তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে এবং তাদবীর করতে হবে।
🖋সামির আসাদ
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لا عَدْوَى وَلا طِيَرَةَ وَلا هَامَةَ وَلا صَفَرَ ”
“রোগ সংক্রমণ, কুলক্ষণ, পেঁচা এবং সফর মাস বলতে কিছু নাই।” (সহীহু বুখারী, হা/৫৭০৭)
মুহাদ্দিসগণ বলেন, উক্ত হাদীসে পেঁচা ও সফর মাসের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয় নি বরং জাহেলী যুগে পেঁচার ডাক এবং সফর মাসকে কুলক্ষণে মনে করা হত (বর্তমানেও মূর্খ লোকদের মাঝে এ কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে) এই বাতিল ও ভ্রান্ত বিশ্বাসকে অস্বীকার করা হয়েছে। অনুরূপভাবে সংক্রমন রোগের অস্তিত্বকেও অস্বীকার করা হয় নি বরং একটি ভ্রান্ত বিশ্বাসের অনোদন করা হয়েছে। তা হল, জাহেলী যুগে কোনো কোন ব্যাধিকে এমন মনে করা হত যে, তা নিজে নিজেই সংক্রমিত হয়। কিন্তু ইসলামের সৃষ্টিভঙ্গী হল, রোগ কখনও নিজে নিজে সংক্রমিত হতে পারে না। বরং তা আল্লার ইচ্ছার সাথে সংম্পৃক্ত। তার লিখিত তাকদীর ছাড়া কোন কিছুই ঘটে না।
❑ উক্ত হাদীসের এই ব্যাখ্যাটি নিন্মোক্ত হাদীস থেকে স্পষ্ট হয়:
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নাই বললে জনৈক বেদুঈন আরব জিজ্ঞেস করলো, ইয়া রসূলুল্লাহ! তবে সেই উটপালের অবস্থা কি যা কোনো বালুকাময় প্রান্তরে অবস্থান করে এবং সুস্থ-সবল থাকে? অতঃপর তথায় কোনো খুজলী-পাঁচড়ায় আক্রান্ত উট তাদের মধ্যে এসে পড়ে এবং সবগুলোকে ঐ রোগে আক্রান্ত করে ছাড়ে?
(এর জবাবে) তিনি বললেন, তাহলে প্রথম উটটিকে কে রোগাক্রান্ত করেছিলো?” (সহীহ মুসলিম)
এ হাদীসের অর্থ হল, যে মহান আল্লাহ প্রথম উটটিকে আক্রান্ত করেছিলেনে তিনিই অন্যান্য উটকেও আক্রান্ত করেছেন। অর্থাৎ রোগ-ব্যাধী নিজে নিজে সংক্রমিত হয় না যদি আল্লাহর হুকুম না থাকে।
মোটকথা, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে রোগাক্রান্ত হওয়া একটি বাস্তব বিষয়। তবে সংক্রমনের এই ক্ষমতা রোগের নিজস্ব নয়; বরং আল্লাহপ্রদত্ত। তাই তিনি চাইলে সংক্রমণ হবে নতুবা হবে না এবং এটি যেহেতু রোগাক্রান্ত হওয়ার একটি বাস্তব কারণ তাই রোগাক্রান্ত হওয়ার অন্যান্য কারণ থেকে বেঁচে থাকতে যেমনিভাবে কোনো দোষ নেই তেমনি এক্ষেত্রেও উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা দোষের নয়। বরং কিছু হাদীসে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। [বাযলুল মাজহূদ ১৬/২৪২; শরহুন নববী ২/২৩০; ফয়যুল কাদীর ৬/৪৩৩)
❑ ইসলামে ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করা হয় নি:
ইসলামে ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করা হয় নি তার প্রমাণে অনেক হাদীস রয়েছে। তন্মধ্যে নিচের হাদীসগুলো অন্যতম:
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
لا يورد ممرض على مصح
“অসুস্থ উটগুলোর মালিক তার উটগুলোকে সুস্থ পশুর দলে পাঠিয়ে দেবে না। (কারণ এতে ঐসুস্থ প্রাণীগুলো রোগাক্রান্ত হতে পারে।) [সহীহ মুসলিম]
তিনি আরও বলেন:
فر من المجذوم فرارك من الأسد
“সিংহের আক্রমণ থেকে যেভাবে পলায়ন কর কুষ্ঠরোগী থেকেও সেভাবে পলায়ন করো।” (সহীহ আল বুখারী)
আবার তিনি কুষ্ঠরোগীর সাথে বসেও খাবার খেয়েছেন আর বলেছেন:
كل بسم الله ثقة بالله
“আল্লাহর উপর আস্থা রেখে আল্লাহর নামে খাওয়া শুরু করো।” (তিরমিযী, অধ্যায়: খাদ্যদ্রব্য, অনুচ্ছেদ: কুষ্ঠরোগীর সাথে খাবার খাওয়া)
এটা তিনি এ জন্য করেছেন যে, কুষ্ঠ রোগীর কাছে গেলেই যে, সে রোগে আক্রান্ত হতে হবে তা জরুরি নয়। বরং কখনও হতে পারে আবার কখনও নাও হতে পারে। এটা আল্লাহ ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।