২য় পর্ব
মুসলিম সংসারের বউ
লেখিকা-বিনতে আলম
একটা সেল্ফি হবে?
আমি তো পুরায় অবাক কি বলে এইসব??
আয়শা-মানে??
সাজ্জাদ-রেগে যাওয়ার কিছু নেই,,আর আমার সাথে না, এই যে একটু আগে মুরুব্বীটা কে আপেল দিছেন না উনার সাথে,,,
কারণ আমার খুব শখ হলো বিষয়টা সবার মাঝে পৌঁছে দিতে যাতে সবাই আপনার মত উদার মন নিয়ে রাস্তায় বের হয় আর পথের এইসব নিরহ মানুষ গুলোর প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ায়,,তাতে তাদের কষ্ট একটু হলেও লাগব হবে!
আয়শা-আপনার বলা শেষ?
সাজ্জাদ – না মানে হা,,কিন্তু?
আয়শা-আপনি কোন ধর্মের আমি জানিনা তবে আমি মুসলিম,,আমার ধর্মে মানবতা জিনিসটা আছে!
এইবলে চলে গেলে!
এইভাবেই কাটছে আয়শার দিন,,ছোট্ট মেয়েটা এখন অনেক কিছুই করতে পারে অনেক দায়িত্ব নিয়ে সে নিজের কাজ নিজে শেষ করে,,,
এর মধ্যে অনেকের সাথে পরিচিত হলো,,তবে তার সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে রুমা আপু নামের একটা মেয়েকে,,যে সব বিষয়ে সাহায্য করে…!
একদিন আয়শা অফিসের কাজ করার সময় হঠাৎ মনে মনে ভাবতেছে ,,আচ্ছা আমি যে চাকরি করতেছি এটা কি ঠিক হচ্ছে? ভাইয়া জানলে খুবই কষ্ট পাবে
কেননা ইসলাম,,নারীকে ঘরের ভিতরে নিরাপত্তা দেই আর নারীর উপার্জন কৃত টাকা হারাম যদি সে ঘরে উপার্জন কৃত কোনো পুরুষ মানুষ থাকে!
এখন আমার তো ভাই আছে,,হা কষ্ট করে হলেও সংসার টা ধরে আছে!!
কেমন জানি মনের ভিতর খারাফ লাগা শুরু হলো,,এইসব খুব কষ্ট দিচ্ছে!
তাই সে রুমা আপুর কাছে গেল অস্বস্তি থেকে নিজেকে একটু হালকা করার,,,
আয়শা- আসসালামু আলাইকুম রুমা আপু আসবো?
রুমা- ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ,,আরে আয়শা আপু যে আসেন??
আমি তো আজ ধন্য আপনি আমার কাছে এসেছেন!
আয়শা- কি যে বলেননা আপু?
হঠাৎ কেউ একজন,
রুমা কে রে এটা?? (রিয়াদ, রুমার কলিগ )
নিউ কলিগ ২-১মাস হলো জয়েন করেছে,,খুব ভাল মেয়ে নামাজ-কালাম ঠিক মত আদায় করে আর যথা সম্ভব নিজেকে পর্দায় রাখার চেষ্টা করে।
ওহ আচ্ছা(রিয়াদ)
এহ তো মনে হয় মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতে আসছে,,বোরকা, নিকাব, হিজাব??(শহীদ)
এতই যখন অনেক গুণে গুণান্বিত তাহলে ঘরের বাইরে কেন??(রিয়াদ)
কি শুরু করলেন আপনারা?(রুমা)
রিয়াদ- তুমি যান না রুমা এইসব মেয়েরা উপরে যত লেবাস পড়ে থাকে মুখোশের আড়ালেই ততটাই নোংরা???
যার একটা প্রমান,,নুসরাত জাহান রাফির হত্যা মামলার একজন আস্বামী কামরুন নাহার মনি…
কত বড় বেঈমানী করলো!
ইসলামী লেবাস পড়ে।
আরে এরা ইয়াবা থেকে শুরু করে করেনা এমন কোনো জঘন্য কাজ নেই(শহীদ)
ওদের কথা শুনে আয়শার চোখ ঝাফসা হতে লাগলো দুই বছর আগের সেই এক্সিডেন্টের কথা মনে পড়ে গেল,মনে মনে ভাবছে ওরা যা বলছে তা পুরাপুরি সত্য না হলেও কিছুটা হলেও সত্য!!
যদিও বা কেউ যানেনা কাউকে দেখানো যায়না,,
আপনারা এমন আমি জীবনেও ভাবিনি(রিয়াদ,শহীদ) কে ইঙ্গিত করে আয়শা যাওয়ার পর(রুমা আপু)
ভালই বলেছে খোঁজ নিয়ে দেখ কত নোংরামী করে এসেছে(শহীদ)
রুমা-চুপ একদম, না জেনে না শুনে কারো নামে এতটা জঘন্য ভাবে বলার রাইট কোথায় পান আপনারা?
সাজ্জাদ- তোমরা কাজটা ঠিক করোনি(শহীদ,রিয়াদ)
আসলে ভাইয়া এইসব মেয়েরা এইগুলোই করে বেড়ায়(রিয়াদ)
তুমি এতটা শিউর হলে কিভাবে বোরকা পরা মেয়েরা শুধুই এইসব করে!!(সাজ্জাদ)
মনের পর্দায় হলো বড় পর্দা,,এত কিছুর প্রয়োজন নেই!(বোরকা,হিজাব,নিকাব)(শহীদ)
খবরদার আর একবার ঐকথা উচ্চারণ করলে,,,জীবন্ত কবর দিব ??(অনেক রাগ নিয়ে সাজ্জাদ)
রুমা-থাক ভাইয়া বাদ দদেন,,মেয়েটা অনেক কষ্ট পাইছে,,আপনারা মানেন আর নাই মানেন ওই মেয়েটা ভাল না হলে আপনাদের সব কথার উত্তর দিত,,কিন্তু সেটার প্রয়োজন মনে করেনি কারণ সে জানে সে যা করে তার রবের সন্তুষ্টির জন্যই করে।
সেদিনের পর থেকে আয়শা কারো সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না,,
নিজের মতই থাকে,,পরিবারেও অনেকটা অভাব মুক্ত কারণ আয়শার ভাই জানে আয়শা টিউশনি করেই ওদের প্রয়োজন মিটিয়ে নিচ্ছে।
সেক্ষেত্রে ভাইয়াও অনেকটা সস্তি পাই…!
কিছুদিন যেতেই
আমার আপনাকে খুব ভাল লাগে(সাজ্জাদ)
আয়শার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে,,তার অনেকটা সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা যেখানেই যায় ফেতনায় পড়ে যায়,,যেটাকে সে খুব ভয় পাই।
আবারও মহা সমস্যার সম্মুখীন(মনে মনে আয়শা)
আপনি কি আমাকে বলছেন(আয়শা)
হুম(সাজ্জাদ)
ভেবে বলছেন(আয়শা)
হ্যাঁ(সাজ্জাত)
কিন্তু আপনি কি যানেন এটা শরীয়ত সম্মত না(আয়শা)
কে বলেছে,,হাজার হাজার মানুষ করে আর আমাকে বলছেন শরীয়ত সম্মত না(সাজ্জাদ)
কে কি করে তা আমার দেখার বিষয় না আমি কি করবো সেটা শরীয়ত সম্মত কিনা? করলে কে খুশি হবে,না করলে কে নারাজ হবে এটা সম্পূর্ণ আমার নিজের একান্তের,তো আর কথা না বাড়ালেই খুশি হবো(আয়শা)
👉👉ফ্লাশ ব্যাক👈👈
ওইদিন সবার সাথে বাড়াবাড়ি করে সাজ্জাদ আয়শার কাছে যায় সবার হয়ে ক্ষমা চাওয়ার জন্য…!
সাজ্জাদ- আসলে আমরা আধুনিকতার ছোঁয়ায় নিজের ঐতিহ্য কে ভুলে গিয়ে নিজের ধর্মের সম্মাননেও আঘাত আনতে দ্বিধা করছিনা,,আমি বলছি ওরা যা করছে সবটা ভুল করছে,, না যেনে আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে প্লিজ ওদের ক্ষমা করে দিন আমি ওদের হয়ে হাতজোর করে ক্ষমা চাচ্ছি!
এইটাতো ওই ছেলে যে সেল্ফি নিতে চাইছিলো এটা এইখনে কোথতেকে কোনোদিন তো দেখিনি(আয়শা মনে মনে)
আয়শা-সমস্যা নেই(মুচকি হেসে)
এটা মেয়ে নাকি রোবট একটু আগে কত কষ্ট মুলক কথা একটা মুচকি হাসি দিয়েই সমাপ্ত করে দিল(সাজ্জাদ মনে মনে)
সাজ্জাদ- না মানে ক্ষমা করেছেন তো??
আয়শা- ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই,,বললাম তো সমস্যা নেই!
সাজ্জাদ- তারপরও ক্ষমা করেছেন বলেন!!
আয়শা- আচ্ছা করেছি..
মেয়েটা এত সর্টকার্ট করে কথা বলে কেন কি সুন্দর করে কথা বলে,,মন চাই সারাক্ষণ কথা বলি(মনে মনে সাজ্জাদ)
সাজ্জাদ- আলহামদুলিল্লাহ! জাযাকাল্লাহু খায়রান,,
আমি যায়?
আয়শা- জ্বী শুকরিয়া!
সেদিন থেকে সাজ্জাদ কিছুই ভাবতে পারেনা আয়শার কথা ছাড়া কেমন জানি বার বার ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে কিন্তু কোনো সুযোগ নেই।
তাই সাহস করে বলেই দিল আপনাকে আমার ভাল লাগে…!
এরপর,,
দেখুন আমার দ্বারা এইসব হবেনা(আয়শা)
সাজ্জাদ কিছু বলতে যাবে এমন সময় একজন এসে বললো,,
১০মিনিট পড়ে মিটিং ৫তলায় সবাইকে ম্যানেজারের রুমে গিয়ে উপস্থিত হতে বলেছে(রিমা)
রুমা আপুরাও(আয়শা)
হুম(রিমা)
আয়শা সুযোগটা পেয়েই ওখানে দাড়িয়ে না থেকে রুমা আপুর কাছে গিয়ে বললো চলেন আমরা সিড়ি দিয়ে উটবো,,,
রুমা- লিফ্ট আছে তো,,এত উপরে সিড়ি বেয়ে,,না চলেন লিফ্টে।
আয়শা-আচ্ছা আপনি যান আমি সিড়ি দিয়ে যায়
আয়শা চলে যাচ্ছে পিছন পিছন রুমাও গেল বাধ্য মেয়ের মত কি করার।
ওরা সবার আগেই পৌঁছে গেল,,
যারা লিফটের জন্য অপেক্ষা করেছে তাদের সবার লেট হয়ে গেল,,
রিয়াদ,শহীদ,,সাজ্জাদ সহ আরো অনেকেই বোকাটা শুনলো শুধুই আয়শা আর রুমা ছাড়া,,
রুমা মনে মনে আয়শাকে থ্যাংকস দিচ্ছিলো।
ম্যানেজার স্যার- সবাই কেমন আছেন?
সবাই-জ্বী স্যার ভাল,,শুধু আয়শা ছাড়া,,,
শুনেন আগামীকাল,,আমাদের চেয়ারম্যান স্যার আসবেন উনি ২-৩দিন থাকবেন,সো সবাই যে যার মত কাজ ঘুছিয়ে সম্পূর্ণ করবেন,,যাতে কোন ভুলত্রুটি না থাকে,,বিশেষ করে ডিসিপ্লিন ও ঠিক রাখবেন,,,,,,,,,,
এইভাবে কথা বলতে বলতে চোখ পড়ে আয়শার উপর,,,
স্যার-আপনি ওইদিন এইভাবে আসবেননা তাহলে সমস্যা হতে পারে,,,
আয়শা-স্যার আমি তো এইরকম ছাড়া থাকতে পারিনা,,,
রিয়াদ-বাড়িতেইও কি এইভাবে থাকেন??
স্যার-কিন্তুু দেখেন আমি আপনার বিষয় বুঝি কিন্তু আপনার চাকরিতে সমস্যা হতে পারে।
সাজ্জাদ-তাহলে স্যার উনাকে ২-৩দিন ছুটি দিয়ে দেন?
স্যার-আপনার সাহস কি করে হয় আমার মুখের উপর কথা বলার সাজ্জাদ??
সাজ্জাদ-সরি স্যার!
আয়শা-স্যার আসলে আমারও মনে হয় আমাকে ছুটি দিলে খুশি হতাম…!
স্যার- গেট আউট আয়শা আপনি আসতে পারেন….
আয়শা- স্যার….?
স্যার- আপনি বের হোন আয়শা
আয়শা- আচ্ছা…!
সাজ্জাদ-এটা কি করলেন স্যার?
স্যার- আপনিও বের হোন আমি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য মিটিং করতেছি ফাজলামি করার জন্য না….
সাজ্জাদ- স্যার সরি,,
স্যার- মেজাজ খারাফ করবেননা সাজ্জাদ…
সাজ্জাদ- ওকে স্যার..
এদিকে আয়শা সিড়ি বেয়ে নেমে যাচ্ছে এমন সময় সাজ্জাদের ডাক……..
আয়শা….আপনি????
চলবে…..
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন…..





Users Today : 233
Users Yesterday : 767
This Month : 14655
This Year : 186526
Total Users : 302389
Views Today : 11357
Total views : 3588101