আল-কুরআন থেকেঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَلَمَّا جَاءَهُمْ كِتَابٌ مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ وَكَانُوا مِن قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا ﴿البقرة: ٨٩﴾
যখন তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব এসে পৌঁছাল, যা সে বিষয়ের সত্যায়ন করে, যা তাদের কাছে রয়েছে এবং যা দিয়ে তারা ইতোপূর্বে কাফেরদের উপর বিজয় কামনা করতো। {সূরা বাকারা-৮৯}
🕋 ইবনুল কাইয়্যুম এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেনঃ
ইহুদীরা তাদের প্রতিবেশীদের সাথে লড়াই করতো এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উসিলায় দুশমনের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতো। এর ফলে তারা সাহায্য ও বিজয় অর্জন করতো। অবশেষে যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন ঘটলো, তখন তারা কুফুরী গ্রহন করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়াতকে অস্বীকার করলো। (বাদায়েউস সানায়াঃ ৪/১৪৫)
🕋 বাগদাদের মুফতী আল্লামা সাইয়্যেদ মাহমুদ আলুসী (رحمة الله) বলেনঃ
نزلت في بني قريظة والنضير كانوا يستفتحون على الأوس والخزرج برسول الله صلى الله عليه وسلم قبل مبعثه قاله ابن عباس رضي الله تعالى عنهما وقتادة والمعنى يطلبون من الله تعالى أن ينصرهم به على المشركين ، كما روى السدي أنهم كانوا إذا اشتد الحرب بينهم وبين المشركين أخرجوا التوراة ووضعوا أيديهم على موضع ذكر النبي صلى الله عليه وسلم وقالوا : اللهم إنا نسألك بحق نبيك الذي وعدتنا أن تبعثه في آخر الزمان أن تنصرنا اليوم على عدوّنا فينصرون
এ আয়াত নাজীল হয়েছে বনী কুরাইজা ও বনী নজীরের ব্যাপারে। রাসূল সাঃ এর আগমণের পূর্বে যারা আওস ও খাজরাজের বিরুদ্ধে রাসূল সাঃ এর ওসীলা দিয়ে দুআ করতো। এ বক্তব্যটি ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এবং কাতাদা এর।
আল্লাহ তাআলার কাছে চাওয়ার মানে হল, তারা এর দ্বারা মুশরিকদের বিরুদ্ধে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতো। যেমন সিদ্দী বর্ণনা করেন যে, যখন তাদের ও মুশরিকদের মাঝে ভয়াবহ যুদ্ধ লেগে যেত, তখন তারা তাওরাত কিতাব বের করত, এবং তাদের হাত যেখানে রাসূল সাঃ এর নাম আছে তার উপর রাখতো, আর বলতো-“হে আল্লাহ! আমরা আজকে আপনার সাহায্য কামনা করছি আমাদের শত্র“দের বিরুদ্ধে ঐ সত্য নবীর ওসীলায় শেষ জমানায় যার আগমনের ওয়াদা আপনি করেছেন। তারপর তাদের সাহায্য করা হতো। {তাফসীরে রুহুল মাআনী-১/৩২০}
.
🕋 আল্লামা মহল্লী (رحمة الله) উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ
রাসূল সাঃ এর আগমনের পূর্বে ইহুদীরা কাফেরদের বিরুদ্ধে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য পার্থনা করে বলতো- اللهم انصرنا عليهم باالنبى المبعوث آخر الزمان তথা হে আল্লাহ! শেষ জমানায় আগমনকারী নবীর ওসীলায় আমাদের সাহায্য করুন। {তাফসীরে জালালাইন-১/১২}
একই ব্যাখ্যাকৃত তাফসীর নিম্ন বর্ণিত তাফসীর গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে।
যেমন-
১- তাফসীরে কাবীর-৩/১৮০।
২- তাফসীরে ইবনে জারীর তাবারী-১/৪৫৫।
৩- তাফসীরে বগবী-১/৫৮।
৪- তাফসীরে কুরতুবী-২/২৭।
৫- তাফসীরে আলবাহরুল মুহীত-১/৩০৩।
৬- তাফসীরে ইবনে কাসীর-১/১২৪।
৭- তাফসীরে আবীস সউদ-১/১২৮।
৮- তাফসীরে মাজহারী-১/৯৪।
৯- তাফসীরে রূহুল মাআনী-১/৩১৯।
১০- তাফসীরে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)-১৩।
১১- তাফসীরে খাজেন-১/৬৪।
১২- তাফসীরে মাদারেক-১/৩২।
১৩- তাফসীরে দুররে মানসূর-১/৮৮।
১৪- তাফসীরে তাবসীরুর রহমান আরবী-১/৫২।
১৫- সফওয়াতুত তাফাসীর-১/৭৭।
১৬- তাফসীরে আজীজী-৩২৯।
১৭- তাফসীরে মাওজাউল কুরআন-১৫।
১৮- তাফসীরে মাআরেফুর কুরআন [মাওলানা মুহাম্মদ ইদ্রিস কান্ধলবী (رحمة الله)]- ১/১৭৭।
১৯- তাফসীরে জাওয়াহেরুল কুরআন- ৪৯।
২০- বাদায়েউল ফাওয়ায়েদ লিইবনে কায়্যিম হাম্বলী-৪/১৪৫।
২১- আলমিনহাতুল ওহাবিয়া লিআল্লামা দাউদ বিন সুলাইমান আলবাগদাদী হানাফী (رحمة الله)-৩১।
🕋 বিশেষ কথা: শরীয়তের বিধান
উসুলে ফিক্বহ এ লিখা আছে যে, আল্লাহ তাআলা ও রাসূল সাঃ যদি পূর্ববর্তীদের শরীয়ত সমালোচনা বা নিষেধ করা ছাড়া বর্ণনা করে থাকেন, তাহলে সেটি আমাদের উপরও লাযেম হয়ে যায়।
{নূরুল আনওয়ার-২১৬, তাসকীনুল কুলুব-৭৬, নেদায়ে হক্ব-১০১}
.
🕋 জেনে রাখা জরুরিঃ
রাসূল সাঃ দুনিয়াতে বিদ্যমান ছিলেন না। সে সময় ইহুদীরা রাসূল সাঃ এর ওসীলা দিয়ে আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করতো। আর এ বিষয়কে আল্লাহ তাআলা সমালোচনাহীনভাবে উদ্ধৃতি করেছেন। রাসূল সাঃ থেকেও এ ওসীলার কোন বিরোধীতা বর্ণিত নেই। তাই রাসূল সাঃ এখনো দুনিয়াতে নেই। তাই এ আয়াত অনুপাতে রাসূল সাঃ ওসীলা গ্রহণ এখনো জায়েজ আছে।
.
আল-হাদিস থেকে প্রমাণঃ
🕋 হযরত উসমান বিন হানীফ (رضي الله عنه) থেকে ওসীলা জায়েজের প্রমাণঃ
أن رجلا كان يختلف إلى عثمان بن عفان رضي الله عنه في حاجة له فكان عثمان لا يلتفت إليه ولا ينظر في حاجته فلقي عثمان بن حنيف فشكا ذلك إليه فقال له عثمان بن حنيف ائت الميضأة فتوضأ ثم ائت المسجد فصلي فيه ركعتين ثم قل اللهم إني أسألك وأتوجه إليك بنبينا محمد صلى الله عليه و سلم نبي الرحمة
এক ব্যক্তি হযরত উসমান বিন আফফান (رضي الله عنه) এর কাছে একটি জরুরী কাজে আসা যাওয়া করত। হযরত উসমান (رضي الله عنه) [ব্যস্ততার কারণে] না তার দিকে তাকাতেন, না তার প্রয়োজন পূর্ণ করতেন। সে লোক হযরত উসমান বিন হানীফ (رضي الله عنه) এর কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ করল। তখন তিনি বললেনঃ তুমি ওজু করার স্থানে গিয়ে ওজু কর। তারপর মসজিদে গিয়ে দুই রাকাত নামায পড়। তারপর বল, হে আল্লাহ! তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। রহমাতের নবী মুহাম্মদ সাঃ এর ওসীলায় তোমার দিকে মনোনিবেশ করছি।
{আল মুজামে সগীর, হাদীস নং-৫০৮, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৮৩১১, আত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং-১০১৮}
এ হাদীসের শেষে স্পষ্ট রয়েছে যে, লোকটি তা’ই করেছিল। তার দুই কবুলও হয়েছিল। ফলে হযরত উসমান (رضي الله عنه) তাকে সম্মান দেখিয়ে তার প্রয়োজনও পূর্ণ করে দিয়েছিলেন।
.
🕋 হাদীসটির সনদ প্রসঙ্গে
——————————
🌱উক্ত হাদীসটির ক্ষেত্রে ইমাম তাবরানী বলেনঃ والحديث صحيح তথা এ হাদীসটি সহীহ। {আল মুজামে সগীর-১০৪}
🌱আল্লামা মুনজিরী (رحمة الله) ও একথার পক্ষাবলম্বন করেছেন। {আত তারগীব ওয়াত তারহীব-১/২৪২}
🌱আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) বলেনঃ رواه التبرانى بسند جيد তথা তাবারানী (رحمة الله) এটাকে উত্তম সনদে তা বর্ণনা করেছেন। {হাশীয়ায়ে ইবনে হাজার মক্কী আলাল ঈজাহ ফি মানাসিকিল হজ্ব লিননববী-৫০০, মিশর}
🌱 আশরাফ আলী থানবী উক্ত হাদীস বর্ণনার পর লিখেনঃ এর দ্বারা মৃত্যুর পর ওসীলা গ্রহণ করার বিষয়টিও প্রমাণিত। এছাড়া রেওয়ায়েত তথা বর্ণনার সাথে সাথে দিরায়াত তথা যৌক্তিকতার নিরিখেও তা প্রমাণিত। কেননা, প্রথম বর্ণনা দ্বারা যে ওসীলা প্রমাণিত তা উভয় অবস্থাকেই শামীল করে থাকে। {নশরুত তীব-২৫৩}
🌱একই বিষয়ে বক্তব্য দেখুন-
{শিফাহুস সিক্বাম লিস সুবকী-১২৫, ওয়াফাউল ওয়াফা লিস সামহুদী-২/৪২০}
🕋 ওমর (رضي الله عنه) এর হাদিস সম্পর্কে একটি প্রশ্ন ও তার জবাবঃ
🕋 প্রশ্নঃ
ওমর (رضي الله عنه) নবী কারীম (ﷺ) এর পরিবর্তে আব্বাস (رضي الله عنه) এর নামে তাওয়াসসুল কেন করলেন ??
🕋 জবাবঃ
১) হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) দ্বারা ওয়াসিলা ধারন করার সাথে হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) এর দু-আও উদ্দেশ্য ছিল।
২) এ ব্যাপারে মনোযোগ আকর্ষন করা উদ্দেশ্য ছিল যে, রাসুল (ﷺ) এর ওয়াসিলা ধারন করার দুটি পদ্ধতি। প্রথমতঃ তার সত্ত্বার ওয়াসিলা ধারন করা,
দ্বিতীয়তঃ তার নিকটাত্মীয়ের ওয়াসিলা ধারন করা।
৩) এটা বোঝানো উদ্দেশ্য ছিল যে, আউলিয়া কিরাম ছাড়া নেককারদেরকেও ওয়াসিলা বানিয়ে দু’আ করা যায়,তাদের ওয়াসিলাও বরকতের কারন ও রহমতের আকর্ষক।
৪) মানুষের মাঝে এই স্বভাব বিদ্যমান যে, যাকে দেখা যায় এবং অনুভব করা যায় তার উপরই তাদের মনের প্রশান্তি বেশি হয়। এ কারনেই রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর দরবারে সালাম প্রেরন ও দু’আর দরখাস্ত প্রেরনের ক্ষেত্রেও মানুষের মাধ্যমের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। (আহসানুল ফাতওয়া থেকে এই জবাবটি নেয়া হয়েছে)
মৃত নবী বা নেককার বান্দার উসিলায় দো’আ করা উম্মাতের ইজমাঃ
ইবনে তাইমিয়া ওয়াসিলা অস্বীকারকারী প্রথম আলিমঃ
ইবনে তাইমিয়াই প্রথম আলিম যিনি কিনা মৃত নবী বা নেককার বান্দার উসিলায় দো’আ করাকে নাজায়েজ বলেছেন।
🕋 ইমাম তকিউদ্দিন সুবকী (رحمة الله) এ ব্যাপারে ইবনে তাইমিয়া এর মতকে প্রত্যাখ্যান করে লিখেন,
“তোমার আশ্চর্যের জন্য এ কথায় যথেষ্ট যে, ইবনে তাইমিয়া সর্বপ্রথম ওয়াসিলার মাধ্যমে দোয়া করাকে অস্বীকার করেছেন। তার আগে ইসলামের কোন আলিম এমনটি করেননি। “
(ইমাম সুবকীঃ শিফাউস সিকামঃ পৃ-১২০)
🕋 তিনি ইবনে তাইমিয়ার এ মতবাদকে “বিদয়াতের পথ” হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন–
“নবী কারীম (ﷺ) এর ওয়াসিলা দিয়ে দো’আ করা আল্লাহর নিকট উত্তম কাজ। এবং সালফে সালেহীন এবং পরবর্তীদের কেউই একে অস্বীকার করেন নি। কিন্তু ইবনে তাইমিয়া তা অস্বীকার করেন। তিনি সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে বিদয়াতের পথ আবিষ্কার করেন — যা অন্য কোন আলিম করেন নি।”
(আল্লামা আলূসী বাগদাদীঃ রুহুল মা’আনীঃ ৪/১২৬)
🕋 ইমাম ইবনে আবেদীন শামী হানাফী (رحمة الله) তিনিও ইমাম সুবকী (رحمة الله) এর বরাতে ওয়াসিলার মাধ্যমে দো’আ করাকে সমগ্র উম্মাহের ইজমা বলে উল্লেখ করেছেন। তিনিও এই কথা বলেছেন যে, ইবনে তাইমিয়াই সর্বপ্রথম একে অস্বীকার করেন।
(ইমাম ইবনে আবেদীন শামীঃ ফাতওয়ায়ে শামীঃ ৫/৩৫০)
.
🕋 ইবনে তাইমিয়ার ওয়াসিলা অস্বীকার করার পিছনের যুক্তি এবং তার বাস্তবতাঃ
ইবনে তাইমিয়া তাওয়াসসুল বিয জাত এর মাধ্যমে দো’আ করার ফলে তিনি যে আশংকা করেছেন তা হল এর ফলে আল্লাহ তায়ালার চেয়ে যার নামে ওয়াসিলা চাওয়া হয়েছে তার মর্তবা অধিক হওয়া সাব্যস্ত হয়, তা মূল্যহিন। কোন মুসলমান এমনটি মনে করে না।
ইমাম তকীউদ্দিন সুবকী (رحمة الله) উনার “শিফাউস সিকাম” এ ইবনে তাইমিয়ার এর মতামত উল্লেখ করেছেন, যেখানে বলা আছেঃ
كان فيهمام ان المتو حه المستغاث به اعلي من المتو جه عليه والمستغاث عليه
এই সমস্ত শব্দ দ্বারা এ ধারনা সৃষ্টি হয় যে,” এর ফলে আল্লাহ তায়ালার চেয়ে যার নামে উসিলা চাওয়া হয়েছে তার মর্তবা অধিক সাব্যস্ত হয়।”
ইমাম তকীউদ্দিন সুবকী (رحمة الله) এমন ধারনাকে প্রত্যাখ্যান করেন এরপর তিনি এর জবাবে লিখেছেন,
“নবী কারীম (ﷺ), অন্যান্য নবীগন এবং আল্লাহ তা’আলার নেক বান্দাদের ওয়াসিলা দিয়ে দোয়া করার অর্থ হলো, তাদের উপর ঈমান, আস্তা ও ভালোবাসার কারনেই তাদেরকে আল্লাহর সামনে স্বীয় দোয়া কবুল হওয়ার আসায় ওয়াসিলা হিসেবে পেশ করা। এছাড়া অতিরিক্ত আর কিছু নয়। সাধারন মুসলমানরা এটাই বুঝে। কিন্তু এরপরও যাদের অন্তর এটা বুঝার জন্য উন্মুক্ত নয়, তাদের জন্য ক্রন্দন করা উচিৎ। ”
(শিফাউস সিকামঃ ১২০-১২১ পৃ)
🕋 শায়েখ ইবনে তাইমিয়া ওয়াসিলা ও তাওয়াসসুলকে সরাসরি অস্বীকার করেন না।
ইবনে তাইমিয়া ওয়াসসুলের কিছু পদ্ধতিকে সমর্থন করেন। যথাঃ
তিনি তাওয়াসসুল সম্পর্কে এক জায়গায় লিখেন—
আমি আপনার কাছে আপনার নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উসিলায় প্রার্থনা করছি। অর্থাৎ তার প্রতি আমার বিশ্বাস ও ভালোবাসার ওয়াসিলায় আপনার কাছে প্রার্থনা করছি। (আল কাদিয়াতুল জালীলাহঃ পৃ-৩৮)
তিনি আরো লিখেনঃ
যদি কেউ নবী কারীম (ﷺ) এর প্রতি ঈমান ও তার আনুগত্যের অনুসারী হয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে কোন কিছু চায়, তাহলে সে যেন বড় মাধ্যমে দোয়া করলো। এভাবে দোয়া করলে দোয়া কবুল হওয়ার আশা করা যায়। বরং এটা দোয়া কবুল হওয়ার অনেক বড় মাধ্যম।
ইবনে তাইমিয়া অন্য জায়গায় লিখেন, আল্লাহ তায়ালার নিকট আম্বিয়া (আ) এর মাধ্যমে ওয়াসিলার উদ্দেশ্য হলো, তাদের উপর ঈমান এবং তাদের অনুসরন করার কারনেই তো ওসিলা নেয়া হয়। যথাঃ তাদের উপর দুরুদ ও সালাম বলা এবং তাদের প্রতি মুহাব্বত অথবা তাদের দোয়া ও সুপারিশ পাওয়ার লক্ষ্যেই ওয়াসিলা নেয়া হয়। এটাই তাওয়াসসুল। তবে তাদের মধ্যে এমন কোন ক্ষমতা নেই যা বান্দার উদ্দেশ্যকে পূরন করতে পারে। যদিও তারা আল্লাহ তায়ালার নিকট অনেক মর্যাদার অধীকারী। (ফাতওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়াঃ ২৭/১৩৩)
🕋 বুজুর্গের ওয়াসিলা দিয়ে দোয়া করা উত্তম কাজঃ
দোয়াকারী তাদের নামে তাওয়াসসুল করে এটা বুঝাতে চান যে, হে আল্লাহ আমি আপনার অমুক নেক বান্দাকে মুহাব্বাত করি। আর আপনার কোন নেক বান্দাকে মুহাব্বাত করা সর্বোত্তম আমলের মধ্যে গন্য। তাই হে আমার রব ! আমার তো আপনার সামনে উপস্থিত করার মত কোন আমল নেই, তাই আপনার নেক বান্দার প্রতি আপনার জন্য মুহাব্বাত কে আপনার সামনে আমি উসিলা হিসেবে পেশ করছি। আপনি আমার এই সর্বোত্তম আমলের বিনিময়ে আমার দোয়া কবুল করে নিন। কেননা হাদিসে আছে,
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ أَبِي زِيَادٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنْ رَجُلٍ، عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” أَفْضَلُ الأَعْمَالِ الْحُبُّ فِي اللَّهِ وَالْبُغْضُ فِي اللَّهِ ” .
আবু যর (رضي الله عنه) থেকে বর্নিত রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
সর্বোত্তম আমল হলো কাউকে আল্লাহর জন্য মুহাব্বাত করা এবং আল্লাহর জন্যই কারো সাথে শত্রুতা করা। (সুনানে আবি দাউদঃ হা নং ৪৬০১)
🕋 ওয়াসিলার যে সমস্ত প্রকারভেদ মাকরুহঃ
ইমাম আবূ হানীফা (رحمة الله), ইমাম আবূ ইউসূফ (رحمة الله) ও ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله) সকলেই একমত যে কারো অধিকার বা মর্যাদার দোহাই দিয়ে আলাহর কাছে দু‘আ চাওয়া মাকরূহ।
আলামা ইবনু আবিল ইয্য হানাফী বলেন:
“ইমাম আবূ হানীফা (رحمة الله) ও তাঁর সঙ্গীদ্বয় বলেছেন: ‘আমি অমুকের অধিকার বা আপনার নবী-রাসূলগণের অধিকার, বা বাইতুল হারামের অধিকার বা মাশ‘আরুল হারামের অধিকারের দোহাই দিয়ে চাচ্ছি বা প্রার্থনা করছি’ বলে দু‘আ করা মাকরূহ।”
(ইবনূ আবিল ইযয, শারহূল আকিদাত, তাহাবী, পৃষ্ঠা, ২৩৭)
আলামা আলাউদ্দীন কাসানী (৫৮৭ হি) বলেন:
“‘আমি আপনার নবী-রাসূলগণের অধিকারের দোহাই দিয়ে চাচ্ছি এবং অমুকের অধিকারের দোহাই দিয়ে চাচ্ছি বলে দু‘আ করা মাকরূহ; কারণ মহান আলাহর উপরে কারো কোনো অধিকার নেই।”
(কাসানী, বাদাইউস সানাইর, ৫/১২৬)
🕋যে সমস্ত ওয়াসিলা হারামঃ
যদি কেউ এটা মনে করে যে, সে যার নামে ওয়াসিলা করছে তিনি জোর পূর্বক আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে তা কবুল করে নিবেন কিংবা তার দোয়া অবশ্যই অবশ্যই কবুল হবে তাহলে তা নাজায়েজ হবে।
🕋শেষ কথাঃ
সালাফি এবং গায়রে মুকাল্লিদগন এরপরও যদি ওয়াসিলা গ্রহন করার ক্ষেত্রে জীবিত এবং মৃতের মধ্যে পার্থক্য করতে চান, তাহলে আমরা বলবো, যদি জীবিত এবং মৃতের মাঝে পার্থক্য করতেই হয় তাহলে মৃতের দ্বারা ওয়াসিলা গ্রহণ বিষয়টি অধিক গ্রহনযোগ্য হওয়া উচিৎ। কারন জীবিত মানুষ অবস্থার পরিবর্তন থেকে নিরাপদ নয়। এজন্য হাদিসে আছে, যদি কারো অনুসরন করতে চাও তাহলে মৃতদের অনুসরন কর।
হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্নিত আছেঃ
কেউ যদি কারো আদর্শের অনুসরন করতে চাই তাহলে সে যেন মৃতদের আদর্শের অনুসরন করে। কারণ, জীবিত ব্যাক্তি ফিতনা থেকে নিরাপদ নয়। (মিশকাত)
(ইসলামি আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদঃ পৃ ৪৩৮)