মেরাজে প্রিয় নবী রাসূল কারীম (ﷺ) ও আল্লাহ পাকের মাঝে কথোপকথনে ‘আত্তাহিয়্যাতু…/তাশাহহুদের ঘটনা’
এই যুগের ভ্রান্ত ফির্কা নাম সর্বস্ব আহলে হাদিস, কোথাও তারা সালাফী নামধারী; এই তারাই উক্ত ঘটনাটিকে অস্বিকার করার দু:সাহস দেখায়।
অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী। এক বিষয়ে কোন স্থানে কোন বিষয় উল্লেখ না করা / না থাকা দেখে সেটির অস্তিত্ব অস্বিকার করা মুর্খতা বৈ কিছু নয়।
বিজ্ঞ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অজ্ঞ ব্যক্তিদের অধিকাংশ অভিযোগ হয়ে থাকে মুর্খতাসূলভ।
কিন্তু
সেটি যদি অভিযোগ না হয়ে জানতে চাওয়ার মানসিকতা হয়, তাহলে তা কতই না ভাল হয়।
সবাই সব কিছু জানবে এমন নয়।
তাই
জ্ঞানীদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে মানার নির্দেশ আল্লাহ তাআলা পবিত্র কালামে দিয়েছেন।
কিন্তু
জানতে না চেয়ে অভিযোগ করে বসা মুর্খতা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।
ইমাম কুরতুবী রহঃ। পৃথিবী বিখ্যাত তাফসীর বিশারদ। যে কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা সর্বজনবিদিত।
ইমাম কুরতুবী রহঃ স্বীয় তাফসীরে কুরতুবীতে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তথা ২৮৫ ও ২৮৬ নং আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে লিখেনঃ
قَوْلُهُ تَعَالَى: (آمَنَ الرَّسُولُ بِما أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ). [رُوِيَ عَنِ الْحَسَنِ وَمُجَاهِدٍ وَالضَّحَّاكِ: أَنَّ هَذِهِ الْآيَةَ كَانَتْ فِي قِصَّةِ الْمِعْرَاجِ، وَهَكَذَا رُوِيَ فِي بَعْضِ الرِّوَايَاتِ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ: جَمِيعُ الْقُرْآنِ نَزَلَ بِهِ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَلَى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا هَذِهِ الْآيَةَ فَإِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: هُوَ الَّذِي سَمِعَ لَيْلَةَ الْمِعْرَاجِ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ: لَمْ يَكُنْ ذَلِكَ فِي قِصَّةِ الْمِعْرَاجِ، لِأَنَّ لَيْلَةَ الْمِعْرَاجِ كَانَتْ بِمَكَّةَ وَهَذِهِ السُّورَةُ كُلُّهَا مَدَنِيَّةٌ، فَأَمَّا مَنْ قَالَ: إِنَّهَا كَانَتْ لَيْلَةَ الْمِعْرَاجِ قَالَ: لَمَّا صَعِدَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وبلغ في السموات فِي مَكَانٍ مُرْتَفِعٍ وَمَعَهُ جِبْرِيلُ حَتَّى جَاوَزَ سِدْرَةَ الْمُنْتَهَى فَقَالَ لَهُ جِبْرِيلُ: إِنِّي لَمْ أُجَاوِزْ هَذَا الْمَوْضِعَ وَلَمْ يُؤْمَرْ بِالْمُجَاوَزَةِ أَحَدٌ هَذَا الْمَوْضِعَ غَيْرُكَ فَجَاوَزَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى بَلَغَ الْمَوْضِعَ الَّذِي شَاءَ اللَّهُ، فَأَشَارَ إِلَيْهِ جِبْرِيلُ بِأَنْ سَلِّمْ عَلَى رَبِّكَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ. قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، فَأَرَادَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَكُونَ لِأُمَّتِهِ حَظٌّ فِي السَّلَامِ فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، فَقَالَ جِبْرِيلُ واهل السموات كُلُّهُمْ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أن محمدا عبد هـ وَرَسُولُهُ.
অর্থাৎ : হযরত হাসান বসরী রহঃ, হযরত মুজাহিদ রহঃ, হযরত জাহহাক রহঃ থেকে বর্ণিত।
নিশ্চয় এ আয়াত মিরাজের ঘটনার সময়কার।
অনুরুপভাবে হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকেও কিছু বর্ণনায় তা পাওয়া যায়।
তবে
কেউ কেউ বলেছেন,
পূর্ণ কুরআন জিবরাঈল আঃ হযরত রাসূলে কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এঁর কাছে নিয়ে এসেছেন এ আয়াত ছাড়া। যা রাসূলে কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) মেরাজের রাতে শুনেছেন।
আর কেউ কেউ বলেন,
এ আয়াত মিরাজের ঘটনার সময়কার নয়।
কেননা,
মেরাজের ঘটনা হয়েছে মক্কায়।
আর এ পূর্ণ সুরা নাজিল হয়েছে মদীনায়।
তবে
যারা বলেন যে, এ আয়াত মেরাজের রাতে নাজিল হয়েছে তারা বলেন,
রাসূলে কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) যখন আসমানে উঠলেন এবং উঁচু স্থানে পৌঁছলেন তখন সাথে ছিলেন জিবরাঈল আঃ। এমনকি তাঁরা সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছলেন।
তখন তাঁকে জিবরাঈল আঃ বললেন, নিশ্চয় আমি এ স্থান অতিক্রম করতে পারবো না। আর আপনাকে ছাড়া আর কাউকে এ স্থান অতিক্রম করার অধিকার দেয়া হয়নি।
তারপর
রাসূলে কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) তা অতিক্রম করলেন এবং এমন স্থানে পৌঁছলেন যেখানে আল্লাহ তাআলা তাঁকে পৌঁছাতে চাইলেন।
তখন
জিবরাঈল আঃ তাঁকে [ রাসূলে কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) ] ইশারা করলেন, আল্লাহ তাআলাকে সালাম করার জন্য।
তখন
রাসূলে কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) বললেন,
“আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াসসালাওয়াতু ওয়াত ত্বায়্যিবাতু”।
তখন
আল্লাহ তাআলা বললেন,
“আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু”।
তখন
রাসূলে কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) চাইলেন সালামের একটি অংশ উম্মতীদের জন্যও বরাদ্দ হোক।
তাই
তিনি [ রাসূলে কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) ] বললেন,
“আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালেহীন”।
তারপর
জিবরাঈল আঃ এবং আসমানবাসী সবাই বলতে লাগলেন,
“আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসূলুহু”।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* ‘আলজামে লিআহকামিল কুরআন’ তথা ‘তাফসীরে কুরতুবী’, তাফসীরে সূরা বাকারা, আয়াত নং-২৮৫-২৮৬।
একই বর্ণনা এসেছে-
*_* ‘বাহরুল উলুম’ তথা ‘তাফসীরে শমরকন্দী’, তাফসীরে সূরা বাকারা, আয়াত নং-২৮৫-২৮৬।
ইমাম কুরতুবী রহঃ এঁর বক্তব্যটির দিকে ভাল করে দৃষ্টি বুলালে আমরা দেখতে পাই তাফসীরে কুরতুবীতে বর্ণিত ঘটনাটি কোন বানোয়াট ঘটনা নয়। সেটির সনদও রয়েছে। যা হযরত হযরত হাসান বসরী রহঃ, হযরত মুজাহিদ রহঃ, হযরত জাহহাক রহঃ থেকে বর্ণিত।
শুধু তাই নয়, হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকেও কিছু কিছু বর্ণনায় তা উদ্ধৃত বলে ইমাম কুরতুবী রহঃ মত দিয়েছেন।
ইমাম কুরতুবী রহঃ পরিস্কার ভাষায় লিখেছেন যে,
এ আয়াতটি হাসান বসরী রহঃ, হযরত মুজাহিদ রহঃ, হযরত জাহহাহক রহঃ এবং হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ এঁর কতিপয় বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত যে, তা মেরাজ সম্পর্কিত।
আর
যারা উক্ত আয়াতকে মেরাজ সম্পর্কিত বলে মত দিয়েছেন তারাই এর সাথে উপরে বর্ণিত ঘটনাটি উদ্ধৃত করেছেন।
তাহলে কি দাঁড়াল? এই ঘটনার বর্ণনাকারী, হযরত হাসান বসরী রহঃ, হযরত মুজাহিদ রহঃ, হযরত জাহহাক রহঃ, সেই সাথে হযরত হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ এঁর কিছু বর্ণনায়ও তা উদ্ধৃত।
তারপরও শুধু অজ্ঞতাবশতঃ উক্ত ঘটনাটিকে সূত্রহীন ও বানোয়াট বলে মন্তব্য করা মুর্খতা ছাড়া আর কী হতে পারে?
নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থে বর্ণনাকারীর কথা উল্লেখকরতঃ বর্ণনাকৃত বক্তব্যকে প্রচলিত বানোয়াট গল্প বলে মন্তব্য করা কতটা স্পর্ধার কাজ তা বিচার করার ভার সকল বিজ্ঞ পাঠকদের কাছেই ন্যস্ত করা হলো।
সুপ্রিয় পাঠক!
ঘটনাটির সম্পর্কে অভিযোগকারী একথা বলতে পারে যে,
ইমাম কুরতুবী রহঃ যাঁদের থেকে এ বর্ণনা প্রমানিত বলেছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। ইমাম কুরতুবী রহঃ স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে তিনজন বড় মুহাদ্দিস ও তাফসীরবিদ এবং ইতিহাসবীদের রেফারেন্স দিয়ে বানোয়াট গল্প এনেছেন।
একথা বলার পর
এ ঘটনাটির অস্বিকারকারীরা তাদের উদ্ভট দাবির ক্ষেত্রে দলীল পেশ করে তা প্রমাণ করতে পারে।
কিন্তু
বেধড়ক ঘটনাটির সূত্র সম্পর্কে যাচাই বাছাই ছাড়া ঘটনাটিকে বানোয়াট প্রচালিত গল্প বলে ঠাট্টা করা বেআদবী আর উদ্ধতপনা ছাড়া আর কিছু মনে হয় না।
আল্লাহ্ ও প্রিয় নাবী রাসূলে কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এঁর এই সালাম বিনিময়ের কৌশলপূর্ণ উক্তি ও ভালোবাসার নমুনা এবং হাযরাত জিব্রাইল আ. সহ আকাশের মুকার্রাবীন ফিরিশ্তাগণ সমস্বরে বলে উঠলেন أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أن محمدا عبدهـ وَرَسُولُهُ. উক্ত ঘটনাটি প্রিয় নাবী রাসূলে কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এঁর সীরাত সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ “মা’আরিজুন নুবূয়্যাত” এর ৩য় খণ্ডের ১৪৯ পৃষ্ঠায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* মা’আরিজুন নুবূয়্যাত; খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৪৯।
বিশ্ব বিখ্যাত ফকীহ্ আল্লামা আলাউদ্দিন হাসকাফী রহ. ‘দুররুল মুখতার’ গ্রন্থের ১ম খণ্ডের كيفية الصلوة শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণনা করেন,
ويقصد بالفاظ التشهد الانشاء كانه يحيي الله تعالى ويسلم على نبيه و على نفسه *
অর্থাৎ : নামাযে তাশাহুদ এর শব্দগুলো উচ্চারণ করার সময় নামাযীর এই নিয়্যাত থাকা চাই যে, কথাগুলো যেন তিনি নিজেই বলেছেন, তিনি নিজেই যেন আপন প্রতিপালকের প্রতিপালকের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেছেন ও প্রিয় নাবী রাসূলে কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এঁর প্রতি সালাম পেশ করছেন।
অত:পর
এই ইবারাতের ব্যাখ্যায় ফাতাওয়ায়ে শামীতে বলা হয়েছে,
أي لا يقصد الاخبار، والحكاية عما وقع في المعراج منه – صلى الله عليه وسلم- ومن ربه سبحانه ومن الملائكة عليهم السلام*
অর্থাৎ : তাশাহহুদ পাঠের সময় নামাযীর যেন এই নিয়্যাত না হয় যে, তিনি শুধু মাত্র মে’রাজের অলৌকিক ঘটনাটি স্মরণ করে সে সময় মহাপ্রভু আল্লাহ্, হুজুর প্রিয় নাবী রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) ও ফিরিশ্তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত কথোপকথন এর বাক্যগুলীই আওড়িয়ে (Reciting) যাচ্ছেন এবং বরং তার নিয়্যাত হবে কথাগুলো যেন তিনি নিজেই বলেছেন।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* ফাতাওয়ায়ে শামী, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৫১০, শামেলা।
অতএব
তাশাহহুদ মেরাজের রজনীতেই লাভ হয়েছে।
যা জগৎ বিখ্যাত ফিক্বহের কিতাব ফাতাওয়ায়ে শামী ও দুররুল মুখতার গ্রন্থ দ্বারাও প্রমানিত হয়েছে।
চামচিকার ন্যায় ভেংচি কাটা ঘোমটাপরা মৌ-লোভীরা পূর্ণিমা চাঁদের ন্যায় আহলুস সূন্নাহর উলামায়ে ক্বিরামকে কখনো ম্লান করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব অতি পন্ডিত মুর্খ গবেষকদের বিভ্রান্তিকর গবেষণা থেকে মুসলিম জাতিকে হিফাযত করুন।
আমীন।
________
▆ মেরাজের রাতে প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله و سلم) আল্লাহকে দেখেছেন
নোট ০১.
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1778671925781578
নোট ০২.
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1778095105839260
নোট ০৩.
ahlussunnahmedia.com
পরিবেশিত 11.84MB ভিডিওতে কিতাবের স্ক্রিনশট সহ আলোচনা বাংলায় শুনতে লিংকে প্রবেশ করুন।
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1163169653809463
নোট ০৪.
▆ মেরাজে প্রিয় নাবী রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) ও আল্লাহ পাকের মাঝে কথোপকথনে ‘আত্তাহিয়্যাতু…/তাশাহহুদের ঘটনা’
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1779311199050984
নোট ০৫.
▆ মিরাজ সফরে আম্বিয়ায়ে কেরাম আ. : স্বশরীরে না রুহানী।
আলোচনা : ভিডিও 98.35MB
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1166166236843138