ইতিপূর্বে ৮ পর্বে প্রমাণ করে দেখিয়েছি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার প্রতি মদ পান করে নামাযে ভুল করে ফেলার যে অভিযোগ তা মিথ্যা ও দলীল হওয়ার অযোগ্য । মূলত যারা এ অভিযোগ করে তারা হয় খারেজী ফির্কার লোক অথবা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ সম্পর্কে পরিপূর্ণ অজ্ঞ । হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনাকে আর সবার সাথে এক পাল্লায় মাপার সুযোগ নেই। তিনি শুধু ছাহাবীই নন বরং আহলে বাইত বা নবী পরিবারের সদস্য। বিষয়টি বুঝার জন্য উনার শান সম্পর্কে কিছুটা জানা প্রয়োজন তাহলে আপনা নিজেরাই বিষয়টা বুঝতে পারবেন।
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
عُنْوَانُ صَحِيفَةِ الْمُؤمِنِ حُبُّ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ.
মুমিনের আমলনামার শিরোনাম হলো হযরত হযরত আলী ইবনে আবি তালিব আলাইহিস সালাম উনার ভালোবাসা। (মানাকিবে হযরত আলী আলাইহিস সালাম ১/৩১১, কানযুল উম্মাল ১১:৬০১/৩২৯০০, তারীখে বাগদাদ : ৪/৪১০)
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন
أَنَا دَارُ الْحِكْمَةِ، وَ عَلِيٌّ بَابُهَا.
আমি হিকমতের গৃহ আর হযরত হযরত আলী আলাইহিস সালাম আলাইহিস সালাম তার দরজা।
(সুনানে তিরমিযী ৫/৬৩৭: হাদীছ ৩৭২৩, হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১/৬৪,আল জামিউস্ সাগীর ১:৪১৫/২৭০৪)
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন
أَنَا وَ عَلِيٌّ حُجَّةٌ عَلَي أُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
কেয়ামতের দিন আমি এবং হযরত আলী আলাইহিস সালাম আমার অনুসারীদের জন্য হুজ্জাত (দলিল) এবং পথপ্রদর্শনকারী। (তারীখে বাগদাদ ২/৮৮)
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন
أنَا الْمُنْذِرُ وَ عَلِيٌّ الْهَادِي، بِكَ يَا عَلِيُّ يَهْتَدِي الْمُهْتَدُونَ.
আমি হলাম সাবধানকারী। আর হে হযরত আলী আলাইহিস সালাম ! আপনার মাধ্যমে পথ অন্বেষণকারীরা পথ খুঁজে পাবে। (তাফসীরে তাবারী ১৩/৭২, ইবনে আসাকির ২/৪১৭: ৯২৩)
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন
إِنَّ عَلِيّاً مِنِّي، وَ أََنَا مِنْهُ، وَ هُوَ وَلِيُّ كُلِّ مُؤمِنٍ بَعْدِي.
নিশ্চয় হযরত আলী আলাইহিস সালাম আমা থেকে আর আমি হযরত আলী আলাইহিস সালাম থেকে। আর সে আমার পরে সকল মুমিনের অভিভাবক। (মুসনাদে আহমাদ ৪/ ৪৩৮, আল মু’ জামুল কাবীর-তাবারানী ১৮/ ১২৮: ২৬৫)
যিনি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তিনি কি করে মদ পানের মত কাজ কখনো করবেন?
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন
رَحِمَ اللهُ عَلِيّاً ، اَللَّهُمَّ أَدِرِ الْحَقَّ مَعَهُ حَيْثُ دَارَ.
আল্লাহ হযরত আলী আলাইহিস সালামের ওপর রহমত বর্ষণ করুন! হে আল্লাহ! হযরত আলী আলাইহিস সালাম যেখানেই আছে সত্যকে তার সাথে ঘোরান। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩/১২৪, সুনানে তিরমিযী ৫/৬৩৩ : ৩৭১৪)
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন
عَلِيٌّ مَعَ الْقُرْآنِ وَ الْقُرْآنُ مَعَ عَلِيٍّ.
হযরত আলী আলাইহিস সালাম কুরআনের সাথে আর কুরআন হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার সাথে। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩/১২৪,কানযুল উম্মাল ১১:৬০৩/৩২৯১২)
পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হওয়া থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত হযরত আলী আলাইহিস সালাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ছিলেন। আর পবিত্র কুরআন শরীফও হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার সাথে ছিলো তাহলে উনার পক্ষে কি করে মদ পানের মত কাজ সম্ভব হতে পারে?
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন
مَا مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا وَ لَهُ نَظِيرٌ فِي اُمَّتِهِ وَ عَلِيٌّ نَظِيرِي.
এমন কোনো নবী নেই যার উম্মতের মধ্যে তাঁর দৃষ্টান্ত কেউ ছিল না। আর আমার দৃষ্টান্ত হলো হযরত আলী আলাইহিস সালাম ইবনে আবি তালিব। (তারিখে মদীনা ৬৬/১৯০)
হযরত আলী আলাইহিস সালাম তিনি যদি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দৃষ্টান্ত হন তবে উনার পক্ষে কখনো কি মদ পান করা সম্ভব?
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন
إنَّ الْمَلَائِِكَةَ صَلَّتْ عَلَيَّ و عَلَي عَلِيٍّ سَبعَ سِنِيْنَ قَبْلَ أَنْ يُسْلِمَ بَشَرٌ.
কোনো মানুষ মুসলমান হওয়ার সাত বছর পূর্ব থেকেই ফেরেশতারা আমার এবং হযরত আলী আলাইহিস সালাম র ওপর দরূদ পাঠাতো। (কানযুল উম্মাল ৩২৯৮৯, তারীখে দামেস্ক ৫৬/৩৬)
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন
عَلِيٌّ مَعَ الْحَقِّ وَ الْحَقُّ مَعَ عَلِيٍّ، لَنْ يَفْتَرِقَا حَتَّي يَرِدَا عَلَيَّ الْحَوضِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
হযরত আলী আলাইহিস সালাম সত্যের সাথে আর সত্য হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার সাথে, এই দুটো কখনো একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না যতক্ষণ না কেয়ামতের দিন হাউজে কাওসারে আমার সাথে মিলিত হবে। (তারীখে বাগদাদ ১৪/৩২১, ইবনে আসাকির ৩/১৫৩ : ১১৭২)
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন
إِنَّ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ عَهِدَ إِلَيَّ عَهْداً فِي عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ، فَقَالَ: إنَّهُ رَايَةُ الْهُدَي، وَ مَنارُ الْاِيْمَانِ، وَ اِمَامُ أَوْلِيَائِي، وَ نُورُ جَمِيعِ مَنْ أَطَاعَنِي.
বিশ্ব প্রতিপালক হযরত আলী আলাইহিস সালাম র ব্যাপারে আমার সাথে কঠিনভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন। অতঃপর আমাকে বলেছেন: নিশ্চয় হযরত আলী আলাইহিস সালাম হলো হেদায়েতের পতাকা ,ঈমানের শীর্ষচূড়া, ওলীগণের নেতা আর আমার আনুগত্যকারী সকলের জ্যোতিস্বরূপ। (হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ২/৯৬ , তারীখে মদীনাতু দিমাষ্ক ৪২/ ৩৩০)
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন
أولكم ورودا على الحوض أولكم إسلاما علي ابن أبى طالب
তোমাদের মধ্যে সবার আগে হাউজে কাওসারে প্রবেশ করবে সেই ব্যক্তি যে সবার আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে। আর সে হলো হযরত আলী আলাইহিস সালাম ইবনে আবি তালিব।
(আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩/১৩৬, আল ইস্তিয়াব ৩/২৭,২৮,উসুদুল গাবাহ ৪/১৮,তারীখে বাগদাদ ২/৮১)
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন
وَ لَقَدْ صَلَّتِ الْمَلَائِكَةُ عَلَيَّ وَ عَلَي عَلِيٍّ ، لِأََنَّا كُنََّا نُصَلِّي وَ لَيْسَ مَعَنَا أَحَدٌ يُصَلِّي غَيْرُنَا.
ফেরেশতারা আমার এবং হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার ওপর অসংখ্য সালাম পড়তো। কারণ,শুধু আমরাই নামায পড়তাম আর আমাদের সাথে নামায পড়ায় কেউ ছিল না। (উসুদুল গবাহ ৪:১৮,আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১২১, যাখায়িরুল উকবা :৬৪, ইবনে আসাকির ১:৮০/১১২-১১৩)
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সর্বপ্রথম নামায আদায়কারীর বিরুদ্ধে মদ পানের অভিযোগ কতটা মিথ্যা ভেবে দেখেন।
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন
مَنْ أَحَبَّأَنْ يَحْيَاحَيَاتِيوَيَمُوتَ مَوْتِيفَلْيَتَولَّ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ.
যে ব্যক্তি আমার মতো জীবন যাপন করতে এবং আমার মতো বিছাল শরীফ করতে পছন্দ করে সে যেন হযরত আলী ইবনে আবি তালিব আলাইহিস সালাম উনার বেলায়েতকে মেনে চলে।
(আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৮,কানযুল উম্মাল ১১:৬১১/৩২৯৫৯)
আর এ হাদীছ শরীফতো স্পষ্ট প্রমানই করে দেয় হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার জীবন যাপন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মত আর সেখানে মদের কোন স্থান থাকতেই পারে না।
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন
يَا عَلِيُّ، إِنَّ اللهَ قَدْ زَيَّنَكَ بِزِينَةٍ لَمْ يُزَيِّنُهُ الْعِبَادَ بِزِينَةٍ أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْهَا، هِيَ زِينَةُ الْأَبْرَارِ عِنْدَ اللهِ تَعَالي، الزُّهْدُ فِي الدُُّنْيَا، فَجَعَلَكَ لَا تَرْزَأَ مِنَ الدُُّنْيَا شَيْئًا وَ لَا تَرْزَأ الدُُّنْيَا مِنْكَ شَيْئاً وَ وَهَبَ لَكَ حُبَّ الْمَسَاكيِنَ فَجَعَلَكَ تَرْضَي بِهِمْ أَتْبَاعاً وَ يَرْضَوُنَ بِكَ إِمَاماً.
হে হযরত আলী আলাইহিস সালাম ! আল্লাহ তোমাকে এমন গুণে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছেন যার চেয়ে পছন্দনীয় গুণ মানুষের জন্য আর নেই। আল্লাহর দরবারে সৎকর্মশীলদের সেই গুণবৈশিষ্ট্যের নাম হলো দুনিয়ার জীবনে পরহেযগারী। আল্লাহ এমন করেছেন যে তুমি দুনিয়া থেকে কিছুই গ্রহণ করোনি আর দুনিয়াও তোমার থেকে কিছুই গ্রহণ করেনি। এর বিনিময়ে আল্লাহ অসহায়দের ভালোবাসা তোমাকে দান করেছেন। তুমিও খুশী হয়েছ যে তারা তোমার অনুসারী হয়েছে আর তারাও এই জন্য খুশী যে তুমি তাদের ইমাম! (হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১/৭১)
সর্বপোরি হযরত আলী আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন আহলে বাইত। আহলে বাইত সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেছেন,
إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
অর্থ : হে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! মহান আল্লাহ পাক উনার ইরাদা মুবারক হলো যে, আপনাদেরকে সকল অপবিত্রতা থেকে হিফাযত করে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করা। (সূরা আহযাব ৩৩)
উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে পবিত্র হাদীছ শরীফে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
عن حضرة بن عمر الفاروق الاعظم عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انا واهل بيتى مطهرون من الذنوب
অর্থ : হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি এবং আমার পবিত্রতম আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই সকল অপবিত্রতা থেকে পবিত্র ।” সুবহানাল্লাহ (কিতাবু আমালি ১/১৯৮, দররুল মানছূর ১২/৪৩, রূহুল মায়ানী ১১/১৯৪, ফাতহুল কাদীর লি শাওকানী ২/৪১৩, মা’য়রিফাত ওয়াত তারিখ ১/৪১০)
قال النبى صلى الله عليه وسلم نـحن اهل البيت لايقاس بنا احد
অর্থ : হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- আমরা, পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আমাদের সাথে সৃষ্ঠির মাঝে কোন তুলনাই করা যাবে না। সুবহানাল্লাহ! (তারীখে মদীনা ৩০/ ৩৬১, যাখায়িরুল উকবা/১৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ১১/৭)
সূতরাং অন্য কারো পক্ষে মদ হারাম হওয়ার পূর্বে মদ পান করা সম্ভব হলেও আহলে বাইত হওয়ার কারনে উনার দ্বারা এ কাজ কখনোই হওয়া সম্ভব না। কারন আল্লাহ পাক উনাকে পবিত্র করেই নবী পরিবারের সদস্য করেছেন।
সূতরাং প্রমাণ হলো, যেসকল জামাতী, খারেজী, লা মাযহাবী ওহাবীরা হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার প্রতি মদ পান করে নামাযের ইমামতি করার যে অভিযোগ দিচ্ছে তা স্পষ্ট মিথ্যা এবং খারেজী ফির্কার আক্বীদা। আল্লাহ পাক এসব খারেজীদের ফিতনা থেকে আমাদের হিফাজত করুন। আমীণ।