তিষট্টিতম অধ্যায়ঃ হযরত ফাতিমা (رضي الله عنها)-এঁর আহাজারীঃ
প্রসঙ্গঃ হযরত ফাতিমা (رضي الله عنها) ও খিযির আলাইহিস সালামের শোক প্রকাশঃ-
==========
ফাতেমা (رضي الله عنها)’র বিলাপঃ
নবী করীম [ﷺ]-এঁর ইন্তিকালের পর হযরত ফাতিমা (رضي الله عنها) এভাবে শোক প্রকাশ করেছিলেন- “হায় আব্বাজান! আপনি আল্লাহর ডাকে প্রস্থান করেছেন। হায় আব্বা-জান্নাতুল ফেরদাউস আপনার আবাসস্থল। হায় আব্বা! ইন্তিকালের সময়ে জিবরাইলের সাথে তো আপনি গোপনে কথা বলেছিলেন।” যখন নবী করিম [ﷺ]-কে দাফন করা হয়, তখন বিবি ফাতিমা (رضي الله عنها) আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه)-কে লক্ষ্য করে কেঁদে কেঁদে বলেন – হে আনাস! রাসুলে খোদার উপর মাটি স্থাপন করে কি তোমাদের হৃদয় এবার শান্ত হয়েছে”? [বোখারী-সূত্রে আনাস (رضي الله عنه)]
ফেরেশতার সান্ত্বনা বাণীঃ
ইমাম বায়হাকীর একটি দীর্ঘ হাদিস ইবনে কাছির তাঁর আল-বেদায়া গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে যে, “নবী করিম [ﷺ] অসুস্থ হওয়ার পর ফেরেশতাগণ দলে দলে এসে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। ইন্তিকালের দিন হযরত জিব্রাইল (عليه السلام)-এঁর সাথে একজন ফেরেশতা আসলেন। তাঁর নাম ইসমাঈল (عليه السلام)। তাঁর সাথে ছিল একলক্ষ ফেরেশতা – আবার প্রত্যেকের সঙ্গে ছিলেন একলক্ষ ফেরেশতা। এভাবে এক হাজার কেটি ফেরেশতা অনুমতি নিয়ে হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) সহ হুযুরের হুজরা মোবারকে প্রবেশ করেন। অতৎপর জিব্রাইল (عليه السلام) বলেন – “ইয়া রাসুলুল্লাহ! মালাকুল মউত আপনার জান কবয করার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করছেন। আপনার পূর্বে তিনি কারো অনুমতি প্রার্থনা করেননি এবং আপনার পরেও কারো অনুমতি প্রার্থনা করবেননা।“ নবী করিম [ﷺ] বললেন – “আসতে বলো।“ আযরাইল (عليه السلام) প্রবেশ করে নবী করিম [ﷺ]-কে সালাম দিয়ে আরয করলেন – “হে প্রিয় মোহাম্মদ [ﷺ]! আল্লাহ তায়ালা আমাকে আপনার খেদমতে এই নির্দেশ দিয়ে পাঠিয়েছেন যে, যদি আপনি জান কবয করার অনুমতি দেন, তাহলেই যেন আমি রূহ মোবারক কবয করি। আর যদি নিষেধ করেন- তাহলে যেন ফিরে যাই।” নবী করিম [ﷺ] জিজ্ঞাসা করলেন – “হে মালাকুল মউত! তুমি কি রুহ কবয করার ইচ্ছা করো?” আযরাইল বললেন – “জ্বী হ্যাঁ, আমি একাজ করতে আদিষ্ট হয়েছি। তবে আমাকে এ নির্দেশও দেয়া হয়েছে যে, আমি যেন আপনার নির্দেশের আনুগত্য করি।“
নবী করিম [ﷺ] জিবরাইলের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি দিলেন। হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) বললেন – “হে প্রিয় মোহাম্মদ [ﷺ]! আল্লাহ তায়ালা আপনার দীদারের প্রতীক্ষায় উদগ্রীব হয়ে আছেন। একথা শুনে নবী করিম [ﷺ] আযরাইলকে বললেন – “নির্দেশ মোতাবেক তোমার কাজ সমাধা করোঃ।“ ইন্না নিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!
হযরত খিযিরের শান্ত্বনা বাণীঃ
যখন নবী করিম [ﷺ] ইনতিকাল করলেন, তখন চতুর্দিকে থেকে কান্নার রোল ভেসে আসলো এবং শোকের ছায়া নেমে আসলো ঐ সময় সকলে হুযুরের ঘরের এক কোণ থেকে একটি আওয়ায শুনতে পেলেন – “আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহ্লাল বাইত; ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। প্রত্যেক মসিবেতে শান্ত্বনা একমাত্র আল্লাহর হাতে।”
হযরত আলী (رضي الله عنه) অন্যদেরকে বললেন – “ইনি কে, আপনারা কি জানেন? ইনি হচ্ছেন খিযির عليه السلام।” এটা ছিল হযরত আলীর কারামত।
হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন – ”নবী করিম [ﷺ]-এঁর ইন্তিকালে সাহাবায়ে কেরাম তাঁর চারপাশে বসে কান্নাকটি করছিলেন। এমন সময় উজ্জ্বল চেহারা ও সাদা দাঁড়ি বিশিষ্ট একজন লোক ঘরে প্রবেশ করে কেঁদে ফেললেন এবং উপস্থিত সাহাবীদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন – “প্রত্যেক মুসিবতে আল্লাহর হাতেই শান্ত্বনা।” একথা বলেই তিনি চলে গেলেন। লোকেরা একজন অপরজনকে জিজ্ঞাসা করলেন – তাঁকে চিনেন কিনা? হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ও হযরত আলী (رضي الله عنه) বললেন – “হাঁ! চিনি-ইনি রাসুল পাক [ﷺ]-এঁর সজাতি ভাই, হযরত খিজির (عليه السلام)।
(আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৫ম খণ্ড ২৭৭ পৃষ্ঠা)।
হে আল্লাহ! তুমি সকলকে হোববে রাসুল ও দীদারের রাসুল নসীব করো। ওয়া ছাল্লাল্লাহু আলা খাইরি খালক্বিহী ওয়া নূরে যাতিহী ওয়া জীনাতি ফারশিহী সাইয়েদিনা ওয়া মাওলানা মোহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা আলিহী ওয়া আসহাবিহী আজমাঈন। আমিন!
(পাণ্ডুলিপি লেখার কাজ মধ্য মার্চ ’৯৫ থেকে শুরু করে ১৪ ই নভেম্বর ’৯৫ মঙ্গলবার সমাপ্ত)।
খাদেমুল ইলম
হাফেজ মুহাম্মদ আবদুল জলিল