বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। একটি আয়াতের অংশ। কেউ কেউ একে পূর্ণাঙ্গ আয়াতও বলেছেন। আয়াত হোক আর আয়াতাংশ হোক, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের রয়েছে অনেক গুরুত্ব। যদি কেউ ফরজ হুকুম পালনের সঙ্গে সঙ্গে বিসমিল্লাহর আমল করে আল্লাহ তাআলা তাকে বরকত ও কল্যাণ দান করেন।
আমালুল কুরআন : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর আমলকারীর মর্যাদা আল্লাহ তাআলা বৃদ্ধি করবেন। যা কুরআন-হাদিসে এসেছে এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের জিন্দেগিতেও এর বাস্তবতা পাওয়া গেছে। বিসমিল্লাহর আমলের রয়েছে অনেক ফজিলত।
১. যে ব্যক্তি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ৬শ’ বার লিপিবদ্ধ করে সঙ্গে রাখবে, আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদের ওপর সে ব্যক্তির প্রভাব সুপ্রতিষ্ঠিত করে দেবেন, কেউ তার ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম হবে না।
২. হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, `আদম সন্তান যখন কাপড় খোলে, তখন তার সতর ও নিজদের চোখের মধ্যবর্তী পর্দা হচ্ছে `বিসমিল্লাহির-রাহমানির রাহিম`। তাহলে আল্লাহ ইচ্ছা করলে বিসমিল্লাহর আমলকারীদের জন্য জাহান্নামকেও আড়াল করে দিতে পারেন।
৩. যে ব্যক্তি কোনো নেক মকসুদ হাসিলের জন্য বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ১২ হাজার বার এভাবে পাঠ করে যে, প্রত্যেক ১ হাজার বার পাঠ করার পর দু’রাকাআত নামাজ আদায় করে দোয়া করবে। এভাবে ১২ হাজার বার পাঠ করে দোয়া করলে, আল্লাহ তাআলার রহমতে ঐ ব্যক্তির মকসুদ পূর্ণ হয়।
৪. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে এরশাদ করেন, ‘হে আবু হুরায়রা! তুমি যখন অজু করবে, বিসমিল্লাহ বলবে। তাহলে ফেরেশতাগণ তোমার অজু শেষ না হওয়া পর্যন্ত তোমার জন্য পুণ্য লিখতে থাকবে। তুমি যখন স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করবে, তখন বিসমিল্লাহ বলবে। তাহলে যতক্ষণ না তুমি গোসল শেষ করবে, ততক্ষণ ফেরেশতাগণ তোমার জন্য পুণ্য লিখতে থাকবে। সেই সহবাসে যদি তোমার কোনো সন্তান লাভ হয়, তবে সেই সন্তানের নিঃশ্বাস এবং তার যদি বংশধারা চালু থাকে, তবে যতকাল তা চালু থাকবে, ততকাল পর্যন্ত তাদের সবার নিঃশ্বাসের সংখ্যা পরিমাণ পুণ্য তোমার আমলনামায় লেখা হতে থাকবে। হে আবু হুরায়রা! তুমি যখন পশুর পিঠে চড়বে, তখন বিসমিল্লাহ বলবে। তাহলে তার প্রতি কদমে তোমার জন্য পুণ্য লেখা হবে। আর যখন নৌকায় চড়বে, তখনো বিসমিল্লাহ বলবে। তাহলে যতক্ষণ না তুমি তা থেকে নামবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার জন্য পুণ্য লেখা হতে থাকবে।`
৫. যে ব্যক্তি ১০০ বার বিসমিল্লাহির রাহমানির লিখে ক্ষেতে-খামারের দাফন করে রাখে, আল্লাহ তাআলা সব ধরনের বালা-মুসিবত থেকে ফসলের হেফাজত করেন। ফসলের বরকত বৃদ্ধি করে দেন। এছাড়াও জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির গলায় অথবা বাহুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লিখে দিলে আল্লাহর রহমতে জ্বর চলে যায়।
৬. রোম সম্রাট একবার খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর দরবারে তার মাথা ব্যথার কথা জানিয়ে প্রতিকারের জন্য আবেদন করেছিল। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে একটি টুপি প্রেরণ করেছিলেন। যতক্ষণ এ টুপি মাথায় থাকতো ততক্ষণ মাথা ব্যথা হতো না। কিন্তু যখনই মাথা থেকে টুপি সরানো হতো, সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা শুরু হতো। এ ঘটনায় সবাই বিস্মিত হয়। অবশেষে টুপি খুলে এর কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেল যে তাতে শুধু ‘বিসমিল্লাহ’ লিপিবদ্ধ রয়েছে।
৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি `বিসমিল্লাহ` লেখা আছে এমন কোনো কাগজের টুকরা আল্লাহ তায়ালার তাজিমের উদ্দেশ্যে হেফাজত করেন, আল্লাহর কাছে তার নাম সিদ্দিকদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয় এবং তার পিতামাতার শাস্তি লাঘব করা হয়, যদিও তারা মুশরিক হয়ে থাকে।’পরিশেষে…আল্লাহ তাআলার দরবারে ফরিয়াদ আল্লাহর শুকরিয়া আদায়, আল্লাহর প্রশংসা, আল্লাহর নাম নেয়া ছাড়া আমাদের কোনো কাজ যেন শুরু না হয়। সব সময় সব কাজ আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করব। উপরোক্ত বরকত ও কল্যাণ লাভে ধন্য হব। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমিন।