সায়েমা ও সালেহা দুই বান্ধবী। তাদের বন্ধুত্ব বেশ পুরানো। প্রত্যেকেই একে অপরের খেলার সাথী, পড়ারও সাথী। সায়েমার বয়স বাইশ বছর। দেখতে শুনতে তেমন খারাপ নয়। গত দু’বছর হল সে বিয়ের পীড়িতে বসেছে। স্বামী একটি প্রাইভেট ফার্মের ম্যানেজার।
সালেহা কুমারী। এখনো বিয়ে হয়নি। বয়স চব্বিশ-পঁচিশ হবে। সে বেশ সুন্দরী। তার কন্ঠে রয়েছে কুমারীত্বের আকর্ষণ ও যাদুময়ী প্রভাব। সে দক্ষ কন্ঠ অনুশীলনকারীদের মতোই কথাকে মোহনীয় করে বলতে জানে। তার ডাগর চোখের চাহনী যে কোনো দর্শকইে শরাঘাতের চেয়ে বেশি ঘায়েল করতে সক্ষম।
সালেহাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা মোট তিন জন। তার আব্বা- আম্মা সাত-আট মাস আগে ইন্তেকাল করেছেন। বর্তমানে এক ভাই ও দু’বোন নিয়েই তাদের ছোট্ট সংসার। ভাই-বোনদের মধ্যে সালেহাই বড়। ছোট ভাই আরাফাত মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে। বোন রাহেলা ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী। পরিবারের উপার্জনক্ষম কোন পুরুষ না থাকায় একরকম বাধ্য হয়েই সালেহা একটি এনজিওতে চাকরি নিয়েছে।
বি.এ পাশ করার পর সায়েমার বিয়ে হয়। তার ইচ্ছে ছিল চাকরি করার। কিন্তু স্বামী আহসান উল্লাহ বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে তাকে চাকরি থেকে বিরত রেখেছে। তার কথা হল- আমার উপার্জন দ্বারা যেহেতু স্বাচ্ছন্দের সাথে সংসার চলছে, সেহেতু স্ত্রীকে চাকরি করার কোনো প্রয়োজন নেই।
সায়েমা আধুনিক মেয়ে। বাসার গদবাধা জীবন তার পছন্দ নয়। সে পাশ্চাত্যের অনুকরণে ফ্রী ষ্টাইলে চলতে আগ্রহী। তার এই আগ্রহকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্যই সে একটা চাকরি চেয়েছিল। তার পরিকল্পনা হল যদি একটা চাকরি পাই, তবে উহাকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন বাইরে – যাওয়া যাবে, অফিসে আসা যাওয়ার পথে ইচ্ছেমতো মার্কেটিং করা যাবে। তাছাড়া বিভিন্ন বয়সের পুরুষদের সাথে হাসি তামাশা ও কথাবার্তা বলে ইনজয় করার পাশাপাশি সময় কাটানোর মোক্ষম সুযোগতো মিলবেই ।
কিন্তু স্বামীর কারণে তার এ আকাঙ্খা ও পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ফলে স্বামী তার চক্ষুশূলে পরিণত হয় । কারণে অকারণে তার সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। মনে যা চায় তা-ই বলে। মাঝে মধ্যে চাকরি করবে বলে স্বামীকে হুমকিও দেয় ৷
স্বামী বেচারা ভদ্র মানুষ। স্ত্রীর এসব অশোভনীয় আচরণ মোটেও তার সহ্য হয় না। তথাপি লোক লজ্জার ভয়ে সে স্ত্রীকে তেমন কিছুই বলে না । বরং বিভিন্ন উপায়ে বুঝাতে চেষ্টা করে। কখনো বা চরম অতিষ্ট হয়ে
জামাটা গায়ে দিয়ে বাইরে চলে যায়। আবার কখনো বা গুণবতী শিক্ষিত স্ত্রীর (!) স্বামী প্রীতির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে নীরবে অশ্রু ঝরায়। এভাবেই অতিবাহিত হচ্ছে তাদের দাম্পত্য জীবনের মূল্যবান মুহূর্তগুলো।
একদিনের কথা।
স্বামী আহসানউল্লাহ ফজরের নামাজের কিছুক্ষণ পর হালকা বিশ্রামের উদ্দেশ্যে দেহটা বিছানায় এলিয়ে দিয়েছেন। ঠিক এমন সময় স্ত্রী সায়েমা চরম বিরক্তির সাথে বলতে লাগল –
‘এতসব ঝামেলা আর সহ্য হয় না। সকাল বেলা উঠেই নাস্তা বানাও, হাড়ি ধোও, পাতিল ধোও, আবার থালা-বাসন, আরো কত কি! যেন একবারে ওনাদের চাকর। সকাল আটটা পর্যন্ত নাক টেনে হা করে ঘুমাবে আর উঠেই ‘নাস্তা দাও’ বলে হাক ছাড়বে। বলি, নাস্তা কি মেশিনে তৈরি হয় যে, সুইচ টিপলেই হলো? যাও, নাস্তা নিজে তৈরি করে খাওগে। ওসব ঝৈ ঝামেলা আমি আর পারবো না।
: কী? কী বললে তুমি? পারবে না নাস্তা দিতে? তাহলে তোমাকে বধূ বানিয়ে ঘরে তুললাম কি জন্যে?
ঃ ও! চাকরগীরি করতে ঘরে এনেছ? তবে তো কোনো কথাই নেই ।
ঃ পাক-শাকটুকুও করতে পারবে না?
ঃ না, পারবনা। আমার পরিষ্কার কথা হল, আজ থেকে রান্না-বান্নার ধারে কাছেও যাব না ।
: যদি তা-ই হয়, তাহলে তুমিই প্যান্ট-শার্ট পরে চাকরি করতে যাও। আমি গিয়ে রাঁধি
: বাহ! রাঁধবে? খুব ভাল। এখনই কাজে লেগে যাও। আর মনে রেখো, আমি মুর্খ নই। বি.এ পাশ করেছি। বাবা খেটে খাওয়ার মতো পথ করে দিয়েছেন। কালই আমি চাকরির খোঁজে বেরুচ্ছি।
ঃ হ্যাঁ, যাও, যাও । তোমাকে বাধা দিচ্ছে কে? তবে সাবধানে থেকো, যেন মুখে চুন-কালি মেখে ফিরে না আস।
ঃ চুন-কালি কেন? দেখ না, হাজার হাজার মেয়েরা আজ চাকরি করছে? ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য মাঠে-ময়দানে আন্দোলন করছে। আমি কেন পারবো না? স্মরণ রেখো, তুমি আমি উভয়েই এদেশের নাগরিক। সুতরাং তোমার অধিকারের চেয়ে আমার অধিকার কোনো অংশেই কম নয় । যাক এখন আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই, আমি চললাম ।
বান্ধবী সালেহার শরীরটা আজ ভাল নেই। সকাল থেকেই কেন যেন দুর্বলতা অনুভূত হচ্ছে। বিছানা থেকে উঠতেই মনে চাচ্ছে না। বার বার সে মনের অজান্তেই বলে ফেলছে “মেয়েদের দ্বারা কি চাকরি সম্ভব”? যদি নূন্যতম আয়-উপার্জনের একটি পুরুষও ঘরে থাকতো, তবে আর চাকরি করতাম না।
হঠাৎ কলিং বেলের রিং রিং আওয়াজে তার চিন্তায় ছেদ পড়ল । প্রচন্ড
অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল। তারপর আস্তে করে দরজাটা
খুলতেই দেখল, বান্ধবী সায়েমা বিষণ্ন চেহারা নিয়ে ঠায় দণ্ডায়মান। তাকে দেখে আনন্দ মিশ্রিত কণ্ঠে সে বলল –
: আরে, সায়েমা যে! কি ব্যাপার, কেমন আছ? কতদিন তোমাকে দেখিনা। ভাবছি একটু দেখা করতে যাব। কিন্তু এই ত্রিমুখী ঝামেলার জন্য আর পারলাম কই! যাক্ তুমি এসে খুব ভালই করেছ। তোমার সাথে গল্প করে সময় কাটানো যাবে।
: ভাল । খুব ভাল আছি। তুমি কেমন আছ সালেহা ?
ঃ খোদার ফজলে আছি এক প্রকার। বলো, এবার কি মনে করে আসলে এই ভর দুপুরে?
ঃ কি আর বলবো সালেহা। ঘর-সংসার আর ভাল লাগে না। কিছু একটা করতে চাই তোমার মতো। তুমি প্রত্যহ সুন্দর করে সেজেগুজে স্মার্ট হয়ে মোটর গাড়ীতে চড়ে অফিসে যাও। বিকেল পর্যন্ত আমোদ- আহলাদে সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরে আস। রান্না-বান্নার কোনো চিন্তা তোমার নেই। মাস গেলে চকচকে নোটগুলো পকেটে পুরো। কত মজার জীবন তোমার। আর আমি? আমি সকাল বেলা উঠেই সেই কলুর বলদের মতো খাটতে থাকি। নানাবিধ কাজ কর্মে জড়িয়ে পড়ি। জীবনটাকে আচ্ছামতো ভোগ করার সুযোগই পাই না আমি। রান্না-বান্না মাজাঘষা আমার একেবারে অসহ্য! অসহ্য!!
ঃ এই সায়েমা। তোমার ঘাড়ে ভূত-প্রেত চাপেনি তো ?
: না, আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। আমার উপর কোনো ভূত-পেত্মীর আছর হয়নি।
ঃ যদি তা না-ই হয়, তবে তোমাকে এমন বুদ্ধি দিলই বা কে?
বাহ! তাহলে তুমি আর তোমার মতো যত মেয়ে চাকরি করছে, তাদের সবার ঘাড়ে ভূত চেপেছে বুঝি?
: তবে আর বলছি কি? ভূত না চাপলে উল্টো বুঝে কেউ? মেয়েদের চাকরি করা কি কষ্ট, কি যন্ত্রণাদায়ক, তা-কি তুমি জানো? এই ধরো অফিসে যাওয়া আসা, তারপর মাঠকার্যে গ্রামে যাওয়া। দ্বারে দ্বারে মুসাফিরের মতো ঘোরা। তাও আবার পুরুষের সাথে মিশে কোথাকার কোন ভিন পুরুষ, তার সাথে গায়ে পড়ে গল্প কর, হাসি-তামাশা কর, আরও কত কি?
ছিঃ ছিঃ সম্ভ্রান্ত মেয়েদের কি এসব মানায়? তুমিই বলো সায়েমা ।
আর যদি কেউ একা একা থাকতে চায়, তবে তো চাকরি যায় যায়। পুরুষের সাথে হাসি-তামাশা, গাল-গল্প করাই যেন এ চাকরির প্রথম উদ্দেশ্য। আল্লাহ যেন মেয়েদেরকে এমন চাকরি করা থেকে মুক্তি দেন ।
: বারে কি সব বলছ তুমি সালেহা? তোমরাই না নারীদের সমান অধিকার দাবি করে রাজপথে আন্দোলন করেছ, মিটিং মিছিল করেছ। তারপর চাকরি পেয়ে এখন আবার বলছ এসব অসহ্য।
ঃ আরে সায়েমা । যদি আন্দোলনের পূর্বে মেয়েরা জানতো যে, তাদের জন্য এত কষ্টকর হবে চাকরি করা, তাহলে কি আর এসব আন্দোলন করতো কেউ?
ঃ সালেহা তবে কি তুমি বলতে চাও, সমান অধিকার আদায়ের জন্য নারীদের আন্দোলন করা ভুল? এর কোনো অর্থ নেই?
ঃ শুধু ভুলই নয়, একে তুমি একটি আত্মঘাতি কাজ বলেও আখ্যা দিতে পার।
ঃ এসব নীতিবাক্য তোমার এতদিন ছিল কোথায়? আগে কি তুমি এসব কিছুই বুঝতে না?
: সত্যিই আগে ভাল করে এসব বুঝতাম না। যদি বুঝতাম তবে কোনোদিন নারীর সমঅধিকার আদায়ের আন্দোলনে জড়িয়ে পড়তাম না। আর তুমি যে বলছ, আমি অফিস থেকে এসে আরামে থাকি তাও ঠিক নয়। অফিস থেকে ফেরার পর আবার ঘরের কাজও আমকে সামলাতে হয়। সায়েমা! আগে করতাম একটা কাজ এখন করতে হয় দুটোই । তাই আগেরটাই ভাল ছিল। পুরুষরা খেটে-খুটে কষ্ট পোহায়ে সব কিছু যোগাড় করে দিত, আর আমরা মহিলারা রাঁধতাম, আর ঘর সামলাতাম। এতে
ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়ারও সুযোগ হতো। বিশ্বাস কর, এখন উপযুক্ত বিশ্রামেরও সুযোগ পাই না ।
সায়েমা! মাঝে মধ্যে চিন্তা হয়, এখনো আমার বিয়ে হয়নি, বাচ্চা- কাচ্চা নেই, স্বামী ও শ্বশুর-শাশুরীর খেদমত করার পালা আসেনি, এখনই যদি আমার অবস্থা এই হয় যে, সারাদিন চাকরি সেরে বাসায় এসে আর কোনো কিছু ভাল লাগেনা, কিছু করতে মনে চায় না যখন স্বামী শ্বশুর, বাচ্চা-কাচ্চা হবে তখন চাকরি করার সাথে সাথে এসব কিভাবে সামাল দিব? কিভাবে তখন সকলের মন যুগিয়ে চলব। আসলে সায়েমা দু’বছর চাকরি করার অভিজ্ঞতা দ্বারা আমার মনে এ কথা খুব দৃঢ়ভাবে বসে গেছে যে, নারীদের জন্য চাকরি নয়। তাদের অবস্থান হাটে, ঘাটে, মাঠে কিংবা অফিসে নয়; বরং তাদের অবস্থান হচ্ছে অন্তঃপুরে।
সায়েমা বান্ধবী সালেহার কথাগুলো অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে শুনছে। সে ভাবছে, সত্যিই তো, সালেহা যা বলছে বাস্তব কথাই বলছে। তাই এ সম্পর্কে সে আরও কিছু বলার জন্য বান্ধবীকে অনুরোধ করল।
সালেহা বলল- বোন তোমাকে আর কি বলব। সেদিন আমার এক আত্মীয়ার বাসায় গিয়েছিলাম। তিনি খুব দ্বীনদার ও ভদ্র মহিলা। সম্পর্কে তিনি আমার খালাম্মা হন। তাদের বাসায় দু’দিন ছিলাম। এ দু’দিনে তাদের পরিবারের সকলের মধ্যে এমন মিল-মহব্বত ও সুদৃঢ় বন্ধন প্রত্যক্ষ করেছি যা ইতিপূর্বে কোথাও আমি দেখিনি। এতে আমার মনে এ বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে যে ঘরের লোকজন যত বীনদার, সে ঘরের লোকজন ততই শান্তিতে আছে ও থাকবে। খোদার বিধান অমান্য করে দুনিয়াতে কেউ প্রকৃত শান্তি পেতে পারে না ।
খালাম্মার বাসায় অবস্থান কালে তিনি কথা প্রসঙ্গে একদিন আমাকে কয়েকটি মূল্যবান কথা শুনিয়েছিলেন। যদি চাও, তবে তুমিও তা আমার কাছ থেকে শুনে নিতে পার।
: শুনবো না কেন? অবশ্যই শুনবো। তোমার কথাগুলো শুনার পরে মনে হচ্ছে আমি এতদিন বিরাট ভুলের মধ্যে ছিলাম। এবার বলো তোমার খালাম্মা তোমাকে কি বলেছিলেন।
ঃ হ্যাঁ, বলছি শোন। তিনি বলেছিলেন “আল্লাহ তা’আলা মহা প্রজ্ঞাময়।
তিনি মানুষকে পুরুষ ও নারী এই দুই ভাগে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের মঙ্গল-অমঙ্গল সম্পর্কে তিনিই সর্বাধিক জ্ঞাত। অর্থাৎ নর-নারী কে কি করলে তাদের মঙ্গল হবে, কে কোথায় অবস্থান করলে তাদের কল্যাণ হবে, পরিবার ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে, প্রত্যেকেই নিজ নিজ সম্মান ও ইজ্জত নিয়ে বসবাস করতে পারবে, দুনিয়া ও আখেরাতে প্রকৃত সফলতা অর্জন করতে পারবে, তা তিনিই ভাল করে জানেন ও বুঝেন। কেননা যে জিনিস যিনি তৈরি করে, সে-ই সে জিনিস সম্পর্কে ভাল জ্ঞান রাখে। ঐ জিনিসটি কিভাবে ব্যবহার করলে, কিভাবে চালালে, কোথায় রাখলে ভাল থাকবে সে সম্পর্কে সে-ই সবচেয়ে বেশি ওয়াকিফহাল থাকে। সুতরাং মহাপ্রজ্ঞাময় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা’আলা যখন নারী-পুরুষে উভয়কে সৃষ্টি করে প্রত্যেকের কর্ম ও অবস্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন; পুরুষকে বলেছেন, আয়-উপার্জনসহ বাহিরের কাজ আঞ্জাম দিতে, আর নারীকে বলেছেন ঘরের ভিতরের কাজ সমাধা করতে। অতএব বুঝতে হবে এর মধ্যেই নারী পুরুষের সমূহ কল্যাণ নিহিত আছে। যখন মানুষ আল্লাহ তা’আলার দেওয়া চির শ্বাশ্বত এই সুন্দর বিধান অবলীলায় লঙ্ঘন করতে শুরু করে তখনই দেখা দেয় সংঘাত, দেখা দেয় নানা রকমের বিপদ- আপদ। যার বাস্তব প্রমাণ প্রতিদিনই আমরা পত্র পত্রিকায় দেখতে পাচ্ছি।
সালেহা! আল্লাহ তা’আলা নারীকে দিয়েছেন চুম্বকের ন্যায় আকর্ষণ শক্তি। এই শক্তি কেবল চেহারাতেই নয় প্রতিটি অঙ্গেই। নারী মোহনীয়, কমনীয়, লোভনীয়। এ জন্যেই তার নিরাপদ অবস্থান অন্তঃপুরে।
পক্ষান্তরে পুরুষের দেহ সুঠাম ও মজবুত। রোদ-বৃষ্টিতে সহজেই নেতিয়ে পড়ে না। সে পারে বাইরে রোদ-বৃষ্টি ও ঝড়-ঝাপটার মোকাবেলা করে কঠোর পরিশ্রম করতে। শরীর গলদঘর্ম হলেও তার তেমন ক্লান্তি নেই। কিন্তু নারী দেহ পারবেনা তা সহ্য করতে।
পুরুষ রোদ-বৃষ্টি ঝড়ে কঠোর পরিশ্রম করতে পারে ঠিকই। কিন্তু সে পারে না চুলোর পাশে বসে অগ্নিতাপ সহ্য করে রন্ধনকার্য সমাপন করতে।
সেখানে নারীদের কমনীয় দেহই সহিষ্ণু। তাই কথায় বলে “যার কাজ তারে সাজে অন্যের বেলায় ঠেঙ্গা বাজে।”
মোটকথা আল্লাহ তা’আলা যার দেহ যেরূপ সৃষ্টি করেছেন তার আবাসস্থলও তদ্রূপ নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
সালেহা তার খালাম্মার কথাগুলো সায়েমাকে শুনিয়ে শেষ করতেই সে বলে উঠল –
: সালেহা! তোমার খালাম্মা তো সঠিক কথাই বলেছেন। এসব কথাতো আমি আগে ভাবিনি। বরং এর উল্টো বুঝে এইমাত্র স্বামীর সাথে তর্কাতর্কি করে এলাম ।
: শুধু কি তাই? সায়েমা! এখন আমি ভাল করে উপলব্ধি করতে পেরেছি যে, আলেমগণ যে আমাদের পর্দার মধ্যে থাকতে বলেন, ভিন পুরুষের সাথে প্রয়োজনে কথা বলতে ও ওঠা বসা করতে নিষেধ করেন, এটা আমাদের ভালোর জন্যই বলেন। তাঁদের কথায় পাত্তা না দেওয়ার কারণে বহু ভয়ংকর অঘটনের সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের। যদি আমরা তাদের কথামতো চলতাম, তবে নারী ধর্ষণ, নারী-হরণ, নারী হত্যা ও এডিস নিক্ষেপের ন্যায় মারাত্মক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে আমাদেরকে ইজ্জত সম্মান ও মূল্যবান জীবন বিসর্জন দিতে হতো না।
ঃ তওবা! তওবা!! সালেহা! আমি না বুঝে অন্ধ পথে পা বাড়িয়ে ছিলাম। না, বোন আমার আর চাকরির দরকার নেই। আমি আমার ঘরেই ফিরে যাই।
প্রিয় পাঠক! আলোচ্য ঘটনার মৌলিক কথাগুলো প্রক্রিয়াধীন মাসিক পত্রিকা ‘দামামা’ থেকে আমি সংগ্রহ করেছি। হুবহু এ ঘটনাটি বাস্তবেই ঘটেছিল কি-না তা আমার জানা নেই। কিন্তু এ ধরনের হাজারো ঘটনা যে আমাদের সমাজে অহরহ ঘটছে, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। উপরোল্লেখিত ঘটনা দ্বারা আমি সম্মানিত পাঠকদের সম্মুখে ইসলামি শরিয়তের যে দৃষ্টিভঙ্গিটি তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি তার মূল কথা হলো, নারীর জন্য বিনা প্রয়োজনে পর-পুরুষের সাথে অফিসে-আদালতে, কোর্ট-কাচারীতে চাকরি করা একেবারেই গর্হিত ও নাজায়েজ কাজ। কেননা এতে পর্দার ন্যায় একটি ফরজ আমলের মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। এছাড়া আরো বিভিন্ন উপায়ে শরয়ী আহকাম লঙ্ঘিত হয়।