মহিলা ডাক্তার পুরুষ রোগীর চিকিৎসা করা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

জিজ্ঞাসা–৪১৯: আমি একজন ডাক্তার (ডেন্টিস্ট )। আমি হাত আর পা মুজা, নেকাপ পরে রুগী দেখি (দুই চোখ খোলা থাকে)। মাঝে মাঝে আমাকে কিছু পুরুষ রুগীর কাজ করতে হয় মানে তাদের মুখে হাত দিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে হয়। আমি জানতে চাইছি যে, 1)আমার কি গুনাহ হবে? 2)আর যদি গুনাহ হয় তাহলে কিভাবে করলে ভালো হবে? ইসলামী শরীয়াত মোতাবেক জানতে চাইছি। ভাই, অনুগ্রহ করে জরুরি জানালে আমি উপকৃত হতাম।– Jannatul Ferdoush

জবাব:

প্রিয় দীনি বোন, প্রয়োজনে মহিলা-ডাক্তার পুরুষ-রোগীকে দেখতে পারবে। তবে শর্ত হচ্ছে, পুরুষদের চিকিৎসা করার সময় হিজাব পরিধানের পাশাপাশি মহিলা ডাক্তারের সাথে তার স্বামী কিংবা কোন মাহরাম পুরুষ অথবা অন্তত পক্ষে কোন বিশ্বস্তা মহিলা থাকতে হবে, যাতে কোন অবস্থায় রোগীর সাথে তার একান্তে অবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি না হয়। এ ধরনের অবস্থায় চিকিৎসার প্রয়োজনে মহিলা ডাক্তারের জন্য পুুরুষের কোন অঙ্গ দেখা ও স্পর্শ করা জায়িয। এর দলিল হচ্ছে–

রুবাই বিনত মুআওইয রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كنا نغزو مع النبي ﷺ فنسقي القوم ونخدمهم ونرد الجرحى والقتلى إلى المدينة

আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে বিভিন্ন অভিযানে গমন করতাম। সেখানে আমরা লোকদের পানি পান করাতাম, আহতদের সেবা করতাম এবং  শহীদদেরকে মদীনায় নিয়ে আসতাম। (বুখারী ২৭২৬, ২৭২৭)

ইবনু হাজার আসকালানী রহ. বলেন,

فيه جواز معالجة المرأة الأجنبية الرجل الأجنبي للضرورة

এ হাদীস থেকে জানা যায় যে, প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে মহিলার জন্য বেগানা পুরুষের চিকিৎসা করা জায়িয হবে।  (ইবনে হাজার, ফাতহুল বারী ৬/৮০)

হযরত আনাস ইবনু মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كان رسول الله ﷺ يغزو بأم سليم ونسوة من الأنصار معه إذا غزا فيسقين الماء ويداوين الجرحى

রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন অভিযানে বের হতেন তখন তিনি উম্মু সুলাইম রাযি. ও কিছু আনসারী মহিলাকে সাথে নিয়ে যেতেন। তাঁরা পানি পরিবেশন করতেন এবং আহতদের চিকিৎসা করতেন। (মুসলিম ১৮১০)

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহ. বলেন,

وهذه المداواة لمحارمهن وأزواجهن ، وما كان منها لغيرهم لا يكون فيه مس بشرة إلا في موضع الحاجة

এ হাদীস থেকে জানা যায় যে, যুদ্ধক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে মেয়েদের বের হওয়া এবং পানি পরিবেশন ও চিকিৎসা প্রভৃতি কাজে তাদেরকে খাটানো জায়িয। তারা মাহরাম ও স্বামীদের চিকিৎসা ও সেবা করবে। অন্যদেরও সাধারণভাবে স্পর্শ করা ছাড়া চিকিৎসা করতে পারবে; তদুপরি জরুরতের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় স্থান স্পর্শ করতেও কোন অসুবিধা নেই। (নববী, শরহু মুসলিম, পৃ ৫১১)

উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে মূলনীতি হল, পুরুষ যাবে পুরুষ ডাক্তারের কাছে, মহিলা যাবে মহিলা ডাক্তারের কাছে। যদি পুরুষ ডাক্তার পাওয়া না যায়, তাহলে মহিলা ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে পারবে। অনুরূপভাবে মহিলার জন্যও যদি মহিলা ডাক্তার না পাওয়া না যায়, তাহলে পুরুষ ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে পারবে। (সারাখসী, আল-মাবসূত ১০/১৫৬ ; কাসানী,বাদাই ৫/১২২)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment