▆ মেরাজ রজনীতে মাহফিলের আয়োজন করা ��
নিয়্যাত হচ্ছে মূল বিষয়ঃ
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ইন্নামাল আ’মালু বিন্নিয়্যাত।
অর্থাৎ, নিয়্যাত অনুযায়ী আমলসমূহের প্রতিদান দেয়া হয়। (সহীহ আল বুখারী)
মেরাজের রাতে মাহফিল করার ক্ষেত্রে কী নিয়্যাত থাকতে পারে?
এক -ঘটনাবলী, আল্লাহর কুদরত সম্পর্কে আলোচনা করাঃ
যে সকল দিনে বা রাতে আল্লাহর কুদরত বা নিদর্শনাবলী সংক্রান্ত ঘটনা ঘটেছে, ওই দিন বা রাতগুলো নিয়ে আলোচনা করা মানে মানুষদেরকে নতুন করে আল্লাহর কুদরত ও নিদর্শনসমুহ স্মরণ করিয়ে দেয়া। আর এমন নির্দেশনা পবিত্র কোর’আনে কারীমে রয়েছে। আল্লাহ বলেন,
وذكرهم بأيام الله – سورة ابراهيم-5
বাংলা উচ্চারণ: ওয়া যাক্কিরহুম বি আইয়্যামিল্লাহ
আয়াতের অনুবাদ
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, হে রাসুল, আপনি তাদেরকে আল্লাহর দিনগুলো স্মরণ করিয়ে দিন। (সূরা ইবরাহীম: ৫)
আল্লাহর দিনগুলো কী কী?
এ আয়াতে আল্লাহর দিন বলতে ওই দিন বুঝানো হয়েছে, যেদিন মুসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর কাওম নাজাত পেয়েছিলেন।
কিন্তু
আয়াতটি আম, অর্থাৎ, ব্যাপক।
অর্থাৎ, শুধুমাত্র মুসা আলাইহিস সালামের নাজাতের দিন-ই বোঝায় না।
বরং
ওই রকম প্রত্যেক দিনকেই আল্লাহর দিন বলা হয়, যেদিন পৃথিবীতে খোদাতা’লার পক্ষ থেকে বিশেষ বিশেষ ঘটনাবলী সংঘটিত হয়।
মুফাসসিরীনের অভিমতঃ
আল্লাহর দিন বলতে সেসব দিনকে বোঝায়, যে দিনগুলোতে আল্লাহর কুদরত প্রকাশ পায়।
রেফারেন্স
১/ আত তাহরীরু ওয়াত তানওয়ীর (তাফসীর গ্রন্থ); সুরা ইবরাহীম, আয়াত-৫
২/ আল জামিউ লি আহকামিল কুরআন: ইমাম কুরতুবী; সূরা ইবরাহীম, আয়াত-৫
ইমাম কুরতুবী রাহিমাহুল্লাহ এ আয়াতের তাফসীরে বলেন,
এ আয়াতের মাধ্যেমে আল্লাহর দিনগুলো নিয়ে আলোচনা করা জায়েয সাব্যস্ত হলো।
কারণ
এতে অন্তর নরম ও কোমল হয়।
আর
এমন আলোচনা যে কোনো প্রকারের বেদ’আত থেকে মুক্ত।
রেফারেন্স
আল জামিউ লি আহকামিল কুর’আন: ইমাম কুরতুবী; সূরা ইবরাহীম, ৫ নং আয়াতের তাফসীর।
সিদ্ধান্ত
_______
তাহলে প্রমাণিত হল,
আল্লাহর দিনগুলো স্মরণ করা, এ নিয়ে আলোচনা করা জায়েয।
আর
এটি বেদআত থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত-ও,
যেমনটি বলেছেন ইমাম কুরতুবী রাহিমাহুল্লাহ।
মেরাজের রাত
____________
এ রাতে আল্লাহর আসীম কুদরত প্রকাশ পেয়েছিল।
অতি অল্প সময়ের মধ্যে আল্লাহ তাঁর অপার কুদরতের দ্বারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেরাজ সম্পন্ন করিয়েছিলেন।
সুতরাং
কেউ যদি তা নিয়ে মাহফিল আয়োজনের মাধ্যমে আলোচনা করে, তবে তা কোনোভাবেই বেদ’আত হবে না, যেমনটি বলেছেন সকলের কাছে বরেণ্য, গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত মুফাসসির ইমাম কুরতুবী রাহিমাহুল্লাহ।
উল্লেখ্য যে,
ইমাম কুরতুবী রাহিমাহুল্লাহ বিশ্ববিখ্যাত মুফাসসিরদের মধ্যে একজন।
দুই – আল্লাহর নিদর্শনাবলী সম্মান করা মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্যঃ
পবিত্র কোর’আনে কারীমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এরশাদ করেন:
وَمَن يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি সম্মান দেখায়, তবে সেটা হবে অন্তরসমূহের তাকওয়া। (সুরা হাজ্জ:৩২)
মেরাজের ঘটনাবলী আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রমাণঃ
মেরাজের পুরো ঘটনাটি-ই আল্লাহর কুদরতে পরিপূর্ণ।
মেরাজের উদ্দেশ্য আলোচনা করতে গিয়ে আল্লাহ বলেছেন,
লিনুরিয়াহু মিন আয়াতিনা, অর্থাৎ, যাতে আমি তাঁকে আমার নিদর্শনসমুহ দেখাতে পারি (সূরা ইসরা: ১)।
তাই
মেরাজের রাতে যদি কোনো মাহফিল করা হয়, আর তার উদ্দেশ্য যদি হয় ওই ঘটনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি সম্মান করা, তবে কোর’আনে কারীমের আয়াত অনুসারে সেটা হবে তাকওয়ার পরিচয়।
তিন – তা’লীম বা শিক্ষা দানঃ
মেরাজ-এর ঘটনাবলী এবং তার তাৎপর্য সাধারণ মুসলমানদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্য যদি এমন মাহফিলের আয়োজন করা হয়, তবে সেটা নাজায়েজ হওয়ার কোনো কারণ নেই।
বরং
এমন মাহফিল বেশি বেশি করে করা জরুরি।
অভিযোগ
_________
যারা মেরাজের রাতে মাহফিল করাকে বেদ’আত বলে, তাদের একটাই অভিযোগ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সাহাবায়ে কেরাম (রা:) এভাবে মাহফিল করে মেরাজের আলোচনা করেন নি, তাই এটা বেদ’আত।
জবাব
______
১/ – বেদ’আতকে তারা যেভাবে সস্তা মনে করছে, বেদ’আত অতো সস্তা নয়।
এভাবে যদি পাইকারি হারে বেদ’আত বেদ’আত বলে ফতোয়া দেয়া হয়, তাহলে দুনিয়ার কোনো মানুষ, কোনো আলেম-উলামা বেদ’আত থেকে রেহাই পাবেন না।
এমনকি যারা বেদ’আত বলছে, তারাও বেদ’আতের ফতোয়ার নির্মম শিকার হবে।
অর্থাৎ, বেদ’আতমুক্ত কোনো মানুষ দুনিয়াতে পাওয়া যাবে না।
২/ – তাদের অভিযোগ, রাসুল সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম করেন নাই, তাই এটা বেদ’আত।
এটা তাদের বানানো মনগড়া কথা।
এটা এক ধরণের ধোকাবাজি।
মুল কথা হচ্ছে,
যতোক্ষণ পর্যন্ত কোনো দ্বীনী বিষয়ের ক্ষেত্রে কোর’আন ও হাদীসের দলীল পাওয়া যাবে, ততোক্ষণ সেটা বেদ’আত হবেনা।
আর
যদি তাদের ওই কথা মানতেই হয়, তাহলে তাদেরকেও এ কথা মেনে নিতে হবে –
• বুখারী শরীফের গ্রন্থকার ইমাম বুখারী (রহ:) একজন বেদ’আতী।
কারণ
তিনি এমন আমল করেছেন, যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো দূরের কথা, কোনো সাহাবী-ও করেননি।
• তাদের সর্বপ্রধান শায়েখ ইবনু তাইমিয়্যাহ, যাকে তারা শায়খুল ইসলাম বলে ডাকে, তিনি হবেন এক নাম্বার বেদ’আতী।
কারণ
তিনি এমন আমল করার কথা বলে গেছেন, যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো দূরের কথা, কোনো সাহাবী-ও এমন আমলের কথা বলে যাননি বা করে যাননি।
প্রমাণ আমাদের হাতেই রয়েছে।
এই লেখা দীর্ঘ হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করা হলোনা।
• এ ছাড়াও বেদ’আত নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যেই মারামারি রয়েছে।
তাদের এক আলেম অন্য আলেমের প্রতি বেদ’আতের ফতোয়া আরোপ করেছে, যার অনেক প্রমাণে রয়েছে এবং যা তাদের অস্বীকার করার কোনো উপায়-ই নেই।
এজন্য বলি,
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো দ্বীনী বা ধর্মীয় কাজ করেননি বা সাহাবায়ে কেরাম (রা:) করেননি, এই দোহাই দিয়ে বেদ’আতের ফতোয়া আরোপ করলে ফতোয়াদানকারী নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারবে। তাদের আলেমদের ওপর-ই সে বেদ’আতের ফতোয়া সোজা গিয়ে পড়বে।
আবারো বলছি,
কোনো দ্বীনী বিষয়ের পক্ষে যতোক্ষণ পর্যন্ত কোর’আন ও হাদীসের প্রমাণ পাওয়া যাবে, ততোক্ষণ সেটা বেদ’আত হবে না।
আর
যখন তা কোর’আন ও হাদীসের সরাসরি বিরোধিতা করবে, তখন-ই কেবল সেটা বেদ’আত হবে।
আল্লাহ সকলকে বোঝার তাওফিক দিন, আমীন!
_______
মহান প্রতিপালক উনার পবিত্র বাণীতে ইরশাদ করেছেন…
ওয়া যাক্কিরহুম বিআইয়্যামিল্লাহি অর্থাৎ ওহে রাসুল, আপনি তাদেরকে আল্লাহর দিন গুলো স্মরণ করিয়ে দিন (সুরা ইব্রাহীম)।
তাফসীরকারকদের মতে,
যে দিন গুলোতে মহান আল্লাহর বিশেষ কুদরত ও নি’য়ামত প্রকাশ পায়, ঐ দিন গুলোকে আল্লাহর দিন বলে।
মহান প্রভূ উনার অপর বাণীতে
ইরশাদ করেছেন…
ওয়া আম্মা বিনি’মাতি রব্বিকা ফাহাদ্দিস অর্থাৎ আপনার প্রতিপালকের নি’মাতের চর্চা করুন (সুরা দ্বোহা)।
মিরাজের ঘটনা অপেক্ষা বৃহৎ আল্লাহর কুদরতের শান প্রকাশের ঘটনা আর কোনটা হতে পারে?
আর
শবে মিরাজে মহান আল্লাহ যে নি’মাতসমূহ উনার প্রিয়তম হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার ওয়াসীলায় উনার উম্মতদেরকে দান করেছেন, সেগুলো অস্বীকার কী করতে পারে?
অতঃপর সেই রজনীর চর্চা, তার আলোচনা ও বর্ণনা কিভাবে অবৈধ হতে পারে?
সুতারাং
পবিত্র মিরাজ শরীফ উপলক্ষ্যে সভা, সেমিনার ও মাহফিল ইত্যাদির আয়োজন করা অবশ্যই বৈধ এবং পূণ্যময় আমল আর এ রজনীর ওপর আমল আরব অধিবাসীদের মাঝেও প্রচলন ছিলো।
কারণ,
মিরাজের রজনীতে অবশ্যই আল্লাহর বিশেষ কুদরত প্রকাশ পেয়েছে এবং বান্দাদের জন্য বিশেষ নি’মাতও প্রদান করেছেন।
তাই
পবিত্র শবে মিরাজ আল্লাহর দিন গুলো অন্যতম একটি।
অতএব,
আল্লাহর বিশেষ এই দিবসে কী ঘটে ছিলো, তা স্মরণ করিয়ে দিতে, এই দিবসে প্রদানকৃত নি’মাতসমূহের চর্চা ও আলোচনা উপলক্ষ্যে বিশেষ কোন সভা, সেমিনার ও মাহফিলের আয়োজন করা অবশ্যই বৈধ।
আল্লাহ পাক সবাইকে বুঝার তাওফীক দান করুক।
আমীন…
দখলদার ইহুদি ওহাবী বাতীল ফির্কা ব্রিটিশ মদদে আরব দেশ দখলের আগে আরবদেশে রজব শরীফ উদযাপন।
‘রুহুল বয়ান’ ও ‘মা- সাবাতা বিস্ সুন্নাহ্’র ভাষ্য থেকে প্রকাশ যে, মানুষের মধ্যে শবে মি’রাজ উদযাপনের প্রচলন ছিল। বিশেষতঃ আরব দেশের অধিবাসীরা এই মুবারাক রজনীর মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব স্বীকার করতেন।
দেখুন- রুহুল বয়ানে রয়েছেঃ
শবে মি’রাজ হল রজবের ২৭ তারিখ এবং তার উপর মানুষের আমল রয়েছে।
[সূত্রঃ রুহুল বয়ান, খণ্ড ৫, পৃৃষ্ঠা ১০৩]।
প্রতীয়মান হল- মানুষেরা ঐ রাতে কিছু না কিছু করতেন।
আর মা- সাবাতা বিস্ সুন্নাহয় রয়েছেঃ
জেনে রেখো, আরব দেশে মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধ যে, হুজুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের মি’রাজ শরীফ ২৭শে রজব হয়েছে এবং রজব উদযাপনের দিন ও তারিখ আরব দেশে আরববাসীদের মধ্যে বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ।
[সূত্রঃ মা- সাবাতা বিস্ সুন্নাহ্, পৃৃষ্ঠা ১৯১]।
রজব শরীফ উদযাপনকে যারা বিদআত বলে, তাদের কথা বাতিল। তারা দ্বীন ইসলামের শত্রু।
_________
▆ মেরাজের রাতে প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله و سلم) আল্লাহকে দেখেছেন��
নোট ০১.
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1778671925781578
নোট ০২.
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1778095105839260
নোট ০৩.
ahlussunnahmedia.com
পরিবেশিত 11.84MB ভিডিওতে কিতাবের স্ক্রিনশট সহ আলোচনা বাংলায় শুনতে লিংকে প্রবেশ করুন।
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1163169653809463
নোট ০৪.
▆ মেরাজে প্রিয় নাবী রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) ও আল্লাহ পাকের মাঝে কথোপকথনে ‘আত্তাহিয়্যাতু…/তাশাহহুদের ঘটনা’��
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1779311199050984





Users Today : 12
Users Yesterday : 357
This Month : 12
This Year : 171883
Total Users : 287746
Views Today : 1987
Total views : 3409550