজী শরীফ থেকে
حَدَّثَنَا هَنَّادٌ قَالَ: حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الأَسْوَدِ، عَنْ عَلْقَمَةَ، قَالَ: قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ: «أَلَا أُصَلِّي بِكُمْ صَلَاةَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَصَلَّى، فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلَّا فِي أَوَّلِ مَرَّةٍ». وَفِي البَابِ عَنْ البَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ. حَدِيثُ ابْنِ مَسْعُودٍ حَدِيثٌ حَسَنٌ، وَبِهِ يَقُولُ غَيْرُ وَاحِدٍ مِنْ أَهْلِ العِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالتَّابِعِينَ، وَهُوَ قَوْلُ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ وَأَهْلِ الكُوفَةِ (رَوَاه التِّرمٍذِىْ فِىْ بَابِ ما جاء أن النبي صلى الله عليه وسلم لم يرفع إلا في أول مرة)
অনুবাদ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. (উপস্থিত লোকদেরকে লক্ষ্য করে) বলেন: আমি কি তোমাদেরকে রসূলুল্লাহ ﷺ-এর নামাযের মতো নামায পড়াব না? এরপর তিনি নামায পড়লেন এবং তাতে প্রথমবার (অর্থাৎ, তাকবীরে তাহরিমা) ব্যতীত আর কোথাও হাত তুললেন না। এ সম্পর্কে বারা বিন আযেব রা. থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইবনে মাসউদ রা.-এর হাদীসটি হাসান। সাহাবা এবং তাবিঈদের একাধিক আলিম এভাবেই আমলের কথা বলেছেন। এটা সুফিয়ান সাওরী এবং কুফাবাসীদেরও মত (তিরমিজী: ২৫৭)
হাদীসটির স্তর : সহীহ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। ইমাম তিরমিজী রহ. এটাকে হাসান বললেও শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন: صححه غير واحد من الأئمة، “বহু সংখ্যক ইমাম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন”। (সহীহ ইবনে হিব্বান: ১৮৭৪ নম্বর হাদীসের আলোচনায়) আল্লামা আবুল হাসান ইবনুল কত্তান রহ. বলেন: وَذكر التِّرْمِذِيّ عَن ابْن الْمُبَارك أَنه قَالَ: لَا يَصح.وَقَالَ الْآخرُونَ: إِنَّه صَحِيح. وَمِمَّنْ قَالَ ذَلِك الدَّارَقُطْنِيّ، قَالَ: إِنَّه حَدِيث صَحِيح “ইমাম তিরমিজী রহ. ইবনুল মুবারকের বরাত দিয়ে বলেন যে, হাদীসটি সহীহ নয়। আর অন্যান্যরা বলেন: এটা সহীহ। যারা সহীহ বলেন তাদের একজন ইমাম দারাকুতনী। তিনি বলেন: হাদীসটি সহীহ”। (আল ওয়াহাম ওয়াল ঈহাম: ১১০৯ নম্বর হাদীস-এর আলোচনায়) তিরমিজী, আবু দাউদ এবং নাসাঈ শরীফের তাহকীকে শায়খ আলবানীও এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। মুসনাদে আবু ইয়া’লার তাহকীকে শায়খ হুসাইনও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (মুসনাদে আবু ইয়া’লা: ৫০৪০ নম্বর হাদীসের তাহকীকে) শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি আবু দাউদ: ৭৪৮ ও ৭৪৯, নাসাঈ: ১০২৯ ও ১০৬১, মুসনাদে আহমাদ: ৩৬৮১ ও ৪২১১, আব্দুর রযযাক: ২৫৩৩ ও ২৫৩৪, ইবনে আবী শাইবা: ২৪৫৬ ও ২৪৫৮ এবং আবু ইয়া’লা: ৫০৪০ ও ৫৩০২ নম্বরে বর্ণিত হয়েছে।
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রসূলুল্লাহ ﷺ শুধু নামাযের শুরুতে একবার হাত উঠাতেন। ইমাম তিরমিজী রহ. আরও উল্লেখ করেন যে, এটা কুফাবাসীদের আমল। আর কুফাবাসীদের আমল হওয়ার অর্থ হলো আশারায়ে মুবাশশারাহ এবং বদরী সাহাবাগণের একাংশসহ দেড় হাজার সাহাবায়ে কিরামের আমল। কারণ কুফা নগরীতে বসবাস করতেন দেড় হাজার সাহাবায়ে কিরাম। আল্লামা আবুল হাসান আহমাদ বিন আব্দুল্লাহ আল ইযলী (মৃত্যু- ২৬১) বলেন: نَزَلَ الْكُوفَةَ أَلْفٌ وَخَمْسُمِائَةٍ مِنْ أصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (بَابٌ فِيْمَنْ نَزَلَ الْكُوْفَةَ وَغَيْرِهَا مِنَ الصَّحَابَةِ) “কুফা নগরীতে বসবাস করতেন এক হাজার পাঁচশত সাহাবায়ে কিরাম”। (মা’রিফাতুছ ছিকাত: ‘কুফা ও অন্যান্য শহরে বসবাসকারী সাহাবাগণ’ অধ্যায়) সুতরাং সাহাবা, তাবিঈন এবং তাবে তাবিঈনের যুগে কুফায় কোন আমল বিস্তার লাভ করে থাকলে নিশ্চিত বলা যায় যে, এটা রসূলুল্লাহ ﷺ -এর আমল। কারণ, দেড় হাজার সাহাবায়ে কিরাম ও তাঁদের সংশ্রবপ্রাপ্ত ছাত্রগণের নগরীতে কোন ভিত্তিহীন আমলের ওপর সবাই একমত হবেন তা কল্পনাতীত। আরও লক্ষণীয় বিষয় এই যে, ইসলামের দলীল হিসেবে সনদের বিশুদ্ধতার চেয়ে আমলের বিস্তৃতির মান কোনক্রমে কম নয়।
নাসাঈ শরীফ থেকে
أَخْبَرَنَا سُوَيْدُ بْنُ نَصْرٍ، قَالَ أَنْبَأَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الأَسْوَدِ، عَنْ عَلْقَمَةَ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِصَلاَةِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَقَامَ فَرَفَعَ يَدَيْهِ أَوَّلَ مَرَّةٍ ثُمَّ لَمْ يُعِدْ
অনুবাদ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন: আমি কি তোমাদেরকে রসূলুল্লাহ ﷺ -এর নামায সম্পর্কে বলব না? রাবী বলেন: অতঃপর তিনি নামাযে দাঁড়িয়ে প্রথমবার উভয় হাত উঠালেন; তারপর আর উঠালেন না। (নাসাঈ: ১০২৯)
হাদীসটির স্তর : সহীহ। সুআইদ বিন নাসর ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর সুআইদ ثقةٌ “নির্ভরযোগ্য”। (তাকরীব: ২৯৯০) শায়খ আলবানীও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (সহীহ-জঈফ নাসাঈ: ১০২৯) এ হাদীসটি ইমাম নাসাঈ রহ. ভিন্ন আরেকটি সনদেও বর্ণনা করেছেন। (নাসাঈ: ১০৬১)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রসূলুল্লাহ ﷺ শুধু নামাযের শুরুতে একবার হাত উঠাতেন।
ফায়দা : হযরত ইবনে মাসউদ রা.-এর এ হাদীসটি প্রমাণিত নয় বলে তিরমিজী শরীফে আব্দুল্লাহ বিন মুবারক রহ.-এর যে মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে, এ হাদীসের সনদ দ্বারা তারও অবসান ঘটে। কারণ, ‘রফউল ইয়াদাইন’ না করার ব্যাপারে বর্ণিত এ সহীহ হাদীসটি হযরত ইবনুল মুবারক রহ. নিজেই বর্ণনা করেছেন। অতএব, তাঁর নিকটে এ হাদীস অজানা নয়; বরং ইবনে মাসউদ রা.-এর অপর একটি কওলী হাদীস বর্ণিত আছে। হয়তো সে হাদীসটির ব্যাপারে ইবনুল মুবারক রহ. উক্ত মন্তব্য করেছেন।
আবু দাউদ শরীফ থেকে
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ عَاصِمٍ، يَعْنِي ابْنَ كُلَيْبٍ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الأَسْوَدِ، عَنْ عَلْقَمَةَ، قَالَ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ أَلاَ أُصَلِّي بِكُمْ صَلاَةَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَصَلَّى فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلاَّ مَرَّةً . قَالَ أَبُو دَاوُدَ هَذَا مُخْتَصَرٌ مِنْ حَدِيثٍ طَوِيلٍ وَلَيْسَ هُوَ بِصَحِيحٍ عَلَى هَذَا اللَّفْظِ (رَوَاه ابُوْ دَاود فِىْ بَابِ مَنْ لَمْ يَذْكُرِ الرَّفْعَ عِنْدَ الرُّكُوعِ)
অনুবাদ : হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. (উপস্থিত লোকদেরকে লক্ষ্য করে) বলেন: আমি কি তোমাদেরকে রসূলুল্লাহ ﷺ -এর নামাযের মতো নামায পড়াব না? এরপর তিনি নামায পড়লেন এবং তাতে মাত্র একবার হাত উঠালেন। (অর্থাৎ, তাকবীরে তাহরিমার সময়ে) ইমাম আবু দাউদ রহ. বলেন: এটা একটি দীর্ঘ হাদীসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ। আর এ হাদীসটি এই শব্দে সহীহ নয়। (আবু দাউদ: ৭৪৮)
হাদীসটির স্তর : সহীহ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের ثقة “নির্ভরযোগ্য” রাবী। সুতরাং সনদের বিবেচনায় হাদীসটি সহীহ। শায়খ আলবানীও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (সহীহ-জঈফ আবু দাউদ: ৭৪৮) এ কারণেই হযরত আবুল হাসান ইবনুল কত্তান রহ. হাদীসটিকে أقرب إِلَى الصِّحَّة “সহীহ’র সাথে ঘনিষ্ঠ” বলে মন্তব্য করেছেন। (আল ওয়াহাম ওয়াল ঈহাম: হাদীস নম্বর- ১১০৯)
ফায়দা : ইমাম আবু দাউদ রহ. এ হাদীসটি বর্ণনান্তে এ মন্তব্য করেছেন যে, “হাদীসটি এই শব্দে সহীহ নয়”। তিনি এ হাদীসের কোন রাবীকে জঈফ বলতে পারেননি; আর তা সম্ভবও নয়। যেহেতু এ সব রাবীর নির্ভরযোগ্যতা উম্মাতের নিকটে স্বীকৃত। এর পরেও উক্ত মন্তব্যটি কেন করলেন তার কোন কারণ তিনি উল্লেখ করেননি। অবশ্য আবু দাউদ শরীফের মূল পা-ুলিপি তাহকীককারী বিজ্ঞ আলিমগণের মন্তব্য হলো: উক্ত কথাটি ইমাম আবু দাউদ রহ.-এর নয়। ভারবর্ষের মুদ্রণেও এ কথাটি লেখা নেই। বিস্তারিত দেখুন বজলুল মাযহুদ, ৪র্থ খন্ড, ৩১৩ পৃষ্ঠায়।
হযরত ইবনে মাসউদ রা.-এর এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ রহ. আরও একটি সনদে উল্লেখ করেছেন। (হাদীস নং-৭৪৯) সে সনদে হযরত সুফিয়ান সাওরী রহ. থেকে বর্ণনাকারী তিনজন রাবীর মধ্যে মুআবীয়া মুসলিমের রাবী আর আবু হুজাইফা বুখারীর রাবী। শায়খ আলবানী উক্ত সনদটিকে সহীহ বলেছেন। (সহীহ-জঈফ আবু দাউদ: ৭৪৯)
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الْوَكِيلُ , ثنا الْحَسَنُ بْنُ عَرَفَةَ , ثنا هُشَيْمٌ , عَنْ حُصَيْنٍ , وَحَدَّثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ , وَعُثْمَانُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ جَعْفَرٍ , قَالَا: نا يُوسُفُ بْنُ مُوسَى , نا جَرِيرٌ , عَنْ حُصَيْنِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ , قَالَ: دَخَلْنَا عَلَى إِبْرَاهِيمَ فَحَدَّثَهُ عَمْرُو بْنُ مُرَّةَ , قَالَ: صَلَّيْنَا فِي مَسْجِدِ الْحَضْرَمِيِّينَ , فَحَدَّثَنِي عَلْقَمَةُ بْنُ وَائِلٍ , عَنْ أَبِيهِ , أَنَّهُ رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «يَرْفَعُ يَدَيْهِ حِينَ يَفْتَتِحُ الصَّلَاةَ وَإِذَا رَكَعَ وَإِذَا سَجَدَ». فَقَالَ إِبْرَاهِيمُ: مَا أَرَى أَبَاكَ رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا ذَلِكَ الْيَوْمَ الْوَاحِدَ فَحَفِظَ ذَلِكَ , وَعَبْدُ اللَّهِ لَمْ يَحْفَظْ ذَلِكَ مِنْهُ , ثُمَّ قَالَ إِبْرَاهِيمُ: إِنَّمَا رَفْعُ الْيَدَيْنِ عِنْدَ افْتِتَاحِ الصَّلَاةِ
অনুবাদ : হযরত হুসাইন বিন আব্দুর রহমান বলেন: আমি হযরত ইবরাহীম নাখঈ রহ.-এর নিকটে গেলাম। তখন হযরত আমর বিন মুররাহ তাঁকে হাদীস শুনালেন যে, আমরা হাযরামীদের মসজিদে নামায পড়লাম। অতঃপর আলকামা বিন ওয়ায়েল আমাদেরকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করলেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ ﷺ কে হাত উঠাতে দেখেছেন নামাযের শুরুতে এবং রুকু-সিজদার সময়ে। এ কথা শুনে হযরত ইবরাহীম নাখঈ রহ. বললেন, তোমার পিতা রসূলুল্লাহ স.কে ওই একদিন দেখে স্মরণ রাখলেন আর ইবনে মাসউদ রা. তা স্মরণ রাখতে পালেন না? অতঃপর তিনি বললেন: রফউল ইয়াদাইন শুধু নামাযের শুরুতে হবে। (দারাকুতনী: ১১২১)
হাদীসটির স্তর : সহীহ। ইমাম দারাকুতনী এ হাদীসটিকে দু’টি সনদে বর্ণনা করেছেন। প্রথম সনদে হাসান বিন আরাফা এবং আহমাদ বিন আব্দুল্লাহ ব্যতীত সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর হাসান বিন আরাফার ثقة “নির্ভরযোগ্য”। (আল কাশেফ: ১০৪২) আহমাদ বিন আব্দুল্লাহও ثقة “নির্ভরযোগ্য”। (তারীখে বাগদাদ: ২২০৬) সুতরাং এ সনদটি সহীহ।
আর দ্বিতীয় সনদে ইমাম দারাকুতনীর উসতাদ দু’জন তথা হুসাইন ও উসমান। এ দু’জনই বুখারীর/মুসলিমের রাবী। আর দারাকুতনীর উক্ত দুই উসতাদের মধ্যে হুসাইন বিন ইসমাঈলের ব্যপারে আল্লামা খতীবে বাগদাদী বলেন: وكان فاضلا، صادقا، دينا، “তিনি ছিলেন মর্যাদাসম্পন্ন, সত্যনিষ্ঠ এবং দ্বীনদার”। (তারীখে বাদাদ: ৪০১৮) সুতরাং এ সনদটিও সহীহ। ইবরাহীম নাখঈ আব্দুল্লাহ বিন মাসউদকে না পেলেও তাঁর মুরসাল সহীহ। (তাহজীবুত তাহজীব)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. রসূলুল্লাহ ﷺ কে বহুবার দেখেছেন যে, তিনি কেবল নামাযের শুরুতে একবার হাত উঠাতেন।
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَمَّادٍ، أَخْبَرَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ، حَدَّثَنَا سَالِمٌ الْبَرَّادُ قَالَ: دَخَلْنَا عَلَى أَبِي مَسْعُودٍ الْأَنْصَارِيِّ فَسَأَلْنَاهُ عَنِ الصَّلَاةِ فَقَالَ: ” أَلَا أُصَلِّي بِكُمْ كَمَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي؟ ” قَالَ: ” فَقَامَ فَكَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ، ثُمَّ رَكَعَ فَوَضَعَ كَفَّيْهِ عَلَى رُكْبَتَيْهِ، وَجَافَى بَيْنَ إِبْطَيْهِ. قَالَ: ثُمَّ قَامَ حَتَّى اسْتَقَرَّ كُلُّ شَيْءٍ مِنْهُ، ثُمَّ سَجَدَ فَوَضَعَ كَفَّيْهِ وَجَافَى بَيْنَ إِبِطَيْهِ. ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ حَتَّى اسْتَقَرَّ كُلُّ شَيْءٍ مِنْهُ، ثُمَّ صَلَّى أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ هَكَذَا
অনুবাদ : হযরত সালেম রহ. বলেন: আমরা হযরত আবু মাসউদ আনসারী রা.-এর নিকটে গিয়ে রসূলুল্লাহ ﷺ -এর নামায সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তিনি বললেন: রসূলুল্লাহ ﷺ যেমন নামায পড়তেন আমি কি তোমাদেরকে অনুরূপ নামায পড়াব না? হযরত সালেম বলেন: অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে তাকবীর দিলেন এবং উভয় হাত উঁচু করলেন। এরপর রুকু করলেন এবং উভয় পাঞ্জা হাঁটুর ওপর রাখলেন। আর হাত দু’টি বগল থেকে ফাঁকা রাখলেন। হযরত সালেম বলেন: তারপর এমনভাবে দাঁড়ালেন যে, শরীরের প্রতিটি অঙ্গ যথাস্থানে স্থির হলো। এরপর সিজদা করলেন এবং সিজদায় উভয় হাতের পাঞ্জা যমীনে রাখলেন। আর হাত দু’টি বগল থেকে ফাঁকা রাখলেন। অতঃপর সিজদা থেকে মাথা উঠালেন (এবং বসলেন) এমনকি শরীরের প্রতিটি অঙ্গ যথাস্থানে স্থির হলো। এভাবে তিনি চার রাকাত নামায আদায় করলেন। (মুসনাদে আহমাদ: ২২৩৫৯)
হাদীসটির স্তর : সহীহ লিগইরিহী। সালেম বাররাদ ব্যতীত সবাই-ই বুখারীর রাবী। আর সালেম ثقة “নির্ভরযোগ্য”। (তাকরীব: ২৪০৫) শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন: إسناده حسن “হাদীসটির সনদ হাসান”। (মুসনাদে আহমাদ: ২২৩৫৯ নম্বর হাদীসের আলোচনায়) হযরত ইবনে মাসউদ এবং বারা বিন আযেব রা. থেকে বর্ণিত হাদীস দ্বারাও এ পদ্ধতির সমর্থন রয়েছে।
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রসূলুল্লাহ ﷺ শুধু নামাযের শুরুতে একবার হাত উঠাতেন।
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ الْبَزَّازُ حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي زِيَادٍ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى عَنِ الْبَرَاءِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ رَفَعَ يَدَيْهِ إِلَى قَرِيبٍ مِنْ أُذُنَيْهِ، ثُمَّ لَا يَعُودُ (رَوَاه ابُوْ دَاود فِىْ بَابِ مَنْ لَمْ يَذْكُرِ الرَّفْعَ عِنْدَ الرُّكُوعِ)
অনুবাদ : হযরত বারা বিন আযেব রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ যখন নামায শুরু করতেন তখন উভয় কানের কাছাকাছি হাত উঠাতেন। এর পরে আর উঠাতেন না। (আবু দাউদ: ৭৫০)
হাদীসটির স্তর : হাসান। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী। তবে ইয়াযীদ বিন আবী যিয়াদের ব্যাপারে প্রসিদ্ধি আছে যে, বার্ধক্যে তাঁর স্মৃতিশক্তির বিকৃতি ঘটেছিলো। এ কারণে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়ে থাকে যে, ثُمَّ لَا يَعُودُ (তাকবীরে তাহরিমার পরে তিনি আর হাত উঠাননি) এ বাক্যটি হাদীসের অংশ নয়; বরং এটা কারও শিখিয়ে দেয়া। কিন্তু একাধিক কারণে এ অভিযোগ সঠিক নয়।
প্রথম কারণ: ইয়াযীদ বিন আবী যিয়াদের উসতাদ হযরত আব্দুর রহমান বিন আবী লাইলা। তাঁর থেকে এ বাক্যটি হযরত ইয়াযীদ বিন আবী যিয়াদ একাই বর্ণনা করেননি; বরং আরও একাধিক মুহাদ্দিস অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। যেমন- ঈসা বিন আব্দুর রহমান (ইবনে আবী শাইবা: ২৪৫৫, ত্বহাবী: ১৩৪৮, জুযউ রফইল ইয়াদাইন লিলবুখারী: ৩৪) ও হাকাম বিন উতাইবা (ইবনে আবী শাইবা: ২৪৫৫, ত্বহাবী: ১৩৪৮, জুযউ রফইল ইয়াদাইন: ৩৪) সুতরাং ইয়াযীদ বিন আবী যিয়াদের একার স্মৃতিশক্তি বিকৃত হলেও সবার স্মৃতিশক্তি তো আর বিকৃত হয়নি।
দ্বিতীয় কারণ: হযরত ইয়াযীদ বিন আবী যিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো: তাঁর বার্ধক্যে স্মৃতিশক্তির বিকৃতি ঘটেছিলো; কিন্তু উক্ত বাক্যটি হযরত ইয়াযীদ বিন আবী যিয়াদের বৃদ্ধ বয়সের বর্ণনা নয়। কারণ, ইয়াযীদ বিন আবী যিয়াদের যুবক বয়সের ছাত্রদের মধ্যে বড় বড় মুহাদ্দিসগণ হাদীসটি অনুরূপ শব্দে বা অনুরূপ অর্থে বর্ণনা করেছেন। যেমন- সুফিয়ান সাওরী (ত্বহাবী: ১৩৪৬), শু’বা বিন হাজ্জাজ (দারাকুতনী: ১১২৭), ইসমাঈল বিন যাকারিয়া (দারাকুতনী: ১১২৯), মুহাম্মাদ বিন আবী লাইলা (দারাকুতনী: ১১৩২), হামযা আয যাইয়াত (তবারানী আওসাত: ১৩২৫), শারীক বিন আব্দুল্লাহ (আবু দাউদ: ৭৫০) ও ইসরাঈল বিন ইউনুস (খিলাফিয়্যাত লিল বাইহাকী)। এ ছাড়াও ইবনে আদী তাঁর ‘কামিল’ কিতাবে বলেন: وَرَوَاهُ هُشَيْمٌ وشَرِيك وَجَمَاعَةٌ مَعَهُمَا عَنْ يَزِيدَ بِإِسْنَادِهِ وَقَالُوا فيه ثم لم يعد “হুশাইম, শারীক ও তাঁদের সাথে একদল মুহাদ্দিস ইয়াযীদ বিন আবী যিয়াদ থেকে হাদীসটি উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন এবং তাঁরা সবাই ثُمَّ لم يعد বাক্যটি বলেছেন”। (কামিল: ইয়াযীদ বিন আবী যিয়াদের জীবনী আলোচনায়)
অতএব, মুসলিম শরীফের রাবী ইয়াযীদ বিন আবী যিয়াদের স্মৃতিশক্তির আংশিক দুর্বলতার কারণে বিখ্যাত মুহাদ্দিসীনে কিরামের সমর্থিত বর্ণনাকে উপেক্ষা করে হাদীসটিকে জঈফ বলা উসূলে হাদীসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
উপরোক্ত সমর্থন ছাড়াও হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ এবং আবু মাসউদ আনসারী রা. থেকে বর্ণিত সহীহ মারফু’ হাদীস, আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার রা., হযরত আলী রা., হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার রা.সহ একদল সাহাবায়ে কিরাম আর সেই সাথে বিশিষ্ট তাবিঈগণের আমল হযরত বারা বিন আযেব রা.-এর বর্ণিত হাদীসকে আরও শক্তিশালী করে।
أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللَّهِ الْحَافِظُ عَنْ أَبِي الْعَبَّاسِ مُحَمَّدِ بْنِ يَعْقُوبَ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إسْحَاقَ عَنْ الْحَسَنِ بْنِ الرَّبِيعِ عَنْ حَفْصِ بْنِ غِيَاثٍ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي يَحْيَى عَنْ عَبَّادِ بْنِ الزُّبَيْرِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَانَ إذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ رَفَعَ يَدَيْهِ فِي أَوَّلِ الصَّلَاةِ، ثُمَّ لَمْ يَرْفَعْهَا فِي شَيْءٍ حَتَّى يَفْرُغَ،
অনুবাদ: হযরত আব্বাদ বিন যুবাইর রহ. থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ ﷺ যখন নামায শুরু করতেন তখন নামাযের শুরুতে হাত উঠাতেন। অতঃপর নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত আর উঠাতেন না। (ইমাম বাইহাকীর খিলাফিয়্যাতের বরাতে নাসবুর রায়াহ)
হাদীসটির স্তর : সহীহ, মুরসাল। এ সনদের রাবীগণ সবাই-ই উঁচু মানের মুহাদ্দিস। ইমাম বাইহাকীর উসতাদ হাকেম আবু আব্দুল্লাহ নিশাপুরী প্রসিদ্ধ হাফেজ এবং মুসতাদরাকের লেখক। মুহাম্মাদ বিন ইয়াকুব হাফেজে হাদীস (তারীখুল ইসলাম: ৭/৬১৮) মুহাম্মাদ বিন ইসহাক ছগানী মুসলিমের রাবী। (তাকরীব: ৬৪২০) হাসান বিন রবী’ বুখারী-মুসলিমের রাবী। (তাকরীব: ১৩৬৭) হাফস বিন গিয়াছ বুখারী-মুসলিমের রাবী। (তাকরীব: ১৫৫৯) মুহাম্মাদ বিন আবী ইয়াহইয়া ثقة “নির্ভরযোগ্য”। (আল কাশেফ: ৫২১৯) আর আব্বাদ বিন যুবাইর হলেন হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রা.-এর ছেলে। তিনি ছিলেন মক্কার কাযী এবং বুখারী-মুসলিমের প্রসিদ্ধ ثقة “নির্ভরযোগ্য” রাবী। (তাকরীব: ৩৪৬৯)
ফায়দা : হযরত আব্বাদ বিন যুবাইর রহ. তাবিঈ হওয়ায় হাদীসটি মুরসাল। আর নির্ভরযোগ্য রাবীর বর্ণিত মুরসাল হাদীসের পক্ষে কোন সমর্থক হাদীস থাকলে চার ইমামসহ হাদীসের অনেক নীতিনির্ধারক ইমামের নিকটে সেটা গ্রহণযোগ্য। (শরহে নুখবা: মুরসাল অধ্যায়) আর এ মুরসাল হাদীসের সমর্থনে পূর্ববর্ণিত মারফু’ হাদীসও রয়েছে। আর নিম্নে বর্ণিত আকাবির সাহাবায়ে কিরামের আমলও রয়েছে। সুতরাং এ মুরসাল হাদীসটি গ্রহণযোগ্য। সাহাবায়ে কিরামের সত্যবাদিতা স্বীকৃত হওয়ায় যখন তাঁদের মুরসাল সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণযোগ্য, তখন অন্য রাবীদের সত্যবাদিতা স্বীকৃত হলে তাদের মুরসাল গ্রহণযোগ্য না হওয়ার কী কারণ থাকতে পারে? আর আব্বাদ বিন যুবাইর-এর ব্যাপারে এ স্বীকৃতি রয়েছে যে, أصدق الناس لهجة و كان “তিনি ছিলেন সর্বাধিক সত্যভাষী”। (তাহজীবুত তাহজীব: ৩১৩৫) সুতরাং যিনি মানুষের সাথে মিথ্যা কথা বলেন না তিনি সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হয়ে রসূলুল্লাহ ﷺ-এর ব্যাপারে কোন কথা বলবেন তা কী করে হতে পারে? উপরন্তু, তাহজীবুত তাহজীবে হযরত আব্বাদ রহ.-এর উসতাদগণের নামের যে তালিকা পেশ করা হয়েছে তাঁরা সবাই-ই সাহাবা। তিনি সাধারণতঃ তাঁদের থেকেই হাদীস বর্ণনা করে থাকেন। সুতরাং সর্বাধিক সম্ভাবনাময় কথা এটাই যে, তিনি রসূলুল্লাহ ﷺ এর উক্ত আমলটি যার মাধ্যমে শুনেছেন তিনি কোন সাহাবা হবেন। আর হাদীস গ্রহণের নীতিমালা অনুযায়ী সাহাবার নাম উল্লেখ না করলেও হাদীস সহীহ।
তাকবীরে তাহরিমা ব্যতীত নামাযের অন্যান্য জায়গায় হাত উত্তোলন না করার আমল উল্লিখিত মারফু’ হাদীস ব্যতীত আরও বহু আকাবির সাহাবা ও তাবিঈ থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো।
রফউল ইয়াদাইন-এর ব্যাপারে বিশিষ্ট সাহাবায়ে কিরামের আমল
=====================================
আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার রা.-এর আমল
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ آدَمَ، عَنْ حَسَنِ بْنِ عَيَّاشٍ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ أَبْجَرَ، عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ عَدِيٍّ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، قَالَ: «صَلَّيْتُ مَعَ عُمَرَ، فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ فِي شَيْءٍ مِنْ صَلَاتِهِ إِلَّا حِينَ افْتَتَحَ الصَّلَاةَ» قَالَ عَبْدُ الْمَلِكِ : وَرَأَيْت الشَّعْبِيَّ ، وَإِبْرَاهِيمَ ، وَأَبَا إِسْحَاقَ ، لاَ يَرْفَعُونَ أَيْدِيَهُمْ إِلاَّ حِينَ يَفْتَتِحُونَ الصَّلاَةَ.
অনুবাদ : হযরত আসওয়াদ রহ. বলেন: আমি হযরত উমার রা.-এর সাথে নামায পড়েছি। তিনি নামায শুরু করার সময় ব্যতীত নামাযে আর কোথাও হাত উঠাননি। আব্দুল মালেক বলেন: আমি শা’বী, ইবরাহীম ও আবু ইসহাককে দেখেছি; তাঁদের কেউ নামাযের শুরু ব্যতীত হাত উঠাননি। (ইবনে আবী শাইবা: ২৪৬৯, ত্বহাবী: ১৩৬৪)
হাদীসটির স্তর : সহীহ। এ হাদীসটির রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের ثقة “নির্ভরযোগ্য” রাবী। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন: وَهَذَا رِجَاله ثِقَات “এ হাদীসের বর্ণনাকারীগণ সবাই-ই নির্ভরযোগ্য”। (আদ দিরায়াহ: ১৮১ নম্বর হাদীসের আলোচনায়) আল্লামা যাইলাঈ রহ. বলেন: وَالْحَدِيثُ صَحِيحٌ، “হাদীসটি সহীহ”। (নাসবুর রায়াহ: সিফাতুস সলাত অধ্যায়, ৩৯ নম্বর হাদীস-এর আলোচনায়)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার রা. নামাযের শুরুতে শুধু একবার হাত উঠাতেন। আর বিশিষ্ট তাবিঈ হযরত ইমাম শা’বী, ইবরাহীম নাখঈ এবং আবু ইসহাক রহ.ও নামাযের শুরুতে শুধু একবার হাত উঠাতেন।
আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী রা.-এর আমল
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قِطَافٍ النَّهْشَلِيِّ،عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ«أَنَّ عَلِيًّا كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ ثُمَّ لَا يَعُودُ» قَالَ عَبْدُ الْمَلِكِ: «وَرَأَيْتُ الشَّعْبِيَّ، وَإِبْرَاهِيمَ، وَأَبَا إِسْحَاقَ، لَا يَرْفَعُونَ أَيْدِيَهُمْ إِلَّا حِينَ يَفْتَتِحُونَ الصَّلَاةَ»
অনুবাদ : হযরত আছেম বিন কুলাইব তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন: হযরত আলী রা. শুধু নামাযের শুরুতে হাত উঠাতেন পরবর্তীতে আর উঠাতেন না। (ইবনে আবী শাইবা: ২৪৫৭, ত্বহাবী: ১৩৫৩ ও ১৩৫৪)
হাদীসটির স্তর : সহীহ। হযরত আছেমের পিতা কুলাইব ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী। আর কুলাইব ثقة “নির্ভরযোগ্য”। (আল কাশেফ: ৪৬৭১) হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন: وَرِجَاله ثِقَات وَهُوَ مَوْقُوف “এ হাদীসের বর্ণনাকারীগণ সবাই-ই নির্ভরযোগ্য আর হাদীসটি মাউকুফ”। (আদ দিরায়াহ: ১৮১ নম্বর হাদীসের আলোচনায়) আল্লামা যাইলাঈ রহ. বলেন: وَهُوَ أَثَرٌ صَحِيحٌ، “এ হাদীসটি সহীহ”। (নাসবুর রায়াহ: সিফাতুস সলাত অধ্যায়, ৩৯ নম্বর হাদীস-এর আলোচনায়)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী বিন আবী তালিব রা. নামাযের শুরুতে শুধু একবার হাত উঠাতেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর আমল
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ ، عَنْ سُفْيَانَ ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ ، عَنْ عَبْدِ الرحمن بْنِ الأَسْوَدِ ، عَنْ عَلْقَمَةَ ، عَنْ عَبْدِ اللهِ ، قَالَ : أَلاَ أُرِيكُمْ صَلاَةَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم ؟ فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلاَّ مَرَّةً.
অনুবাদ : হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. (উপস্থিত লোকদেরকে লক্ষ্য করে) বলেন: আমি কি তোমাদেরকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামাযের মতো নামায দেখাব না? এরপর তিনি নামায পড়লেন এবং তাতে মাত্র একবার হাত তুললেন। (অর্থাৎ, তাকবীরে তাহরিমার সময়ে)। (ইবনে আবী শাইবা: ২৪৫৬, আব্দুর রযযাক: ২৫৩৩ ও ২৫৩৪, ত্বহাবী: ১৩৪৯)
হাদীসটির স্তর : সহীহ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী।
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. নামাযের শুরুতে শুধু একবার হাত উঠাতেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা.-এর আমল
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ حُصَيْنٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، قَالَ: «مَا رَأَيْتُ ابْنَ عُمَرَ، يَرْفَعُ يَدَيْهِ إِلَّا فِي أَوَّلِ مَا يَفْتَتِحُ»
অনুবাদ : হযরত মুজাহিদ রহ. বলেন: আমি ইবনে উমার রা.কে তাকবীরে তাহরিমা ব্যতীত হাত উঠাতে দেখিনি। (ইবনে আবী শাইবা: ২৪৬৭, ত্বহাবী: ১৩৫৭)
হাদীসটির স্তর : সহীহ, মাউকুফ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের ثقةٌ “নির্ভরযোগ্য” রাবী।
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার রা. নামাযের শুরুতে শুধু একবার হাত উঠাতেন। রফউল ইয়াদাইনের হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবাগণের মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার রা. অন্যতম। অথচ তিনি নিজে নামায পড়েছেন রফউল ইয়াদাইন করা ব্যতীত। হযরত ইবনে উমার রা.-এর এ আমল দেখে বলা যেতে পারে যে, হয়তো তিনি রফউল ইয়াদাইনের আমলকে রহিত মনে করতেন অথবা কমপক্ষে রফউল ইয়াদাইন না করার আমলকে তুলনামূলক উত্তম মনে করতেন। অন্যথায় তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে রফউল ইয়াদাইন করে নামায পড়তে দেখে নিজে তা ছেড়ে দিবেন এটা হতে পারে না।
ফায়দা : হযরত ইবনে উমার রা. থেকে রফউল ইয়াদাইন করে নামায পড়ার হাদীসও বর্ণিত রয়েছে। (বুখারী: ৭০৩) কিন্তু এ হাদীসের ব্যাপক বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এটা মূলতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আমলের বর্ণনা; ইবনে উমার রা.-এর নিজের আমল নয়। কারণ, এ হাদীসটি হযরত ইবনে উমার রা. থেকে তাঁর ছেলে সালেমও বর্ণনা করেছেন। আর তিনি এটাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আমল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। দেখুন, বুখারী: ৭০২, ৭০০ ও ৬৯৯। এমনকি এ হাদীসটি বর্ণনা শেষে ইমাম বুখারী রহ. নিজেও মন্তব্য করেছেন যে, এ হাদীসটি হাম্মাদ বিন সালামা আইয়ূব সূত্রে নাফে’ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, এটা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আমল। এ বর্ণনাটি ইমাম বাইহাকী রহ. তাঁর সুনানে কুবরাতেও সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। (২৫১০) এ হাদীসের ব্যাপারে হযরত ইবনে আব্দুল বার রহ. বলেন:
هَذَا الْحَدِيثُ أَحَدُ الْأَحَادِيثِ الْأَرْبَعَةِ الَّتِي رَفَعَهَا سَالِمٌ عَنِ أبِيهِ عَنِ النَّبِيِّ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَأَوْقَفَهَا نَافِعٌ عَلَى ابْنِ عُمَرَ فَمِنْهَا مَا جَعَلَهُ مِنْ قَوْلِ ابْنِ عُمَرَ وَفِعْلِهِ وَمِنْهَا مَا جَعَلَهُ عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنْ عُمَرَ وَالْقَوْلُ فِيهَا قَوْلُ سَالِمٍ وَلَمْ يَلْتَفِتِ النَّاسُ فِيهَا إِلَى نَافِعٍ
“এ হাদীসটি ওই চার হাদীসের একটি যা হযরত সালেম তাঁর পিতার সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। আর হযরত নাফে’ এটাকে ইবনে উমার রা.-এর নিজের আমল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি কখনও এটাকে বনে উমার রা.-এর আমল বর্ণনা করেন, আবার কখনও ইবনে উমার সূত্রে হযরত উমার রা.-এর আমল বর্ণনা করেন। এ ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য কথা হলো সেটা যেটা সালেম বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ, রসূলুল্লাহ স.-এর আমল আর নাফে’র বর্ণনার দিকে মানুষ ভ্রুক্ষেপ করেনি। (আত তামহীদ: ইমাম যুহরীর ২৪ নম্বর হাদীস-এর আলোচনায়) প্রথমে ইমাম বুখারীর মন্তব্য থেকে প্রমাণিত হলো যে, হযরত নাফে’ থেকেই এ ব্যাপারে ভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। আর ইবনে আব্দুল বার রহ.-এর বিশ্লেষণ থেকে প্রমাণিত হলো যে, এটা হযরত ইবনে উমার রা.-এর আমল না হওয়ার বিষয়টিই সঠিক।
হযরত ইবনে উমার রা. মৃত্যু পর্যন্ত রফউল ইদাইন করতেন মর্মে ইমাম বাইহাকী যে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন সে হাদীসের একজন রাবী হলেন ইসমা বিন মুহাম্মাদ। ইমামগণ তাঁকে পরিত্যাক্ত, মিথ্যাবাদী, জঈফসহ বহু মারাত্মক দোষে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। (মীযানুল ই’তিদাল: ৫৬৩১) অপর বর্ণনায় আরও একজন রাবী রয়েছেন যার নাম আব্দুর রহমান বিন কুরাইশ। তিনি হাদীস জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত। হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেন: اتهمه السليماني بوضع الحديث، “আল্লামা সুলাইমানী তাকে হাদীস জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন”। (লিসানুল মীযান: ৪৬৬৯) সুতরাং ইবনে উমার রা. মৃত্যু পর্যন্ত রফউল ইয়াদাইন করতেন তা প্রমাণিত নয়।
রফউল ইয়াদাইন-এর ব্যাপারে বিশিষ্ট তাবিঈনে কিরামের আমল
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ آدَمَ، عَنْ حَسَنِ بْنِ عَيَّاشٍ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ أَبْجَرَ، عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ عَدِيٍّ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، قَالَ: «صَلَّيْتُ مَعَ عُمَرَ، فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ فِي شَيْءٍ مِنْ صَلَاتِهِ إِلَّا حِينَ افْتَتَحَ الصَّلَاةَ» قَالَ عَبْدُ الْمَلِكِ : وَرَأَيْت الشَّعْبِيَّ ، وَإِبْرَاهِيمَ ، وَأَبَا إِسْحَاقَ ، لاَ يَرْفَعُونَ أَيْدِيَهُمْ إِلاَّ حِينَ يَفْتَتِحُونَ الصَّلاَةَ.
অনুবাদ : হযরত আছরয়াদ রহ. বলেন: আমি হযরত উমার রা.-এর সাথে নামায পড়েছি। তিনি নামায শুরু করার সময় ব্যতীত নামাযে আর কোথাও হাত উঠাননি। আব্দুল মালেক বলেন: আমি শা’বী, ইবরাহীম ও আবু ইসহাককে দেখেছি: তাঁদের কেউ নামাযের শুরু ব্যতীত হাত উঠাননি। (ইবনে আবী শাইবা: ২৪৬৯, ত্বহাবী: ১৩৬৪)
হাদীসটির স্তর : সহীহ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের ثقة “নির্ভরযোগ্য” রাবী। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন: وَهَذَا رِجَاله ثِقَات “এ হাদীসের বর্ণনাকারীগণ সবাই-ই নির্ভরযোগ্য”। (আদ দিরায়াহ: ১৮১ নম্বর হাদীসের আলোচনায়)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার রা. নামাযের শুরুতে শুধু একবার হাত উঠাতেন। আর বিশিষ্ট তাবিঈ হযরত ইমাম শা’বী, ইবরাহীম নাখঈ এবং আবু ইসহাক রহ.ও নামাযের শুরুতে শুধু একবার হাত উঠাতেন।
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ وَأَبُو أُسَامَةَ عَنْ شُعْبَةَ عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ قَالَ كَانَ أَصْحَابُ عَبْدِ اللهِ وَأَصْحَابُ عَلِيٍّ لاَ يَرْفَعُونَ أَيْدِيَهُمْ إِلاَّ فِي افْتِتَاحِ الصَّلاَةِ ، قَالَ وَكِيعٌ : ثُمَّ لاَ يَعُودُونَ.
অনুবাদ : হযরত আবু ইসহাক রহ. বলেন: হযরত আলী বিন আবী তালিব এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা.-এর ছাত্রগণ শুধু নামাযের শুরুতে হাত উঠাতেন। (ইবনে আবী শাইবা: ২৪৬১)
হাদীসটির স্তর : সহীহ, মাকতু’। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী।
সারসংক্ষেপ : হযরত আলী রা.-এর ছাত্রদের নামের যে তালিকা ইমাম মিজ্জী রহ. ‘তাহজীবুল কামাল’-এ পেশ করেছেন তার সংখ্যাই ৩৫৪ জন। এর মধ্যে অনেক সাহাবায়ে কিরামও রয়েছেন এবং তাবিঈগণও রয়েছেন। এর উপর হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা.-এর ছাত্রদেরকে হিসেব করা হলে এর পরিমাণ আরও কোথায় গিয়ে পৌঁছবে আল্লাহই ভালো জানেন। সহীহ হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী এরা সবাই-ই কেবল নামাযের শুরুতে হাত উঠাতেন। এরপরে আর উঠাতেন না।
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ ، عَنْ إسْمَاعِيلَ ، قَالَ : كَانَ قَيْسٌ يَرْفَعُ يَدَيْهِ أَوَّلَ مَا يَدْخُلُ فِي الصَّلاَةِ ، ثُمَّ لاَ يَرْفَعُهُمَا.
অনুবাদ : হযরত ইসমাঈল বিন আবী খালিদ বলেন: হযরত কয়েস বিন আবী হাযেম রহ. নামাযের শুরুতে প্রথমে হাত উঠাতেন; এরপরে আর উঠাতেন না। (ইবনে আবী শাইবা: ২৪৬৪)
হাদীসটির স্তর : সহীহ, মাকতু’। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী।
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিশিষ্ট তাবিঈ হযরত কয়েস বিন আবী হাযেম রহ. শুধু নামাযের শুরুতে হাত উঠাতেন এরপরে আর উঠাতেন না।
حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ هُشَيْمٍ ، عَنْ سُفْيَانَ ، عَنْ مُسْلِمٍ الْجُهَنِيِّ ، قَالَ : كَانَ ابْنُ أَبِي لَيْلَى يَرْفَعُ يَدَيْهِ أَوَّلَ شَيْءٍ إذَا كَبَّرَ.
অনুবাদ : হযরত আব্দুর রহমান বিন আবী লাইলা রহ. নামাযের শুরুতে তাকবীর দেয়ার সময় হাত উঠাতেন। (ইবনে আবী শাইবা: ২৪৬৬)
হাদীসটির স্তর : সহীহ, মাকতু’। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী।
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিশিষ্ট তাবিঈ হযরত আব্দুর রহমান বিন আবী লাইলা রহ. শুধু নামাযের শুরুতে হাত উঠাতেন।
রুকু-সিজদার সময়ে হাত উঠানোর ব্যাপারেও বেশ কিছু সহীহ হাদীস বুখারী-মুসলিমসহ অন্যান্য হাদীসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। সেগুলোর ওপর আমল করায় কোন দোষ নেই। তবে হানাফী মাজহাবের ইমামগণের অনুসন্ধান অনুযায়ী নিম্নে বর্ণিত কারণে রুকু-সিজদার সময়ে হাত না উঠানোর হাদীস আমলের জন্য বেশী উপযোগী।