মাযহাবী বনাম লা-মাজহাবী বিতর্ক

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

কিছুদিন পূর্বে একজন লা-মাজহাবী ভাই এসে আমাকে বললেন –

ভাই, আমরা তো কেবল সহীহ হাদিস পাইলে মানি৷ অন্য কিছু নয় !

আমি তখন বললাম –

বাহ, বেশ ভালো তো ! আচ্ছা, আমাকে কি তিরমিজী শরীফের ১৮৭ নং হাদিসটা দেখে কিছু জানাবেন ?

তিনি বললেন –

হাদিসটিতে লেখা – রাসুল ( সাল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) ভয় অথবা বৃষ্টিজনিত কারণ ছাড়া মদীনাতে জোহর ও আসর এবং মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে আদায় করেছেন ।

আমি তখন বললাম –

আচ্ছা ভাই, আপনি এই হাদিস অনুযায়ী প্রতিদিন আমল করছেন তো ?

তিনি বললেন –

নাহ, এটার উপর আমল করছি না৷

আমি তারপর বললাম –

কেন ? নবী সাঃ কতো সহজ করে দিয়েছেন । কি দরকার আমাদের জোহরের জন্য আলাদাভাবে বিরতি দেওয়ার, আমরা আসরের সময় এক সাথে জোহর ও আছর পড়ে নিব । এবং এশার সময় এক সাথে মাগরিব ও এশা পড়ে নিব ।

এবং দেখেন হাদিসের শেষে এটাও লেখা আছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ বলেনঃ

উম্মতের অসুবিধা হ্রাস করাই নবী সাঃ এর উদ্দেশ্য ছিল । তো কেন আপনি চার ওয়াক্তে চার নামাজ পড়ে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন, দুই ওয়াক্তে চারটা পড়ে নিন৷

তিনি বললেন –

এটা হয়তো সফরের সময় নামাজের কথা বলেছেন।

আমি বললাম –

নাহ, দেখেন ! হাদিসেই লেখা আছে যে, রাসূল সাঃ তখন মদীনাতে মুকীম ছিলেন। সফরে নয়। আর হাদিসটি ইমাম তিরমিজী রাঃ সফরের অধ্যায়েও আনেন নি। তাহলে এটা সফরের সময়ের জন্য হবে কেন ?

তিনি বললেন –

আচ্ছা, তাহলে আমি পরবর্তীতে জেনে আপনাকে জানাচ্ছি।

অতঃপর, ভাইটি গতকাল এসে আমাকে বললেন যে, ইমাম তিরমিজি রাঃ কিতাবুল ইলালে বলছেনঃ

এই হাদিস অনুযায়ী আমল করা যাবে না।

আমি বললাম –

ইন্না লিল্লাহ! এ কি কন ভাই ? আপনি তো দেখি আমাদের মতো মুকাল্লীদ হয়ে গেলেন! আমি আপনাকে রাসুল সাঃ এর সহীহ হাদিস পেশ করেছি। আর আপনি আমল করছেন ইমাম তিরমিজীর কথা। আপনি সহীহ হাদিস এর উপর আমল বাদ দিয়ে ইমাম তিরমিজী রাঃ এর কথার উপর আমল করছেন কেন ?

আমি আরো বললাম –

ভাই দেখেন, আমরা যখন এরকম ব্যাপারে ইমাম আজম আবু হানীফা রাঃ এর গবেষণালব্ধ মতামত গ্রহণ করি, তখন আপনারা আমাদেরকে হানাফী মুকাল্লীদ বলে গালি দেন। অথচ, আপনারাই আবার চাপে পড়ে ইমাম তিরমিজীর তাকলীদ করলেন। আমাদের তাকলীদ করা অবৈধ হলে, আপনাদের তাকলীদ করা বৈধ কেন ? কেন এই ডাবল স্ট্যান্ডবাজি ?

আমি তখন আরো বললাম –

ভাই দেখেন, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রঃ ফাতহুল বারীতে লিখেনঃ

এমন বহু হাদিস আছে, যেগুলো সহিহ কিন্তু মানসুখ হয়ে গেছে । এবং আপনি যেই কিতাবের রেফারেন্স দিয়ে বললেন, সেখানে ইমাম তিরমিজি রঃ এটাও বলেছেন যে, ফুকাহায়ে কেরামরাই হাদিসের অর্থ সব থেকে ভালো বুঝেন !

পরিশেষে এ কথাও বললাম, আপনারা আর আমাদের পার্থক্য হচ্ছে, আমরা শ্রেষ্ঠ ফোকাহাদের তাকলীদ করি আর আপনারা মন-চাহিদা যখন-তখন যে কোন শায়খের তাকলীদ করেন।

বিঃদ্রঃ- শায়খ মুফতী বেলাল বিন আলী ( হাফিজাহুল্লাহ) এর বর্ণিত ঘটনাবিলম্বে ঈষৎ সম্পাদিত ও পরিমার্জিত !

আব্দুল কারীম আল-মাদানী

শারীয়াহ বিভাগ, মাদীনা বিশ্ববিদ্যালয়৷

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment