মহান আল্লাহ’র অসীম করুনা ও দয়া তার সৃষ্টির প্রতি – বিশেষত তাঁর শ্রেষ্ঠ ও প্রিয়তম সৃষ্টি মানুষের প্রতি। মানুষের জীবনকে আনন্দময় করার জন্য তিনি প্রকৃতির মধ্যে যে আয়োজন করেছেন তার কোন তুলনা নেই – যেমন তার নিজের কোন তুলনা নেই ।
সৃষ্টিজগতে এমন অনেক জিনিস আছে যার দৃশ্যমান কিংবা বস্তুগত তেমন কোনো উদ্দেশ্য বা প্রয়োজনীয়তা সাদা চোখে উপলব্ধি করা যায়না; কিন্তু বাস্তবে জিনিসগুলো অমূল্য । এই যে সারি সারি পাখির ঝাকঁ ডানা মেলে আকাশে উড়ে যায়, এই যে দীঘির জলে ভেসে থাকা পানকৌড়িটি, ওই যে বাগানে শত শত ফুলের মেলা, রঙের ডালা – কী হত এগুলো না থাকলে? মানুষের জীবন ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদান যদি তিনি মাত্র দু প্রকারের মাছ আর তিন প্রকারের শাক-সবজীর মধ্যে দিয়ে দিতেন তবে কি সমস্যা হতো? কী হতো এতো রং না বানিয়ে যদি পৃথিবীকে সাদা-কালো বানাতেন? তিনি রহমানুর রাহিম, আহসানুল খালিকীন। তারঁ প্রিয় সৃষ্টি, তার বান্দা মানুষের জন্যই এই সকল আয়োজন করে বলেছেন : ” তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি এই পৃথিবীতে যা – কিছু আছে তিনি সব তোমাদের জন্য বানিয়েছেন।”
তিনি আদম (আ.) কে মাটি থেকে বানিয়েছেন। চাইলে সকল মানুষকেও তেমনিভাবে কিংবা অন্য কোনোভাবে সৃষ্টি করতে পারতেন। চাইলে আকাশ থেকে বৃষ্টির সাথে মানব শিশু ফেলতে পারতেন, চাইলে গাছের মত মাটি থেকে মানুষ গজিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি ; তিনি এই সৃষ্টি প্রক্রিয়াটিকে চরম ও পরম আনন্দের উপলক্ষ্য বানিয়েছেন মানুষের জন্য। এর মধ্যে মানুষের মনো – দৈহিক প্রশান্তি ঢেলে দিয়েছেন।
সৃষ্টিজগতের মাঝে একমাত্র মানুষই কেবল সন্তান জন্ম দেওয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া আনন্দ উপভোগের জন্য শারিরীক সংসর্গে লিপ্ত হয়। পক্ষান্তরে অন্য প্রাণীরা সাধারণত বাচ্চা উৎপাদনের সময়েই এ প্রজনন কাজে লিপ্ত হয়। তাদের জন্য শারীরিক মিলনের মধ্যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকে না। আল্লাহ চাইলে মানুষের জন্য ও প্রজননের আনন্দহীন অন্য কোন পদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি।
যুগে যুগে আল্লাহর এই নিয়ামাতের চরম অপব্যবহার করেছে মানুষ। বর্তমান যুগ যেন এ ক্ষেত্রে তাঁর চূড়া ছুঁয়েছে। পশ্চিমা ভোগবাদী, বস্তুবাদী , সেকুলার সভ্যতা আজ নারী -পুরুষের সম্পর্ককে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে, যেন এটিই মানব জীবনের একমাত্র লক্ষ্য – উদ্দেশ্য ও পরম প্রাপ্তি। মানুষের এই জৈবিক তাড়নাকে সব সময় কৃত্রিমভাবে উত্তেজিত করে রাখার জন্য যাবতিয় আয়োজন সম্পন্ন করেছে। অশ্লীলতা, নাটক, সিনেমা, বীজ্ঞাপনে৷ নারীদেহের ব্যাপক প্রদশর্নীর মাধ্যমে তারা এ কাজ করে যখন তৃপ্ত হতে পারেনি , তখন নীল ছবির ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলেছে । অথচ এটি জীবনের খুব সামান্য সময়ের জন্য সংগোপনে সম্পন্ন করার মতো প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।
জ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করলে প্রয়োজনের সময় এ কাজ সম্পাদনের জ্ঞান মহান আল্লাহ মানুষের প্রকৃতির মধ্যেই দিয়ে দিয়েছেন। এটা কাউকে শিখিয়ে দিতে হয় না। একটি বাচ্চা জন্মগ্রহণ করার পর তার মুখে যখন মা’ য়ের দুধের বোঁটা দেওয়া হয়, সে তখন সর্বশক্তি দিয়ে টানে তাঁর খাদ্য আহরণের জন্য। কিন্তু এই শিক্ষার জন্য শিশুটিকে কোন ক্লাস করতে হয়নি। এটা যেমন তার প্রকৃতিগত, তেমনি জৈবিক মিলনের ব্যাপারটিও একই রকম প্রকৃতিগত। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনা জানা যায় না, কোন ছেলে মেয়ে বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পর বিয়ে হলে সে ওই কাজ কিভাবে করতে হয় তা বুঝে উঠতে পারেনি।
তাই জৈবিক শিক্ষার নামে কোনো ক্লাস চালু করার প্রয়োজন নেই। এই ধরনের ক্লাস কেবল অশ্লীলতার দিকের যাত্রাকেই আরও ত্বরান্বিত করবে। তাই আমরা শারীরিক মিলনকে কেবল মানবিক, পরিশীলিত, সুখময়, ভাবেই দেখব ইনশাআল্লাহ।