দেওবন্দীদের মতে রাসূলে কারিম (ﷺ) তাদের থেকে উর্দু শিখেছেন।
- ১৬০. দেখুন বায়াহেনে কাতেয়া কৃত খলিল আহমদ সাহারান পুরী
আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে রাসূল (ﷺ) সারা পৃথিবীর মহান শিক্ষক। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
-“হে মাহবুব (ﷺ) ! আপনি বলে দিন, হে মানব কুল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবেসে থাকে। তবে আমার অনুগত হয়ে যাও, আল্লাহ তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করবেন আর আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু।’’ ১৬১
- ১৬১. সূরা আল ইমরান, আয়াত নং-৩১
مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ
-“যে ব্যক্তি রাসূলের নির্দেশ মান্য করেছে, নিঃসন্দেহে সে আল্লাহর নির্দেশ মান্য করেছে।’’ ১৬২
- ১৬২. ৫ পারা, ১১ রুকু, সূরা নিসা: আয়াত নং-৮০
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
-“হে আমাদের প্রতিপালক! এবং প্রেরণ করুন তাদের মধ্যে একজন রাসূল তাদেরই মধ্য থেকে, যিনি তোমার আয়াত সমূহ তাদের নিকট তেলাওয়াত করবেন এবং তাদেরকে তোমার কিতাব ও পরিপক্ষ জ্ঞান শিক্ষা দেবেন এবং তাদেরকে অতি পবিত্র করবেন। নিশ্চই তুমিই পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’’ ১৬৩
- ১৬৩. ১ পারা, ১৫ রুকু সূরা বাকারা: আয়াত নং-১২৯
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
-“তিনিই হন যিনি আপন রাসূলকে হিদায়ত ও সত্য দ্বীন সহকারে প্রেরণ করেন। যেন সেটাকে সমস্ত ধর্মের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন, যদিও অপছন্দ করে মুশরিকগণ।’’ ১৬৪
- ১৬৪. ২০ পারা ১ রুকু, সূরা সাফ, আয়াত নং-৯
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا
-“এবং যা কিছু তোমাদেরকে রাসূল দান করেন তা গ্রহণ কর। আর যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো।’’ (২৮ পারা, ১ম রুকু, সূরা হাশর, আয়াত নং ৭)
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ
-“এবং আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছি যেন সে তাদেরকে পরিস্কাভাবে বলে দেয়।’’ (সূরা ইবরাহিম, আয়াত নং-৪)
আল্লামা সোলাইমান (رحمة الله)’র আক্বিদা:
এই আয়াতের তাফসীরে আল্লামা সোলাইমান (رحمة الله) তাফসীরে জুমালে বলেন,
وَهُوَ ﷺ كَانَ يَخَاطِبْ كُلُّ قَوْمٍ بَلَغَتُهُمْ
-“এবং রাসূল (ﷺ) গোত্রের কাছে তাদের ভাষায় ভাষণ দিতেন।’’ ১৬৫
- ১৬৫. সুলায়মান জামাল, তাফসীরে জুমাল, ২য় খণ্ড, ৫১২ পৃ.
আল্লামা শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাজী (رحمة الله)’র আকিদা:
শেফা শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘নাসিমুর রিয়াদ্ব’ এর মধ্যে বলেছেন,
اَنَّهُ ﷺ لِجَمِيْعِ النَّاسِ عَلَّمَهُ جَمِيْعُ اللُّغَاتِ
-“নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) মানুষদেরকে তাদের ভাষা শিখাতেন।” ১৬৬
- ১৬৬. আল্লামা শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাজী, নাসিমুর রিয়াদ্ব শরহে শিফা, ২য় খণ্ড, ৩৮৭ পৃ.
সম্মনিত পাঠক! সরকারে দো আলম (ﷺ) পুরোপৃথিবীর রাসূল। আল্লাহ তা‘য়ালার একটি নিয়ম হলো যে গোত্রের কাছে রাসূল পাঠাবেন তাদের ভাষা শিক্ষা দিয়েই পাঠান। সুতরাং এটা মানতেই হবে যে, পৃথিবীতে যতভাষা আছে, সবই আল্লাহ তা‘য়ালা রাসূল (ﷺ) কে শিক্ষা দিয়েছেন। আর অসংখ্য ভাষার মধ্যে উর্দুও একটি ভাষা। আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন,
وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ ۞ وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ
-‘‘এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমতের জ্ঞান দান করেন এবং নিশ্চয় তারা ইতোপূর্বে অবশ্যই সু:স্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যেই ছিলো এবং তাদের মধ্য থেকে অন্যান্যদেরকে পবিত্র করেন এবং জ্ঞান দান করেন তাদেরকে, যারা ঐ পূর্ববর্তীদের সাথে মিলিত হয়নি এবং তিনিই সম্মান এ প্রজ্ঞাময়।’’ ১৬৭
- ১৬৭. ২৮ পার রুকু ১১ সূরা জুম‘আ: আয়াত নং-২-৩
এই আয়াত শরীফ হতে বুঝা যায় হুযুর (ﷺ), সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) এবং সাহাবায়ে কেরামের পরবর্তী সকলকে হুযুর (ﷺ) কিতাব এবং হিকমত শিক্ষা দিয়েছেন।
আল্লামা মুহাম্মদ বিন আহমদ আনসারী কুরতুবী (رحمة الله)’র আকিদা:
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে কুরতুবীতে বলা হয়েছে,
أَيْ يُعَلِّمُهُمْ وَيُعَلِّمُ آخَرِينَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ، لِأَنَّ التَّعْلِيمَ إِذَا تَنَاسَقَ إِلَى آخِرِ الزَّمَانِ كَانَ كُلُّهُ مُسْنَدًا إِلَى أَوَّلِهِ فَكَأَنَّهُ هُوَ الَّذِي تَوَلَّى كُلَّ مَا وُجِدَ مِنْهُ. (لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ) أَيْ لَمْ يَكُونُوا فِي زَمَانِهِمْ وَسَيَجِيئُونَ بعدهم. قال ابن عمرو سعيد بْنُ جُبَيْرٍ: هُمُ الْعَجَمُ….. وَقَالَ مُجَاهِدٌ: هُمُ النَّاسُ كُلُّهُمْ، يَعْنِي مَنْ بَعْدَ الْعَرَبِ الَّذِينَ بُعِثَ فِيهِمْ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وقاله ابن زيد ومقاتل ابن حَيَّانَ. قَالَا: هُمْ مَنْ دَخَلَ فِي الْإِسْلَامِ بَعْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ.
-“রাসূলে পাক (ﷺ) মুমিনদেরকে তালিম দান করেন। এমনকি মু‘মিনদেরকেও যারা পরবর্তীতে আসেন, কেননা তাঁর তালিম যখন শেষ অববি বিদ্যমান থাকবে তখন তার সম্পর্ক হুযুর (ﷺ)’র দিকেই হবে। لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ দ্বারা উদ্দেশ্য ওই লোক যারা রাসূল (ﷺ)’র সময়ে ছিলেন না। এবং তারা পরে আসবে। হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (رضي الله عنه) এবং তাবেয়ী সাঈদ বিন জুবাইর (رحمة الله) বলেন, তারা অনারবী লোক। ইমাম মুজাহিদ (رحمة الله) বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য আরবদের পরে ওই সমস্ত লোক যারা হুযুর আকরাম (ﷺ)’র উপর ঈমান এনেছেন। আর হযরত ইবনে যায়েদ (رضي الله عنه) এবং হযরত ইমাম মুকাতিল (رحمة الله) বলেন, এরা এমন লোক যারা হুযূর (ﷺ)’র ইন্তেকালের পর কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর উপর ঈমান আনবে।’’ ১৬৮
- ১৬৮. ইমাম কুরতুবী, তাফসীরে কুরতুবী, ১৮/৯৩ পৃ.
আল্লামা মাহমুদ আলূসী (رحمة الله)’র আকিদা:
তাফসীরে রুহুল মা‘আনীতে বলা হয়েছে,
أَيْ لَمْ يَلُحَقُوْا بِهِمْ بَعْدَ وَسَيَلُحَقُوْنَ، وَهُمُ الَّذِيْنَ جَاؤُا بَعَدَ الصَّحَابَة إِلَى يَوْمِ الدِّيْن
-“যারা এখন পর্যন্ত সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه)’র সাথে মিলিত হননি। অচিরেই তারা মিলিত হবে। এ সমস্ত মানুষ সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه)’র পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সকলেই।’’ ১৬৯
- ১৬৯. মাহমুদ আলূসী, তাফসীরে রুহুল মাআনী, ১৪ খণ্ড, ২৮৯ পৃ:
আল্লামা আবদুল্লাহ বিন আহমদ নাসাফী (رحمة الله)’র আকিদা:
তাফসীরে মাদারিকুত তানযিলে বলা হয়েছে,
أَيْ لَمْ يَلْحَقُوْا بِهِمْ بَعْدَ وَسَيَلْحَقُوْنَ بِهِمْ وَهُمْ الَّذِيْنَ بَعْدَ الصَّحَابةِ رَضِي الله تَعَالى عَنْهُمْ أو هم الَّذِيْنَ يَأْتُوْنَ مِنْ بَعْدِهِمْ إِلَى يَوْمِ الدِّيْن
-“তারা এমন লোক যারা এখনো সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه)’র সাথে মিলিত হননি, তারা সাহাবারে কেরাম (رضي الله عنه)’র পরে আসবেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত ইসলামে প্রবেশ করবে।’’ ১৭০
- ১৭০. ইমাম নাসাফী, তাফসীরে মাদারিকুত তানযিল, ৩/৪৮০ পৃ.
আল্লামা মুহাম্মদ বিন জারীর তাবারী (رحمة الله)’র আক্বিদা:
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে জারীরে বলা হয়েছে,
وَقَالَ آخَرُونَ: إِنَّمَا عُنِيَ بِذَلِكَ جَمِيعُ مَنْ دَخَلَ فِي الْإِسْلَامِ مِنْ بَعْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَائِنًا مَنْ كَانَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
-“অনেক মুফাসসির বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল কিয়ামত পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ কারীগণ। তারা যে কেউ হোক না কেনো?’’ (তাফসীরে ইবনে জরীর, ২২/৬৩০ পৃ.)
আল্লামা ইবনে জরীর একটি হাদীস পাক বর্ণনা করেন,
قَالَ ابْنُ زَيْدٍ، فِي قَوْلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ: {وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ} [الجمعة: ৩] قَالَ: هَؤُلَاءِ كُلُّ مَنْ كَانَ بَعْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ، كُلُّ مَنْ دَخَلَ فِي الْإِسْلَامِ مِنَ الْعَرَبِ وَالْعَجَمِ
-“হযরত ইবনে যায়েদ (رضي الله عنه) বলেন, وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ দ্বারা উদ্দেশ্য কিয়ামত পর্যন্ত ওই সমস্ত মানুষ যারা হুযূর (ﷺ) উপর ঈমান আনবে তারা আরবী হোক আর অনারবী হোক।’’ (তাফসীরে ইবনে জারীর, ২২/৬৩১ পৃ.)
আল্লামা আবদুল ওহ্হাব শা‘রানী (رحمة الله) ’র আক্বিদা:
গাউসে ছামদানী মুহাকেকুল ইসলাম আল্লামা শা‘রানী (رحمة الله) বলেন-১৭১
ليس احد ينال علما فى الدنيا الا وهو من باطنية محمد ﷺ سواء الانبياء والاولياء المتقدمون على بعثه والمتأخرون عنه
-‘‘দুনিয়াতে এমন কোন কেউ নেই যে, রাসূল (ﷺ) থেকে উপকৃত হননি। চাই আম্বিয়ায়ে কেরাম হোক, আউলিয়ায়ে কেরাম হোক, পূর্বের শরীয়তের হোক অথবা এই শরীয়তের হোক।’’
অপরস্থানে আল্লামা শা‘রানী (رحمة الله) বলেন,
اما القطب الواحد المهد الجميع الانبياء والرسل والاقطاب من حين النشئ الانسانى الى يوم القيامة فهو روح محمد ﷺ
-‘‘অতঃপর একজন কুতুব, আম্বিয়ায়ে কেরাম, সমস্ত রাসূলগণ (عليه السلام) এবং প্রত্যেক আকতাবের প্রথম মানুষ থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত সাহায্যকারী হলেন হুযূর (ﷺ)’র রূহ মুবারক।’’ ১৭২
- ১৭১. আল্লামা শা‘রানী (رحمة الله) সম্পর্কে দেওবন্দী আলেম মাওলানা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী বলেন, তিনি ঘুমন্ত অবস্থায় হুযুর (ﷺ) থেকে সহীহ বুখারী শরীফ পড়েন। (ফয়জুল বারী, ১ম খণ্ড, ২০৪ পৃ:)
- ১৭২. ইমাম শা’রানী আল-ইয়াকিত ওয়াল জাওয়াহির, ২য় খণ্ড, ৮২ পৃ.
কুরআন মাজীদ, নির্ভরযোগ্য তাফসীর এবং গ্রহণযোগ্য কিতাবের আলোকে বুঝা গেল হুযুর (ﷺ) সমস্ত জগতের শিক্ষক আর সকল ভাষা আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর হাবীব (ﷺ) কে শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং প্রমাণিত হল দেওবন্দী আহলে হাদীসগণ আহলে সুন্নাত নয়।